গভ্যান্বসুডনন

শ্রীমতী ইন্দির। দেবী

গরুদাস চট্টোপাধ্যায় এগ সন্দ,. ২৯৩১১ নং কণওয়ালিদ উট, কলিকাতা।

১৩২৯।

মূল্য ২২ টাক!।

প্রিন্টার-_প্ীঅবিনাশচন্ত্র মণ্ডল, “সিক্ছেন্্রন্প প্রেস্” ৭৭ নং জরিছোষের ইট, কলিকাত।।

উপপহাল্র

র্‌ পাক সি এরর দে াগৃক্রো তর সস

উৎসর্গ

পরম ক্নেহাম্পদ ভ্রাতা, ভারতী-সম্পাদক কল্যাণীয় জ্মান্‌ সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায় কলবগমলেহু_ . ভ্ডাই সৌন্লীন !

| প্রায় সাত বৎসর পূর্বে--আরন্তেই যাহাকে ত্যাগ করিয়াছিলাম, তাহার “সমান্তির আশ কোন দিনই করি নাই। সেই অগ্লমান্র স্থলে তূমি যখন জোর করিয়। ইহাকে রোক-চক্ষে প্রকাশ করিয়াছিলে, তখন ভয় হইয়া- ছিল,_একি শেষ হইবে! যাই হোক্‌, গুধু তোমার উৎসাহ বে কতখানি _ স্বাধা-বিপত্তির মধ্য দিয় আমার লেখাকে চালাইতে মক্ষম হইয়াছে, সৈ কেবল তুমিই জান! তুমি ইহাকে ফিরাইয়। আনিপ্নাছ, তাই *প্রত্যাবগ্তন£ তোমার হাতেই দিলাম।

কলিকাতা ' আশীর্বাদিকা-_ ১ল। আশ্ষিন, ১৩২৯। দিছি

সুচন। 1৫ ২" গাধা টে পি 2 পা

| ৫8. 31. : শ্মশীনে চিত৷ জলিতেছিল ধূ-ধূ, ধূ-ধৃ-_ ১3৮

দিগন্ত-বিস্থত জলরাশি। পরপারের সীমার্রেখাকে অস্পষ্ট করি! _ যেখানে ছুইটি নদী মিলিত হইয়াছে, তাহা রই সঙ্গমস্থলে অনেকখানি বাঁসুর চর নদীগর্ভ হইতে তীরের-দ্রিকে খোলাজমির কৃষ্টি করিয়বাছে। গ্লেই বালুচরের উপর শ্মশানন্বাট। শ্মশানে তখন একটি মাত্র চিত! জলিতেছিল। সুর্য সবেমাত্র অস্ত গিয়াছে। ধূসর বর্ণের মেঘের ভিতর দিয়! অস্ত-ের্যর রাঙ্গা আলে। আকাশেও যেন চিতার আগুন ধরাইয়। দিয়াছে তরঙ্গহীন শান্ত নদীর জলে.তাহারই প্রতিবিষ্ব পড়ায় জলে-স্থলে-অস্তরীক্ষে যেন একই ভাবের সমধ্বয় চলিতেছিল। কধোপকথননিরত সহযাত্রী-দলের সঙ্গ এড়াইয় চিতার অদুরে' বসিয়া বে যুবক,--সে-ই আলস্ত চিতায় এইমাত্র জীবনের সমস্ত ঝুধ্ধাশী বিসর্জন দিয়াছে। তাহার বুকের মধ্যেও বুঝি চিতাবন্ধ এমনি লেমিহাননুধ্ মেলিয়াই অনিতেছিল। হকের, াদ শীত বন্যোপাধযায়। চিতায় যে দেহ নিতেছিল,

3. শরশানে

চি প্রত্যাবর্তন

আনিয়৷ চিত! ধুইয়৷ ক্লান করিতে গেল। গ্রাম-সম্পর্কে একজন গৌরী- পতির খুড়া হন,--তিনি কাছে আমিয়৷ গৌরীপতির কাধে হাত রাখিয়া! নাড়া দিয় তাহাকে সচেতন করিয়া কহিলেন,_”গৌরি, আর কেন বাবা, সব শেষ হয়ে গেল, এইবার স্নান করে বাড়ী চল।* গৌরীপতি এতক্ষণের পর যেন সসংজ্ঞ হইয়া আহ্বান-কারীর পানে চাহিয়। মৃহ্ষ্থরে কহিলেন, “খোকা-?1” খুড়ামহাশয় দূরে বৃক্ষতলে যেখানে কালী চাকর একটি স্থন্দর বালককে কোলে করিয়া দড়াইয়। ছিল, নেই দিকে অঙ্গুলি হেলাইয়। দেখাইয়া কহিলেন, “খোক! এঁ যে কানীর কোলে। তার নান হয়ে গেছে--ছেলে একবারও কীদ্‌ূল না, গোপাল আমাদের যেন. পাথরের গোপাল হয়ে গেছে-_আহাহা, কি লক্ষ্মীই আমরা হারালুম !” বলিয়। অকৃত্রিম বেদনার অশ্রসজল দৃষ্টি সন্তধৌত চিতার দিক্‌ হইতে ফিরাইয়! লইয়া গৌরীপতিকে একরকম জোর করিয়াই টানিয়া তিনি গান করাইতে লইয়! গেলেন। স্নান সারিয়৷ সকলে তীরে উঠিলে কালী অগ্রীসর হইয়া ছেলেটিকে গৌরীপতির কোলে দিয়! কহিল, প্ৰাদা, খোকাকে নাও-- 1” ছেলেকে কোলে লইয়। দুই হাতে তাহাকে বুকে চাপিয়। ধরিলে এতক্ষণের পর গৌরীপতির চোখ দিয়! শোকের তীব্র দাহ অশ্রর আকারে বরিয়া! পড়িতে লাগিল। দেখিয়া খুড়ামহাশয়-প্রসুখ সকলেই আশ্বস্ত হুইয়। ভাবিলেন, শোক এইবার সহোর সীমায় আসিয়! পৌছিক্লাছে।

প্রথান্ুসারে বালক গোপালকে দিয় সেই যে তাহার স্ৃতা জননীর দুখাগ্রি করানো . হইয়াছিল, তাহার পর দীর্ঘ সময়ের মধ্যে গোপা . একবারও কীদে নাই, একটিও প্রশ্ন করে নাই! শুধু বড় বড় ছট কালে৷ চোখের অপলক দৃষ্টি নির্বাক্‌ বিশ্বয়ে ভরিয়া জলস্ত চিতার গানেই চাহিয়াছিল। চিতা৷ জলিয়া৷ অলিয়। নিভিয়া গেল। শেষকাধ্য শেষ

সুচনা ₹ইল | তবু বালকের দৃষ্টি মন সেই একই দিকে নিবদ্ধ হইয়। রহিল। বাড়ী ফিরিবার সময় সে প্রথম কথা! কহিল, বলিল, “বাবা, মা যে একল। ইল!” প্রশ্নের জবাব গৌরীপতি দিতে পারিলেন না। অপর একজন কহিল, “না| গোপাল, ম1! একলা নেই ভাই, তিনি ঠাকুরের কাছে স্বর্গে চলে গেছেন কি না।” গোপাল দ্বিতীয় প্রশ্ন করিল নার কেবল সংশ'়ত বিল্বযব-ব্যাকুল চোখে মায়ের চিরানন্দময়ী মৃষ্টি-দগ্ধকারী নির্বাপিত তার পানে বন্ধ-দৃষ্টিতে চাহিয়া রহিল। মা স্বর্গে গিয়াছেন কথ। সে কেমন করিয়া মানিয়। লইবে? ন্র্গ--সে নীল আকাশেরও উদ্ধে কোন্‌ জ্যোতিন্মর আলোকের রাজ্যে ! সেখানে দিব্য বেশে দিব্য রথে চডিয়। বাইতে হয়। দেবদুতের পুষ্পমাল্য রক্ত-বন্ত্র ধারণ করিয়া! লইতে আমে যে! কিন্ত গোপাল নিজের চোখে দেখিয়াছে তাহার মাকে ইহারা . কাঠের ভিতরে চাপ। দিয়! আগুনে জবালাইর। দিয়াছে__বাবাও তাহাতে যোগ দিয়াছে-_আর গোপাল! নিজে তার ঘুমন্ত মুখে চুমা ন! খাইয়া, গল৷ জড়াইন়। তাহার বুকের ভিতর মুখ লুকাইয়! না থাকিয়া, লোক- গুলা তাহারই হাত ধরিয়। যে আগুনের জলন্ত আল! মার মুখে লাগাইয়া দিয়াছিল, সেই আগুনের খড় নিজের হাতে ছু ইয়াছে যেতবে!

দাহকারীর! বাঁড়ী ফিরিতেই ক্রন্দনের চাপা আওয়াজ উচ্চ হইয়। উঠিল, __*ওরে বাবা, আমার পোনার প্রতিম। কোথায় বিপঞ্জন দিয়ে এলি রে! আমার ঘরের লক্মীকে কার কাছে রেখে এলি রে বাপ--!*

গোপাল-মন্দিরের সেবায়েৎ গৌরীপতির ছোট-খাট মংসাঁরখানি অনেকের আদর্শ ঈর্ষার স্থল ছিল। স্বাস্থ্য, সৌনদ্ধ্য এবং বিস্ত। একাধাল্সে এই সংযোগ গৌরীপতিকে গ্রামের মধ্যে আদর্শ আখ্যা দিয়্াছিল। ্লেহময়ী সন্তান-বৎদল! জননী, . প্রেমী পত্থী, ৰাল-গোগালের প্রতিকৃতি তীঁহায় : বালক পুল্র গোপাল, ভগবানের অন্দর করুণারই দান বলিয়া মানিয়।

$ প্রত্যাবর্তন

লইয়া নিজেকে সে ভাগ্যবান মনে করিত। অতি ন্ুখ সহে না,--বিধির, এই উদ্তির সার্থকত। দেখাইতেই যেন কাল বিন্ুচিক! রোগ বারো ঘণ্টার মধো গৌরীপতির সাংসারিক জীবনের সুখ-শান্তি অপহরণ করিল ! সহধন্সিণী ছুর্গাদেবী স্ানে স্বামী শাশুড়ীর পায়ের ধুল৷ মাথায় লইয়া হাসিমুখে ্বর্গারোহণ করিলেন, মরণের পূর্বে সন্তানের মুখের পানে চাহিয়া যে দীর্ঘনিশ্বাস উঠিতে চাহিতেছিল, সাধবী সবলে তাহ! দমন করিয়! স্বামীকে অনুরোধ. করিয়াছিলেন,-_”গোপাল এত ছোটবেলায় মা-হার! হচ্ছে, ওকে তুমি আর একটি ম! এনে দিয়ো আমাদের মারও সেবার ক্রনটা যেন না হয়, দেখো ।* কথায় গৌরীগতি শ্িহরিয়া ইঞ্টদেবের নাম স্মরণ করিয়। বলিয়াছিলেন, “না! চুর্থা, এ-রকম অনুরোধ তুমি আমায় করে বেয়োনা, গোপালকে দিয়ে তুমি আমায় পিতৃ-ধণে মুক্তি দিয়েছ? গোপাণ আমার নার কাছেই সহস্র মায়ের ন্নেহ পাবে, আর মার জন্ত, আমি রইলেম। এখানকার বাকী কটা দিন এক্লাই আদার কেটে যাবে, তারপর--সেখানে তোমাকেই যে আবার আমি পাব!” কথার পর পরম-সুখে গ্বামীর পায়ে মাথ। রাখিয়! স্বামীসৌভাগ্যবত্তী যে নিশ্চি্ত নিশ্বাস ত্যাগ করিয়াছিলেন, মরণকালে তাহার মুখে যে গভীর নির্ভর “বিশ্বাসের চিন ফুটিরাছিল, সংসারের সহস্র ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়া অতি- জরত-অগ্রসর জীবন-ায়াছের প্রান্তে দীড়াইয়াও গৌরীপতি সে দৃষ্টি ভুলিতে পারেন নাই।

শ্মশান হইতে ফিরিরা গৌরীপতি শোকাকুল! মাকে ডাকিয়া রাহি লেন, “না, তোমার গ্লোপালকে নাও ।*

সর্বমঙ্গলা দেবী আঁচলে বারবার চোখ মুছিতে মুছিতে গোপালকে কোলে লইতে গেলে, সে ছুই হাতে দূঢ়তাবে বাগের গলা জড়াইয়! ধরি আপত্তির স্থুরে কহিল, “না, আমি বাবার .কাছে.থাকৃৰ।” বর

সূচনা % - আকাশে সাড়ম্বরে মেঘ জমিতেছিল দেখিয়! খুড়ামহাশয় সংসারের ক্অনিত্যতার চিরপুরাতন বাধ উপদেশ নৃতন করিয়। গুনাইয়! ধৈর্ধ্যাবলম্বনেনর পরামর্শ দিয়! চলিয়া গেলেন। অন্তান্ত সকলে বাহার! তখনে। পর্য্যন্ত উপস্থিত ছিলেন, তাহারাও সর্ধমঙ্গলা৷ দেবীকে আশ্বাস দিয়। ছেলের মুখ চাহিবার পরামর্শ দিদা! জানাইলেন যে, “যে ভাগ্যিমানি তপিস্তের জোরে গৌরীকে পতি পাইরার বর লাভ করিয়াছে» তাহার অনুঢা-কাল উততীর্ঘ হুওয়াতেই এই অল্প-ভোগিনী বধুটিকে এত-শীতর নিজের পদ ছাড়িয়া দির অনির্দিষ্ট পথে ৰাহির হইতে হইয়্াছে__এ যে বিধাতার বিধি-_মান্ুষের গড়. নয় ত! তবে হ্যা, যেমনটি যায়, তেমন কি আর হয়? না, অনময়ের ফলে সময়ের ফলের স্থাদ্র পাওয়। যার! ছেলের আবার বৌ হবে বটে, কিন্ত স্টাহার স্থখ আর হইবে না! উদাহরণের মধ্য দিয়া ইহাও তাহারা / জানাইয়। দিতে ত্রুটি করিলেন ন। যে, তেমন সুখের বরাতই যদি তাহার হইবে, তৰে এমন হূর্ঘটনা ঘটিবেই ব। কেন! পোড়া অদ্ট ধধন- নিজেই পুড়িয়্াছে, তখন অন্তের কাছে কিসেরই বা! গ্রার্থন৷ ! আর সে পাওয়াতেই বা কোন্‌ সার্থকত| ! যাই হোক অতঃপর মন বাধিয়! ছেলের রঃ চাহিবার ' উপদেশ দির! যে যাহার গৃহে চ'লয়া গেলেন। রাত্রেও গোপাল বাপের কাছ-ছাড়া হইল না। পিতার কল-শ্ারি রর তা্থাকে দুই হাতে জড়াইয়া সে শুইয়া রহিল। অনেক রাত্রি পর্যন্ত গৌরীপতি জাগিয়৷ ছিলেন। কৈশোর-যৌবনের কত অতীত স্থৃতি আজ যেন ছবির মত তাহার মনোদদর্পণে একে একে .ফুটিয়। উঠিতেছিল, আবার বীরে বীরে মিলাইয়! যাইভেছিল। মনে পড়িতেছিল, কৈশোরের সেই আনন্দময় অনাবিল জীবনে কত আশা, কত আকাঙ্কা-উদ্ভম, বিদ্তাশিক্ষার়্ * কি প্রবল অনুরাগ! আর তাহার শিক্ষক? ন্লেহমর উন্নত উদদার-হৃধয় কিতা, কত নহে, কভ কঠোর পরিশ্রমে তাহার সে শিক্ষাদান, তার পর

প্রত্যাবর্তন

কি আকন্থিক তার অকাল-মৃত্যু, সহার-হীনা শোক-কাঁতর! মায়ের দেদিনের সে মুখচ্ছবি তাহাকে কত লীত্ব ভীবনযু্ধে প্রলুন্ধ করিয়! শোক সহিতে সক্ষম করিয়। তুলিয়াছিল। তার পর ধীরে ধীরে আর একথানি চিত্র ফুটিয়া উঠিল। বিবাহের বর-কনে গৌরী ছূর্গ একত্রে মায়ের পায়ের ধূল! লইয়! যখন মাথ! তুলিয়া! দীড়াইল, মায়ের সেদিনকার বুর্গপৎ হর্ষ-বিষাদের মিশ্র চিত্র, ছই কোলে ছুই জনকে বদাইয়া চোখের জলে ভাসিয়া মা সেদিন বলিয়াছিলেন, «আজ আমার এত ছুঃখ সমন বেছে খাঁকা সার্থক হলে! গৌরী,-_তগবান্‌ তোদের ছুটিকে যেন কখনো জোড়- ছাড়া না করেন, এই আমার আশীর্বাদ!” বালিকা বধৃ--কেহ শিখাইয়। না দিলেও মার সে আশীর্বাদ কেমন সহজে অন্তরের সহিত গ্রহণ করিয়া!

. আপনা হইতেই তাহাকে প্রণাম করিয়া পায়ের ধৃল মাথায় লইয়াছিল। কি হইল আজ দুর্গীমণি! সে কামনা আজ অটুট রাখিতে পারিলে কই? হাসি-সুখে দিব্য চলিয়। গেলে ! চিরদিনের সঙ্গীটিকে সঙ্গে লইলে কই? এমনি সহস্র চিন্তা ধীরে ধীরে মানস-পটে ফুটিয়। আবার পরক্ষণেই ধীরে বীরে

* মনের মধ্যে মিলাইয়! যাইতেছিল। চিন্তা করিতে করিতে সারাদিনের ছঃখ-ক্রেশ-মধিত শোকাতুর চিন্ত কখন যে বিশ্রামদায়িনী ঘুমের মধ্যে শাস্তি পাইল, তাহা তিনি জানিতেও পারেন নাই।

সহসা বাহিরে প্রচণ্ড বঙ্জনাদের সহিত প্রবলধারে বৃষ্টিপাতের শবে ত্জা ভাঙ্গিয় যাওয়ায় গৌরীপতি তাড়াতাড়ি বিছান। হাতড়াইয়া ডাঁকিতে লাগিলেন, “গোপাল্--গোপাল--” মনে পড়িল, খানিক আগেও ঘুমের . ুর্বসুহূ্ত প্যস্ত গোপাল তাহারই কণ্ঠালিঙ্গনে তাহাকে ছুখানি বাছুবেষ্টনে

* জড়াইয়া রাখিয়াছিল ; হর তাহাকে ঘুমাইতে দেখিয়। মা! গোপালকে তুলিয়। লইয়া গিয়াছেন। তা'ই সম্ভব! আলন্তে অবসাদে শয্যা! ছাড়িয়া উঠিতে ইচ্ছা হইতেছিল না। তবু প্রচণ্ড ঝড়ে বাহিরে হুম্দাম করি

সুচনা

দরজা! খোল! বন্ধ হওয়ার শবে বাধ্য হইয়া গৌরীপতি বাহিরে আসি- লেন; আসিয়৷ দেখেন, কালীচরণ তাহার পূর্বে উঠিয়া দ্বার জান্লা বন্ধ করিয়া উঠানে যেখানে একরাশ শুকৃনে! কাঠ জলে ভিজিতেছিল, তাহারই উদ্ধার-সংকল্পে দাড়াইয়৷ আছে। গৌরীপতির সাড়। পাইয়! সর্বমঙ্গল। দেবী বাহিরে আসিয়া কহিলেন, "গোপাল ভর পাবে যে, তাকে একা। রেখে এলে গৌরী ? চল, ঘরে চল ।”

গৌরীপতি কহিলেন, "গোপাল কোথায় শুয়েচে মা? তাকে কখন, তুমি তুলে নিয়ে গেছ, আমি কিছু জানতেও পারিনি ।”

“আমি নিয়ে গেছি ! সেকি কথা-_” বলিয়। সর্বমঙ্গল। দেবী এক প্রকার ছুটিয়াই ঘরে ঢুকিলেন। জলে, ঝড়ে হারিকেন ল%নটি কখন নিভিয়া গিয়াছিল। অনুসন্ধান করিয়া দিয়া শলাই বাহির করিয়া গ্রদীগ জালিয়৷ মাতা-পুত্রে প্রতোক ঘর আতিপাতি করিয়া খু'জিলেন। কোথা গোপাল-_-? গোপাল নাই! শয়নে পূর্ব্বে কালী নিজের হাতে বাহির দ্বারে হুড়ক! লাগাইয়। দিয়৷ আসিয়া ছে, তবে দ্বার খুলিল কে? মুক্ত-বক্ষ কপাট ছুইথান। বাতাসের জোরে তাহাদের বুকের পাজরার উপর হাতুড়ির ঘ৷ দিয় যেন সশবে বুঝাইয়! দিতেছিল, এই পথ দিয়াই সে বাহির হইয়া গিয়াছে রে! সর্বমঙ্গল! দেবী গৌরীপতি পাগলের মত ছুটিয়া বাহিরে আদিলেন। প্রবল ঝড় আর সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি, চোখে-মুখে তীরের ফলার মত আপিয়! বিধিতেছিল-_বাহিরে দীড়ায় কাহার সাধ! পাঁচ বছরের ছেলে,_সে কি এই অন্ধকার রনত্রে এই ছূর্য্োগময়ী প্রকৃতির কোলে এক। বাহির হইতে কখনও সাহস করিতে পারে--না', না, অসম্ভব! তবু যদি সতাই সে তা! করিয়। থাকে? সারারাত একবার ঘর-_একবার বাহির--তন্ন তন্ন করিয়! খুঁজিয়া পরিচিত- পরিচিত অনেকের বাড়ী খোঁজ লইয়া গোপালের কোন সন্ধান পাওয়!

৯৮ প্রত্যাবর্তন

গেল না। ভোরের দিকে জল-বাড় কমিয়া সকালে বৃষ্টি থামিরা গেল এক রাত্রের প্রবল ধারাপাতে নদীর জল অনেকখানি বাড়িয়া ছোটখাট বালুচর গুলিকে ডুবাইয়! দিয়াছে। গৌরীপতির মনে পড়িল, গোপা” বরাতে একবার বলিয়[ছিল, “মার যদি ভয় করে বাবা-মা বদি ভাল হয়ে উঠে আমাদের খোজেন 1” তখন সে কথার তিনি জবাব দেন নাই অথব! কি-একটা দিয়াছিলেন, এখন আর তাহা! স্মরণ নাই কি জানি, মাতৃহীন বালক যদি সেই শ্মশানঘাটে মাকে খুঁজিতেই গিয়। থাকে ! সে পথ গোপালের অচেনা নয়, তীাহারই সহিত কতদিন পথ দিয়! বালক যে নদীতীরে বেড়াইতে গিক্াছে। প্রভাতে হুষ্যোদয় সায়াহে হূর্য্যান্তের অপরূপ সৌন্দধ্য মুগ্ধ নেত্রে চাহিয়া-চাহিম্বা দেখিয়াছে। যুক্তকরে পন্থরপতিভাগে রক্তিমরাগে--” প্রভৃতি স্তোন্র পাঠে পিতার মনে আনন্দ সিঞ্চন করিয়াছে তবু এই ঘনঘটাময়ী তামসী নিশীথে সে পথে বাহির হওয়া শিশুর পক্ষে কি সম্ভব? কেজানে! বদি সেতাই গিয়া থাকে ঘার অন্ধকারে অদাবধানে পিছল পথে চলিতে গিয়া! নদী-গর্ভেই পড়িয়া গিয়া থাকে ! গৌরীপতি শিহরিয্া উঠিলেন। সেখান হইতে গৌরী- পতিকে তাহার অমূল্যনিধির বার্তা কে আনিয়া দিবে! ক্ষুধিতা রাক্ষসী নদী গৌরীপতির প্রাণাধিকার চিত্ভন্ম মাখিয়াও বুঝি তৃপ্তি পায় নাই, তাই শ্রীতবক্ষে বিশ্বপ্রাসী ক্ষুধা লইয়। ছুটির়। অগ্রসর হই! আসিয়াছে!

পরদিন সন্ধ্যার সময় কালীচরণের সহিত গৌরীপতি যখন শৃন্তক্রোড়ে বাড়ী ফিরিয়া আদিলেন, সর্বামঙ্গল! দেখী সভয়ে চাহিয়! দেখিলেন, তাহার ছাবিবশ বছরের ছেলের মাথার সব চুলগুলি চবিবণ ঘণ্টার ভিতর একেবারে সাদ হইয়। গিয়াছে!

প্রথম পরিচ্ছেদ কুড়ান ছেলে

ইন্নাথ জমিদারের ছেলে।. পুরুযান্ু্রমেই ইহার! জমিদার ।. ষংশে কেহ কখনও পরের চাকরি-রুরে. নাই.। . বাণী-মন্গিরের দারেও কাহারো! পদধূলি বড় পড়ে নাই। জমিদারী রক্ষার জন্য যতটুকু বিদ্যার প্রয়োজন, গুহে মুন্সী রাখিয়। পগ্ডিত রাখিয়। ততটুকু শিক্ষা করাই গৃহের চিরন্তন নিয়ম। সাধারণ বিদ্যালয়ে সাধারণের সহিত একাসনে বসিক্ন৷ সামন্ত শিক্ষকের শাসন-তাড়ন! সহিয়া। শিক্ষালাভ কর! বংশের প্রথাই নয়।

ইন্রনাথ কিন্তু চিরদিনের নিয়ম উপ্টাইয়া। ইংরাজী শিক্ষার জেদ ধরিল। সতেরে। বৎসর পুর্বে ছুই বছরের শিশু পুক্রকে লইয়! কাত্যায়নী দেবী. যেদিন :এই বৃহৎ সংসারে অনাথ! হইয়াছিলেন, সেদিন সেই ক্ষুদ্র-শিশ্ডই স্টাহাকে সংসারের মায়াজালে বন্ধ করিয়! মৃত্ুকামনার হাত হইতে রক্ষা করিয়াছিল। তাহারই মুখ চাহিয়া স্বামী হারাইয়াও আবার তির্সি গৃহ- কন্মে মন দিস্মাছিলেন। নতুবা কিসের গৃহ, কাহার জন্তই বা সংসার? হারপর কত ঝড়ই না মাথার উপর দিয়! বহিয়! গিয়াছে! জমিদারীর কাজ-কন্ম বুঝিতে অনেক ক্লেশ সময় লাগিয়াছিল, তবু সবই তিনি সহিম্বাছিলেন সেই বংশধরের মুখ চাহিয়া, তাহারই ভবিহ্বাৎ ভাবিষ্বা। ছেলে বখন জেদ ধরিল, সে ইংরাজী শিখিবে, স্ুলে যাইবে, তখন বিমুখ-. চিত সহশ্রবার পিছনে ফিরাইলেও তাহার ঈন্দিত পথ তাহাকে যাইতে - দিতে মানা করিতে পারিবেন না। বংশের চিরদিনের নিয়ম-ভঙ্গে বিদেশী শিক্ষায় পাছে ছেলের অকল্যাণ হয়, সেই হরে অনেক দেবদেবীর .

১৪ প্রত্যাবর্তন

যানত করিয়া ছেলের মাথায় অপরাধের জরিমানার মূলা স্পর্শ করাইয়। পুজা! তুলিয়া! রাখিয়া মনে মনে দেব-দেবীদের উদ্দেশে তিনি বলিয়া ছিলেন, _-হে মা ছূর্গী,_হে বাবা! শিব, বাছাকে আমার ভালয় ভালয় ছায়ের পড়া সা্ক করাইয়া দাও, আমি ভাল করিয়! তোমাদের পৃজা! দিব_- 'অন্দির-চূড়! সোন। দিয়! বীধাইয়া দিব। মায়ের আশীর্বধাদে দেব-দেবীদের কপার নিজের চেষ্টায় ইন্দ্রনাথ তাহার ঈপ্লিত ফল লাভ করিয়! বিদ্বুৎ- সমাজে একদিন বরণীয় হইয়। উঠিল দেশবিদেশ হইতে অনেক মৃলাবান্‌ পুস্তক আনাইয়! সে গৃহে লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করিল এবং সময়ের তৃতীয়াংশ- ' কাল পরমানন্দে সেইখানেই কাটাইতে আরম্ত করিল।

মা এইবার বিবাহের জন্য জেদ ধরিয়। বসিলেন। ইন্ত্রনাথ হাসিয়। প্রত্যাখ্যান করিল--এই অধ্যয়নের পরমাননেই বাী জীবনটা! সে উৎসর্গ করিবে সংসারের শোঁক, রোগ, অভাব-অভিযোগের মধ্যে কোনমতেই সে নিজেকে নিক্ষেপ করিতে পারিবে না। প্রথম প্রথম অনেকদিন পরাস্ত অনুনয়, অনুরোধ, মানাভিমান অক্রবর্ষণের পর মাও হাল ছাড়িয়া দিয়া- ছিলেন। এত বড় বনিয়াদি বংশ--সেই বংশ-লোপের ভয়ও যখন উহার . নাই, তখন তিনিই 1 আর করিবেন কি? মনে করিলেন, তাহারই কৃত ককার্যের ফল। সম্তান-ন্েছে অন্ধ হইয়। চিরদিনের নীতি-পথ বজ্ঘন করি ছেলেকে বিদেশী শিক্ষা দিয় যে মহাপাপ তিনি সঞ্চয় করিয়াছেন, তাহার ভোগ তহাকেই যে ভূগিতেই হইবে! ইহার সহিত প্রবল অভিমানও জড়িত ছিল। মনে হইল, সংসারে আমি তবে কেহই নই, পেটের ছেলে, দেও পর হইল, এতটুকু দাও সখী করিল না! মনে করিলেন, বিবাহ “হয়ত করিবে, আমি বীচিয়। থাকিতেই করিল না! ইহার পর গভীর অভিযানে একেবারেই তিনি চুপ করিয়া! গেলেন। জ্ঞানাননে' বিভোর-চিত্ত ইন্রনীথ সপ্পর্ণ মুক্তি পাইয়া একবার মন্দিগ্ধ হইয়। ভাবিল, হইল কি?

প্রথম পরিচ্ছেদ ১১

মা বে বড় চুপ্চাপ্‌! তখনই নিজের অনুকূলে ধরিয়। লইল, মা এইবার তবে নিজের ভূল বুঝিতে পারিয়াছেন। যাক্‌ বাচ৷ গেল!

সে বংদর-_কংগ্রেসের পর ইন্্রনাথ বাড়ী ফিরিতেছিল। ফিব্িবার সময় স্থলপথে ন! ফিরিয়। জল-পথে ফির্িবার সে সংকল্প করিল। ইহাতে ট্রেনের গোলমাল ন। থাকায় মনের এবং জল-বিহারে শরীরের--এক চিলে' এই ছুই পাখী মারার উদদেশ্ত সাধিত হইতে পারে। মা খবর পাইয়া! লিথিয়। পাঠাইলেন, তীর্থের পথে যদি যাওয়া ঘটে তবে তিনিও সঙ্গী হইবেন। ইন্ত্রনাথের আপাততঃ তীর্থ ভ্রমণের সাঁধ ছিল না,--শুধু জল- বিহারে আনন্দ লাতের উদ্দেগ্তেই মে বাহির হইয়াছিল কিন্তু তাহাতেও বাঁধ। পড়িল, জল-পথে শরীরের উপকার না৷ হইয়া অপকারই হইতেছিল। বিরক্তচিত্তে ইন্্রনাথ অবিলম্বে বাড়ী ফিরিবার হুকুম দিরা।

ূর্বন্থাতে তযঙ্কর বড় বৃষ্টি হইয়া! সকাল বেল! আকাশ পাঁরিস্কার হইয়। গিয়াছে কোথাও মেঘের চিহ্নমাত্র নাই। নিস্তরগ্গ নদী-জলেও পূর্ব রাত্রের বিশ্ব-গ্রাসিনী ভীম! মৃদ্তির পরিচয় পাওয়া বাইতেছিল ন1। ঝড়ের সমম্ধ বজর! তীরে বীধিয়। ইন্্রনাথ সদলে আশ্রয়ের সন্ধানে তীরে- উঠিয়াছিল। কিন্তু নিকটে কোথাও লোকালয্বের চিহু না৷ দেখিয়া! গত)! ফিরিয়। আসিম। বজরা-বক্ষেই তাহাদের আশ্রয় লইতে হইয়াছিল। অনুপায়ে- রাত্রে কাহারও আহার হয় নাই। তাই সকাল বেল! সকলেই কার্ধো ব্যস্ত। কেহ রন্ধনের আয়োজনে ব্যাপৃত, কেহ কাছে কোন বাজার-হাট' আছে কিনা তাহারই তথানুন্ধানে নিধুক্ত, কেহ-বা নদী-জলে স্নানাি' করিতেছিল। ইন্্নাথ মুখ-হাত ধুইয। জলযোগান্তে তীরে-তীরে একটু ঘুরিয়। বেড়াইতেছিল। রাত্রে অন্ধকারে স্থানটিকে ভাল বুঝিতে পার! যায় নাই। এখন দিনের আলোক জনহীন স্থানটিকে নির্ববাসিতের দ্বীপের মত মনে হইতেছিল। নদী-তীরে বড় বড় গাছ --জশ্খ, বট, পাকুড়, আরও

১২ প্রত্যাবর্তন

নান! জাতীয় বৃক্ষ, ছোট গাছগুলির অধিকাংশই কোথাও ভগ্ন, কোথাও অর্ধভগ্র। পুরাতন শিকড় বাহির-কর। বড় বড় গাছগুলি কেবল প্রকৃতির বিভীষিকার প্রতি তীব্র উপেক্ষ। প্রদর্শন করিয়া সমভাবে সতেজে দীড়াইরা আছে। ইন্ত্রনাথ লক্ষ্যহীনভাবে তীরে তীরে ঘুরিয়। বেড়াইতেছিল। কখন শান্ত নদী-বক্ষের পানে চাহিয়! দুর্ধযাগমরী রজনীর তাণ্ডব নৃত্যের সহিত মানব-চিত্তের ক্ষণ-পরিবর্তননীলতার তুলন1 করিতেছিল। সহস! চিন্তাসত্ ছিন্ন হইল,--নদী-তীরে একেবারে জলের ধারে ঝুকিন্। পড়া! একটা বৃহৎ বটগাছের শিকড়ের ফাঁকের ভিতর কি পড়িয়া রহিয়াছে? কাছে গিয়া! ভালে করিয়! লক্ষ্য করিতেই ইন্ত্রনাথ বুঝিলেন, তাহার অনুমান মিথ্যা নয়--একটি ছোট ছেলে। হয় গতরান্রির ঝড়-জলে নৌকাডুৰি ৰা অমনি কোন কারণে জল-মগ্ন হইয়। বালক স্রোতে ভাসিয়৷ এখানে আসিয়া বৃক্ষ- কোটরে আবদ্ধ হইয়। গিক্াছে। ছেলেটি বীচিয়া আছে কি ন! বুঝিতে গার! যায় না। শ্বাসগতনের চিহ্ন ছিল না। সারারান্রি জলে ডুবিয়! থাকায় হাত-পা-মুখ সমন্তই কুষ্চিত বিবর্ণ দেখাইতেছিল, তবে ৰিরুত হয় নাই। গাছের ফীঁকে ফাকে শাখার আড়াল দিয়! ফেটুকু বৌপ্রালোক আসির়! তাহার মুখে পড়িয়াছিল, তাহাতে মর্দ মুদ্তির মুখে যেন জীবনের রক্ত-আড। জাগাইঙ্া তুলিয়া ছিল। ইন্দ্রনাথ কাছে বসিয়৷ ছেলেটিকে : নাড়িয়। চাড়িয়া দেখিল, নিশ্বাস নাই-_বক্ষম্পন্ননও থামিয়া গিয়াছে। বুকের উপর কান পাতিয়া অনেকক্ষণ পরে মনে হুইল, বুঝি শ্বাস আছে, অতি ক্ষীণ, অতি অম্পষ্ট, তবু হয় আছে! চেষ্ট! করিলে এখনও হয় এই মৃত-দেহে পুনরায় জীবন সঞ্চার করিতে পারা যার়। পু'খিগত বিদ্বার ইন্্রনাথের অভাব ছিল ন!। ডাক্তারি শান্ত্রও সে অনুশীলন করিস্নাছিল। জলমগ্নকে বাচাইবার জন্য যে যে প্রক্রিয়ার প্রয়োজন, তাহার নমত্যই সমাধা কর! হইল। ছেলেটিকে সাবধানে ব্রা তূলিয়৷ আন] হইণ, এবং দূর

প্রথম পরিচ্ছেদ ১৩.

গ্রাম হইতে একজন বিচক্ষণ চিকিৎমককেও পাওয়া গেল সমবেত বত চেষ্টার ফলে একটু একটু করিয়! ছেলেটির মৃতদেহে যেন জীবন-সঞ্চায় হইল। ধীরে ধীরে প্রথম সৃর্য্যোদয়ে বিকশিত কমল-কলির মতই সে তাহার পদ্মপলাশ চক্ষু ছুটি উন্নীলন করিয়। চারিদিকে বিহ্বলের মত চাহিয়! দেখিতে লাগিল। সে দৃষ্টিতে ভ্ঞানের উন্মেষ দেখিতে পাঁওরা.. গেল ন|। সস্তজাত শিশু-ৃ্টির ন্যায় তা স্বচ্ছ নির্শল ভাবহীন। ইন্তরনা্থ আশাতীত আনন্দ-লাভে পুলকিত-চিত্তে ছেলেটিকে বুকে ডি ধরিল। তাহার জল-যাতর! সার্থক হইয়াছে।

এই ছেলেটির জন্যই তাহা দের বাড়ী ফিরিতে আরে! কিছু দিন বিলম্ব হইয়! গেল। ছেলেটি অত্যন্ত ধীরে ধীরে স্বাস্থোর পথে অগ্রসর হইতেছিল.। . ক্রমে সে সম্পূর্ণ নুস্থ হইয়! চলিয় ফিরিয়! বেড়াইতে সক্ষম হইল। ইন্দ্রনাথ, চিকিৎসক অন্ত সকলেই বুঝিলেন বে, তাহার পূর্বশ্থাতি একেবারেই নষ্ট হইয়া গিয়াছে। তাহ পুনরায় আয়ত্ত হইবার আর কোন আশ! নাই। নুতন করিয়া তাহাকে ভাষা হইতে সকল বিষয়ই শিক্ষা দিতে হইবে। অতীত জীবনের উপর যে কালো যবনিক। পড়িয়া গিয়াছে, তাহ। উত্তোলন কর! এখন আর চেষ্টার দ্বারা! সম্ভব নয়। নিজের কথ সে কিছুই জানাইতে পারিল না, নাম, জাতি, গোত্র, দেশ,__এ-সব কথা! কে জানাইবে? বালকের দেহে সে যে শিগুর জীবন লাভ করিয়াছে! ইন্দ্রনাথ কাছা- কাছির মধ্যে তিনি-চারি-খানি গ্রামে খোঁজ লইলেন, কে তাহার সম্বন্ধে কিছু বলিতে পারিল না। ছেলের ফিরিতে বিলম্ব হওয়া কাত্যায়নী দেবী ব্যাকুল হইয়। তাড়া দিয়! পত্র লিখিতেছিলেন। আর বিলগ্ব কর! অন্থুচিত ' বুৰিয়া ইন্দ্রনাথ ভবিষ্যতের জন্য অনুসন্ধানের ভার তুলিয়া! রাখিয়! আপাততঃ বাড়ী ফিরিবায় দিকে মনঃসংযোগ করিল। ইন্্রনাথ ফিরিয়া আসিলে, কাত্যাক্নী দেবী দেখিলেন যে একটি বছর পাঁচ-ছয়ের ছেঝেকে সে সঙ্গে

5১৪ প্রত্যাবর্তন

লইয়া আসিয়াছে। ছেলেটির বিষয়ে ইন্দরনাথ পূর্বেই তাহাকে পঞ্তে সংবাদ জানাইয়াছিল, তাই বিস্মিত না হইলেও তিনি মুগ্ধ হইলেন। ছেলেটির কীচ। মোনার বণ, হুন্দর মুখ, বড় বড় কালে! চোখে অর্থহীন দৃষ্টি-_ প্রচণ্ড বাত্যাপীড়িত পত্র-পুষ্পহীন শ্রীহীন তরুর মত শীর্ণ দেহ সহজেই মানুষের চিতকে আকুষ্ট করিয়া নিজের দিকে ফিরায়। ছেলেটিকে মার কোলে _ দিয়! ইন্ত্রনাথ হাসিনা কহিল, “তুমি ছেলে চেয়েছিলে মা, তাই ভগবান্‌ : একে আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়েচেন__এ আমারি ছেলে ।* মা দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া ছেলেটিকে কাছে টানিয়া৷ তাহার গাঁয়ে মাথায় হাত বুলাইয়৷ কহিলেন, "আহা, কার বাছ। কোল খালি করে এলো বরে! আহা, ধন হারিয়ে বাপ্‌ ম! যে বুক ফেটে মরে যাবে ইন্দু,কি করে তার! মনকে প্রবোধ . দিয়ে জীবন ধারণ কর্বে, বাব। ?* ইন্দ্রনাথ ছেলেটির উদ্বেগহীন শান্ত মুখের পানে চাহিয়া চিত্তিত-মুখে কহিল, “তারাই কি বেঁচে আছে মা, তোমায় তা বিথেছিলুম, আগের রাতে ভয়ানক বড়-বৃষ্টি হয়েছিল। হয়ত নৌকাডুবি হয়ে তারা৷ মারাই গেছেন। এও কি বাচত? তুমি যে বল মা, রাখে কৃষ্ণ মারে কে, তা খুব সত্যি মা। ভগবান্‌ নেহাৎ একে বাঁচাবেন বলেই বাচিয়েছেন। নৈলে তেমন জায়গা আমরাই ব! বজরা! বাধতে গেলুম কেন? সহর নয়, গী। নয়, কিছু না, একেবারে একট! পতিত জমি। ইচ্ছে করে সেখানে কেউ কখনো নামে না। নেহাৎ ওর আয়ু আছে বলেই না! ডাক্তাররা বল্ছেন ক্রমে ক্রমে আবার ওর জ্ঞান-বুদ্ধি ফিরে আস্তে পারে, কিন্ত পর্ব-স্থৃতি হয়ত কখনও ফির্বে না।” . '... কাত্যায়নী দেবী. সনিশ্বাসে বলিলেন, “কি জাতের ছেলে, তাও বোবা। গেল ন1।” ইন্দ্রনাথ হাসিয়৷ কহিল, “বল্লেম মা, আমার ছেলে, তখে আর কি জাত হবে! ওর গলায় একটি রক্ষা-কবচ ন! কি ছিল সেট খুলিয়ে বিশেষ কিছু আবিষ্কার কর্তে পাঁরিনি। তবে কি শর্মা--এইটুকু

প্রথম পরিচ্ছেদ ১৫.

পড়তে পারা গেছল। ভূর্জপত্রটুকু অনাবস্তক ভেবে এমন করে শু'জে দেওয়! হয়েছিল ষে একেবারে গু'ড়ো৷ হয়ে গেছে। মাধাতেও ছোট একটি 'শিখ। ছিল--আমার ছেলে যে! বামুন ন৷ হয়ে যায় কি!»

উচিত-বোধে ইন্ত্রনাথ কিছুদিন সংবাদ-পত্রে ছেলেটির সম্বন্ধে একটি বিজ্ঞাপন ছাপাইয়৷ দিয়াছিল। দিন, সপ্তাহ, মাস কাটি! ক্রমে বৎসর 'ঘুরিয়া৷ গেল, কেহই সংবাদ লইতে আসিল না। ক্রমে চিন্ত! ইন্ত্রনাথ কাত্যায়নীর মন হইতে একেবারেই দূরে চলিয়৷ গেল, বরং ইদানীং মনে . করিতে ভয় হইত, পাছে কেহ সহসা কোনদিন আসিয়। তাহাকে দাবী করিয়া'বসে! অরুণকে ছাড়িয়া তাহারা বাস করিবেন কেমন করিয়া। সে যে কাত্যায়নী দেবীর অন্তরের কতখানি অংশ দখল করিয়! বসিরাছিল, তাহ ভাবিয়া তিনি সময়-মময় আশঙ্কিত হইয়া উঠিতেন। ভরত রাজার মুগশীবক-গ্রীতির ন্তায় তাহারও শেষ-জীবনে কি ছুশ্ছেন্ত, মায়া-জালের বেষ্টন লাগিল! তবু জাল ছিন্ন করিয়া মুক্তি পাইতেও ইচ্ছা! হয় না। ইহাকে স্নেহ করিয়া ভালবাসিয়া, ইহার আবদার-বায়ন। শুনিয়া যে তাহার বন্ধন-প্রার্থী হৃদয় তৃপ্ত হইতেছিল। ছেলে সংসারী হইল না, ছুঃখ অহরহ কণ্টক-ক্ষতের স্তায় মনের ভিতর অলিতে থাকিলেও মুখে কখন আর সে কথ! প্রকাশ করিতেন ন|। সে যখন ইচ্ছ! করিয়াই তাহাকে দুঃখ দিতে বন্ধ-পরিকর, সাধ্যসবেও সে যে তাহার সংসারের কোন সাধ মিটাইতে দিল না» ছুঃখ কি আর ভুলিবার! মনে পড়িল, একদিন অত্যন্ত জেদাজেদি করায় ইন্দ্রনাথ বলিয়াছিল, সাধ করিয় কেন কষ্ট ডাকিয়া আনিতে চাও মা, আমরা মারে-ছেলেয় বেশ আছি। পরের মেয়ে গে কি তোমায় বুঝিবে, না তোমার উচিত মান্ত-্রদধ! দিতে পারিবে! গভীর অভিমানে সেদিন কাত্যায়নী দেবী নির্বাক হইয়! গিয়াছিলেন। মনে হইয়াছিল, ছেলে তবে তাহাকে এইকূপই বুঝিয়াছে। হায়রে, তিনি

১৬ প্রত্যাবর্তন

কি তার সাতরাজার ধন সাগর-সেঁচ মাঁণিক ইন্দুর বৌয়ের মান্য-তক্কিবই কাঙ্গাল! নাই বা করিল সে তাহার সম্মান ! তবু সে তীাহারই বুকের ধন, ইন্দুর বৌ! তীহার পতিকুলের, ভবিষ্যৎ বংশ-রক্ষকের জননী হইবে 4 অভিমানের অশ্রু অঞ্চলে মুছিয়। কাত্যায়নী দেবী মনে মনে উদ্দেশে পুত্রকে আশীর্বাদ করিয়া! কহিলেন, “মার সাধ, ইন্দু তুই বিয়ে করে ছেলের বাপ হোন, নৈলে কেমন করে বুঝবি, ছেলে কি জিনিস 1” সঙ্গে সঙ্রে মনে হইল, হম্নত সে প্রাধিত দিনও আসিবে, কেবল ছুর্তাগিনী, তিনিই ভাঙা দেখিয়া। বাইতে পারিবেন না।

অরুণকে পাইয়৷ কাত্যায়নী দেবীর মনের ক্ষোভ দুধের অভাবে ঘোলেই অনেকটা মিটিয়াছিল। ইন্ত্রনাথের ইচ্ছান্ুসারে অরুণ তাহাকে বাব! বলিয়া ডাকিত। কিন্তু বিন৷ উপদেশেই সে কাত্যায়নীকে মা বলিচ্ছে নুরু করিয়াছিল। ইন্ত্রনাথের কড়। হুকুমে কেহ কখনও তাহার ব্অতী জীবন সম্বন্ধে কোন আলোচনা করিতে পাইত না। জমিদার-পুল্দের মতই. তাহার শিক্ষার বন্দোবস্ত হইল; দেখিয়া-শুনিয়। সকলেই মনে করিল, ইন্্রনাথ নিশ্চয় ছেলেটিকে পোষ্যপুল্র লইবে। অরুণকে পাইয়। কাত্যারনী দেবী ছেলের দিক হইতে অনেকখানি মন সরাইয়া। 'লওয়ায় ইন্্রনাথও খুসী হুইয়াছিল। মাও কাজ পাইলেন, তাহার সংসার করা, ছেলে মান্থুষ করার সাধ মিটিবার একটুও যে অবসর মিলিল, ভালই হইল। ইন্দ্রনাথও এইবার নিশ্চিন্তভাবে নিজের ইচ্ছামত পড়াশোনা লইয়া! থাকিতে পারিবে

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

ভাগ্য-পরিবর্তন

মানুষের ইচ্ছা, তাহার নিয়তি কখনো! সামগ্রসত রাখিয়া! চলে না। কিছুদিন হইতে ইন্ত্রনাথের অল্প অল্প জর হইতেছিল। বিকালের দিকে চোখ জাল! করে, মাথ। টিপ্‌ টিপ্‌ করে, আবার সন্ধ্যার পর বা রাত্রে সে ভাবটা কাটিয়! যাক়। স্বভাব-শিথিল ইন্দ্রনাথ বুঝিতেছিল,-:এ ভাবটা ভাল নয়! অল্প একটু কাশিও সময় সময় দেখা যায়-তবু গঁদীসীন্ঠ বশতঃ এ-সব সে গ্রাহ করিল না। মা তাহার এই অক্ষুধা, কার্যে আলম্ত শারীরিক শীর্ণতা স্পষ্ট বুবিতেছিলেন। বলিলে ইন্দ্রনাথ হাসিয়। বলিত, “মার কেবল ভয় ! তুমি যে কেবল ছায়ার পেছনে ছুটতে চাও” বণিয়! মাকে সে থামাইয়া। দিত। সে নিয়মিত ন্নানাহার করিত; সারাদিন প্রত্বতত্বের গবেষণ! চলিত, পড়া আর লেখা, লেখা আর পড়া-- ইহারই কেবল সময়াভাব ছিল না-_আলম্তও ছিল না--বরং শরীর বত খারাপ হইতেছিল, গ্রন্থ-রচনার উৎসাহ সেই পরিমাণে বাড়িয়াই চলিতে- ছিল। কাত্যায়নী জোর করিয়! ডাক্তার আনাইলেন-_ডাক্তার বিধিমত পরাক্ষান্তে যে রিপোর্ট দিলেন, তাহা! বিনা-মেঘে বজ্রাঘাতের চেয়েও আকম্মিক অপ্রত্যাশিত। ডাক্তার বলিলেন, রোগ কঠিন। শু তাই নঃ মৃত্যুর দূত একেবারে ঘারে আসিয়া দীড়াইয়াছে। | . কাত্যায়নী বা ইন্দ্রনাথ কাহাকেও রোগের বিস্তারিত বিবরণ জানানো হুইল না) যথাসম্ভব সংক্ষেপে সহজ করিয়া বলা হইল। তবু

১৮ প্রত্যাবর্তন

ডাক্তারিতে অভিজ্ঞ ইন্দ্রনাথ চিকিৎসার ব্যবস্থা ওবধাদি দেখিয়৷ অনেক- খানি অনুমান করিয়া লইয়া! নায়েবকে ডাকিয়া উইল করিবার ইচ্ছ! প্রকাশ করিল। থবর শুনিয়া কাত্যায়নী মাথ! কুটিয়৷ মাথ৷ ফুলাইয়। ফেলিলেন। দেব-মন্দিরে নিত্য-পুঁজার বরাদ্দ বাড়াইয়! দিলেন, নায়েবকে ডাকাইয়া জানাইলেন, উইল-টুইল করা৷ হইবে না। যাহাদের বয়সের গাছ-পাথর থাকে না, গঙ্গা-পানে প1 বাড়াইয়। রহিয়াছে, তাহারাই গুধু উইল করে-_ তাহার সোনার চাদ অন্ধের বষ্টি ইন্দুর কি এখন উইল করিবার বয়স! এই সব অনাচার ঘটিতে দিলে তাহার সাগর্রসেঁচা মাণিকের অকল্যাণ ঘটিবে। দেওয়ান ইতস্ততঃ করিতে লাগিলেন--ছু'দিন ন। হয় দেরীই হইবে, কর! যাইবে কি--! গৃহ-কত্রীর আদেশ অমান্ত করা যায় না? তাড়া- . স্াড়িই বাকি এমন! কিন্ত তাড়াতাড়ি তাহাদের ন৷ থাকিলেও অন্তাত্র যে ছিল, তাহা শীত্রই স্পষ্ট বুঝ গেল। একদিন সন্ধ্যার সময় রোগ-যন্ত্রণার ছট্ফটু করিতে করিতে ইন্দ্রনাথ কহিল, “মা, আমি তোমার অবাধ্য অকৃতজ্ঞ সন্তান,_ কেবল তোমায় ছঃখ দিয়েই গেলেম, সুখী কর্‌তে পার্ুলেম না ।” কান্যায়নী উচ্ছ্বসিত আবেগ সবলে দমন করিয়৷ অর্ধাবরুদ্ধ-কণ্ঠ কহিলেন, *ইন্দু, বাব আমার, তোমায় পেয়ে আমি যে কি অমূল্য নিধিই পেরেছি, দে কেবল আমিই জানি, বাবা। তুই যে আমার নারায়ণেরে! উপরে ব্ে--তাকেও যে আমি প্রাণ ভরে কখনো ডাকতে পারি নে। তোর ভাবনাই আমার সবার উপর ।” ছেলের রোগশীর্ণ হাতখানি কাত্যায়নী বুকে চাপিয়া রহিলেন। ইন্রনাথের দুদিত চোখ দিয়া ছুই ফৌট। জল গড়াইয়। পড়িল। সে. বলিল, “বড় ভুল করে ছিলে, মা, কাচের পুতুল পেয়ে বুকের ঠাকুরকে মাটাতে বমিয়ে ছিলে, তাই ঠাকুর আমার ভালর জন্তেই সে তুল সুধ্রে দিলেন-_

ছ্বিতীয় পরিচ্ছেদ ১৯

'আবার শীপ্তই আমর! একত্র হ'ব, মা_কিন্ক অনাথ-_-” কাত্যাম্ননী দাত 'দিয়। জোর করিয়া ঠোট কামড়াইয়া কষ্টে কানা চাপিবার চেষ্টা করির! কহিলেন, "তুই ভাল হয়ে ওঠ ইন্দু, আমি ফাশী গিয়েই থাক্ব। বিশ্বনাথের চরণে আমার সব লোভ সঁপে দেব বাবা,_সংসারের মায়। আর কোনদিনও কর্ৰ না”

“না, না, কাশী যাওয়া তোমার আর হবে না, তুমি বল, আমি চলে গেলেও__ওকে, শ্রী অভাগা ছেলেটাকে তুমি ফেল্বে না,-ওকে তুমি মানুষ করে তুল্বে-বল? ওর জন্তে যা ভেবে রেখেছিলুম, তার কিছুই করে যেতে পার্নুম না। তবু তার জন্তে আমার সব--”

বাকী কথ আর বলা হইল ন|। একটা আকম্মিক বেদনা “কিছুক্ষণের জন্ ইন্ত্রনাথ অভিভূত বাকৃশক্তি-রহিত হইয়া ব্হিল। তা*রপর কতক জ্ঞানে কতক: অজ্ঞানে আরও ছুইটা দিন একট! রাত্রি কাটিয়া! গিয়া দ্বিতীয় দিনের সন্ধ্যায় পরম শাস্ত-মুখে শান্তভাবে ইন্দ্রনাথের আত্ম। অনন্ত শান্তিতে মিলাইয়া গেল। ইন্দ্রনাথের অপ্রকাশিত মনের ইচ্ছা-- অরুণের ভাগ্য-নির্ণয় অমীমাংসিতই রহিয়। গেল। সম্বন্ধে কেহ কোন কথা স্মরণ করাইয়া! দিল ন।, ইন্দ্রনাথেরও স্মরণ হইল না।

ইন্্রনাথের মৃত্যুতে দেশের লোক হার়-হায় করিয়া অনেকে বলিল, এমন জমিদার আর হুইবে না। পরের অন্ত ভাবিতে, দীন-ছুঃখীকে দয়! করিতে, সুখে হুঃখে সহান্ুভূতিতে সকলের সহিত সম-চিত্ততায় দেশের জন্য দশের জন্ত ভাবিবার লোক এমনটি আর জন্মাইবে না। প্রজারা৷ তার সত্য সত্যই সন্তান ছিল, আজ তাহার! পিতৃ-হীন হইল। সংসারে এইটুকুই বিচিত্র--যে দশের জন্য ভাবিত, সে কেবল নিজের জন্ত ভাবে নাই!

শ্রান্ধ শান্তি মিটি গেলে বিশ্মপ্নের সহিত লোকে সুনিল, জনিদার ঝানপত্র ব৷ উইল কিছুই করিয়া! যান নাই। তাহার চরম ইচ্ছা, মনে মনে

নও প্রত্যাবর্তন

সকলে জানিলেও মুখের কথ৷ কিছুই কেহ পার নাই। ইন্ত্রনাথের দূর- সম্পর্কীয় জ্ঞাতি ভ্রাত। আলোকনাথ তাহার শ্রান্ধাধিকারী | উত্তরাধিকার- সুত্রে সেই এখন বিষয্বের মালিক পুত্রের প্রীকাস্তিক ইচ্ছ কাত্যায়নীর জান। ছিল, তবু আলোকনাথের দলের কাছে তাহার আনীত উকিলের সাক্ষাতেও তাহাকে অন্তের অনুরোধে একথা স্বীকার করিতে হইল সনে সমস্ত বিষন্ন অরুণকে দিতে হইবে এমন কোন আদেশ মুখে বলিবার অবসর ইন্দ্রনাথ পায় নাই। শ্বশুরকুলের বংশকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত করিয়৷ অজ্ঞাত" "কুলশীল একট! পথের ছেলেকে সমস্ত সম্পত্তির মালিক কর কাত্যায়নীর ধর্মজ্ঞানেও বাধিতে ছিল। তবু ইন্দ্রনাথের মনের ইচ্ছ। তিনি ভাল রকমই বুবিয়াছিলেন। কিন্ত এখন যে-কথার লিখিত মূল্য নাই, সাঙ্গীসাধুদ নাই, সে কথা কেই বাকানে তুলিবে? আর তুলিবেই বা কেন? যে বংশের তিলক, যাহার হাতে জল-পিও মিলিল এবং ভবিষ্যতে মিলিবর আশাও রহিল, তাহাকে বাদ দিয়! অচেন। অজানা পথে- কুড়ানে--কে জানে হয়ত যাহার জন্ম রহস্ত অনাবিদ্কৃত থাকাই তাহার পক্ষে মঙ্গলের হেতু,তাহাকেই কি না করিতে হইবে এত-বড় সম্পত্তির মালিক! যেন ঘুঁটে-কুড়ানীর পুত্রকে রাজহস্তীতে গুড়ে তুলিয়া রাজপাটে বসাইর়। দেওয়ার মতই। ইংরাজী-শিক্ষিত সাহেবী চাল-প্রাপ্ত বংশগৌরব-বিস্থৃত ইন্দ্নাথ যাহ। করিতে পারিত- ন্তায়-বিচারক ভগবান্‌ তাহ পারেন নাই, তাই মরণকালে জমিদারের মাথায় শুভ বুদ্ধি দিয়া তিনি মহ পাপ হইতে তাহাকে রক্ষা করিয়াছেন, আলোকনাথকেও বীচাইয়। দিয়াছেন! নহিলে নিরপরাধ দে বেচারা একেবারেই ডুবিয়াছিল। ফলে এতবড় রাজসংসারে অরুণের মাথ| গু'জিবার মত এতটুকুও স্থান রহিল না। জমিদারের পালকপুত্র একদিন থে পোদ্বপুত্রবূপে বিষয়াধি-. কারী হইবে বলিয়! শত্র-মিত্র কাহারো মনে সংশয় ছিল না,--আজ তাহার

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ ২১

সম্বন্ধে ব্যবস্থার এই অভাব দ্রখিক্া মকণেই বিশ্বয়ে মনে করিল, “এ হইল কি?” কেহ আস্তরিক কেহ বা মৌখিক সহানুভূতি দেখাই অঞ্ণকে 'জানাইলেন যে তাহার এই অপূর্ব ভাগ্যবিপরযযয়ে তাহার! মকনেই ছুঃখিত। ইহার পর তাহাকে ভাগ্যপরীক্ষার চরম অবসর দিয়! ইন্রনাথের মৃত্যুর দ্বাদশ দিবসে কাত্যায়নী দেবীরও সকল জ্ঞালা-বনত্রণা জুড়াইয়। অকন্মাৎ মৃত্য হইল। ইন্দ্রনাথের মৃত্যুতে কাত্যায়নী দেবীর বুক ভাঙ্গিয়া গিয়াছিল ক'দিন অর্ধ'অটৈতন্তের স্তায় অভিভূতভাবেই তিনি পড়িয়াছিলেন। বাহিরে কে কি বলিতেছে, কোন কথাই তাহার কাণে প্রবেশ করিতে- ছিল না। দেওয়ান অনেক বার তাহাকে কর্তব্য চিন্তা করিতে অনুরোধ করিয়াছেন, তিনি তাহ৷ শুনিয়াছেন মাত্র, চিন্ত। করিবার শক্তি পর্যন্ত ছিল না। কেবল মধ্যে মধ্যে যখন ক্রন্মনস্ফীত চক্ষে শ্লান-মুখে অরুণ স্মাসিয়৷ নীরবে তাহার গ! ঘেসিয়! কাছে বসিতেছিল, তখনই তাহার, মনে গড়িতেছিল, সংসারের সহিত সব সম্বন্ধ এখনও তাহার বিচ্ছিন্ন হইয়! যায় নাই, কিছু বাকী আছে। ইন্ত্রনাথের নয়ন-মণি এই অনাথটার জন্ত আবার একবার তাহাকে এত বড় আঘাতের পরও খাড়া! হইয়া উঠিতে হইবে। আবার বিষ়-মম্পত্তির কথা গুনিতে হইবে, বলিতে হইবে। হয়ত আদালত পর্য্যন্ত মামল! লড়িতে হইবে আর একদিন এমনি এক দারুণ শোকের * ঝড়ে ভাঙ্গিয়। পড়িয়াও তাহাকে গ! ঝাড়িয়া উঠিতে হইগ্লাছিল। তবু সে- দিন বয়সের অল্পতায় ভবিষ্যতের আশায় অবসাদ-গ্রস্ত চিত্তেও নব বলের অবিভাব হইয়াছিল। কিন্তু এখন জাগ্রস্ত বাহুতে মে বল তো৷ আর নাই! ইন্দু যে দেখানাকে তাঙগিয়া গু'ড়া করিয়া দিয়া গিয়াছে! নব চিন্তার সমাধান আর তাহাকে করিতে হইল না, ভগবান্‌ সকল চিন্তার অবসান করিয়৷ দিয়। তাহাকে মুক্তি প্রদান করিলেন।

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

সমস্যা

উপকথা শুন! যায়, যাছকরের মান্নাষষ্টি-স্পর্শে রাজপ্রাসাদ অকম্মাত এক বিশাল অরণ্যে পরিণত হইয়। গিয়াছিল! অরুণের ভাঁগ্যও তেমনি অপূর্ব উদাহরণ দেখাইল'। ইন্্নাথ কাত্যায়নীর মৃত্যুতে যে শোকের ঝড় তাহার উপর দিয়! বহিয়া গেল, তাহ। গুধু তাঁহাকে মোহাচ্ছন্ন করিল না, সে ঝড় তাহাকে উড়াইয় ধূলি-মলিন অনাবৃত পথের প্রান্তে ফেলিয়া দিয়া গেল। গভীর নিশখে স্বজন.বেটিত নিশ্চিন্ত হ্থখ-শব্যার নিপ্রিত লোক যদি ুম ভাঙ্গিয়া চাহিয়া দেখে, অগ্নিতগ্ত বালুকাময় মরু-প্রদেশে কেবল এক! দে পড়িয়া আছে, তখন নিজের অবস্থ। প্রথমটা তাহার স্বপ্র বলিয়া ভ্রম হয়। অরুণের মনে হইল, সে বুঝি চোখ চাহিয়া! তেমনি স্বপ্র দেখিতেছে ! সে শুনিঅ-_ইন্দরনাথের মরণে সে পিতৃহীন হয় নাই। শুধু আশ্রিত :আশ্রয়দাতাকে হারাইল মাত্র__সে তাহার সস্তান নয়, রক্ত-সন্বন্ধীয় আত্মীর নয়,_সে অজ্ঞাত-পরিচয় অনাথ। আলোকনাথের দলের কাছে দে জানিল, ইন্দ্রনাথ তাহাকে স্বগোত্রে উন্নীত করিয়া! লইলেও লোকে তাহ! স্বীকার করিয়া লইবে ন1। দেশের দণড-মুণ্ডের মালিক হইয়া তিনিই যদি সমাজের উপর বথেচ্ছ ব্যবহার চালাইতে চান, তবে অপরেই ঝ৷ স্থুবিধা- স্থলে দৃষ্টান্ত না লইবে কেন? বিচারকের আসনে বসিয়া দেশের জমিদার বদি অবিচার করেন, ধর্ম ওসমাজ রাখিবে কে? ঝড় সহ্বার শক্তি আছে বলিয়াই ন! ভগবান্‌ বড় গাছের আশ্রয় সৃষ্টি করিয়াছেন ?

তৃতীয় পরিচ্ছেদ হত স্নেহের অনুরোধে এত-বড় অন্ঠায়কে প্রশ্রয় দেওয়! যায় ন1। কোথাকার কুড়ানো ছেলে,-যাহার জাতি পর্ধান্ত স্থির হয় নাই, তাহারই সহিত এক, পান-ভোজন শোয়া-বস৷ কেমন করিয়াই ব! চলিতে পারে! ন! পারিলেও ছেলেট। আবার অভ্যাস-দোষে ছুঃখ পাইবে অতএব উভয় পক্ষের মঙ্গলের জন্ত উহাকে দূরে রাখি দেওয়াই আলোকনাথের সদ্যুক্তি মনে হইল। অবস্ত অরুণের জন্ঠ ব্যয় যাহা হইবে, তিনি তাহা বহন করিবেন সত্যই ত. আর তিনি অনাথকে ফেলিতে পারেন না ? এখন ইচ্ছা করিলে দিন কিনিয়া লওয়৷ না লওয়! তাহার হাত! ছুতারের কাজ শিখিতে. পারে-কীশ- পিতল ঢালাইয়ের কাজ শিখিতে পারে-_-আরেো৷ কত কি কাজ আছে। কাজের জন্ত আবার ভাবনা ! বাবুর বদান্ততায় মোসাহেব পদপ-প্রার্থার দল ধন্য ধন্য করিয়৷ কেহ বলিল,__বাবু আমাদের দয়াময়, নহিলে শক্রুকেও এত দয় শত্রু নহে তকি আর-_একটু হইলেই সর্বনাশ ঘটাইয়! বসিতে- ছিল। কেহ বলিল, বাবু আমাদের স্বয়ং বৃহস্পতি,_কেমন বুদ্ধি বাহির করিলেন, দেখ না-__জাতি বাঁচিল-_উহার মনে ছুঃখও দিতে হইল না : সাপ মরিল, লাঠিও ভাঙ্গিল না--এই আর কি! | নিরপেক্ষ দলের কেহ কিন্তু বাহব1 দিল না। .তাহার! যে জানিত কি আশায় ইন্্রনাথ এই ছেলোটকে মানুষ করিম তুলিতেছিল! অরুণের প্রতি ন্নেহ-শীল লোকের যে অভাব নাই, বুদ্ধিমান আলোকনাথ তাহা বুঝিরা ছিল। সেই জন্তই তাহাকে সে দূরে রাখিতে চাহিতে ছিল। সংসারে স্বার্থপর কুটিলমতি কুপরামর্শদাতার অভাব নাই। কে কখন কুপরামর্শ দিয়! বিপদ্‌ বাধায় বল! ধায় না! কিছুইঠ বিশেষ ছেলেটা আবার ইংরাজী- নবীশ। এসব লোককে কিছু বিশ্বাস নাই ! ইহার! সবই করিতে পারে। তবু সে সাধারণের মনস্তষ্টির জন্তই অরুণের সমস্ত ব্যর-তার বহন করিতে, সম্মত হইয়াছিল। নহিলে উহার জন্ত এক পয়স! খরচ করিতেও তাহার

২৪ প্রত্যাবর্তন

আন্তরিক ইচ্ছা ছিল ন৷। পুত্রশোকে হতবুদ্ধি কাত্যায়নী দেবীর আকন্মিক মৃত্যু না ঘটিলে কে জানে, স্রোতের গতি এতক্ষণ কোন পথে বহিত !

এ-সব কথা অরুণের কানেও আসিয়া! পৌছিত। সে ইহার উত্তর দিত না, ইহাতে ব্যথাও অন্গভৰ করিত ন1। যে অসীম হুঃখে তাহার তরুণ হৃদয় পিষ্ট হুইয়। গিয়াছিল, সেখানে সংসারের এ-সব তুচ্ছ লাভ-ক্ষতির হিসাব রাখিবার জারগাই ছিল না। সে যে ইন্ত্রনাথের পুত্র নয়, দুঃখের কাছে সব ছুঃখই তাহার খাটো হইয়া। গিয়াছিল। যে হক্ত-সথত্র অমল শুত্র সুগন্ধি পুষ্পমালোর ন্যায় এখনও তাহার কঠালিঙ্গন করিয়! ছলিতেছে, এখনও ছুইবেল৷ সে থে গায়ত্রী দেবীর উপাসন৷ করে, ইহাতে যথার্থ অধিকার তাহার আছে কিন। এমন সংশয়ও উঠিয়াছে ! তাহার সম্মান লইয়াও কেহই কেহ কানাকানি করিতেছে! সে এ-সংসারের কেহ নয় ! জমিদার ইন্দ্রনাথের পুত্র নয়, ময়ূর-পুঙ্ছধারী কাকের মত এতদিন কেবল পরের শ্র্ষ্যের তলে নিজেকে সে লুকাইর়। রাখিয়াছিল। এইবার তাহার বাহিরের খোলসখানা৷ খুলিয়। গিয়। সত্যকার রূপ বাহির হুইয়৷ পড়িয়াছে! দে একটা অনাথ ছেলে- পথের ভিখারী! কে জানে, কোথায় কোন্‌ পর্ণকুটিরে তাহার অজানিত পিত। হয়ত এখনও তাহাকে স্মরণ করিয়! ছু'ফৌট। চোখের জল ফেলিতেছেন! তাহাদের মনের মধ্যে আজও সে বাচিয়া আছে। অথব! অসীম জলরাশির তলে তাহাদের অন্ত শয্যা সেই কাল রূজনীতেই বিস্তৃত হইয়া গিয়াছে! হায়, কে তাহাকে জানাইর়া। দিবে-_-নে কে-কোথ! হইতে ঝড়ে উড়িয়া আসিয়া এই স্নেহের খাঁচায় বন্দী ছিল! ভাগ্যবিপর্য্য অনেকের হয়-_নুখ-ছুঃখভোগও £ীব-মাত্রের কর্াধীন। অরুণ এ-সব তত্ব-কথ। বুঝিত ন|, কেবল বুঝিত, এমন করিয়৷ তাহার ন্যায় জ্ঞাতি-গোজ হারাইয়! কেহ সর্বহারা হয় কি না।

তাহার প্রতি ন্নেহ-শীল কর্মচারীর দল অনেকে তাহাকে পরামর্শ দিল,

তৃতীয় পরিচ্ছেদ ২৫

"খোকাবাবু মকদ্দম! করুন-_বিষয় ফিরে পাবেন। রাজার রাঁজিপাট ছেড়ে কেন মিথ্যে রামচন্দ্রের মত বনে যাবেন ! বাবুর ইচ্ছে আমর! নব জান্তুম। আমর! সাক্ষী দেব--সময় পেলেন না বৈ নয্ব--নইলে আঠাক্রুণকে যা! বলেছিলেন, তা৷ আমর! স্বকর্ণে শুনেচি। বলে, যার ধন হার ধন নর-_এ যে দেখি তাই হচ্চে--অন্ুমতি দিন, আমর! আছি।”

ধাতে জিভ কাটিয়। অরুণ অমম্মতি জানাইল। “ছিঃ মকদ্দমা। কা'র সঙ্গে করতে বলেন? গুর যেন্যাধ্য পাওন।! ধর্মৃতঃ যদি আমার কোন দাবী থাকত, তাহলে বাবাও কর্তেন__মাও সময় পেতেন। যেখানে ছনকোর্ট হাইকোর্ট প্রিভিকাউন্দিলে ধাপে-ধাপে বিচার, সেখানকার; আদালতে বিচাকবিভ্রাট অনেক হয়, কিন্তু যেখানে এক-ছাড়া৷ উপায় নেই, সেখানকার বিচারক ভুল করেন না”

ুক্তি বলিত, ঠিক হইয়াছে। মনকে ধমক দিয় চোখ রাঙ্গাই সে বলিতে চায়, মিথ্যার আবরণ ফেলিয়! সত্যকার মানুষ হইয়। তুমি যে দাঁড়াইবার অবসর পাঁইলে, তোমার পক্ষে ভালই হইল। তবু ভাগ! দেওয়ালের ফাটলে জন্মিয়। যে-সব আগাছ। ভিত্তি-মূল পর্যয্ত শিকড় গর্জাইয়। তোলে, তাহাদেরই মত মনের অতি-নিভূত অংশে গোপনে বসিয়া নৈরান্ত বলিত, বুঝি, এতট! না হইলেও চলিতে পারিত। ব্য ! ছাই ই্বধযা--দে আজ অর্থের জন্ত তে। কাতর নয়! তাহার কাতরতা জ্ঞান য়া পর্যন্ত বাহাকে মে অস্থি-মজ্জায় মিশাইয়! পিতা! বলিয়। জানিয়! আিয়াছে, ধাহার অভেম্ধ স্নেহ-র্গের অভ্তান্তরে বসিয়া এত-বড় বিপ্লবের সংবাদ তাহার কর্ণগৌচর হয় নাই! যে সর্ধহুখে-বিনাশিনী সেহময়ীর আাত্বন্নেছের অক্ষয় বন্ধে আবৃত হইয়। তাহার শৈশব-জীবন অতিবাহিত হইল, সটারা তাহার কেহই নহেন! আর একমাস পূর্বের সে যাছার নামও শোনে নাই, সেই আলোকনাথই তাহাদের আম্মীয়তম ! এই গৃহ, এই

্৬ প্রত্যাবর্তন

গৃহের প্রত্যেক ইট-কাটখানি পর্যন্ত__যাহার! তাহার ক্ষুদ্র “জীবনের সহস্র. স্থখ-ছুঃখের সহিত জড়িত-_সেই এই গৃহের সহিত তাহার কোন স্বন্ধ নাই! নুসজ্জিত গ্রন্থশালায় ঝকৃঝকে বাঁধানো বইগুলির মধ্যে বেশী বইয়ে তাহারই নাম সুবর্ণ অক্ষরে অস্কিত। ঘরে-বাহিরে তাহারই নান: বয়সের নান! বেশের সজ্জিত আলোক-চিত্র তৈল-চিত্রের সমাবেশ। পাগগারে তাহারই স্থখ-স্থাচ্ছন্্য বিধানের জন্য মূল্যবান্‌ কক্ষ-সঙ্জা'। গৃহের প্রত্যেক জিনিষটি এত দিন সে সম্পূর্ণরূপে নিজের বণিয়াই জানিয়' আসিয়াছে। কখনো স্বপ্নেও ভাবে নাই, যে এ-সব ছু'দিনের খেলা অভিনেতা! সাজিয়া সে যেন এতদিন অভিনয় করিতেছিল, সাজ-সজ্জ! খুলিয়া! রং-রাংত। মুছিয়া ভাল-মানুষটির মত এইবার তাহার বাড়ী ফিরিবার পালা কেবল জ্ঞান অজ্ঞানের ব্যবধান। চিরদিনের সুখ-হঃখ আশা- স্বতিমগ্ডিত ন্নেহভবন--আজ আর তোমার কোলে অরুণের জন্য এতটুকু স্থান নাই। কোথাকার নগণ্য বিদেশী বালক-_আজ আর গৃছের, সংসারের এখানকার সমাজের কেহ নয় সে! বিদায়, হে আমার চির- প্রির্লতম স্েহময় আশ্রয়-নীড়, আমার করুণাময় আশরয-দাতার স্বর্ণমন্দির, তোমার কাছে অনাথ বালক আজ চির-বিদায় মাগিতেছে !

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

নৃতন নীড়

গ্রাম হইতে তিন ক্রোশ দূরে ছোট একথানি পল্লী! দৃশ্ত হিসাকে পল্লীখানির কোন মনোহারিত' ছিল না। সেইখানে আলোকনাথের ইচ্ছান্থুসারে তাহারই আত্মীক়-সম্পর্কীয়া এক প্রৌঢ়ার গৃহে অরুণের থাকি- বার স্থান হইল। তিন ক্রোশ পথ হাটিয়া স্কুলে যাইতে হয়-_কিস্ত উপাস্র কি? একগুয়ে অবাধ্য অরুণ যখন নিজের মঙ্গল বুঝিবে না, তথন .জোর- করিয়া সহপদেশ গিলাইয়া! আলো কনাথ কেমন করিয়াই বা তাহার ভবিষ্যৎ কর্শজীবন গঠনের উপায় করিয়া দিবেন? ইংরাজী বিদ্যার শোকে সে কীদিয়। তাসাইয়! দিল। ছেঁড়া কাথায় বদিয়াও অনেকে রাজ প্রাসাদের স্বপ্ন দেখে ষে! পাশ করিলে জজিয়তীই ব৷ মিলিয়। যার! ওরে অবোধ, যদি তাই হুইবে, তৰে বড়শীর বিদ্ধ মতগ্ত অগাধ জলে পলাইবৰে কেন ? - একট। চলিত কথা আছে--“জিস্‌্কো। না দেয় খোদাতালা, উস্কে! দেনে ন' শকে আম্ফউদ্দৌল/” খোদাতাল! ন! দিলে দান-বীর নিত কাহাকেও কিছু দিতে পারেন ন!।

ভগবান্‌ ন৷ দিলে মান্থষের সাধ্য কি, কেহ কাহাকে কিছু দিতে পারে! এই যে তাহার জাজল্যমান প্রমাণই এই "্মালোকনাথ ! মানুষে ঠকাইতে চাহিলে হইবে কি? দেনেওয়াল। যে তাহার ভাগ্যফলকে সতন্ত্র লিপি লিখিরা রাখিয়াছিলেন!

আলোকনাথকে আমরা দোষ দিতে পারি না। সে মান্থষ-_মালুযের

প্রত্যাবর্তন

লোভ, মোহ, ভয়, অবিশ্বাস--সবই তাহার চিত্তে বিদ্মান। নিজের স্বার্থ কে না চায়? আর স্বার্থের পথের প্রধান অন্তরায়কে কে-ই ঝা স্নেহের দৃষ্টিতে দেখিতে পারে? আমর! সত্য কথ! বলিব। অরুণের চোখের জলে সত্যই তাহার মন ভিজিয়াছিল। ইংরাজী শিক্ষায় শিক্ষিত হইলে ভবিষ্যতে সে যে তাহার স্বার্থের পথে বিশ্ব ঘটাইতে পারে, নিজের হিতৈষীবর্গের ধারণ! সন্ধেও সে তাহাতে কোন বাধ! দিল না। কাছে রাখিতে সাহস ন। করিলেও গ্রামান্তরে তাহারই জানিত লোকের আশ্রয়ে তাহার থাকিবার ব্যবস্থা করিয়! শিক্ষা-লাভের সুযোগ কিয়! দিল-_ইহার অধিক চিরশক্র গ্রৃতিদন্দীর জন্য কে আর বেশী কি করিতে পারে? অপরিচিত দেশে, সম্পূর্ণ অপরিচিত ধোকদের সং্রবে, অজ্ঞাত জীবন-বাত্রা-নির্বাহে প্রথম প্রথম অরুণের খুবই কষ্ট হইয়াছিল। অপরিমিত ভোগ-নুখ-পালিতের পক্ষে দরিদ্র গৃহের সহ্র অভাব অস্বিধা! প্রতি পদক্ষেপে বাধা জন্মাইতে ছিল। সহিষ্ণু শান্তচিত্ত বানক তাহার এতটুকু আভাষ বাহিরে প্রকাশ করিত না। অতৃশ্ত অদৃষ্টকে সে যখন মানিষ্বাই লইয়াছে, তখন ভাগ্যনির্দিষ্ট পথে কণ্টক-গুন্স, খানা- ডোব। দেখিয়। মুখ ফিরাইলে চলিবেই বা কেন? পথের শেষে যদি পৌছি- তই হয় বীরের স্তায উচু মাথায় সরল গতিতে পৌছানো চাই! পা়ে- পায়ে গায়ে বার! প্রতি মুহর্ধে হুচট্‌ খাওয়ায়--বাত্রার সার্থকত! কোথায়?

তৰু এই নূতন আশ্রয্ে তাহার একান্ত অভাব অনুভূত হইত,-_সঙ্গী- হীনতায়। সংসারের অভাব, দারিপ্র্য, ছুঃখ যতই থাকুক্‌, উপস্থিত মনের অবস্থায় সে সকলের ছুঃখ সে তখন তেমন করিয়। আর অন্থুভব করিতে পারিতেছিল ন1। কেবল সময সময় নিজেকে বড় একা, বড় অনহায় মনে হইত।

বাড়ীর করত মুক্তা ঠাকুরানী অত্যন্ত রাশডারি মানুষ। কাজের কথ! ছাড়! তিনি কখনো! বাজে কথ! একটিও কহিতে ভাল বাসিতেন না৷. তা»

চতুর্থ পরিচ্ছেদ ২৯

ছাড়া ইহার সহিত কি কথাই বা সে কহিবে? তাহার মনের অভাব মিটাইবার শক্তি কি ইহার আছে? বাড়ীতে একটি ঠিকা। বী ছুইবেল! বাসন মাজিয়া উঠানে-দালানে গোবর-মাটা লেপিয়। বাজার করিয়া দিয়। যাইত এবং রাত্রে মুক্তা ঠাকুরাণীর কাছে আসিয়া! সে শয়ন করিত। বাড়ীতে তাহার ছেলে আছে। বৌটি ছেলেমান্ুষ-_ঘর-কন্প! দেখিতে হয়, তাই বাকী সময়টুকু সে নিজের বাড়ীতেই থাকিত। অরুণ আসিলে তাহার রাতের চৌকি দেওয়ার কাজে ছুটী মিলিল। অন্ন-বয়সী হউক, তবু পুরুষ মানুষ একজন বাড়ীতে রহিল ত, আর কি-ই বা এমন সোনা-দান। শাল- দোশাল! তাহার আছে,-_যাহার জন্ত এত ভয়?

মুক্তা ঠাকুরাণীকে গ্রামের লোকে সম্মান করিত। তাহার গান্তীধা- পূর্ণ মুখে এমন একটি তেজস্িতার ভাব ছিল, যাহাতে ছেলে-বুড়া! সকলকে তিনি অনায়াসে বাধ্য করিতে পারিতেন। মনে বত বড় অনিচ্ছাই থাক্‌, মুখ ফুটির। তাহার কাঁজে ব৷ কথায় কেহ কখনো প্রতিবাদ করিতে পারিত না। পাড়ার বধূ-কন্তারা৷ দূর হইতে তাহাকে আদিতে দেখিলে সসস্কোচে বেচাল সংশোধন করিয়। লইত। সন্বোধনহ্চক পদবী-যোগে কেহ জোঠাই- মা, কেহ খুড়ী, কেহ মাসী, কেহ দিদি প্রস্ততি পাতানে! সম্পর্ক ধরিয়। “ই লে! এঁ__আদ্চেন* বলিয়া! চোখে চোখে সতর্কতার টেগিগ্রাম পাঠাইয়। বিশেষভাবে সকলে নিজ নিজ কার্যে মনোযোগী হইত জানি, যুক্ত! ঠাকুরাণী এখনি আবার কাহার কি ক্রটি আবিফার করিয়া ছুই কথা শুনাইয়। দিয় যাইবেন! কিছুই বল! যায় না। লেখা-পড়া হিসাব-বোধ বিবাদ- বিসম্বাদের মীমাংসায় পাড়ার মধ্যে “মুক্ত বাম্নির' নাম বেশ খ্যাতি লাভ করিয়াছিল। শোন। যায়” মামলা-মোকর্দমা-সংক্রান্ত ব্যাপারেও পাড়ার প্রাচীনের! নাকি তাহার পরামর্শ লইয়া থাকেন। পাড়ার দলাদলি ব্যাপারেও তাহাকে ন1 বলিয়। কাহারে! কোনরূপ রফা৷ করিবার সামর্থ্য ছিল না।

৩৩ প্রত্যাবর্তন

মুক্ত! ঠাকুরাণী এই গ্রামেরই মেয়ে। অন্ত সন্তান-সন্ততি কিছু না থাকায় বাপ গৃহ-জামাতা করিয়া! তীহার স্বামীকে ঘরেই রাখিয়াছিলেন। মনে করিয়াছিলেন, এই উপায়ে ছেলে-মেয়ের সব সাধই মিটাইয়া লইবেন, _বাঁল-কণ্ঠের কল-কাকলীতে তাহার গৃহপূর্ণ হইবে। কিন্তু মানুষের, আশা! প্রায়ই পূর্ণ হয় না। যৌবনাগমের পূর্বেই মুক্তা ঠাকুরাণী বিধবা! হইয়া মা-বাপের সকল সাধের শেষ করিয়! দিলেন ) এবং পতিগৃহের সহিত সেইদিন হইতে সম্বন্ধ চুকিয়া গেল। পল্লীগ্রামে ঝিউড়ী মেয়েদের সম্বন্ধে বিশেষ আঁটা-আঁটি নাই। যুক্ত! ঠাকুরাণী অসঙ্কোচে সকলের সহিত কথা কহিতেন, সবার সম্মুখে বাহির হইতেন। তবু দেই তেজস্থিনী বাল-বিধবার সম্বন্ধে ইঙ্জিতেও কেহ কখনে। নিন্দার কোন কথ। বলিতে পারিত না। বাপের কাছে তিনি লেখা-গড়া শিখিয়! ছিলেন। ছুপুর-বেলা রামায়ণ, মহাভারত, শিবপুরাণ, কালিকাপুরাণ প্রভৃতি পড়ির। পাড়ার মেয়েদের গুনাইতেন। তীহার গৃহে দ্বিপ্রহরিক বৈঠকের ভাটি বড় ছোট-খাট হইত ন|। সামান্ঠ জমি-জমা যাহা কিছু ছিল; তাহাই বিলি করিয়া প্রজা! বলাইয়৷ কোন রকমে সংসার চালাইতেছিলেন, থাজনা-আদার প্রস্থৃতিও তিনি নিজে করিতেন। দৃর হইতে উন্নত-নাস৷ শুভ্রবসন। শ্াম- 'ক্বান্তি বিধবাকে আসিতে দেখিলে দেনাদার তটস্থ হইয়! পড়িত ; মুক্তা ঠাকুরাণির পাওনা যেমন করিয়াই হউক এখনই ফেলিয়। দিতে হইবে। “দিচ্চি “দিব সব ওজর-আপত্তির কর্ম নয়। কিজানি, ঠাকুরাণী যদি রাগ করিয়া বসেন--তবেই যে মুস্কিল! শুধু জবরদস্ত বলিয়াই ষে তিনি খ্যাতি লাভ করিয়াছিলেন, তাহা নয়, অন্তরের পশ্ব্য নিজ হইতেই লোক-চিত্তে তাহাকে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিল। লোকে তাঁহাকে যেমন ভয় করিত, তেমনি ভক্তিও করিত। দেশের লোকের আপদে-বিপদে রোগে-শোফে আগে গির! তিনি বুক দিয়া পড়িতেন। পীড়িতের সেবায়,

চতুর্থ পরিচ্ছেদ ৩১ 'াত্রি-জাগরণে, শোকার্ত পরিবারের উপস্থিত প্রয়োজনে, হজ্ঞ-বাড়ীর যন্তবুন্ধনে সর্বত্রই তাহার কুশল হন্তের সহ্ৃদস্তা দক্ষতা দেখ 'স্বাইত। কোথায় কোন্‌ গরীব গৃহস্থ মানের দায়ে ভিক্ষায় বাহির ন! হইয়া! ছুই- কন উপবাসী রহিয়াছে, কাহার অভিমানিনী বধু স্বাগুড়ীর গঞ্জন৷ সহিতে ন! পারিয়৷ আত্ম-নাশের উপান্ন সন্ধানেত্র চেষ্টা! করিতেছে, কোন্‌ তরুণ যুব বুড়া 'মা-বাপের মুখ না চাহিয়। বধূ লইয়া উন্মত্ত, বা কোন্‌ কুদ্রচিত্ত। বধূ শ্বাগুড়ীর সম্মান ন! ররাখিয়! যথেচ্ছাচারে প্রবৃত্তা,--এ দকল সংবাদ মুক্ত! ঠাকুরাণীর এজ্লাসে আগে আসিয্া পৌছিত এবং তাহার যথাসম্ভব প্রতিবিধানেরও 1বলম্ব হইত না। একবার জানাইতে পারিলেই অভিযোক্ত। দায়ে খালাস। তার পর কেমন করিয়া কি করিতে হইবে, সে ভাবন| বিচারকের সংসার শক্তির বশ। যে বৃহৎ গ্রহের শক্তি অধিক, মে নিজের কেন্দ্রে স্থির থাকিয়াও ক্ষুদ্র গ্রহ-উপগ্রহগুলাকে অনায়াসে নিজের প্রতি আকুষট করিয়া ইচ্ছামত ঘুরাইয়া৷ লইতে পারে। শুধু শারীরিক বলেই সকল স্থলে কার্োদ্ধার হয় না, মানসিক শক্তিই মানবের জড়ত্ব-নাশের প্রধান সহার়। এই জন্য গৃহস্থালীতে কর্তা-গৃহিণী, রণ-ক্ষেত্রে সেনাপতি, সমবেত-কার্ষ্যে নেতার প্রয়োজন। যেখানে নেতার শক্তির অভাব, সেইখানেই নেতৃত্ব বিশৃঙ্খল সৃষ্টিরক্ষার্থে মহাশক্তি তাই সদা-জাগ্রতা শক্তিশালিনী মুক্তা ঠাকুরাণী লোকের অভাব-নিবারণে যেমন সক্ষম, তাহাদের দোষ-ক্রটি পাইলে রসনার তীক্ষ ব্যবহারেও আবার তেমনি নিরভীক। তাহার নিকট দোষীর কাঠগড়ায় যে একবার দীড়াইবে, সহজে ভাহার আর নিষ্কৃতি ঘটিবে না। এ-টুকু সবাই জানে--যে নাকের জলে চোখের জলে মিলাইয়! “ঘাট মানা” তাহার ভাগ্যে অনিবাধধ্য। “আপনার” বলিতে তাহার বড় বিশেষ কেহ ছিল ন!! তাই 'বহ্ধ্বৈ কুটুকম*-_

৩২ প্রত্যাবর্তন

মকলকেই তিনি আপনার করিয়া লইয়া ছিলেন। আপনার বলিতে কেবলমাত্র তাহার এক ভাগিনেয়ী ছিল। সে বিদেশে স্বামীর কাছে থাকিত। বিবাহের পূর্বে সময় সময় সে মাতুলানীর পিতৃগৃহে আসিয়াও ৰাস করিত এবং বিধবার শূন্য অস্তঃকরণের অনেকখানি অংশ ভরাইয়! রাখিত। এখন সেও পর হইয়া গিপ়াছে। তবু সেই তাঁহার একমান্ নিকটতম আত্মীয়। সম্প্রতি তিনি তাহারে! বৈধবোর সংবাদ পাইয়াছেন। আর সেই জন্য তাহার গম্ভীর মুখ আরও বেশী গম্ভীর হইয়। উঠিয়াছে। স্বল্প ভাষ৷ আরও স্বয় হইয়৷ গিয়াছে এমন সময় অরুণ আসিয়৷ তাহার নিরানন্দ গৃহে আপনার নিরানন্দ জীবনের নূতন পর্ব আরম্ত করিল! জমিদার দয়া করিয়। তাহার জন্য মাসিক পনেরে! টাক। বৃত্তি নির্ধারিত করিয়া দিল। পল্লীগ্রামের খাওয়।-পরা ইহাতে অনায্নাসে চলিতে পারে কিন্ত বই কিনিবার জন্ত যে অর্থের আবশ্তক, তাহার সম্কুলান হয় না। অরুণ খাওয়ার খরচ দশ টাক। করিয়। তাঁহাকে দিতে চাহিলে যুক্ত ঠাকুরাণীর গম্ভীর মুখ আরে! গম্ভীর হইয়। গেল, কিন্তু তিনি একটুও অসম্মতি জানাইলেন না মনে করিলেন, টাকা কয়টি মাস মাস উহারই _ কোন ভবিষ্যৎ প্রয়োজনের জন্ত তুলিয়৷ রাধিবেন। ব্রাহ্মণের ছেবে দুই : ৰেল। ছুই মুঠা৷ শাক-ভাত খাইবে, তাহার কি আবার মূল) লইতে হইবে একি সহরের হোটেলখান! ? গলায় দড়ি! গৃহস্থ-বাড়ীতে অতিথি বে. গুরু! মুখে কিন্ত তিনি কোন কথাই বলিলেন ন|। অরুণ টাক দিলে তিনি বাক তুলিয়া! রাখিলেন।

_ নংসারে সব হারাইলেও অরুণ ছুইটি অনন্য-সাধারণ বন্ধ হারায় নাই। এক-_দৈহিক সৌনার্যা, দ্বিতীয়-_সচ্চরিত্র। মানুষ মাত্রেই সৌন্দর্ষ্যের উপাসক ।- রূপ দেখিয়া মুগ্ধ ন! হয় কে? মুক্তা ঠাকুরানীও অরুণের সুদার. " সুখ -ও অসহায় অবস্থা দেখিয়। তাহার প্রতি একটু বিশেষ ন্নেহাকুষ্ট হইলেন

চতুর্থ পরিচ্ছেদ ৩৩.

অরুপের সুন্দর মুখ, প্রসন্ন গিগ্ধ দৃষ্টি, বিনীত শান্ত ভাব, সুকুমার কান্তি--ছেলেটিকে কি ভাল ন! বাসিয়৷ থাকিতে পার! যার? তাহার তরুণ-ললাটে বিষাদের যে নিবিড় ছায়। এই বয়সেই আমন বিছাইয়! ছিল, লোক-চক্ষে তাহাতেও সহানুতৃতির সৃষ্টি করিত। সকলেই তাহাকে ভাল ৰাসিত। পাড়ার প্রবীপেরা! তাহাকে স্সেহ জানাইতেন, পাঠে উৎসাহ দিতেন। নবীনের! বন্ধৃত্ব করিতে চাহিত। ইহার অধিক সে দরিজ্ " পল্লী বেশী আর কি দিতে পারে ? অরুণ মিষ্টভাষে সকলের সহিত কথ! কহিত, মিশিবার চেষ্টাও করিত। কিন্তু চিরদিনের অনভ্যাসের ব্যবধানে বাধিতে থাকিত। তাহার ভিতর-বাহিরের অসহা শূন্তত| তাহাকে অনেক দুরে ঠেলিয়৷ রাখিত। প্রাণ খুলিয়া! সে কাহারে! সহিত মিশিতে পারিত: না। নিজের অন্তরের দীনত! সে কাহারে! কাছে প্রকাশ পাইতে. দিত না। পাছে গরীব বলিয়া কেহ তাহার প্রতি দয়! করিতে চায়, এই ভঙ্কে: অভাবের কথ কাহারও কাণে সে তুলিত না। এত দিন জমিদার পুত্ররূপে ষে শত শত দীন-দরিদ্রের অভাব মোচন করিয়াছে, আজ সে দয়। চাহিয়। কাহার কাছে মাথ। নামাইবে ? বরং এই যে তাহার অন্ন-বসন্তরের সুলা-_-আলোকনাথের কপার দান বলিয়। যেটাকে মনে হয়, ইহার ভার নামাইতে পারিলে সে বুঝি লু নিশ্বাস লইয়া, আবার সুস্থ হইতে পারে! : দানের সুখ যে পাইয়াছে, যাচকের ছুঃখ যে তাহার পক্ষে মরণধিক ঘুখকর! | মুক্তা ঠাকুরাণীর স্বল্লারতন বাড়ীর বাহিরের একমাত্র ঘরখানি দখল করিয়া অরুণ তাহার অন-স্বলপ গিনিষ বই খাতা প্রভৃতি গুছাইয়! লইল। ঘরে টেবিল-চেয়ার আন্মারি কিছুই ছিল না? বহুকালের একখানি সবণ-ধর! তক্তাপোষ--তাহার চারিটি পদ চারিখানা অর্ধতগ্র ইটক-খণ্ডে স্থাখিত করিয়া একমাত্র গৃহসজ্জারপে অবস্থিতি করিতেছিল। প্রয়ো-

৩৪ প্রত্যাবর্তন ছনাকূসারে এইখানিই টেবিল খাটের অভাব পুর্ণ কর্িত। অনিচ্ছাতেও" তাহার পূর্বের সুসজ্জিত পাঠাগারের বহুমূল্য মেহপ্ি কাষ্ঠ-নিশ্মিত ডেক্সট আর ইন্তরনাথ কাত্যায়নী দেবীর চির-ন্নেহময় হাসি-ভরা! সুখ বার বার তাহার মানস-নেত্রে ফুটিয়। অশ্রুবাপ্পের কুয়াদায় মিলাইয়া যাইত। মান্থুয যে সহিষ্ণতার চরম আদর্শ, অরুণ তাহ! নিজেকে দিয়াই অনুভব 'করিতেছিল। এই যে যুগ্ান্তরকারী পরিবর্তন, ইহাও সে বেশ সহিষ্া আইল? আর একবার.এমনি আঘাত,--যাহা মে শত-চেষ্টাতেও স্মরণ করিতে পারে না, তাহাও সহিয়াছিল! হস্তচ্যুত দুর অতীত--অরুণের জীবনের সব আশা-আনন্দই যে তোমার আনন্দময় আলোকোজ্ছল অঙ্কে বিলীন! ভবিষ্যৎ--বৈচিত্র্যহীন ছুঃখময় তিমিরাবৃত ভবিষ্যং__ন| জানি, তোঁদার ছূর্তেন্ত রহন্তময় গর্ভে আবার কি ইত তাহার জন্ত গোপনে “সঞ্চিত রাখিয়াছ ! সংসারের সব-কিছু হইতে চিন্ত-বৃত্তি নিরোধ করিয়া সে এখন যোগীর ্াস্থ একমনে পাঠাভ্যাসেই নিজেকে নিযুক্ত রাখিল; কোন বাধা, কোন অন্থবিধাই তাহার গ্রাহে 'আপগিল ন|। পূর্বব-স্থৃতি ভুলিয়া থাকিবার, বর্তমানকে কাটাইয়া তুলিবার একমাত্র উপায় সে এই শিক্ষালাভের 'আনন্দেই পাইগ়াছিল। ছুই বেলা অনেক পথ হাটিয়। স্কুলে যাইতে হয়। অল্প বয়সের ক্ষুধা-_ অবস্থা। বুঝিয়! তাহাকে দয়া করিত না তাঁ”ই সে যখন বৈকালে অঞ্জলি : ভরি! জপান করিয়! যথাসাধ্য ক্ষুধা-নিবৃত্তি করিয়া! বাড়ী ফিরিত, তথন তাহার মুখখানি শুষ্ক দেখাইত। মুক্তা ঠাকুরামী কিছুদিন হইতেই ইহা লক্ষ্য করিতেছিলেন। তাহার সুন্দর মুখ নিম্পাপ 'মহত্বব্যঞ্জক দৃষ্টি ধীরে ধীরে এই সন্তানবঞ্চিতা নারীর হরে সন্তানক্নেহ জাগাইয়! তূলিতে- ছির।. অরুপের আপত্তি অগ্রাহ্‌ করিয়া তিনি ভাহাকে দুপুরবেলা কিছু

; চতুর্থ পরিচ্ছেদ - "৩৫

'কিনিয়া খাইবার জন্ত চারিট করিয়া টাকা দিতে চাহিলে, অগত্যা অরুণকৈ ভাহ। লইতে হইল। বাক্‌-বিতণ্ড। করিতে. সে দক্ষ নয়, তাছাড়া ম্বেহের কাডীল স্নেহের দান ফিরাইতেও বাধা বোধ করিল। আশ্রয়-দাত্রীর সমবোনায় তাহার চোখে কৃতজ্ঞতার সহিত যে জলের আভাষ ফুটিয়াছিল, তাহা গোপন করিবার জন্য সে তখন ব্যস্ত থাঁকিলেও বাত চক্ষে সেটুকু ধরা! পড়িতে বিলম্ব ঘটিল ন|। রর

আড়ম্বর-হীন দরিদ্র জীবন ধীরে ধীরে তাহার মনে শাস্তি আনিতেছিল। পৃতাচারী খধি-বালকের স্তায় নিজেকে সে ধর্খে 9 জ্ঞানে উজ্দল করিয়! ঝুঁলিতেছিল। ছুই বেলা ন্নান করিয়৷ নিয়মিত সে মন্ধ্যাবন্দন৷ করিত। আলোকনাথ যাহাই বলুক, সে তাহার নবজ্ীবন্দাতা মহান্ুভব পালক পিতার দানের অবশিষ্ট--এই ঘজ্ঞোপবীতটুকু কাহারও কোন কথায় তাগ করিবে না। স্কুল হইতে ফিরিয়া সে গৃহ-কর্্রীর সখের বাগা'নর প্রয়োজনীয় কার্য করিয়া দিত। 'বাগানটিতে লাউ-কুমড়া দিম পালমশাক ছাড়া অন্ত কিছু ঝড় জন্মিত না। ছুই-চারিটা গাদা! ঘো”1টি অপরাজিত প্রভৃতি ফুলের গাছও ছিল। একপাশে একটুখানি কবিতার গাছ-গাছড়ার ক্ষেত কর! হইয়াছিল। তুলসী, . আদা, ব্রাহ্গীশাক, দুতকুমারী প্রভৃতি নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী মুক্তা ঠাকুরাণীর চিবি ংলা- বিস্তার সাক্ষ্যন্বরূপ প্রতিবেণীর্দের সাহয্যার্থ সযত্ধে রক্ষিত হইত। অরুণের চেষ্টায় বাগানটির একটু উন্নতি দেখা াইতেছিল। বাগানের কাজ নিজ হাতে ন! করিলেও ইন্্নাথের পিক্ষা দিবার পদ্ধতিতে বিষয়ে অনেকখানি অভিজ্ঞত! তাহার জন্বিয়াছিল। সেখানে সকালে উধভ্রমণ-কাণে ইন্ত্রনাথ তাহাকে শুধু গল্পচ্ছলে বে কত শিফ৷ দিতেন, তাহ। তখন ন। বুঝিলেও এখন দে বুঝিতে পারে। শারদ সন্ধ্যার বখন সে তাহার সহিষ্ত ছাদে ঝ।বাগাদে বলিয়! থাকিত, তুম আকাশের সব নক্ষবাবলীর পরিচয়

সে ঠাহার কাছে কত সহজ সরল উপারে লাভ করিয়াছিল। নে তখন বুঝিতেও পারিত ন। যে পিতা তাহাকে কোন কঠিন বিষয়ে শিক্ষণ দিতেছেন। এমনি সহজ ভাষার গরচ্ছলে তিনি তাহাদের নাম শিখাইতেন। ফোন্টি কোন্‌ গ্রহে অনায়াসে বলিয়। দিতে পারিত। কোন্টি শনি, কোন্টি, শুক্র,-_এ দব সে জানিত; গুণাবলীর পরিচয়ও দিতে পারিত। যে গ্রহের: অবস্থান যেখানে থাকুক, অবলীলায় .নিতা-পরিচিত পুরাতন বন্ধুর মত তাহাদের সে চিনিয়। লইতে পারিত। পক্ষী-তত্বেও সে বথেষ্ট অভিজ্ঞতা লাভ করিয়াছিল। ইন্্রনাথের পক্ষী-পালনের সখ থাকার পাখীদের জন্ত জাল ঘেরিয় বৃহৎ বাস-ভবন নির্মাণ করানো হইক্গাছিল সেখানে নানা- জাতীয় পক্ষী ছিল। এমন কি যে সব পক্ষী বাস করিত, উড়াইয়৷ দিলেও .তাহারা। আবার ফিরিয়া আসিয়। তাঁহার কাধে বা হাতের উপর বসিত। তাহাদের কোমল পালকের স্পর্শ বুলাইয়! মানুষের মতই তাহার! নিজেদের; আদর জানাইত। -কেনেরী পাখীর খাঁচার দ্বার খুলিয়৷ দিলেও সে উড়িগা পলাইবার চেষ্টা করিত না, বরং গান গাহিয়৷ তাহাদেরই মুগ্ধ করিত। : দুরে আকাশের গায়ে কৃষ্ণকায় ছোট পাখিটি উড়িয়া! গেলেও সে অনায়াসে বলিতে পারিত, লেট. কোন্‌ জাতীয় পাখী? বিলে ডিজি চড়িয়া কতদিন; সে এ-পার ও-পার করিয়াছে ; নিজের হাতে ড় টানিতে শিখিস্াছে, লতার .কাটিতে শিখিয্নাছে।- পুন্তকের শিক্ষা, অপেক্ষা ইন্্নাথ তাহাকে" এই সকল শিক্ষাই অধিক শিখাইন্বাছিলেন। তাহার শরীর,ও মন এমনি করিয়া তিনি গঠিত করিতে চাহিয়া ছিলেন বলিয়াই হয়ত সে সাধারণের চেক়ে সাহসী, সত্যবাদী, কই-সহিষু, পরার্গপর হইবার অবসর পাইয়াছিল। ফে বয়সে বে-শিক্ষাটর গ্রয়োজন সেই বয়সে তাহা বখাযোগ্য হইলে তাহার. ফল ভালই হর। শিশু বংশ-দণ্ডকে অনায়াসে নোয়াইতে ইচ্ছামত কাজে লাগাইতে পারিলেও স্ুপক বংশফে নত করা যাক ন!। পিশু অবস্থার মানব-

. চতুর্থ পরিচ্ছেদ ৩৭

প্রক্কৃতি যখন কমনীর নমনীয় থাকে, তখনই তাহাকে কাীতৃত করি সুগঠিত করিবার গুভ-যোগ স্বেচ্ছাচারিতা, জেদ, নিষ্ঠুরতা প্রভৃতি আগছা গুদ্ম একবার জগ্সিবার অবসর পাইলে আগাছা. মতই তাহাদের শিকড় বছদুর-বিস্তৃত হইয়া! যায়, তখন আর তাহাদিগকে ইচ্ছামত ফিরানো। যায় না। এখানে পাঠ ছাড়! অরুপের কিছুই শিখিবার বা করিবার ছিল না। তাই সে তাহার সমস্ত মনটুকুকে পাঠে নিযুক্ত করিয়া রাখিয়া ছিল। সন্ধ্যার ন্মন্ধকারে যতক্ষণ পর্ধ্যন্ত চৃষ্টির বাধা না জন্মিত, ততক্ষণ সে একমনে 'পাঠাভ্যাস করিত। কলিকাতার গ্ঠায় এখানে গ্যাসের আলে! নাই সন্ধার পূর্ব বৃক্ষচ্ছায়াময় পললীগৃহে অন্ধকার ঘনাইয়া আদিত, তৈল গুড়াইবার অর্থাভাব--তা'ই ন্ধ্যার গর প্রায় সে পাঠ বন্ধ রাখিক্ন৷ অতীত. ভৰিস্যতের চিত্ত! করিত।, এমনি করির়। ধীরে ধীরে তাহার বর্তমান জীবন অভ্যন্ত হইয়! আসিতেছিল। মান্য অবস্থার দাস। বখন যেমন, তখন তেমন চলিতে সে বাধ্য, তা'ই সক্ষমও সে। ক্লা-পরীক্ষায সে প্রথম স্থান 'অধিকার করিয়াছিল। সেদিন বাড়ী ফিরিয়া অরুণের চোখের জঙগ আর বন্ধ থাকিতে চাহিতেছিল না আজ যদি ইন্্রনাথ থাকিতেন! অত কে বারণ করিবে? কে আর তেমন করিয়া তাহার সহিত আনন্দে” অংশ সমানভাবে ভাগ করিয়া! লইবে? এখানেও তাহাফে অনেকে ন্বেহ করে, তাহার সাফল্যে বাহব! দেয়। কিন্তু সুখের হুখী, ব্যথার বথী। অন্তরের মধ্যে সে কাহাকেও খু'জিয়া পায় না।তাই অতীতকে ভুলিতে ঢাহিলেও 'সে তাহাকে ভুলিয়া থাকিতে দেয় না! |

দৌত্য

এমনিভাবে খন দিন কাটিতেছিল, তখন একদিন তাহার বৈচিত্র-হীন .জীবন-পথে একটু পরিবর্তন আসিয়! নিরানন্দ জীবনটাকে - যেন ধীরে ধীরে সহনীয় করিয়া তুলিল। সেদিন অপরাহ্ন-বেলার স্কুল হইতে ফিরিয়া. অরুণ দেখিল, মুক্ত! ঠাকুরাণী মুর লাগাইয়। বাড়ীর আশ-পাশের জঙ্গল সাফ করাইতেছেন। বর্ষায় ঘাস, আগাছা জন্িয়া চারিদিক অপরিচ্ছন্ন করিয়া তুলিয়াছিল। পুকুর-পাঁড়েও বিস্তর বন্ত ওল অপরিচিত অনাবস্তক বন্য গাছের ভিড়। গৃহকর্তীর অমনোযোগে এতদিন এগুল! সতেজে সগর্বে বন্ধিত হইবার অবসর পাইয়াছিল।

অরুণকে আসিতে দেখিয়া! ঠাকুরাণী বলিলেন, “আজ রা এসে পৌঁছিবে, সন্ধ্ের গাড়ীতে চিঠি দিয়েচে। তুমি একবার ইষ্টিসানে যেকে! তবাছা। দালানে ল$নটা সাফ করিয়ে রেখেচি, হাতে ঝুলিয়ে নিয়ে যেয়ো যে আধার রাত!” কথ কয়াট বলিয়াই তিনি ফিরিয়া! পুনরায় নিজের তদারক-কার্ধ্যে মনোনিরেশ করিলেন দেখিয়। অক্ুণ নীরবে স্বীকার- উক্তি জানাইয়া নিজের ঘরে চলিয়া আদিল, ঘরে ঢুকিয়া তাকের উপর বই করখানি রাখির! দিয়া সে তাহার মাছুর-পাতা তক্াপোষের বিছানায় শুইকা পড়িল। শরীর এমনই ক্লান্ত মনে হইতেছিল যে কোটটি খুলিয়া রাখিতেও ইচ্ছা হইতেছিল ম|। অন্তদিন সময় সে তাহার সারাদিনের ইতিহাস, স্কুলের পড়া, শিক্ষকদের নিজেদের মধ্যে তর্ক, সহপাঠিদের বাকৃ-

পঞ্চম পরিচ্ছেদ ৩৯

বিতওা সমালোচনা, নৃতন শোন! কোন সংবাদ. এই সমন্তই চিন্তা করিত। আজ আর সে-সব কিছু তাহার মনে পড়িল না। এখনি-পাওয়া নৃতন অধিকারের চিন্তাই তাহার প্রধান হইয়। উঠিল। প্রথমেই তাহার মনে হইল-_কে এই হিমু, আর কি জন্যই ব! মে আসিতেছে ? ইহাকে যে সে আনিতে যাইবে, তা চিনিবে কিনূপে! এই হিমু স্ত্রীকি পুরুষ, সে খবরও সে জানে না। যদি স্ত্রীলোক হয়, সধব! কি বিধবা, যুবতী কি বৃদ্ধা, তাহার স্থিরতা নাই। অরুণ শেষটা স্থির করিল পুরুষ হওয়াই সম্তব। নহিলে ট্রেনে আসিতে সাহস করিত কি? মুক্ত! ঠাকুরানী আবার বছবচনাস্ত “হিমুর” শব্ধ প্রয়োগ করিয়াছেন। তবে সে একা! আমিতেছে না --সঙ্গে আরো লোক আছে? এই হিমুর চিন্ত। তাহার ভাল লাগিতেছিল। যেই আন্মুক-_বাহারাই আস্মক, তবু একটু পরিবর্তন মিলিবে। প্রভাত হইতে রাত্রি পর্যন্ত এই একঘেয়ে ভাব--এ যেন আর সহ হয় না!

অরুণ মনে করিল, ট্রেশনে যাইবার পূর্বে মুক্ত ঠাকুরাণীর নিকট প্রয়োজনীয় সমস্ত সংবাদ জানি লইবে। কর্তব্য স্থির হইয়া গেলে জাম! খুলিয়া পুকুর-ঘাটে গিয়! সে মুখ-হাত ধুইয়া'আলিল। পুকুর-পাড়ে বড় একটা বেল গাছ থাকায় লোকে তাহাকে “বেল পুকুর” আখ্যা দিয়াছিল। . সে পুকুরের জল বড় স্বচ্ছ শ্থাছু) তা+ই পাড়ার দূরের অনেক বোক পানীয় জলের জন্য এই বেল পুকুরের জল লইতে আঙিত।

বেল! পড়িয়া আসিয়াছিল। স্বচ্ছ জলের উপর বাতাসের খেলা বড়, মিষ্ট লাগিতেছিল। শরীর যেন জুঁড়াইয়! যাইতেছিল। কিন্তু অ্ুণ জানিত, সময় পাড়ার মেয়ের৷ জল লইতে বাঁ গ! ধুইতে আদিবে। বিদেঈী হইলেও তরুণ বয় দেখিয়া কেহ তাহাকে লজ্জা! করে না, বরং উপবাচিক! হইদ্। অনেকে তাহার সহিত কথাও কহিয়! থাকে। কিন্তু তাহাতে সে বিপন্ন হুইয়। পড়ে। বাহিরের আধাত লোঁকে দেখিতে

দি: মের বর্ন : রা পার-_বাধা | কি দিও পয কিন্তু অস্তঃকরণের ক্ষত, যে সহদ্ধে সারে না/--নে খবর রাখিবার মত দরদীও সহজে মেলে ন!। লোকে তাহাকে তাহার অতীত জীবনের সন্ধে সকৌতৃহলে প্রশ্ন করে। কিন্তু সে আলোচনা যে তাহার পক্ষে কি) সে খবর. কেহ রাখে না! তাই কৌতৃহল-বেশ-হীন মুক্ত ঠাকুরাদীর আশ্রয় তাহার পক্ষে সর্বাপেক্ষ! নিরাপদ এখানে তাহাকে অতীত- রানের কোন সানি বি বাড়ী হইতে শন প্রায় ছুই মাইল দূরে বা রা খর্ব যাওয়াই উচিত ভাবিয়। সে মুক্ত! ঠাকুরাণীর' উদ্দেশে ঘরের বাহির হইল। ছুই বেল! আহারের সময় ছাড়া ঠাকুরানীর বিনা আহ্বানে সে বড় কখনো ভিতর-বাড়ীতে বাইত না? তা'ই একটু ইতস্তত; করিয়া শেষে সে চুকির। পড়িল। উঠানের ছুই ধারে তিনখানি করিয়া ছয়খানি ঘর? তিনধানি পাকা, তিনথানি কাচা পাক! তিনথানির মধ্যে বেখানির, াহির ভাগৈ দরজা সেই খানিতে অরুণ থাকে “বাকী ছুইখানি ঠাকুরাদীর শয়ন উপবেশনের জন্য ব্যবহৃত হয়। কাচ মাটার গোমর-িগ আনিপনা! চিত্রিত ছইখানি ঘর' পুজা ভাঁড়ারের ? " অন্তখানি রন্ধনের,।- এখন সেখানি অনাবস্তক-বোধে খালি পড়িয়া আছে। ছড়া উঠানের অক আংশে কাঠ প্রভৃতি রবিবার জন্ক একখানি দরমা-বের। চাঁলা: 'ঘরও -ছিল। তীর দিনে রন গৃহের বাহিছে, টার দালানে রাম হর). :. . এখ্বরুণ ভিতরে ঠারধাধীর উদ্দেশ পাইন না। শইবার জীড়ার ঘরের রমার তাল! লাগানো: সস্তবতঃ তিনি-পাড়ায় কাহারে! বাড়ী বেড়াইতে ৰা. ফোন রোগীর খবর'লইতে'দিয়াছেন।, :টেশন দুরে টেনের খুব বেশী দেরী নাই।. (বিল-অনচিত বৃখিযা সে দালানের সন্থুখে রক্ষিত, চৌকা কাচের আবরদী-বেছিত পুরাতন দেগী ল$নাট হাতে বুলবিয়া

পঞ্চম:পরিচ্ছেদ ৪১

বীর বাহির হইয়া! পড়িল। পকেটে দেশলাই লইল। টস বেল! আছে,-এখন হইতে লিন হার রাহী ্ঠনটা আর জানিয়া লইল না। রি ূ্‌ টির দিন পাই দে টশনে: বেড়াতে আনিত। ট্টেশন-মাষ্টার আগবাধুর সহিত তাহার আলাপ হইাছিল।- প্রেশনটি খুব ছোট, প্লাট- 'ফরমটুফুও তাই। গ্রামের সহিত সমত৷ রক্ষা! করিয়! তাহ! মানাইয়াছিল ভাল। তবু সেই কট! রঙের কীকর-বিছানে! ক্ষুদ্রকায় প্লাটফর্মের 'পশ্চাত্ভাগে রাঙা রং লাগানো৷ কাঠের বেড়ার গ। থেঁসিয়। যে সব নিতা- -পরিচিত ফুলের গাছ--ফুলে পাতার-_স্থানটিকে স্বৃশ্ত করিয়া রাখি ছিল, তাহা! অরুণের চোখে বড় সুনার বোঁধ হইত। বেড়ার গারে তরুলতার সরু পাতার সহিত রাঙা! রাউ! সরু ফুলগুলি কি তন্দর! 'দূরে ঘতদূর দৃষ্টি চলে, দর্শনযোগ্য কিছুই ছিল না। হরিৎ ক্ষেত্রের ন্য়নলোভন দৃষ্ঠেরও এখানে-অভাব 1 অসমতল সরু নরু মাটার রাস্তা, ডোবা, খানা, ঝোপ, জঙ্গল, বীশবন, মাঠ পচা পুকুর--ইহাই এখানকার দর্শনীয় বস্ত। তবু স্থানাভাবে এইখানেই সে বেড়াইতে 'আসিত। যাত্রীপূর্ণ ট্রেনগুলি টলিয়। যাইত, দে তা'ই দেখিত। কেহ উঠিত, . কেহ নামিত, ডৈলি প্যাসেপ্জার অনেকগুলি থাকিত। তাই ছ্রেশনটি ছোট হইলেও লোকের গমনাগমনের কোন বিরাম ছিল না। কাজের বির নি রিভনি রি ০০ 'আাইল। : “আঁশুবাবু হাসিয়া আশ্বাস দিলেন। : -.. অন্লক্ষণের মধ্যেই ট্রেপ আমিয় পড়িল। কদিন 'নামিয়! গেগেন। নিত্য আনাগোন! তাহাদের অভ্যাস হইয়। যাওয়ায় মুখে না চোখে কাহারও কিছুঘাতর ব্যস্ত ভাব ছিলনা! অরণ থার্ড ক্লাশের এ্থীলোরদের কামরায় 'জানাবার বাহিরে একখানি মুখ দেখিন। খমকির়।

৪২ . প্রত্যাবর্তন

ঈাড়াইল। অনেকগুলি অপরিচিত মুখের মধ্য হইতে সেই মুখখানি বিশেষ করিয়। দর্শকদের চোখে পড়িতেছিল। . সে একটি বছর দশেক বয়সের' দেয়ের মুখ। মুখখানি বড় সুন্দর। - একবার চোখে পড়িলে আবার চাহিয। দেখিতে ইচ্ছ! করে। ভাঙার সুন্দর মুখে. উদ্বেগের ছায়া! 'ফুটিরাছিল। প্বাল্দ। ! বলেচি আমি। রা নাবো, নাঝো, গাড়ী ছেড়ে দিচ্চে যে-_বাঃ-- ”* বলিয়। সে একটা মস্ত পুটুলি টানিয় নামাইয়! নিজেও. সঙ্গে সঙ্গে নামিয়! পড়িল। পরে পুলি রাখিরা অবগুঠনবতী এক বিধবা! নারীকে নামাইয়। লইল। পট্রেণে জলের কল্সী রইল যে-_” বণিয়! সে পুনরায় ব্যস্তভাবে সেই দিকে অগ্রসর হইলে অরুণ তাহাকে থামাইয়! নিজে কল্সীটা নামাইয়৷ দিল। ততক্ষণে প্রেশন-মাষ্টারও কাছে আসিয়। দীড়াইয়৷ ছিলেন, অরুণের সহিত তিনিও প্রত্যেক কামরায় দৃষ্টি সধলন করিয়া! দেখিতে- ছিলেন মুক্ত ঠাক্রুণের বাড়ী কে যাবেন?” বলিয়া তিনি ভাকিয়! জিজ্ঞাসাও করিতেছিলেন ) 'অরুণকে ইহাদের প্রতি মনোনিবেশ করিতে . দেখিয়া কাছে আসিঙ্কা দাড়াইলেন। মুক্তা ঠাকুরাণীর নাম শুনিয়াই মেয়েটির চোখে সাফল্য আনন্দের জ্যোতিঃ ফুটিয়। উঠিল। সে তাড়াতাড়ি কহিল, "আমরা বা'ব।* আশুবাবু অরুণের পানে চাহিয়া, ইংরাজীতে ৰলিরোন, ৮০০ 139000060৩0 ৪11 118170--1:৪৩৩* বলিয়। হাসিয়া! টলিয়। গেলেন। যাইতে বাইতেও একবার পিছন ফিরিয়! মেয়েটির পানে চাহিয়া গেলেন।' এমন জারগায় এমন মুখ সাধারণতঃ চোখে পড়ে না, কাজেই একবার 'চোখে পড়িল বার বার দেখিতে ইচ্ছা হয়।.:

টা

ষ্ঠ পরিচ্ছেদ _. হিমানী

ট্রেণ চলিয়! গেলে অরুণের যেন ঢমক তাঙ্গিল। সে অপ্রতিভভাবে অগ্রসর হইস্া! রমপীকে উদ্দেশ করিয়! কহিল, “আনুন, আমি 'আপনাদেরই নিয়ে যেতে এসেচি যে?” “ম1 শুন্চ, দিদিমা! আমাদের নিতে লোক পাঠিয়েছেন” বলিয়! মেয়েটি মন্ত পুটুলিটা ছুই হাতে জড়াইয়া ধরিয়া অগ্রসর হইল দেখিয়। মা জলের কলপী লইয়! অনুবর্তিনী হইলেন। অরুণ লঠন জালিয়! পু'টুলি লইতে গেলে সে বাধা দিয়! কহিল, “নাও যদি কলসীটাই নাও। ম! রোগ! মানুষ, কষ্ট হচ্চে তোমাদের অ-গঙ্গার দেশ কি না, তা'ই মা এক খড়। গঙ্গাজল নিয়ে এসেচে* বলয়! সে মায়ের নিষেধ না মানিয়। কলসীটা তাহার কাছ হইতে টানিয়। নামাইনা৷ অরুনের হাতে পুটুলিটা দিয়া নিজেই কলসী লইল।. কলসীটি ছোট হইলে অরুণের পক্ষে তাহ! বহন করায় অস্ৃবিধ! হইত। হাতে ঝুলাইয়৷ অত পথ চল! সম্ভব নয়। অন্ত উপায়ে ওয়াও তাহার পক্ষে মুস্কিল। তা”ই কৃতক্ষ হইয়া! যনে মনে সে এই ছোট মেয়েটির বিবেচনা-বুদ্ধির প্রশংসা! করিল ) হারের? সারার পের স্হকার হি রি ভর আগে. আগে পথ দেখাইয়া! চলিতেছিল। |

স্ধ্া উত্তীর্ণ হইয়া পর্ীগ্রামের পথে এখনই' বেশ অন্ধকার জমি উঠিয়াছে। আকাশে টাদ নাই--এ রাতে উঠিবার আশাও ছিল না। নক্ষত্র এখানে-ওখানে হুই-চার্রিটা সবে ফুটিতে সুরু করিয্বাছে। অনস্যন্ত' পথে গশ্চাৎ-বর্তিনীরা অতি-কষ্টে চলিতে ছিলেন মধ্যে মধ্যে পায়ে ু'চট

1 ... প্রত্যাবর্তন বর্ত লাগিয়। তি আউঃ, করিতেছিল। মাকে: সে ধথান্তব 'নাবধাদ

করিতেছিল। ?দেখে চল মা, দিক্টায় একটা গর্ভ আছে। 'সাম্নে -উচ-বা দিক খেঁষে এসো,-_বৃষটির জল জমে আছে-_* "ইত্যাদি সতর্কতাঁ- জঞাপনের, সহিত. অসত্তোবপূ্ণ ন্তব্য-প্রকাশেও তাহার বিরতি ছিল না। : “মাগো, কি দেশ তোমার মামীর | যেমন বন, তেস্‌নি ক্রি পথের ছিরি, ভ'তে হয়! হ্যাগা, দেশের মানুষের! কি. আলো! জালে ন! ? তোমাদের. দেশে কোথাও এক বিশ্ু আলো দেখ্তে পাচ্ছি না। বাঃ! যে আলো! জল্চে ! “দেশে: বুঝি একটি ছাড়া আর মানুষ নেই ?* বলিয়! সে অরুণের উদ্দেশে প্রশ্ন করিলে বাধ! দিবার ভাবে একটুখানি রুক্ম্থরে ম] কহিলেন, পহিমু.--৮! মেয়ে বুঝিল, মা তাহাকে নীরবে পথ চলিতে আদেশ দিতেছেন। তা"ই কিছুক্ষণ সে চুপ করিয়াই চলিল। কিন্তু বেণক্ষণ চুপ করিয়। থাকা: তাহার স্বভাব নয়। তাণছাড়! এই অন্ধকার অপরিচিত পথে শত বাধ! বর্তমান। কোথাও পথের ধারে কুকুর “যেউ” করিয়া ছুটি চলিয়া গেল)

বনের ভিতর শৃগাল ডাকিনা! উঠিল। : কাছেই বাশবনে বাতাসের আন্দো- নে পাতার. স্‌ সর মহ্‌ মহ্‌ ধ্বনি উঠিল। সে চমকিয়। থমকিয় দীড়াইয়। পড়িল; কহিল, "ওমা, শোন, শোন--রায়পুরের মতন. এখানেও আবার . “শেয়াল ডাকে লা ফেউ ডাকে 1” . তাহার স্বরে. যথে্ ভরের আভায গাওয়া যাইতেছিল। অরুণ তাহাকে আশ্বস্ত করিবার অভিপ্রারে সি কে কহিল, কিছু না--বাধ-টাধ এখানে নেই, . 'দিনের- বেলায়, দেখ্বে এখন--তেমন বনও. সব নয়। এই যে. এবার আমরা বাড়ীর, কাছেই. এসে পড়েচি” : বলিয়া এবার মে নিজে পিছনে থাকিয়া তাহাদের অধবর্তী করিয়। প্রবেশের পথ দেখাই বিগ _বাড়ীয় বাহিরে দাঁড়াই ভিতরে ঢুকিতে রমদীয় বেন পা. উঠিতেছিল না]. আনেক দিনের আনেক নুখ-হঃখের সৃতি মনের ভিতর জধালি-পাখানি করিতেছিল।

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ ৪৫

নৰ দি শোকের তর যেন উলিয়া উঠিতেছিল ] (তবু ধৈর্ধ্যশালিনী নারী কোনমতে দেহ খানাকে টানি! লইয়াই যেন উঠানে আসিয়া ধ্রাড়াইলেন। অরুণ মাটার দাওয়ার উপর কাপড়ের পুটুলিটি নামাইয়। হিমুর .কাখের জলের কলসীটি নামাইর! পাশে রাখিল। দালানের শেন প্রান্তে কাঠের দেরকোর উপর বাতাসে নিহু-নিভূ হইয়াও একটি মাটার প্রদীপ জলিতেছিল। .তাহারই অল্ন দুরে বসিয়া মুক্তা ঠাকুরালী হরিনামের ঝুলি হাতে করিয়া মালা জপ করিতে ছিলেন। ইহাদের দেখিয়! জপের মালা মাথায় ঠেকাইয়৷ সে ছড়া ঝুলির ভিতর রাখিয়া! দেয়ালের হুকে. টাঙ্গাইস্া৷ উঠানে নামিয়! আদিলে বিধবা নত হইয়া তাহার পাইয়া! প্রণাম করিলে দেখাদেখি মেয়েটিও তাহাকে প্রণাম করিল। বিধবার শীর্ণ কম্পিত দেহথানি কাছে টানির়া মুক্তা ঠাকুরানী উচ্ছৃুসিত কণ্ঠে কীদিয়া উঠিলেন,

.এওরে মারে, কি বেশে তোকে দেখ্লুম্‌ রে-_-আমার বাণীর গারে এমন ছাই কে মাধিয়ে দিলে রে-*

-. অরুণ নীরবে নিজের ঘরে ফিরিয়! আগিল। সে জানিত, এখন তাহাকে এখানে আর কোন প্রযোঞ্জন হইবে না। নিজের অজ্ঞাতে তাহারও ছুই চোখ দিয়। জল ঝারিয় ঝরিয়। পড়িতে ছিল। : ছুঃখের জালা যে মে ভালো! 'করিয়াই জানে .তা"ই ছুঃখীর ছঃখে তাহার স্মৃতি-সমুদ্রও উলিয্া উঠি়। .এ্রকবৎসরের পুরাতন শোককে আজ যেন আবার নূতন করিয়া ন্গাগাইয়

. তুলিল। ইন্তরনাথ কাত্যায়নী দেবীর স্গেহমাধা মুখ দে কি কখনো তুলিতে পারিবে? বুকের ক্ষত লোক-চক্ষে অবৃষ্ট থাকিলেও তাহার বেদন!, ব্যথাতুরের অজ্ঞাত থাকে না! সকপ-কছুর ভিতর দিয়াই বোধ-শক্তি- দিল যে আগে গা পৌছার ! | |

উজ

সপ্তম পরিচ্ছেদ হিমুর বিস্তাশিক্ষা মেয়েটির ভাল নাম হিমানী) কিন্তু লোকে তাহাকে হিমু বলিয়াই ডাকে। হিমু সুন্দরী তাহার স্থুগৌর স্থতী। দেহের মধ্যে সব-চেয়ে নুম্মর ছিল, তাহার চোখছ'টি ! ঘন-কৃষ্ণ-_ছবিতে আঁকার মত--অতি হুক্্ রর নীচে কেট আলে-করা কালো! চোখ ছিল, তেমন চোখ সাধারণতঃ বড় একট াঁহীরে! চোখে পড়ে না। ' বদিই ঝ! ভাগ্যক্রমে কাহারও পড়িত, সে আর . সেই যাহ্‌-কর। চোথের স্নিগ্ধ দৃষ্টি হইতে নিজের মুগ্ধ দৃষ্টি সহজে ফিরাইয়া আনিতে পারিত না। হিমু বালিক) সে তাহার সদা-চঞ্চল সদ।-সহান্ত চক্ষে বে কতখানি মদ্দিরতা। মধুরত। মাথানে! আছে, তাহার কোন হিসাব রাখিত না। তাই আত্মীর-অনাস্মীয়যুবা-বৃদ্ধ নকলকার পানেই অসঙ্কোচে : খনায়াসে হাপিয়! চাহিতে তাহার এতটুকু কুপণত। দেখা যাইত ন1। পুরুষ- নহলে তা'ই তাহার খাতির থাকিলেও মেয়ে-মহলে তেমন নুখ্যাতি-লাভ তাহার ভাগ্যে ঘটল না। গ্রাম্য বালিকাদলে মিশিয় 'ইচড়ে-পাক1 কাঠালের মত পাঁকিয়। উঠিয়! শৈশবেই নিজের স্তীত্ব-বোধের কোন প্রমাণ লা দিয়! লে ছেলের দলে মিশিয়। ছুটাছুটি, হড়াুড়ি, পুকুরে সীতার কাটা এবং. সর্বোপরি লজ্জার কথা, গাছে চড়িয। কোথায় পেয়ারায় রং ধরিল, কোথায় আমের গাছে মুকুল ফুটি়। ফল দেখা দিল, কার বাগানের গোলাপ- জাম ফল্স। গাছের ফুল অধিক মি, তাহারই তত্বাহথসন্ধানে তৎপরতা দেখাইতে সুরু করিল--ইহাতে তাহাকে এতটুকু দবধাগ্রস্ত হইতে দেখ! বাইত ন৷। এই অকুষ্ঠিত নারীত্ব-বোধ-হীন সারল্য ভীম্ডিত মেয়েটর পানে চাহিরা প্রথম দর্শনেই অরুণের মনে হইয়াছিল, মেয়ে দেখিবার মত

সপ্তম পরিচ্ছেদ 24 ৪৭

বটে! অবারিত-গতি ৰন্ত-প্রক্কৃতি এই মেয়েটির সহিত আলাপ করিতেও তাহাকে এতটুকু ক্লেশ পাইতে হইল'না। সে নিজেই উপযাচিক হইয়া _ প্রথম দিনেই সাধিয়৷ ভাব করিয়া ফেলিল। তাহার বিশৃঙ্খল বহিগুলি 'ঘড়ির আল্নার এলোমেলো! কাপড়-জামাগুলি হিমু গুছাইয়া রাথিল ঘর- খানির চারিপাশ তক্তাপোষের নীচে পথ্যন্ত ঝাট দিয়া এক রাশ ধুলা বাহির করিয়া ফেলিয়া! দিল। কুষ্ঠিত লজ্জায় অরুণ তাহার হাত হইতে ঝাঁটা লইতে গেলে হাত দিয়। তাহাকে নিবারণ করিয়। হাসিয়। সে কহিল, "্ব৷ রে ! পুরুষমানূষ বুঝি কখনে। ঘর ঝাঁট দেয় আবার ! সরে! গো! মশাই, সরো, ভারী জানে! তুমি ! আমি সব ঠিক করে দিচ্চি।” ্বশ্নভাষী লাজুক অরুণ ইহ! লইয়! বেশী বাকৃবিতও্ করিল না। অল্প কিছুক্ষণ পরেই অব্ূপ যখন দেখিতে পাইল, পাড়ার একটি সমবয়সী ছেলের সহিত মিশির়। পদ্মফ্ুলের লোভে বেলপুকুরের গভীর জলে রাজ- হুংশীর স্তায় গরীব তুলিয়। ছুইধারে জল ছড়াইয়৷ পুর্ণ জলে কুরধ্যালোকের স্বীরক দীপ্তি বিকীর্ণ করিয়! সীতার কাটিয়া সে-ই চলিয়াছে--তখন জানলার বহির্দেশ হইতে নিজ বিশ্মিত উতৎকণ্ঠিত ব্যাকুল দৃষ্টি ফিরাইন্বা আপনার চি-প্রচলিত নিয়মে পাঠ্য পুস্তকে তাহা সংলগ্ন কর! তাহার . ডলার সম্ভব হইল না। মেয়েটি যখন-তখন ঝড়ের মত তাহার ঘরে টির প্রবেশ ক্করিতে লাগিল; আবার বিনান্ুমতিতে তেমনি করিয়াই সে বাহির হইয়া বাইত। কখনো উৎপাতে-উপন্রবে তাহার পাঠের ব্যাঘাত ঘটাইত, অনর্গল অপ্রাসঙ্গিক বাজে কথ! বলিয়৷ সময় নষ্ট করির! দিত; আবার কখনো। তাহার বই-খাত! গুছাইয়। ঘর ঝাট দিয় কুঁজায় জল ভরিরা 'অকুণের, শত নিষেধ-মিনতি উপেক্ষা! করিয়! তাহার বিছানা রৌড্রে দিয়া : নেক: প্রকারে তাহাকে সাহাব্য ও. আস্তিক নেহ্‌ প্রদর্শন করিত।

০24 চর রি

ভীত ছে: বুক টি জবান তখন নপব বইধারাকেও সে অয় বলিয়া! উপেক্ষা করিতে পারে না! নেহ-হীন.. পরাশ্রিত অরুণের পক্ষে এই যে অযাচিত অপূর্ব দেহ,-_তৃযাতুরের পক্ষে- “অমৃত-বিসবুর মতই তাহ! মোহকর। তাহার উদ্দস্-হীন জীবনে সে যেন,

আবার উদ্ে খু'জিয পাইতেছিল। ছুটির পির বাড়ী ফিরিবার পথে এখন মনে পড়ে, তাহার জন্ত পথ চাহিয়া অপেক্ষা করিবারও কেহ. আছে।

অনেক সময়েই ভাহার. আশ! সফল হইত। হাজার খেনার প্রলোভন, উপস্থিত থাকিলেও সময়টি হিমু কেবল তাহার জন্যই অপেক্ষা করি, থাকিত। বাড়ীর অনতিদুরে রায়েদের আম-বাগানের হেলিয়া-পড়া- একটা.

বৃদ্ধ বটের মোটা গু'ড়ির আসনে বসিয়। পা ছুলাইয়া ছুলাইয়া মৃদু সুরে নূতন. শেখা, “ওরে পাগল বেরুদূনে আজ পথে, রাজার রাজ! বেরিরেছেন. আজ রখে_* গাহিতে গাহিতে হিমু তাহার কালো! চোখের প্রতীক্ষা"

রা দৃষ্টি পথের গানেই প্রধারিত করিয়। রাখিত। দূর হইতে চোখে চোখে মিলিলে চারি চক্ষে মিষ্ট হাসির আদান-প্রদানের সহিত ছুই: জনের চচ্ষুই যেন বলিয়া! উঠিত, *আশী--প্রতীক্ষা পূর্ণ হইয়াছে!”

কোনদিন ছুটিয়। গিয়া অরুপের মানা ন! মানিয়া৷ সে তাহার ছাতের বহি- খুলি কাড়ি! লইয়। লঘু ত্রস্তগতি হরিণীর ন্যার ছুটিয়া চবিয়! যাইত। আবার কোন দিন যেন তাহাকে-গ্রাহই নাই, সে ধেন কোথাকার কে .একজন অপরিচিত পথিক মাত্র, এমনি অনাগ্রহ তাচ্ছীষ্যের ভঙ্গীতে উদাস দৃষ্টিতে আনমনে চাহিয়া ক্টসঞ্চিত এবং বহক্ষণের বনব-রক্ষিত আম্ড়া ফল গুলির অন্ন. রস-গ্রহণে, একাস্ত মনোযোগী হইয়া থাকার ভাগ কর্িত।, অরণ স্বভাবতঃ শান্ত প্রকৃতির মান্য |: অবস্থা তাহাকে আরও সংযত ও" . ুষ্ঠিত, করিয়া. তুলিয়াছিল, লে সহজে কাহারো... সহিত নিশিত.নাঁ দির. হইতে অগ্রসর হইয়। কাহারো বহিত জালাঁপ.করিত না.।.. তনুতাহার ষ্ঠ.

অপ্তম পরিচ্ছেদ: ১৪৯. পরিনত কেনার লরি না। [বিনীত শান্ত বুবরের সফর: কু তাহাকে দুরে ঠেলিয়। না ফেলিয়া মানবের অন্তরের দিকেই আকর্ষণ .করিত $ তবু এই নিবিপ্ত লাভুক ছেলেটিও অনেক সমর হিছুর নিকট তাঁহার সংঘমের গভীর বাহিরে আসিয়া দীড়াইতে বাধ্য হইত। মন খুলিয়া ইহার সহিত গল্প করিয়া! তাহার বুকের বোঝ! সে লঘু করিয়! লইত। মনে হইত, জীবনের হাববা। রি শুধুই গর্দভের ভার-বহন নহে।

বরাবরই ছুই বেলা.আহারের সম ব্যতীত.অরুণ কখনে। বাড়ীর ছি যাইত না-_বাইবার প্ররোজনও হইত ন1। পূর্বে কলসী হইতে জল গড়াইয়া৷ কুশাসনধানি বিছাইয়৷ লইয়৷ সে আপনি আহারের স্থান করিয়া লইত। হিদু আসিবার' পর-এ নি্লমের ব্যতিক্রম ঘটল, “বা রে--পুকুষ মানুষ বুঝি নিজে নিজে ঠাই করে ? সরো, সরে, ভারী জানো, অমনি করে বুঝি জল আছড়া দিতে হয়?” ঠাই করিয়াই ব্রান্নাধরে খবর হয়, . "অরুণ দা” এসেচে, ভাত বাড়ে!” ভাত গরম থাকিলে পাখা লই অরুণের. পাতের. সামনে সে বাতাস করিতে বসিয়া! যায়। অরুণের : জজ্জারক্ত বিপন্ন মুখের প্রতি ভাক্ষেপ মাত্র না করিয়। সাহায্য করিতে গিয়! তাহাকে সে বিব্রত: করিয়াই তুলিত। নির্কোধ বাঁলিক। অরুণের সহিত. নিজের পার্থক্যের কথা বুঝিত না,--তা'ই অনেক সময় অরুণের ব্যবহারের অর্থ না পাই লেসন হইত। কখনও রাগ করিত, কখনও অভিমান করির়।. কখ৷ বন্ধ করিত অরুণ হুঃখিত হইত--কিন্তু সাধিত না। এক বেলা... বা এক ছিন সহতর ছুতায়-নাতায় তাহার স্গুখে আমিয়া পড়িয়াছে, এমনি ভাকে-জীনাগোনাঁ .করিয়াও যখন অরুণের তরফ হইতে মৌন বিষর-দৃটি ব্যতীত আর কিছুই গাওয়। বাইত না,. তখন নিজেই তাহারই সহিত.কৃর্ 8 .

৫... প্রত্যাবর্তন

াড়িকুড়ি ৰা পৃভুল সাজাইয়া মেয়েলি খেলা তাহার ভাল লাগিত ন!। তদপেক্ষা দাঙ্গাহাঙ্গামায় পৃষ্ঠ দেওয়াই তাহার লাগিত ভাব। অবিরত ঠাকুরমার কাছে উপদেশ, প্রতিবাসিনীদের তীব্র ষস্তব্য এবং মায়ের কঠোর তিরস্কার গুনিয়া গুনিয়া অনেক সময় আপনার অব্যাহত গতিকে সে সংযত করিবার চেষ্টা করিত, আবার কখনো বা বিদ্রোহী ভাবে বাকিয়৷ বসিত__ বেশ, এখানে সে থাকিবে না। ছহিয়ের দেশ--এর চেয়ে আমাদের ৰাকুল ঢের ভাল, সেখানে মানুষর। মানুষের এত নিন্দা! করিয়। বেড়ায় ন!। .. অকুণ একদিন একখান! প্রথম ভাগ কিনিয়! আনিয়। তাহার লেখা- পড়া শিখিবার কথ! তুলিলে প্রথমটা মুখে আচল চাগ! দিয়! সে খুব এক চোট হালকা লইল, তা'র গর গম্ভীর হইয়। কহিল, “লেখা পড়।-_মাগো, মেয়েমাঙুষে বুঝি" আবার লেখা-পড়। নি তাহলে কর্‌তে বার, পাগড়ী বাঁ, জুতো! পরে?”

.. নারীত্বের সন্ঘদ্ধে এতথানি যাগ সতর্কতা থাকার সন্ধি ভঙ্গ করি! -স্বাহার বিরক্ত বিদ্রোহী চিত্ত বইখানাকে চুড়িয়া বেলপুকুরের জলে নৌকা ভাসাইিতে চাহিত। নে প্রবলভাবে মাথা নাড়িয়া বলিত, “কেন বাবু, আমি পড়ব না, পড়ব না-_পড়ুতে পার্ব না, এই রইল তোমার বই. বলিয়৷ বই ফেলিয়া উঠিরা দীড়াইলে অরুণ যখন তাহার কথার কোন উত্তর না দিয়। আপনার বই খুলিয়া নোট লিখিতে আরম্ত করিত, তখন সে একটুখানি অপেক্ষ! করি], োর দিয়া পুনরায় বলিত, *শুন্চো। অরুণ-দা/-_আমি পড়ব না!” অরুণ লেখ! হইতে চোখ না৷ তুলিয়া সম্পূর্ণ উদাসীন অনাগ্রহ্‌ ভাবে “আচ্ছা বলিয়া! কাজ করিয়া! যাইত অগত্যা, 'আবার তাহাকে বসিতে হইত এবং ছত্োধ্যশবরণাতীত নিঠুর অঙ্গরগ্দার উপর চোখ রাখিয়া! তাহাদের হূর্বোধ্য.কর্কণ একঘেরে শব গুযাংকই দুখ বকরিতে হইত।, অপ যদি তাহা কারোর প্রতিবাদ করিত) জোর করি

্‌ . অগ্তম পরিচ্ছেদ ৫১ 'বলিত বে, না, তাহাকে গড়িতেই হইবে, তবে সেই দিনই. সে পড়ার দক! রফ| করিয়! নিশ্চিন্ত হইয়। বসিতে পারিত। কিস্তু এই যে মৌন আদেশ, নীরব অভিমান,--ইহার উপর জোর চলে না-ইহাকে লজ্ঘন করিতে সাহস হয় না, ব্যথা দিতেও পারা যার না। দেখিয়া অরুণ মনে মনে ভাসিলেও প্রকাণ্ঠে অত্যন্ত গম্ভীরভাবে কহিত, ”তা*ইভো। মেয়ে মানুষের যে; লেখাপড়া শিখতে নেই, ত' আমার জান। ছিল.না। তবে আর কি

, হবে? যছু ময়রার মেয়ে কুসিকে সেদিন স্কুলে যাবার: সময় প্রথম ভাখ পড়তে দেখেছিলেম, ন! হয় বিকেল বেল! একবার করে তা'কেই পড়তে শিখিয়ে আম্ব--বইখান! কি নষ্ট হবে!” হিমু অনাগ্রহভাবে "বেশ ত--*. বল্যি। চলিয়া গেলে অরুণ আপনার পাঠ্য-পুস্তক খুলিয়া বমিত।

পরদিন সেই ছুই পয়সা দামের বিচিত্র চিত্র-শোভিত বর্ণ-শিক্ষাখানির €কোন উদ্দেশ পাওয়| গেল না--ছুইদিন উৎকন্িত আগ্রহের সহিত প্রতীক্ষা করিয়া অরুণের নিকট হইতে সুগভীর মৌনতা৷ ছাড়! ভত্সন! বা জ্রোধ, কিছুই যখন পাওয়া গেল না--তখন অপরাধিনী তাহার চুরির মাল বাহির করিয়। দিয়। শান্তভাবে জানাইল যে এইবার সে পড়িতে শিখবে এবং এমন অপরাধ'আর কখনও করিবে না। কিন্তু সেই সঙ্গে সর্ভও রহিল: যে অরুণ *্যা'কে-তা'কে*-_অর্থাৎ আর কাহাকেও গড়াইতে পারিবে না।

অরূণ হাসিয়া তাহাতেই সম্মতি দিল-_শিক্ষক ছাত্রীর মধ্যে আবার সন্ধি

স্থাপিত হইল। একান্ত মনোযোগের সহিত অরুণ এই হু্দান্ত বত হরিগ্ীকে শিক্ষা দিবার অন্ত প্রাণপণ চেষ্টা করিয়া ফলে অনেকখানি. রুতকার্ধাও হইল। প্রথম. প্রথম এই বীধা-ধর! নিয়মের ভিতর বদ্ধ থাকা হূরব্োধ্য

:রেখাঞ্জলার চেহার। নাম স্মরণ রাখা হিমুর পক্ষে অত্যন্ত কষ্টকর হইয়া

'উহ্িছিল--এমন কি, নেক সময় মেগা যেন,বিশ্বু-গরায় কৌন সুদূর শগগরাজোর কাহিনী বলি তাহার নে হইত। এমনি করিয়া যখন

৫২ - প্রত্যাবর্তন

প্রথম ভাগ সাঙ্গ হইয়া গেল, তখন দ্বিতীয় ভাগ পড়িতে আর সে কোন. আপত্তি করিল না। পাঠের রমবোধের স্থুখ অনুভব করিতে শিখিয়! তাহার মনে পুস্তকের গল্পগুলি যেন অভিনব এক নূতন দেশের নৃতন. আনন্দ আনিয়। দিতে লাগিল! মাও দিদিমার মুখে সে রূপকথার অনেক নায়ক-নায়িকার অদ্ভুত ইতিহাস শুনিয়াছিল। এখন ছাপার অক্ষরেও সেই সব অভিনব গল্লাবলীর অপূর্ব রহস্ত-পাঠে সে শুধুই মুগ্ধ নর, পুলকিতও হইত। কর্পনার সাহায্যে নিজেকে সেই সব রূপকথার রাজকন্তাদের আসনে বসাইয়া . হীরা-মণি-মাণিক্যে সাজাইয়! পাতাল-পুরীর মাণিক-জালা! কক্ষের স্থবর্ণ পর্য্যক্কে শাক্িতার পানে মুগ্ধ নেত্রে চাহিয়। থাঁকিত। কখনে! মনে হইত, সে বদি সত্যসত্যই কষ্কাবতী হুইয়। বান্,--আর বিন্থকের নৌক। চড়িয়া বেলতলার পুকুরে ভাঁদিতে থাকে ! কেমন মজ। হয় ! মা আসিয়। , ডাঁকিতে থাকে,__ ্কন্কাবতী মা আমার, ঘরে ফিরে এসে! ন1। কাদিছে মায়ের প্রাণ, বিলম্ব আর কোরে! না। ভাত হল কড় কড়, ব্যঞ্ন হইল বাসি। কম্কাবতী মা আমার সাতদ্দিন উপবাঁসী।* কঙ্কাবতী-রূপিনী হিমুও অমনি বলে,-- "বড়ই পিপান! মা, ন। পারি সহিতে” ইত্যাদি। কেমন মজা হয়-_. ভারী চমৎকার খেলা আচ্ছা, সে যদি কম্কাবতীই হয়, তবে খেত হইবে কে? যুস্কিল। হিমু ভাবিল, আচ্ছা, অরুপদাদা খেতু হইলে কেমন হয়? দূর! মীমাংসা কিন্তু মনঃপৃত হইল না। সে কি ভাল হইবে? অরুপদা+র, জাম খাইয়াই না! তাহার এমন দশ! ঘটিয়াছে! তবে থাক্‌, খেতৃকে আর আনিয়! কাজ:

'এসপ্তম পরিচ্ছেদ ৫৩

নাই। সে তাহার কল্পনার বিন্ুকের নৌকা কূলে ভিড়াইয়। বুপ্‌ করিয়। তীরে নামিয়া পড়াই সংযুক্তি স্থির করিল। মায়ের কোল ছাড়িয়া বাঘের পিঠে চড়িয়া পাহাড়ের গুপ্ত গুহায় রাজ-অট্রালিকার লোভ করিয় তাহার কাজ নাই! ূ. হিমুর এই বিস্তা-শিক্ষায় আনন্দ-লাভের পূর্ণ অংশ গ্রহণ করিত-_অরুণ। ক্রমে ঠাকুরুমার ঝোলা, বেঙ্গমার দেশ, নেকড়ে বাঘ শৃগালের রাজা পার 'হইয়া! সে এখন রাষায়ণ-মহাভারতে আসিয়। পৌছাইল। পরীক্ষ! দিয়! অরুণ ফলের মুখ চাহিয়। বসিয়াছিল। সময় তাহারও সময়ের অভাব ছিল না। তা'ই পঠন পাঠন খুব উৎসাহের সহিতই চলিতেছিল। পাঠে অনুরাগ বাড়িয়াছিল বলিয়! হিমুর যে স্বভাবেও পরিবর্তন ঘটয়াছিল, তাহ! ' 'নহেঃ এই পাঠ লইবার দিবার সময় সে অরুণকে সাধাইয়৷ বিরক্ত করিয়া তুলিত। আবার সে মত্য বিরক্ত হইলে ক্ষমা চাহিত, কীদিয়া . 'অনর্থ বাধাইত। এই অত্যন্ত লঘু-প্রক্কৃতি মেয়েটকে অরুণ তা'ই কোন" 'মতেই পর মনে করিতে পারিত না। মেয়ের আব্াার-বায়নার সমাধানে : মাঁকেও অনেক সময় অরুণের প্রতি মনোযোগী হইতে হইত। শ্বভাব-গুণে . 'সে সকলেরই স্নেহ আকর্ষণ করিত। তা” ছাড়া জবরদন্তিতেও অনেক : সময় তাহার পাওনার বেশী আদার করিয়া লইত। মুক্তা ঠাকুরাণী "মেয়ে- “ছেলের” এত “আহলাদেপনা” পছন্দ করিতেন না। তা*ই মালতী দেবীকে সাবধান করিয়া দিতে গিয়! বলিতেন, প্রান, ওর আখের নষ্ট করে! ন! মা--অত আদর দিয়ো না। শেষে পন্তাতে হ'বে।” মালতী দেবী সজল স্নেহ-তর! চক্ষে মেয়ের পানে চাহিয়৷ সুধু মান হাসি হাদিতেন। এই একটুখানি আদর-আব্বারের সমাধান কর! ছাড়! তাহার স্বর্ণ-প্রতিমাকে দিবার মত যে আর কিছুই তাহার ছিল না। এটুকুও সে চাহিস়! না পায় কেন? বিধাত। যদি ললাটে উনার হুঃখের ছবিই আঁকিয়। থাকেন, তাহ। .

৫৪ প্রত্যাবর্থন

হইরে সে তোলাই আছে,--যে করদিন সেটা চোখে না গড়ে, হাসিয়! খেলিয়! বেড়াইতে পায়-_দে কয়দিন তবু চোখ বুজি কাটাইয়া, . দেওয়ায় ক্ষতি কি!

অষ্টম পরিচ্ছেদ ভবিষ্যাতের চিন্তা

যথাসময়ে অরুণের পরীক্ষার ফল বাহির হইল। কাগজে দেখা গেল, সে. পনেরো! টাকা বৃত্তি পাইয়াছে। গ্রামের পাঠ এইখানে তাহার শেধ হুইল। এইবার তাহাকে কলিকাতায় যাইতে হইবে। পাশের খবর শুনিয়া! হিমু প্রথমে খুব খুনী হইয়! আনন্দ প্রকাশ করিল-_তুলসী-তলার মাটা খু'ড়িয়৷ তিন-মাস-পূর্কে-পৌতা প্সাটি উদ্ধার করিয়। বাতাস আনাইয়! হুত্ির লুট দিল, তার পর অরুণের বিদেশ-যাত্রার কথা শুনিয়া মুখ ভার করিয়া কথা বন্ধ করিল, আড়ি দিল, পরে “ডাব” স্মরণ করিয় ভাব করিতেও বিলম্ব হইল না। অনুনয় করিয়! দে কহিল, “কি-ই হ'বে খালি খালি অত পড়ে ? তুমি এই খানে পাঠশালাটাল।-_কিছু করো! ন! বাবু। যেতে হবে না তোমায় কোথাও ।*

অরুণ ম্লান হাসি হাদিয়! কহিল, “পুরুষ মানুষ মূর্খ হয়ে থাকৃব? লেখা- গড়া না শিখুলে খাবই ব! কি,__তা'ও চাই ।»

হিমু এবার কল-বঙ্কারে কহিল, “বেশ বিদ্কে তোমার? লেখাপড়! শেখনি বই কি! অত গাদ! গাদা শিখেচ। ুখ্যু হলেই হোল কি না? ন। বাবুঃ তোমাদের জঙ্কুলে দেশে আমি কক্ষনো! এক্ল। থাক্‌তে পার্ন না-_-তা” তোমায় কিন্ত স্প্ইই বলে দিচ্চি।* "

অরুণ হাসিল, কোন উত্তর দিল না। হিমু যে এতদিন সহরের নিন করিয়া এই “জঙ্ুলে দেশেরই” স্তুতি গাহিয়া' আসিয়াছে! এখানকার . মেয়েদের স্বাধীনভার অর্থাৎ যথোচ্ছাচার-ভ্রমণের সুযোগের সুখ্যাতি

৫৬ প্রত্যাবর্তন করিয়াছে! সে -সব অতীত কথ! শ্মরণ করাইয়। অরুণ কিন্ত এতটুকু কলহের হট করিল না। অরুণের. অভাব-বোধ বালিকাকে কতথানি অসহায় করিয়া তুলিতেছে, এইটুকু বুঝিক্নাই সে তাহার বেদনার মধোও একটু বিমল আনন্দ অনুভব করিল। তাহার অন্ত ভাবিবার, তাহার অভাব অনুভব করিবারও তবে সংসারে কেহ কোথাও রহিল !

হিমুর স্পষ্ট কথ! সন্বেও অরুণকে কলিকাঁতা। যাইবার জন্য প্রস্তুত হইতে হইল। তাহার পরীক্ষার ফল প্রকাশ হইলে আলোকনাথকে অব্যাহতি দিয় সে ত্ৃহার সাহাযাযগ্রহণ ভবিষ্যতে প্রয়োজন হইবে না বলিয়া জানাইয়াছিল। সর্বস্ব যে ছাড়িয়া আসিয়াছে, তাহার আর মুষ্তি ভিক্ষার প্রয়োজন কি? বাহিরে রাজধানীর বক্ষে দে কাজ ভুটাইয়া৷ লইবে। যেমন করিয়া তাহার স্ঠাক্স দরিদ্র ছাত্রদের শিক্ষা-কার্ধ্য সম্পন্ন হয়, তাহারও সেইরূপ হইবে। কাজ কি আর পরের গলগ্রহ হইন্া থাকা!

, ষাত্রাকালে সে মুক্তাঠাকুরাণী মালতীকে প্রণাম করিলে তাহার! আশীর্বাদ করিয়া মধ্যে মধ্যে তাহাকে পত্র দিতে অনুরোধ করিলেন। মালতী দেবী তাহাকে ছুটির সময় এখানে আসিবার কথা! বলিলে, অরুণের তুই চোখে জল ভরিয়। আমিল। মুখে সম্মতি জানাইতে না পারিরা সে . স্তা"ই মাথ। হেলাইয়াই স্বীকৃতি জ্ঞাপন করিল। হিমু তাহাকে মাটিতে গড় হইয়। প্রণাম করিয়া! কহিল, “এসে। অরুণদা? ছুটি হলেই কিন্তু এসে! তুমি, একদিনও সেখানে দেরী কর্‌তে পা'বে না, তা কিন্ত বলে দিচ্চি। পাশ হয়েছেন বলে বাবুর আর কথ। শোনাই হোল না, বন্লুম, যেয়ো না-_তাঃ হোল না!” অরুণ হিমুর মাতার উদ্দেশে মনে মনে কৃতজ্ঞত! জানহিয়! কহিল, "আস্ব বই কি হিমু। উন কা জারেরহলিন কাটাবার জারগাও আমার নেই আব কোথাও--।”

আজ প্রথম হৃদয়ের উচ্ছ্বাসে সে তাহার অন্তরের প্রবল, দৈস্ত- বাবিযে .

অফ্টম পরিচ্ছেদ ৫৭ _ প্রকাশ করিয়া ফেলিল। সে যে কত দীন--সে কথ। গতর কাছে প্রকাশ করিতেও সে অমমর্থ। মানুষের ক্ষত যেখানে গভীর, স্বভাবতঃই সে সেখানে সতর্ক। আপনার অজ্ঞাত জীবন-রহস্তেব্ গভীর বেদন! তা*ই বুকের ক্ষতের মতই সে গোপনে বুকের মধ্যে লুকাইয়! রাখিত। সমবেদনার “আহা” টুকু সহিবার শক্তিও যেন তাহার কুলাইত না সেখানে হিমুরও প্রবেশাধিকার ছিল না। অরুণের বাহিরের সদানন্দ ভাব দেখিয়া! সকলেই প্রতারিত হইয়! মনে করিত, বুঝি অতীত জীবনের স্তায় তাহার চিন্তাকেও সে ভুলিয়া গিয়াছে। হিমু তাহার অশ্রবন্ধ গা়ন্বরে ব্যথিত হইল। তা'ছাড়া নিজের চোখের জল সাম্লাইতেই সে তখন অত্যন্ত ব্যস্ত থাকায় অরুণের কথার মর্ঘম সম্যকরূপে উপলব্ধি করিতে পারিল না, তা”ই সে বিষয়ে কোন তর্কও সে তুলিল ন!। দ্বারের অন্তরালে দীড়াইয়৷ মালতী দেবীও বারবার আচল দিয়! চোখের জল মুছিতেছিলেন। মনে হইতেছিল, যদি উপার থাকিত ! হা৷ ভগবান, এমন জিনিষ, এমন লোভের ধন হাতে পাইয়াও হারাইতে হয়! সমাজ. ইন্্রনাথের দেওয়। ব্রাহ্মণের অধিকার তাহার কাড়িয়৷ লয় নাই। শুধু গোত্র পদবীর দাবী? সংসারের মেই কি. সব! একমাত্র মেয়ের মুখ চাহিয়া এই গোত্রের দাবী তিনিও কি ছাড়িতে পারিবেন না? মালতী দেবীর মাতৃ-ন্লেহ কহিল, এখনি তিনি তাহ! ছাড়িতে পারেন। কিন্ত হিন্দু কন্ঠার সংস্কার কহিল--সে হয় না! তা যদি সম্ভব হইত তবে অরুণ কেন--যে কোন জাতি হইতেই উপযুক্ত পাত্র বাছিয়! লইলে 'হয়ত অর্থাভাবে তাহার সুন্দরী মেয়ের বিবাহের ভাবন! ভাবিতে হইত না। নমাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণার শক্তি তাহার গার 'অনাথার কি এতটুকুও নম্তৰ? না-- তাই £উচিত? অপ্রাপ্য ভাল জিনিবটিতে লোভ করিতে গেলে টি কেন

ইক

নবম পরিচ্ছেদ কলিকাতায়

জনারণ্য মহানগরীর মাবখানে পড়িয়া! অরুণ প্রথমটা যেন দিশাহারা »*ইল॥ এত বড় সহর, এত গাড়ী-ঘোড়া, মোটর-উ্াম--এ-সব তাহার কল্পনারও অতীত, অভাবনীয় ব্যাপার! এই অট্রালিক।-সমুদ্রের মধ্যে বাসস্থান খুঁজিয়! লওয়া তাহার স্তায় দরিদ্রের পক্ষে কেমন করিয়া যে সম্ভব হইতে পারে, মে যেন তাহা ভাবিয়াই পাইতেছিল না। তাহার স্কুলের, সহপাঠী-ইন্দৃভ্ষণের সাহায্যেই দে এখানে অভিজ্ঞতা-লাভের ভরস! রাখিয়- ছিল। কাধ্যকালে দেখা গেল, ব্যাপারটা যত কঠিন মনে হইয়াছিল-_ আসলে সেরূপ নয়। বরং পন্লীগ্রাম অপেক্ষা সকল বিষয়ে এখানে স্থৃবিধাই বেশী। কেবল প্রকাণ্ড অস্থবিধ৷ একট। ছিল, সেটা! পয়সার ।. এখানে সুবিধায় সবই মেলে তবে বড় বেনী মূল্য দিতে হয়! ভরসার মধ্যে তাহার জলপানির পনেরোটি মাত্র টাকা! ইহার উপর নির্ভর করিয়াই- সে এই ব্য-বহল উচ্চ শিক্ষালাভের আশায় দেশ ছাড়িয়া অজজানিত স্থলে আসিয়াছে। লোকে হয়ত তাহার এই দেশ ছাড়ার কথ গুনিলে হাসিবে !. কিন্তু যে দেশে হিমু বাস করে, __যেখানকার পথের ধূল! ইন্দ্রনাথের পদ স্পর্শে পৰি হইয়া গিয়াছিল, তাহার প্রতি ভালবাদা যে অরুণের প্রতি শোগিত-বিদ্দুর সহিত মিশাইর! রহিয়াছে! তিনি যদি তাহার জননী: জনুস্তিনাও হন, তবু যে অরুণের জীবনমরুর শাস্তি-নিকেতন,-+তাহার, প্রার্থনীর কাম্য ম,-সে ভূতিথ। সে অস্বীকার করিতে পারিবে ন| 1.

নবম পরিচ্ছেদ ৫৯

উৎসাহহীন ভবিষ্ততের পাঁনে চাহিক়্'ও তা”ই সে আনন্দোজ্জবল অতীতকেই স্মরণ করিতে থাকে।

ব্যাপারট! সেই চির-পুরাতন। উচ্চ শিক্ষার আশায় পূর্ববর্তী দরিতর সন্তানেরাও সকল ছুংধ সহিয়। যে ভাবে দিন কাটাইয়া গিয়াছে, অরুণের জন্ত ভাগ্য তাহার কিছু ব্যতিক্রম করে নাই। তবু ইহাতেও বুঝি বিশেষত বানৃতনত্ব কিছু ছিল। যাহার! জীবন-যুদ্ধে জয়লাভের আশায় বিদেশে আসিয়াছে, তাহার! দেশে, আত্মীয়-স্বজন, গৃহ, ভূমি কিছু ন! কিছু ফেলিয়! আমিয়াছে। কিন্ত অরুণের পিছনে তাকাইবারও কিছুই নাই !

কলিকাতার একটি ছাত্রাবাসের অপেক্ষাকৃত অল্পমূল্যের একতলার একখানি ঘরে সে তাহার নৃতন জীবন প্রতিষ্ঠা করিল। ইহাতে বৈচিত্র্য ছিল না, আনন্দ ছিল না। তবু সেতাহার ধরব লক্ষ্যে স্থির থাকিয়: আপন কর্তব্য পূর মাত্রার পালন করিতে প্রস্তত হইল | সময় সময় যনে হইত, পরীক্ষা-সাগর পার হইয়। সে তাহার জীবন-তরণীথানি কোন অনির্দেশ উপকূলে ভিড়াইবে ? আবার ভাবিতে বসিলে তাবনার কুল পাওয়া যাইত না। তাই অনির্দেশের ভাবনাকে সে বিভিন্ন চিন্তায় ভুবাইয়া৷ রাখিত। ঘরখানি একতলায়__বায় আলোর অভাব সেখানে অনুমিত হইত-_ প্রচুর। স্টাৎ-সেঁতে মেবে। তবু ইহার ভাড়া কম একটিমাত্র “সিট বলিয়! নির্জনতাপ্রিয় অরুণ এই থরখানিই পছন্দ করিয়াছিল। পুরাতন তক্তাপোষের উপর সে তাহার কম্বল চাদরখানি বিছাইয়া পরিচ্ছন্ন শব্যাটি বিছাইয়৷ অনেক সময় তাহার উপর চুপ করিয়া! পড়িয়। থাকিত, আর বর্তমানের ভাবন! ভাবিত। "

আজও সে সেই কথাই ভাবিতেছিল। ঘরের ভাড়া, খাবার খরচ, . কলেজের বেতন জমা দিয় কেমন করিয়। বেসে তাহার প্রয়োজনীয় বইগুলির. জোগাড় করিবে, তাহাই দে ভাবিতেছিল! আদিবার মনন

৬০ প্রত্যাবর্তন

বুক্তাঠাকুরাণী তাহাকে বই কিনিবার জন্য কুড়িটি টাঁক! দিয়াছিলেন। তাহাতে কতটুকু অভাবই ব! মিটিবে? তবু নেহমরীর স্নেহের দানটি সে নিতান্ত অনিচ্ছায় কুন্টিত হস্তে গ্রহণ করিতে বাধ্য হইয়াছে। . সত্যই যে তাহার বড় অভাব! আর এও যে তাহার প্রতি অযাচিত করুণা, ইহার কোনটাই এমন অবস্থায় তাহার ত্যজ্য নহে! তখন ভরসার মধ্যে ইন্দ্রনাথের দেওয়া! তাহার পৈতার সময়ের মূল্যবান হীরকাঙ্গুরী আর তাহার জন্ম রহস্তের শেষ নিদর্শন একথানি সুবর্ণ পদক। ছাড়! নিজের বলিতে এমন কিছুই ছিল না, যাহা! বিক্রয় করিয়! উপস্থিত অভাবের কথঞ্চিৎ দায়ও সে মিটাইতে পারে ! হীরকাঙ্গু রীর মূল্য সে জানে না, হয়ত বেচিতে গিয়। ঠকিয়া আমিবে। অথব! চোরাই মাল বলিয়া পুলিসের হাতে ধরা। পড়িবে--ছুইটাই ঘটা সম্ভব! এখানকার অবস্থা- ব্যবস্থা কিছুই তাহার জীন! নাই। অরুণ দেখিয়াছে, প্রাইভেট টিউসনী করিয়া! অনেক ছেলেই নিজের বাসা-খরচ চালাইয়। থাকে কিন্ত তাহার জন্তও সুপারিশ চাই কে তাহাকে বিশ্বাস করিয়।৷ গৃহ-শিক্ষকের পদ দিবে! তাহার পরিচিত আত্মীক়-বন্ধু কেহই নাই। ইন্দৃভৃষণ নিজেই একজন উমেদার,-_তাহা'র নিকট সাহাঁষ্য পাইবারই বা আশ! কোথায়? কেমন করিয়া যে সে তাহার দারুণ অভাবের বোঝা কোথাস্ন নামাইবে বিষ চিন্তে তাহাই ভাবিতে ছিল।

দশম পরিচ্ছেদ

বন্ধু লাভ

ক্লাশে একটি ছেলের সহিত তাহার আলাপ হইয়াছিল। ছেলেটির, নাম জলদকান্তি। নামের সহিত তাহার চেহারার কোন সামপ্স্তই ছিল না। ছিপছিপে একহারা গঠনের স্নিগ্ধ গৌর-কান্তি নাতিদীর্ঘ ছেলেটিকে দেখিলে ঘনধোর বর্ষ-মেঘের পরিবর্তে সকাল বেলার কৌতুক-হান্তোজ্জন নর্তনশীল বৌদ্র-রেখাটিকেই যেন বেশী করিয়া মনে পড়ে। ছেলেটি গায়ে পড়িয়। সাধিয়। আপনি আলাপ করিয়াছিল। অরুণ যে মেসে বাস! লইয়াছিল, দে তাহার -খান তিনচার বাড়ীর পরে থাকিত। ক্লাশে অনেকের সঙ্গেই তাহার আলাপ ছিল। আলাপ করিবার শক্তি তাহার

যেমন অপাধারণ, ব্যঙ্-বিদ্ধপ করিবার ক্ষমতাও তেমনি তাহার অনায়াস-

লভ্য। তাহার ঠাট্টাবিদ্রপে ছেলেদের কাছে সে এমনি সুপরিচিত হইফা উঠ্িয়াছিল বে এখন আর সে সব ব্যঙ্গবিদ্রুপে কেহই রাগ করিতে পারে না, করেও ন1। এই নূতন বন্ধুটিকে অরুণের বড় ভাল লাগিয়াছিল ! তবু নিজের সঙ্কোচপূর্ণ স্বভাবের জন্য অল্পদিনের বন্ধুত্বে সে সম্পূর্ণরূপে নিজেকে বন্ধুর হাতে সমর্পণ করিয়া দিতে পারে নাই। ভাহার মনের অভাব হত বড়ই হউক্‌, বাহিব্রের অভাবও যে কতখানি সে কথাও সে বজ্জার় কাহাকেও জানাইতে পারিতেছিল না অথচ কোন একট! উপাক্র না করিলেও নয়। বিছানায় পড়িয়। সে এই নূতন বন্ধুটির কথাই তখন ভাবিতেছিল। মনে হইল, জলদকে দে তাহার অভাবের কথ জানাইয়া কোন একটা ছেলে পড়ানোর কাজ যদি যোগাড় করিয়! লইতে পারে,

রে

নন

৬২ প্রত্যাবর্তন

তবেই শ্থৃবিধা হয় সক্কোচ কিন্তু মাথা নাড়িয! বাধ! দিল-_না, কাজ নাই! কি জানি, বন্ধু যদি মনে করেন, বন্ধুত্বের ভা একুবল স্বার্থলাভের গঙ্থা ! সেই ঝ| তাহাকে কতটুকু চিনিয়াছে? ”আরও একটি ছেলের সহিত অরুণের আলাগ হইয়াছিল,_এ ছেলেটির নাম প্রফুল্ল ক্লাশে খুব ভাল ছেলে বণিক ইহার সুনাম ছিল। হিন্দুঙ্কুল হইতে কম্পিট করিয়া, স্কলারশীপ লইয়। নে গত বৎসর পাশ করিয়াছে। প্রফুল্ল বন্ধুত্ব অনেকেই কামনা করিত। কিন্তু সে নিজে স্বেচ্ছার কাহারও সহিত মিশিতে চাছিত না। তাহার তরুণ মুখে গান্ভীর্ষে/র ছাপ পড়িম্বাছিল। কথাও সে সাধারণতঃ খুব অল্পই কহিত। বেখানে “হ1% ব1 “না বলিলে চলিত, সেখানে সে দ্বিতীয় কথ ব্যবহার করিত না সর্বদা যে লেখাপড়া লইয়াই সে থাকিত, এমন নয়। তবু সকলের মহিত একত্র থাকিয়াও সে যেন সকলের কাছ হইতে নব থাকিত। ছেলের! তাহাকে ভাল বাদিত, ভয়ও করিত। পড়াশুনার জন্ত কেছ তাহার নাহাব্য চাঁহিলে সে থুমী হইয়াই তাহাকে পড়া বলিয়া দিত। ব্যস! তারপর আর কোন সংভ্রব নে রাখিত 'না। প্রকুল্পকে শিক্ষকেরাও ন্েছের চক্ষে দেখিতেন। পরচ্ছিদ্রান্থেষী ষ্ট বালকেরা ইচ্ছ। থাকিলেও তাহার সহিত শত্রুতা করিতে পারিত না। ভবু এই.ছেলেটিকে উপলক্ষ্য করিয়৷ ছুইটি দল গঠিত হইয়াছিল। এক দল তাহার ন্বপক্ষে-_অন্য দলটি বিপক্ষে যাহাকে লইয় দল,-_সে কিন্তু কোন দলেই যোগ দিত না; সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে নিজের কার্ধ্য করিত, অল্প সন সকলের সহিতই মিশিত। নিজের চারি ধারে এমন একটা সাশ্তীর্ধ্যের গণ্ডী রচনা! করিক। সে বাস করিত, যেখানে তাহার মুনের নাগাল কেহই পাইত না। অরুণের সে এক ক্লাশ টি পড়ে, বয়সেও 'কিছু বড়। এই ছেলেটিকে প্রথম দর্শনেই অরুণের বড় ভাল লাগিযাছিণ | লে

দশম পরিচ্ছেদ ৬৩

তাই সকলের দিক হইতে চোক ফিরাইরা লইয়া! বাঁর বার ইহারই পানে চাহিয্। দেখিতেছিলা। ঢএক বার দুইজনের দৃষ্টি-বিনিময়ও হইল অরুণ নিজের 'দৈসঠ স্বরণ করিয্া অগ্রসর হ্ইয়া আলাপ করিতে সাহসী হইল না, চোখ নামাইয়। লইল। কিন্তু সুযোগ আপন! হইতেই সুলভ হইয়া! দেখ! দিল। সেদিন কি-একট! ব্যাপার উপলক্ষে ছেলের দল ক্লাশের বাহির হই! কেহ বেড়াইতে ছিল, কেহ গল্প করিতেছিল। আবার ফারঁ্র ইদ্ারের কতকগুলি গুণ ছেলে পরস্পরের সহিত কলহ বাধাইয়। তামাস! দেখিবার সুযোগ খুঁজিতেছিল। নবাগত অরুণ সমস্ত দলের কোনটিতেই যোগ লা দিয়া বাহিরে একখানি বেঞ্চিতে বসিয়া! নিজ পাঠ্য পুস্তক খুলিরা। পড়িতে- ছিল। তাহার হাত করেক দূরে কতকগুলি আমোদ-প্রস্তাসী ছেলে একটি. নৃতন ছেলেকে লইয়া তখন গম্ভীর ভাবে বুহস্ত চালাইতেছিল। নূতন ছেলেটির্‌ বাড়ী বীরভূম তাহার ভাষার যথেষ্ট জড়তা ছিল, ইহাই তাহার অপরাধ। প্রথমটা সহপাঠিদের হুষ্ট মতলব সেও বুঝিতে পারে নাই, তই লরলভাবে তাহাদের কথার উত্তর দিতেছিল ; এবং ছেলের দল তাহার কথার স্থুরের উপর জোর দিয়! তাহাকে সমর্থন করার ভঙ্গীতে পরস্পরের পানে চাহিয়া হাসিয়া কৌতুকের ইঙ্গিত করিতেছিল। যেন এমন বেকুব তাহার! জন্মে আর কখনো দেখে নাই! বড় একট! মজার জানোয়ার ! ছেলেটির নান জগনাথ, পদবী নন্দন তত্ব পূর্বেই আবিফার করিয়া রসিক কমল! লেবুর খোঁস। ছাড়াইতে গিয়া তাহাকে শুনাইয়! অথচ তাহায় প্রতি ওনাসীন্ত দেখাইয়া কহিল, *ছ্যা হে ধীরু, জগন্নাথের ননদনটি কে, বল্‌ দেখি ভাই? পুরাণ টুরানে কই এঁর কোন খোঁজ-পান্ড! পাওয়া যায়নি। হঠাৎ ভূ'ইফোড় রূপে এর আবির্ভাব দেখি যে!” .. বীর ওরফে ধীরে নামোচিত ধীরত! রক্ষা করিয়া মিহি সুয়ে জবাব

৬৪ প্রত্যাবর্তন.

দিল, *মা--যা-ছিলেন, ম! যা-হয়েচেন--মা যাঁহবেন। নন্দনটি এখনো জন্মায় নিঃ মনে হচ্চে।” সতীশ পরমতক্তির অভিনয়ে মাথ। নোয়াইয়! গাগদ কঠে কহিল, ”বাব! জগড়নাথ চড়নে গড়. ইউচি।” ছেলের দলে একটা! হে! হো! হাঁসির কলরব উঠিল। সত্যব্রত জমীদারের ছেলে। মনে তাঁহার ধন-গর্বও বিলক্ষণ ছিল। সে সাধারণ দলে না. মিশিয়া! একটু তফাতে থাকিত। শাস্তিপুরে ধুতির উপর ঢাকাই মস্লিনের চূড়িদার পাঞ্জাবী ঝুলাইয়া সর্বদাই ফিটুফাট হইয়৷ আদিত। মাথায় সিথি,. বাহাতে দোনা-বীধান রিষ্ট ওয়াচ চোথে সোনার চশমা চেহারাটিও- সুঙী_ রোগাটে লম্বা গড়ন, ফর্শা!। চুলগুলি পাতল! ধূসর রঙের হইলেও নরম--ঢেউ খেলাঁনে। থাকায় মুখখানি মানাইত বেশ। সে এতক্ষণ দুরে দাড়াইয়৷ আড় চোখে চাহিয়। বেচারী নন্দনের ছুরবস্থা দেখিতে ছিল মনে মনে হাসিতেছিল। এই ছেলেটির গর্বিত ভাৰ গম্ভীর মুখ সহপাঠি-দলের চক্ষুশুল হইলেও এই পরুম ধৈধ্যশালী মান্ুটিকে ফেছ কখন রাঁগাইতে ঝা তাহার গাল্তীর্ধোর একচুল বাহিরে আনিতে পারিত ন1। আজ এমন একট সরস আয়োজনে যোগ না৷ দিয়! সে নিজ স্বাতন্তর রক্ষা করায় রসিক মনে মনে তারি চটিয়া গেল। নন্দনকে কীদ-কাদ দেখিয়ঃ তাহাকে ছাড়িয়া সত্যব্রতর প্রতি মনোযোগী হইল, কহিল, *ও মশাই, এদিকে আনুন ।” ডাক শুনিয়া সত্যব্রত গম্ভীর মুখে ধীরে ধীরে দলের, কাছে আগাইয্»। আসিল। সত্যব্রত রসিকের মেসের ব্রিতলেয় বাসিদা!। মেসের সব কিছু লইয়া রাতদিন খুঁত খুঁত কর তাহার ত্বভাব, রসিক তাহ জানিত। সে র্লহিল, “আচ্ছা, বলুম দেখি, আপনার কলেজের' মেসট। অত্যন্ত সাদাসিদধে নয়!» কণ্ঠস্বরে তাহাকে অনুকরণ করিয়া তেমনিই অলস ভঙ্গীতে সতীশ কহিল, প্ভারী সাদাসিদে আর নোংরার এক শেষ ।” সত্যব্রত পরিহাস ন! বুঝিয়। কহিল, «ছেলেদের জন্য একটা

দশম পরিচ্ছেদ ৬৭ চাহিয়া হাসিতে লাগিল। লজ্জিত অপ্রতিভ হওয়ায় অরুণের মুখখানা সকালবেলাকার অরুণের মতই লাল হইয়! উঠিল। : ছেলের! যে তাহাকে লইয়া বিদ্রুপ করিতেছে ইহ। বুঝিয়। সে ব্যথিতও হইল--মনে হইল, গরীব নূলিয়াই তাহার প্রতি আক্রমণ। সত্যব্রতের ক্ষণঃপূর্বেকার ছুরবস্থা সে লক্ষ্যও করে নাই, করিলে ভ্রম তাহার জন্মিত না

এমন সময় প্রফুল আসিয়! দাড়াইল। হাতে তাহার কক্পেকখানি এক্সার্সাইজবুক | সে বোধ হয় থাতা কিনিতেই বাহিরে গিয়াছিল। ফিরিবার সময় সপ্তরথী-বেষ্টিত বিপন্ন বিব্রত অভিমন্থার অবস্থাপ্ন অরুণকে দেখিয়া সে তৎক্ষণাৎ ব্যাপার বুঝিয়৷ কাছে আসিয়া দাঁড়াইল।

এক একটা! মানুষের মধ্যে কেমন এক প্ররুতির গান্ীর্ধ্য থাকে, যাহাতে অনিচ্ছাতেও লোকে তাহাকে ভয় করে। প্রফুল্ল ছেলেটিকে সহপাঠিদলে মনে মনে একটুখানি যে ভয় করিত--সে কথা আগেই বলিয়াছি। তাহার আবির্ভীবে ছেলেদের দল নিমেষে ভাল মানুষের মত যে যাহার কাজে ব্যস্ত হওয়ায়-_অরুণ কৃতজ্ঞ চোখে পরিত্রাতার পানে চাহিয়৷ দেখিল। তাহার ভয় হইতেছিল--এখনি যদি উহার! তাহার বংশের বিবরণ নিতে চায় আন্ম-পরিচয় দেওয়াই যে তাহার সর্বাপেক্ষা (বপদ।

প্রথম আলাপেই গ্রনুল্ল এমন সহজ সন্কোচহীন ভাবে তাহাকে কহিল, “আনুন, ক্লাশে গিয়েই একটু গল্পন্বপ্ন কর! যাক্‌-_* যে অরুণ এতটুকু দ্বিধা না করিয়! খুসী-মনেই তাহার অনুবর্তী হইল।

সেদিন ক্লাশের ঘণ্টা পড়িবার পূর্বেই প্রফুল্নর' সহিত পড়াশোন। স্মন্ধেই অরুণের অনেক কথ! হইয়া গেল। অরুণ দেখিল, প্রফুল্লর পাণ্ডিত্য, তাহার সর্ধতোমুখী প্রতিভা, বহিঃ-সংলারের জ্ঞান তাহার চেয়ে নেক বেশী। সে বিস্তর বই পড়িয়াছে। সম্প্রতি নে জান্মান্‌ শিখিতেছে।

৬৮ প্রত্যাবর্তন

ফেঞ্চ লাটিন গ্রভৃতি আরও কিছু কিছু শিখিবার তাহার ইচ্ছা আছে। সব তব অবশ্ত একদিনেই অরুণের আয়ত্ত হয় নাই, ক্রমে হইয়াছিল। তবে সেই দিনই প্রহর অরুণকে বন্ধু বলিয়া গ্রহণ করিয়াছিল। ... ক্লাশে ধীরেন্্রকে একটা ধাকা! দিয়া রসিক হাসিয়া! কহিল, “বেড়া নীচু, দেখলেই মানুষের ডিন্থৃতে সাধ যায়। প্রত্ত্বের নেশা! এমনি !* বলি! সে পর পর প্রফুল্ল অরুণের পানে চাহিয়। রদিকতার ভাবে মুচ্কিয়া হানিল। তাহাদের দলের মধ্যেও একট! চাঁপা হাসির হিল্লোল অর্দব্যক্ত- রূপে বহিয়া গেল। প্রফুল্ল সেদিকে ভরক্ষেপ ন! করিলেও অরুণের চোখে তাহ! এড়াইয়া গেল না। লজ্জায় সন্কোচে তাহার মুখ আবার রাড! হইয়। উঠিল। কিশোরী বিনয়ের পানে চাহিয়া অরুণকে গুনাইয়া মৃছ্-কঠে সুর করিয়া আবৃত্তি করিল, শ্টুয়ে না ছুঁয়ে৷ না উটি লজ্জাবতী লতা-_ একান্ত সন্কোচভরে, একধারে আছে সরে, ছুঁয়ে না উহারে কেহ--রাখ মোর কথ! ।*

একাদশ পরিচ্ছেদ মাষ্টারি

প্রফুল্ল মেসের দোতলার ঘরে থাকে লোকের সহিত মেলা-মেশা তাহার খুবই কম। অরুণের সঙ্গেও তাহার সর্বদা দেখা হইত ন1। কলেজেও সে ভির-ক্লাশের ছাত্র। তা"ই “ইচ্ছা-সত্বেও অরুণ তাহাকে বড় বেণী কাছে পাইত না) তবু যেটুকু পাইত, সেই সময়টুকুর জন্তই সে উন্মুখ হইস্া অপেক্ষা করিত। প্রহুল্পর গভীর দূরত্ব-ভাৰ যাহা সাধারণের নিকট হইতে তাহাকে তফাতে রাখিত--অরুণের কাছে তাহাই যেন সমধিক আকরণীয় হইয়৷ উঠিয়াছিল। জবদকে সে যেমন সম্পূর্ণ কাছে পাইয়াছিল, প্রুল্নকে তেমন পায় নাই। আবার পায় নাই বলিয়াই যেন তাহার আকর্ষণও তাহার কাছে এত অধিক মিষ্ট লাগিত। জলদকে সে শ্তধু ভালবাসিত; গ্রফুল্নকে ভালবাসিত, শ্রদ্ধা করিত, আবার তয়ও করিত। “কোন কিছু অন্যায় কাজ করিতে লোকে অভিভাবককে যেমন ভদ্র করে, নিজের সামান্ত কোন ত্রটি ব! পড়ার কোন ভুল প্রমাণ হইলে অরুণ প্রফুল্নর কাছে তেমনি কুষ্টিত হই! পড়িত। সে বুঝিত, প্রছুন্ও তাহাকে ভাল বামিতে সুরু করিয়াছে। তবু ছুইজনের মাঝখানে কি-একট! ব্যবধানের দেওয়াল যেন সর্বদাই মাথ! খাড়। করিয়! দাড়াইয়া! থাকিত। কেছ কাহারো মনের নাগাল সম্পূর্ণরূপে পাইত ন|।

অরুণ ইহাতে ছুঃখ গাইত, কিন্ত প্রতিকারের কোন উপায়ও খু'জিয়। প্রাইত না। সে মনে করিত, তাহার ছুর্ভাগ) জীবনই বৈষম্যের মূল

শও অত্যাবণ্ডন

প্রফুল্ল আপন! হইতে কোনদিন তাহার বাড়ীর খবর কিছুই জানিতে চাহে নাই। অরুণও কৌতৃছল চাপিয়! রাখিয়া বিষয়ে বন্ধুর পদাহ্ক অন্সরণ করিত। প্রফুল্লকে এখন সে “দাদা বলিতে সুরু করিয়াছে। দাঁদ। বলিয়! ডাকিয়া সে তৃপ্তি পাইত। আগা-গোড়া সারা জীবনটাই যে তাহার পাতানো» সম্পর্ক' লইয়াই গঠিত! তবে দাদা ডাকের ক্ষোতটুকুই বা থাকিয়৷ যায় কেন! প্রফুল্নও যে ইহাতে খুনী হইয়াছিল, সেটা তাহার মুখ দেখিলেই বুঝ! যাইত। অরুণকে সে বথার্থ ভাইয়ের মত স্নেহ করিত। তাহার পাঠের উন্নতির জন্ত যত্ব লইত ) বাছিয়া বাছিয়। নিজের ছুই-একখানি ভাল বইও পড়িতে দিত। ছুইটি অকৃত্রিম বন্ধু পাইয়া অরুণের বর্তমান জীবন বেশ আননেই কাটিতেছিল। কলিকাতায় আসিবার পূর্বের সে ভয় পাইয়্াছিল, কেমন করিয়া নীরস কর্মক্ষেত্রে দিন কাঁটাইবে--মেজন্য ভাবনাও হইয়াছিল। জলদ-ও প্রফুললর বন্ধুত্বে তাহার উদ্দাসীন চিত্ত ধীরে ধীরে সংসারের প্রতি গ্রীতি-সম্পন্ন হইয়া! উঠিতেছিল। প্রফুল্ল বলিয়াছিল, সে তাহার ভবিষ্যৎ জীবন জ্ঞানান্ুশীলনেই কাটাইবে। সংসারী সাজি! সংসার-ধর্ম করা তাহার আদর্শ নয়!

কথাগুলি অরুণের ভাল লাগিয়্াছিল। দে যেন তাহার কুহেলিকা- চ্ন্ন জীবনের গতি খু'ভিয়া পাইল! সেও কেন এই আদর্শ গ্রহণ করুক না! সংসারের সহিত দেনা-পাঁওনা ন| রাধিকা সন্ন্যাসীর কঠোরত৷ ন! সহিয়াও যদি আনন্দময় জীবন-যাত্রার পথ পাওয়। যায় তাহাতে ক্ষতি কি? এই তভাল। অরুণ মনে মনে সেই দিনই প্রসুললকে গুরু-পদে বরণ করিয়া লইল। '

ঘরের দরজা আধখানা ভেজানে। ছিল। বাকী অংশ দিয়! বাহিরের কতকটা৷ দৃশ্ত অরুণের চোখে আলিয়! পড়িতেছিল। সিঁড়ি দিয়া কত লোক উঠানাম। করিতেছে ; কেহ-ৰ| তাহার দিকে কৌতুহলী দৃষ্টিতে চাহিয়াও

একাদশ পরিচ্ছেদ ৭১

বাইতেছিল। অরুণের ইচ্ছ। হইতেছিল, উঠিয়। দোরট! ভেজাইয় দেয় কিন্ত আলন্তবশতঃ তাহ! আর ঘটিয়। উঠিতে ছিল না।

ঘরখানির দেওয়াল হইতে ভাঙ্গ। ডেস্কটি পর্য্যন্ত গৃহের পূর্ববধি- কারীর স্থপতি-বিগ্তার প্রতি তগীর' অনুর গের যতই পরিচায়ক হউক, পরিচ্ছন্নতার প্রতি ষে তাহার তিলাদ্ধ অনুরাগ ছিল না, তাহা ঘরের দিকে চাহিলেই বুঝা যাইত। দেওয়ালের গায়ে পানের পিকৃ। চারিদিকে পেরেক পুঁতিন্ন। আবার তাহা তুলিয়া! লওয়ায় বহুস্থলে গর্ভ হইয়াছে__ টেবিলের উপর কালিঢালার চি বিদ্কমান। উপস্থিত উত্তরাধিকার-্থন্রে অরুণ যে কজা-ভাঙ্গা বাণিশচট! কাঠের ডেস্কটি পাইয়াছে, তাশ্ার ভিতর হইতেও আবর্জনার রাশি সলজ্জে বাহিরে উকি দিয়া উহার সত্বাধিকাত্রীর অমনোযোগিতার প্রমাণ দিতেছিল। €ডস্কটির ভিতর এখনও এমন অনেক জিনিষ আছে, যাহা কোন কলেজে-পড়া জেণ্টল্ম্যানের ডেঃকের (ভিতর থাক। উচিত ছিল নাঁ। পুর্ববাধিকারী ওয়ালে কত অসংখ কীট- পতঙ্গ সরীন্থপ লতা-পুষ্প দেব-দেবীর নাম, কবিতার অর্ধচরণ, আর কত কি যে আকিকা লিথিয়া রাখিয়া! গিয়াছে--তাহার আর সংখ্য। নাই ! টেবিলে ছুরি দিয়! খুদিয়৷ নিজের নাম-ঠিকান! অধিষ্ঠান তিরোধানের সাল-তারিখটি পর্য্যন্ত লেখ। থাকার দেওয়ালে চুণ ফিব্বাইলেও যে পরবর্তী অধিবাসীকে তাহাকে স্মরণে রাখিতেই হইবে, ইহার প্রমাণ পাওয়া! ধাইতেছিল।

এই বিচিত্র গৃহসজ্জার পানে চাহিয়। অরুণ নিজের ভাগ্য চিন্ত। করিতে- ছিল। দরজার বাহিরে জুতার শবের সহিত কণ্ঠস্বর শুন! গেল, “অরুণ বাবু জেগে ন। ঘুমিয়ে? আস্তে পারি ?”

স্বর শুনিয়াই অরুণ বুঝিল, আগন্তক জলদ। এস” বলিয়া! লে বিছানার উপর উঠিয়৷ বসিল। জলদ ঘরে ঢুকিক্া প্রথমেই গলির দিকের

শ২ প্রত্যাবর্তন জানালাটি খুলিয়! দিল। অল্প-পরিসর স্থান, তবু কাঠের ত্ত-মার! ছোট জানালাটি খুলিয়া দিতেই ঘরের মধ্যে একটু আলো! বাতাস প্রবেশ করিল। ইতভ্ততঃ চাহিয়৷ দেওয়ালের হুকে টাঙ্গানে। তালপাতার ছোট পাখাখানি পাড়িয়৷ আনিয়া! এইবার সে তক্তাপোষের উপর অরুণের পাশেই কারেমিভাবে স্থান গ্রহণ করিল। বার-কতক পাখ! নাড়িয়া হাওয়! খাইয়। জলদ কহিল, “আঃ বাচা গেল। আচ্ছা অরুণবাবু, এমন সময় জানাল। এটে ঘরে গুয়ে যে! অন্থুখ-বিন্খ করেনি কিছু ?” অরুণ কহিল, "এইবার উঠ্ব-উঠ্ব ভাব্ছিলুম। জানালাট1--ওট! বন্ধই ছিল কি না, আর খোল! হয়ে ওঠেনি--” জলদ কহিল, “দেখ, তোমাব্র কাছে আমি একট। দরকারেই এসেচি। মনে করেছিলুম, হয়ত তুমি এতক্ষণে বেরিয়ে গেছ, বাসান্ন এখন তোমা পা'ৰ না, আবার সন্ধ্যার পর আস্তে হ'বে, কিন্তু তোমায় অনেক ধন্যবাদ যে এই ছুর্জয় গরমে বাহিরে ন! গিয়ে, বন্ধ ঘরে শুয়ে থেকে আমার পরিশ্রমটি তুমি বাচিয়ে দিয়েচ |” বলিয়া দে মৃছ হাসিয়! একটু ইতস্তত: করিয়া! কুষ্ঠিত ভাবে পুনরায় কহিল, “যদি কিছু মনে ন! কর, তাহলে একটা কথা বলি।” তাহার সঙ্কোচপূর্ণ ভাব দেখিয়া অরুণ বিস্মিত হইল। এমন কি কথা, যাহা বলিতে এতটা সন্কোচ আসে? জল্দ তাহার কাছে টাকা ধার চায় কি? অরুণের এই ছুটি সঙ্কোচের হেতুই জানা আছে--এক, বংশের পরিচর লওয়া) আর এক--অর্থ প্রার্থনা করা! তবে অরুণের মত দুর্ভাগা কিছু জগতে অনেক নাই! টাক! ধার চাহিতে, প্রয়োজন হয়ত ভিক্ষা করিতেও অনেককেই হয়। কিন্তু পিভৃ-পরিচয় জানে না--এমন হ্তভাগার সংখ্যা অল্পই। মনের চিন্তা মনে চাপির! সে কহিল, ্বল।» জলদ কহিল, “কথা এমন কিছু নয়--পিশে মশাই আমায় ভারী মুষ্িলে ফেলেচেন। তার ছোট ছুটি নাতি-নাত্নীকে পড়াবার জন্তে

একাদশ পরিচ্ছেদ ৭৩

টান বিজ্ঞাপন দিয়ে লোক জোগাড় করা৷ তার পছন্দ নয। অথচ জানা-শোনা লোক চাই। . আমার উপর পড়েছে খুঁজে দেবার ভার। এক মাস ধরে ভাই, তাঁকে স্তোক দিয়ে রেখেচি, খুঁজ্চি-খু'জ্চি করে-_কিস্ত আজ একেবারে তিনি নাছোড়বন্দা, আর কোন কথাই শুন্বেন না। গার নাতি-ন*ত্নী ভারী বে-শায়েস্ত। হয়ে 'উঠ্চে। একে ঠাকুমার আদর, তার উপর পড়া-শোঁন। মোটে নেই। একেবারে বনমান্ুুষ হয়ে যাচ্চে। হাস্চ যে--তার ব্যাখ্যা-মতই আমি বল্চি। তুমি যদি নিন-কতকের জন্তও অন্ততঃ তাদের গুরুগিরি করে দেখ, তাহলে সময় পেলে আমি খু'জে পেতে তখন অন্ত কাকেও দেখ্‌ত্ে পারি। বুনোছটো৷ আমায় যে একটুও মানে না, নৈলে আমিই না! হয় কিছু দিন চালিয়ে নিতুম।-_-অন্ুবিধে হবে কি বেশী-_?” বলির! অলদ উত্তরের আশায় অরুণের মুখের পানে চাহিল।

বন্ধুর এই অবাচিত অনুগ্রহে তাহার সহৃদয়তারই প্রমাণ পাইঞ্স কৃতজ্ঞতায় অরুণের চোখে জল আসিল আত্মসম্বরণে অসমর্থ হ:য়। মু" স্বরে সে কহিল, ”মনে মনে কাজ আমি খুঁজছিলুম। অস্ুহিৎধ। বৌধ কলে চল্বে কেন? বরং তোমার নিজের হতে-_-”

জলদ বাধ! দিয়! কহিল, *গুভন্ত শীন্রম্‌ উঠে পড় তাহলে, আজই হাঙ্গামাট! মিটিয়ে দিয়ে আসা যাক্‌।”

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ

প্রিয়নাথ বাবু

পরদিন সকাল বেল! ঘুম ভাঙ্গিয়া অরুণের মনটি বেশ প্রকল্প হইয়া রহিল। কাল সন্ধ্যায় সে জলদ্ের সহিত গিয়া নূতন কার্য্যে বাহাল হইয়! আসিয়াছে। কাজটি তাহার বেশ পছন্দও হইক্নাছিল। বাড়ীর কর্তা প্রিকবনাপ বাবু মানুষটিকে ভাল লোক বলিয়াই অরুণের ধারণ! হইয়াছিল! তাহার বয়স পথগন্ন বৎসর হওয়াই সম্ভব। কীচা-পাক! চুল। গোঁফেও পাঁক ধব্রিয়াছে। দাড়ি কামানো রংটি কাচা সোনার মত। গঠন দ্বোহারা,--কোমলতাময়। এুখে গুড়গুড়ির নলের সহিত হাঁসিটি সর্বদাই লাঁগিয়। আছে মন খোলা, সদানন্দ পুরুষ-_পূর্ব্বে ডেপুটি ছিলেন, বছর খানেক্‌ হইল পেন্সন লইয়। বাড়ী আসিয়! বমিয়াছেন। গৃহে স্ত্রী ছুটি পৌত্র-পৌত্রী! পুত্র পাবনার মুন্সেফ। তাহার! নাতি-নাত্নীকে ছাড়িয়া থাকিতে পারেন ন! বলিয়াও বটে, তা ছাড়া বাহিরে বাপের সহিত ঘুরিয়! বেড়াইলে পড়াশোনার ক্ষতি হয় কারণেও, বড় ছেলে-মেয়ে ছুটি পিতা. মহের কাছে ছোট ছুটি বাপ্‌-মার কাছে থাকিত। অরুণ এই ছেলে- মেনে-ছুটির গৃহ-শিক্ষকের, অধিকার পাইল। ছেলেটির বয়স ছয় বংসর ; মেয়েটির বয়স আন্দাজ বারো হইবে মেয়েটির নাম বরুণা উপন্তাসের নায়িকার ন্তার অন্থপম। সুন্দরী ন! হইনে,ও হুভ্তী। বকা চলে। বসঙের কচি পাতার মৃত কোমল শ্ামল লাবণ

ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ

শ্রী মগ্ডিত। বাবিকার স্থগঠিত ক্ষীণ তনুখানি দেখিলে কালিদাস-বণিত সঞ্চারিণী পল্লবিনী লতার কথাই মনে পড়ে ইহাকে প্রথম দর্শনে অরুণ একটু কুষ্টিত হইয়াছিল। কিন্তু অল্ক্ষণের আলাপেই বুঝিল, কুষ্ঠার কোন কারণই বর্তমান নাই। মেয়েটি দেখিতে একটু বাড়ন্ত হইলেও আসবে একটি পাঁচ বছরের মেয়ের মতই মনটি তাহার সরলতায় ভর! ছাত্র প্রহার হষ্টপুষ্ট গৌরবর্ণ, সদা-চঞ্চল সদদা-সহান্ত মুখ এক ঘণ্টার মধোই সে মাষ্টার মহাশয়ের সহিত প্রগাঢ় সখ্য করিয়া! ফেলিল। দাদামহাশয়কে জানাইয়৷ আসিল, এবারকার মাষ্টার মহাশয় খুব ভাল। ইহার সহিত সে খুব শিষ্ট ব্যরহার করিবে ; এবং পূজার পূর্বে লেখাপড়ায় দিদিকে ছাড়াইয়! গিয়! বাবা আসিলে তাহাকে একেবারে চমৎকৃত করিয়া দিবে।

মাষ্টারের বয়স এত অন্ন দেখিয়া, গৃহিনী মহেশ্বরী দেবী কেবল একটু- খানি অপ্রসন্ন হইয়া আপত্তি ুঁলিয়াছিলেন। মেয়ে “ডাগর হইতে চলিয়াছে--এখন কি আর এমন ছেলে ছোক্র। মাষ্টার রাখ! ভাল ? যদি মেয়েকে প্নিলেবতী” করিবারই এত সখ, তবে দেখিয়। গুনিয়া একট বুড়! সুড়া-গোছ পণ্ডিত রাখিলেই ভাল হইত ! জলদের কাছে তাড়া খাইয় শেষে তাহাকে চুপ করিতে হইল। প্রিরনাথ বাবু গুড়গুড়ির নল হইতে মুখ সরাইয়। আশ্বাস দিয়! কহিলেন, “খুকীর জন্ত ভাব্চ ! রাম; ! বাচ্ছা ! আহা, ছেলেটিকে দেখেই কিন্তু কেমন মায়! হচ্চে--থাক্‌। জলদ বল্ছিল, ওর অভাব নাকি বড্ড ।” ইহার পর গৃহিণীও আর কোন, আপত্তি তুলিলেন ন|।

পরের সপ্তাহে জলদ পিশ্িমার মুখে শুনিল, মাষ্টারটি ভাল। মুখ দেখিলেই মায়া হয়।

জলদ হষ্টামি করিয়া বুড়া পঙ্ডিত মহাশয়কে আনিয়! দিতে চাহিলে গৃহিণী কহিলেন, প্ৰাপ্রে, তা কি হয়! বিনি-অপরাধে এক জনের অন্ে

: প্রত্যাবর্তন হস্তারক হতে আছে কি? যদি নিদ্ধে থেকে যেতে নাচায় আমার খোকা-খুকীদেরই সামিল হয়ে থাকৃবে।”

জলদ পিশিমাকে চিনিত। কথা শুনিয়া আশ্বস্ত হইয়া! হাসিয়া! সে হলিয় গেল।

ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ হিমুর কথা

অরুণ চলিয়া গেলে হিমুর প্রথমটা ভারী কান্ন! পাইতেছিল। মা- দিদিমার চোখ এড়াইয়! সে তা+ই ঘুরিয়া৷ আসিয়! অরুণের পরিত্যক্ত বাহিরের ঘরখানির শিকল খুলিয়া ঘরে চুকিল। আজ সে ঘরে থালি তক্তাপোষ ছাড়। আর কোন-কিছুই ছিল না। তক্তাপোষের উপর উপুড় হইয়া পড়িয়া প্রথমে সে খুব খানিকট! কীদিয়। লইল) কীদিতে কীদিতে মনে মনে, অরুণের উপর অনেক .রকম করিয়া রাগ করিল। ছুটিতে সে বাড়ী আসিলে কি উপায়ে তাহার সহিত বিবাদ বাধাইয়' তাহার মনে আঘাত দিয়] তাহাকে জব করিবে, তাহারও একটা “থস্ড়াঃ তৈয়ার করিয়া ফেলিল। তা'রপর উঠিয়া! চোখ মুছিয়! সে ঘরের বাহির হইল। ছেলেমানুষের মনের বেদন! যেমন গভীর, তেমনি ক্ষণস্থায়ী ! শীদ্রই তাহার চোখের জল গুকাইয়া গেল। চারিদিকে চাহিয়। সে যখন কেবল অরুণের স্বৃতি-চিহ্ই দেখিতে লাগিল, তখন মনে হুইণ, “আড়ি” না দিয়া অরুণ ফিরিয়। আসিলে এবারকার মত না হয় “ভাবই বজায় ঝ্বাথিবে। উপস্থিত কাল সকালে বি যখন বাজারে যাইবে সে তাহাকে একথানি পোষ্টকার্ড কিনির। আনিতে বলিবে; এরং তাহাতে যত শীপ্ব সম্তঘ ফিরিয়া আসার জন্য অরুণকে লিখিয়াও দিবে মা৷ গো, এমন বুনো৷ দেশে কি একা-একা| মানুষ কখনে। থাকতে পারে ? মা বেন, "পাড়ায় ?ক আর ছেলে-মেয়ে নাই ? সঙ্গীর অভাব কি !” ভারী সব সঙ্গী! উহ্ার। কি অরুণের মত তাল! ন'»

প্রত্যাবর্তন

ধু উহাদের সহিত রাতদিন থেলিতেই কাহারো! ভাল লাগে? আর সে কি এখন বড় হইতেছে না, যে এখনো রাতদিন কেবলই থেলিয়! বেড়াইবে? লেখাপড়া না৷ করিলে মানুষ মূর্খ হইয়! থাকে, পৃথিবীর কোন কিছু ভাল জিনিষই জানিতে ব! শিখিতে পারে না। অবশেষে তাহাকেও সেই মুর্ধ হইয়া থাকিতে হইবে? কেই ব। আর তাহাকে পড়া বলিয়। দিবে, কেই বা লেখ! শুধ্রাইবে? ম! এ-সব কিছুই বোঝে না। কিছুদিন মনের বৈরাগ্যে সে খেলাধূলা ছাড়িয়। খুব মনোযোগের সহিত লেখাপড়া করিতে াগিল। অরুণকে এবার চমতকৃত করিয়! দিতে হইবে। তাহার হাতের অক্ষর দেখিয়। অরুণ যেন মনে করিতে পারে যে--হী, হিমুরও মাথা আছে, বুদ্ধি আছে, সেও বোক| নয়।

অরুণকে সে প্রথম বেদিন চিঠি লিখিল, সেদিন সার! সকাল বেলাটাই ভাহার একখানি পোষ্টকার্ড লিখিতেই কাটিয়া! গেল। তবু অনেক বন্ধে লেখা অক্ষরগুলি ঠিক মনের মতও হইল না। চিঠিতে কথা বড় বেণী কিছু ছিল না; অক্ষরগুলির ছাদ হিমুর যত মনের মতই হউক, 'আকারগুল। মোটেই তাহার পছন্দ হুইল না। হিমুর মনের সব কথাই হাই অপ্রকাশিত রহিয়্া গেল। শুধু ছুটি হইলেই অরুণ যেন চলিয়া আসে, এই একটিমাত্র অনুরোধই কর! হইল-_ছুই-তিন দফায়

সময়ে চিন্টির জবাব আসিল। অরুণ কলেজে ভর্তি হইয়াছে) এবং ছেলে গড়াইবার কাজ পাইয়াছে। পুজার ছুটির আর তিনমাস দেরী-_ এই তিনটি মা কাটিয়া গেলেই দে বাড়ী আসিবে।'

চিঠিঞ্পাইয়। হিমুর আর আহ্লাদের সীমা! রহিল না। তাহার বয়সে এই প্রথম সে অপরের কাছ হইতে চিঠি পাইস্াছে। ঠিকানার উপর বার তাহারই নাম প্রথমেই লেখা ! চিঠিখানি অনেকবার পড়িয়া পড়িয়া সে হখন তৃপ্ত হইল, তখন মা-দিদিমাকে দেখাইবার জন্ত বাড়ীর ভিতর

ভ্রয়োদশ পরিচ্ছেদ

'গেল। সেদিন অপরাহ্থের মধ্যে হিমুর এই পত্র-প্রাপ্তি-সংবাদ জানিতে পাড়ার কোন ছেলে-মেয়েরই বাকী রহিল না।

ক্রমে অভ্যাসে অরুণের বিচ্ছেদ-ছুঃখ কমিয়৷ আদিলে সে আবার নৃতন বন্ধু-সংগ্রহে প্রবৃত্ত হইল; ঘোষেদের পঙ্কজিনীর সহিত সই, শৈবালের সহিত মকর ইত্যাদি পাতাইয়৷ খেলার মজলিস্‌ বেশ জাকাইয়া তুলিল। তবুও খেলাধূলার মধ্যেও অরুণকে সে প্রায়ই চিঠি লিখিত। তাহার 'নৃতন বন্ধুদের কথা, উট্টাচারয্যদের বাতাবি লেবুর গাছে কিরূপ ফল ধরিয়াছে, মিন্দের বিড়ালের যে তিনটি বাচ্ছা হইয়াছিল, তাহার মধ্যে কয়টি সাদ! কক্টি ভিন্ন রঙের--এ সব কথারই উল্লেখ থাকিত। এবার দে আৰু একটি নৃতন খবর লিখিয়াছিল-_মুখুযোদের ভূবন এখন তাহাদের খেলার সঙ্গী

হিমুর খেলার সাথী ভুবনকে, অরুণ চিনিত সম্প্রতি তাহার বাব মার! গিয়াছেন লিথিয়া হিমু ছুঃখ প্রকাশ করিয়াছে পিভৃহীনা বালিকা হুখেটি ভাল করিয়াই বুঝিত। তাই সহাম্থৃভূতির অশ্রু নিজে মুছির়াই শান্ত হইতে পারিল ন।। ব্যথার ব্যথী অরুণকেও সে-ছুঃখের অংশ সে ব্টন করিয়া দিল। ছুটিতে অরুণ আদিলে সেখানকার সকল সংবাদ সংগ্রহ করিয়! লইঞ্! হিমু কহিল, “অরুণদা, বরুপদার কথা তুমি আমায় কিছুই লেখনি--তার কথা৷ সব বলনা ভাই ।”

"ভার কি কথা?” বলিয়া অরুণ. হাসির হিমুর মুখের পান চাহিয়া দেখিল।

*এই সব-সে কেমন টা কত বড়? আচ্ছা আরুণদা, সে তোনার অরুণদা বলে ডাকে “না--স্তার বলে।” “সে কাকে বলে অরুণদ।? আমি কারুকেই কথ! বলি না।

৮০ - প্রত্যাবর্তন

দে বুঝি ইংরিজী কথ! ?” বলিয়। বিপুল বিশ্বয়মাথ। চোখছুটি লে অরুণের মুখের উপর স্তস্ত করিল। অরুণ কহিল, “তাই-_তুমি বাংলার গভী পেরুবে না। যদি ইংরিজি শিখতে, আরও কত জান্তে, বুঝতে পার্তে। বরুণা এই ক”মাসেই খাসা কথ বলতে পারে ইংরিজিতে ।*

“তোমার সঙ্গে বলে? তার হাসি পায় না ইংরিজিতে কথা বল্‌তে ?” বলিয়৷ হিমু নিজেই মুখে কাপড় চাপিয়া৷ খিল খিল করিয়া একচোট হাসিয় লইল। কিন্তু সে হাসিতে অরুণ যোগ দিলই না; ৰরং গম্ভীর মুখে রহিল দেখিয়া হাঁসি থামাইয়৷ চোখ সুছিয়। স্থির হইয়। বসিক্। দে কহিল, *আচ্ছ! গো, আচ্ছা, পড়াও না-_কে বারণ করেচে ? জানি আমি, সে ষখন জানে তখন আমায় জান্তেই হবে। তোমার হুকুম আর না হবে না। কিন্ত কেন বল-ত--?* বলিয়। সে বিরক্তমুখে উঠিয়। গেল।

কেনর উত্তর অরুণও দিল না, সেও বার্থ ভাবে চাহিল না। পরদিন বথাকালষে দেখ! গেল, শিক্ষক ছাত্রী 'বিপুল মনোযোগে নূতন ভাষার চচ্চা ব্যাপৃত। ছুটির অর্ধেক কাল বন্ধু-গৃহের পুজা-উৎসবে কাটাইয়া আসায় শীস্ই অরুণের ফিরিবার সময় হইল। ফাঁ্টবুকের অর্থ-পুস্তক বাংল! হাতের লেখায় হিমুর বুঝিবার পক্ষে সহজ সঙ্ষেতে যথাসাধ্য বুঝাইবার প্রয়াস নিজে নিজে পাঠাভ্যাসের জন্য হিমুকে প্রস্তুত করিয়া দিয়া অরুণ বিদার লইল। পরের বার ছুটিতে আসিয়া সে আশ্চর্য্য হইল, মেধাবিনী বালিকা অর্থ-পুস্তকের সাহায্যে ফার্টবুক শেষ করিয়! সেকেওড বুক আরম্ত- করিয়াছে। আনন্দপূর্ণ-কঠে অরুণ কহিল “তুমি যে খুব ভাল তা আমি জান্তুম। কিন্তু খুবটা গ্রে কত বড়, তাই কেবল জান্তুম না।* অক্পপের প্রশংসায় হিমুর শ্রম সার্থক মনে হইলেও শ্বভাব-বশে লে কহিল, "ভারী ত-_-বরুণার চেয়ে আর আমি ভাল নই ।”

“নয় বই কি! বরুণার কিভাল! তাকে চিরকাল ধরে চেষ্টা করে,

ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ ৮১

লোকে শেখাচ্চে তাই সে শিখেচে। পাখীকে বথা বল্তে শেখালে সেও কথা বলে। ওর বাহাছুরীটা কোন্থানে? যে প্রতিকূল অবস্থার মধ থেকেও শিখতে পারে, সেই বাহাহুর ; আশ! করি, বাংলা দেশ একদিন হিমানী দেবীর লেখা। দেখে অবাক্‌ হয়ে যাবে।”

হিমু. মনে মনে অত্যধিক খুধী হইলেও মুখে কহিল, “তোমার কল্পন' কল্পনাই থেকে যাবে অকুণদা-_”

চতুর্দশ পরিচ্ছেদ জলদের নিমন্ত্র পূজার ছুটি কাছে আসিয়া গড়ায় দেশ ভুড়িয়া একটা চাঞ্চল্োর সাড়। নি গিয়াছিল। অফিসের চাকুরে হইতে সুর ছাত্রদলেও ব্স্ততার লক্ষণ স্পষ্ট প্রকাশ গাইতেছিল। অরুণদের মেসও সৌভাগ্য হইতে বঞ্চিত ছিল ন!। বাড়ী বাইবার আগ্রহে অনেকেই আগে হইতে জিনিষ-পত্র কেন! বন্ধু-বান্ধবের সহিত দেখাগুনা! বিদায়-পর্বব সারিয়! হইতেছিল। লব্ব! ফর্দী লইয়! বাড়ীর চিঠিও সকলের ঘন ঘন আমিতেছিল। মার! মেসখানার মধ্যে কেবল ছুইটি মানুষের মানসিক বিপ্লবের কোন নংবাদই, বাহিরে প্রকাশ পাইতে দেখ! গেল না। প্রফুল্পের মানসিক উদ্দাম. ফোন-কিছুতেই বাহিরে কখনো প্রকাশ পাইত না, তাই ইহাতে কাহারও মনোযোগ আকুষ্ট না হইলেও অরুণের প্রতি কাহারে! কাহারো চোখ্‌ পড়িতেছিল। যাহাদের পড়িতেছিল, তন্মধ্যে জলদই প্রধান। কয়েকদিনের দ্িধা কাটাইয়৷ একদিন সে কহিল, "্অরুণবাবু ছটিতে আগনি বাড়ী যাবেন ত?” অরুণ একটু হাঁসিয়। একটু কাশির৷ সংক্ষেপে কহিল, প্যাব 1” “কবে যাচ্ছেন? ছুটিক*গোড়ায় 1” বলিয়া ০১১ মুখের ভাব বিপর্যয় লক্ষ্য করিতেছিল। “দেখি--* বলিয়া অরুণ এবারও এড়াইয়। উত্তর দিল। জলদ বুঝিল, বাড়ী যাইবার জন্ত বন্ধুর খুব বেণী ত্বরা নাই। তাই থু্সী হইন্। সে কহিল, “আমাদের বাড়ী পুজে। হয়। বছর কাকার! সকলেই

চতুর্দশ পরিচ্ছেদ ৮২৫

দেশে আ্বেন। একটু বিশেষ রকম ধৃমধামও হবে শুন্চি। আপনিও চলুন না-_সেখানে পুজোট। খুব আমোদে কাট্বে তা হলে। লক্্মীপুজোর আগেই ন| হয় ফির্বেন। স্ুনীতিও আপনাকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছে” 1 ব্ুনীতি জলদের স্ত্রী!

বন্ধুর আগ্রহ-ব্যাকুল দৃষ্টির সহিত তাহার দৃষ্টি মিলিতে অরুণ তৎক্ষণাৎ উত্তর দদিতে পারিল না। মনটি তাহার তখন ঝাল্দার পথেই অনেক- খানি অগ্রসর হইসজ গিয়াছিল। হিমু লিখিয়াছে, "আর কত দেরি কর্‌বে অরুণদা? ছুটি কি তোমার হবে না?” অনুরোধের পর কি আর দেবি কর। যায়? তবু অরুণের আট-ঘাট-বাধা সতর্ক মন এমন অবস্থাতেও নিজ-অধিকারের সীম! বিস্বৃত হইল ন। হিমু ছেলেমানুষ, সে নিজে খেয়াল-মতই ন! হয় বর! দিয়াছে, কিন্তু তাহার ম| দিদিমার ত্বরা কতটুকু, তাহা অরুণের বিশেষরূপে জানা নাই। তাই মনে কুগ্ঠা জাগিতে- ছিল, -পাছে মালতী দেবী কিছু মনে করেন! মুক্তা ঠাকুরাণী বরকত হন্‌! উহাদের ন! দেখি! সেও যে থাকিতে পারিবে না। তবু দীর্ঘ ছুটটায় নিজের সমস্ত বায়-ভার সেই ছুইটি অনাথা৷ বিধবার স্বন্ধেই ব! সে চাপাইবে কোন্‌ সাহদে? সেখানে তাহার কতটুকুই বা দাবী! [কসেরই বা নাবী? ৫৮ | ছটিতে ঘেসের ঠাকুর-ঢাকর কেহ থাকিবে না, থাকিলে সে এখানেই কিছুকাল থাকিয়া দিন দংক্ষেপ' করিয়া লইত। জলদের প্রশ্নের উত্তরে এই সব বিষয় তাহাকে মনে মনে আরও একবার ভাবিয়। লইতে হইল, তাহার উত্তরে নিজের সম্মতি জানাইতে তাহার 'একটু বিল হইল। _ এখানেও যে সঙ্কৌচে বাধিতে ছিল না, তাহা নহে; তবু বন্ধুর সে আগ্রহ ব্যাকুল আহ্বান. দে ফিরাইতে পাঁরিল না। দে বুঝিত,_-জলদ তাধাকে ভালবাসে সেও যে ভালবাসারই কাগাল। তা'ই মন তাভাব ভিন্ন পাগ

প্রত্যাবর্তন ছুটিতে চাহিলেও বন্ধুর অযাচিত মেহের আহ্বানটিকে সে ব্যথা দিয়া ফিরাইতে পারিল না!

এবারকার ছুটিটি যে কেমন আননদ-উৎসবে' কাটিবে, তাহারই একটি সরস তালিকা মুখে মুখে বানাইয়৷ লইয়া জলদ বখন সম্বন্ধে 'অরুণের' নিরুৎমৃক মনটিকেও একটুখানি প্রলুন্ধ করিয়! ফিরিয়া. গেল, তখন .সন্ধা হর-হয়। অরুণের স্্লালোক ঘুরখানির মধো অন্ধকার তখন ূর্ণাধিকারেই' নিজের প্রভাব বিস্তার করিয়াছিল অরণ প্রসন্ন মনে উঠিয়া! দাড়াইল। . বাহিরে বেড়াই! আসিবার জন্ত দড়ির আলন! হইতে খাকি রংয়ের সার্টটি পাড়িক গায়ে দিয়! সে ধীর পদে বাহির হইয়! পড়িল .

ছুটির আগের দিন প্রফুল্লকে বাক্স গুছাইতে ব্যস্ত দেখিয়া অরুণ কাছে আসিয়া দীড়াইল, যদি সে' কোন কাজে লাগিতে পারে! প্রফুল্ল, মুখ তুলিয়া চাহিয়া! একটু হাদিয়া কহিল, “কি অরুণ, বাড়ী বাচ্চ নাকি ?”

অরুণ কহিল, "জলদ নেমন্তন্ন কল্পে, তাই আগে ওর ওখানেই যাব?”

“নেমন্তর পেয়েচ-_-বাঃ! তা'হলে ছুট! কাটুবে ভাল-_বল ?” বণিয়া' সে আবার নিজের কাজে মনোযোগ দিল। অরুণ চুগ করিয়া তাহার পাশে, বসিয়া! কাজ দেখিতে লাগিল

অনেকক্ষণ নিশ্তব্ধে কাটিয়া গেল। নীরৰত| অরুণের, ভাগ লাগিতেছিল না? তাই প্রথমে সেই কথা কহিল, বলিল, প্প্রসু্দ। বাড়ী বাচ্চ ত1* . .. প্রফুল্পের আদেশমত অরুণ এখন তাহাকে আপনি ছাড়িরা তুমি বলিতে ধরিয়াছে। শ্রফুল্ন মুখ না তুলিয়াই কহিল, প্ন|।»

“তবে__কোথায় যাবে প্রদুঘ্দা ?” অরুণের প্রশ্নে বিশ্ময়ের সুর ধ্বনিত হইল। প্র্রদুল্প তাহা লক্ষ্য করিল। কাজে চৌথ রাখিরা অনাগ্রহতাবে সে কহিল, “বাইরে একটু ঘুরে আস! যাবে ।” .

চতুদ্দশ পরিচ্ছেদ "৮৫

অরুণ কহিল, *বাড়ী থেকে মত আনিয়ে নিয়েচ প্রঞুলনদা ? তারা হয়ত ছুঃখিত হবেন কত-_না যাওয়ায়।”

“হতে,পারেন। না অরুণ--মত চাইলে তারা দিতেন না, বিশেষ করে ঠাুমা। কাকাবাবুও রাজী হতেন ন!। কিন্তু না চাইলেও বিদ্রোহ কর্বেন না, এও আমি জানি বলিয়! সে কাজ শেষ হওয়ায় বাকা বন্ধ করিল এইবার:ফিরিরা বিল; এবং ছুটিতে অরুণের পড়াগুনার কিরূপ ব্যবস্থা করা! উচিত তাহারই আলোচন! করিয়। পরামর্শ দিয়া তাহাকে আর পূর্বকথার পুনরারৃত্তির অবকাশ দিল না। অরুণ মনে করিয়াছিল, এই অবসরে সে প্রছুল্নদা'র পারিবারিক জীবনের একটু খবর জানিয়া লইবে। . কিন্তু প্রফুল্লের ভাবে তাহাকে সম্বন্ধে অনিচ্ছুক" বুঝিয়! আলোচনাও দে আর তুলিতে পারিল না। তাহার কথায় যে ছইজনের উল্লেখ সে করিয়াছিল তাহাতে অরুণ বুঝিল, আপত্তি করিতে ঠাকুর্রমাতা কাকাবাবু। তবে কি রফুরধাণও তাহারই মত তাগাহীন-_পিহ- মাতৃহীন 'অভাগ! ?

চিন্তার সকগেই তাহার হাসি আদিল। নিজের সহিত সে আবার অন্ঠের হুযন করিতে চাহে! হউক পিতৃ-মাতৃহীন, তবু: উহার ঠাকুরমা” আছেন, কাকাবাবু আছেন।". নিজের বলিতে গৃহ-ভূমি-_আত্মীর-স্বজন সবই আছে,--তবু ষেন, কেন কে জানে, অরুণের মনে হয়-_প্রকুলদা'র. মনেও যেন তাহারই মত একটা অভাবের ঝড় দিবারাত্রিই হাহাকার তুলিয়! বহিয়া যাইতেছে ওই মানুষটির পরমসহিষ্ণ সংযত মুখে, আবেগ-বর্জিত ব্যবহারে, সকলের প্রতি ভালবাসায়_উহার মনের যে নিরুপদ্রব ছবিটি প্রকাশ পায়, আসলে কিন্তু তা নয়। হইতে পারে--ইহ ভরম। অরুণ হুয়ত ঠিক মত তাহাকে বুঝিতে পারে নাই। ইহা অমূলক হওয়াই তাহার .একাস্ড প্রার্থনীয়। তু স্নেহ-ছু্বল চিত্তের সংশয় যেন কাটিতে চার ন|।

৮৬ প্রত্যাবর্তন

পর নিজেকে কুবিতে দেয় না, নিজে হইতে অগ্রসর হইয়া বুঝিবার সাহসও অরুণের হয় না। বন্ধুর এই আত্মগোপন-চেষ্টায় অভিমানে অনেক সময় তাহার চোখে-জল ভরিয়৷ আদে-_মনে হয প্রছুল্লদাঃ এখনও তাহাকে পর মনে করে, তা+ই কিছু বলে না। বন্ধু কি সুধু সুখের সাথী-_ছুঃখের অংশীদারও কি নয়? অরুণের ষে সংসারে বলিবার কথ৷ কিছু নাই, তাই সে নির্বাক! কিন্তু যাহার আছে, লে কেন বলে না?

সে দিন অনেকক্ষণ পর্য্যত্ত প্রকল্পের একটি কথ! বার বার তাহার মনে. উঠিতে লাগিল। প্রফুল্ল বলিয়াছিল, “মত চাইলে তীর! দেবেন না। কিন্ত না চাইলেও বিদ্রোহ কর্বেন না।”

কেন তা' কর্বেন ন1? প্রসুল্লের পারিবারিক জীবন কি তবে শীস্তিপূর্ণ নয়? তাহার আত্মীয়ের! কি তাহার জন্য বথার্থ ব্যাকুলত| অনুভব করেন না? খুব সম্তভব_ভা'ই। সেই জন্যই প্রুল্লদা” বাড়ী যাইবার জন্য ব্যন্ত হ'ন না। অরুণ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া! মনে করিল, কে জানে, ছুঃখী কে? যাহার নাই? অথবা যাহার থাকিয়াও নাই? জগতে ছুঃখ বুঝি স্বাভাবিক --তা” সে বাহার পাশে যেরূপেই দেখ৷ দিক!

জমিদারবাড়ী +৮৮71/0৯৮/

জমিদার ইন্দ্রনাথের বাড়ীখান। প্রভূ-পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বেশ- পরিবর্তন করিয়৷ লোকের চোখে বিপুল বিশ্ময় জাগাইয়া তুলিল। সাদা- সিধ! ছাদের চক্মিলানে। চির-পরিচিত বাড়ীখানা। মাস-কয়েকের মধ্ো বর্ণে গঠনে সকল রকমেই যেন আশ্চর্য্রূপে বদলাইয়া গিয়াছিল। বাড়ীখানায় নৃতন করি৷ বালি ধরাইয়। রঙ লাগানো হইয়াছিল, জানালা খড়খড়িতেও রঙের বাহার খুলিয়াছিল। কলিকাতা হইতে মিশ্ত্রী-মজুর আসিয়। উপরে নীচে সমস্ত ঘরগুলিতে ঘরের রঙের সহিত মিল রাখিয়া ফুল-পাতার নক্স। আকিয়। দিয় গিয়াছে বাহিরের দিকে কাজ করা লোহার রেলিডে ঘের! বারান্দা তৈয়ার করাইয়া সেখানে বিচিত্র চীনা মাটার টবে কৃত্রিম উদ্যানের শোভা! স্থষ্টি করা হ্ইয়াছে। বাগানে ফোয়ারা, মর বাধানে। চত্বর এবং চারিদিকে লাল সুরকির সর পথ। পথগুলির আরম্ভ ভাগে রতা-পাতার একটি করির। তোরণ-দ্বার। অধিকাংশ তোরণ দ্বারগুলিতেই প্রস্ফুটিত ঝুমকালতা, মাধবী, মালতী তরুলতার বিচিত্র শোভ।। পথগুলির ছুইধারে স্থানে স্থানে জাপানী ছবি আঁকা চীনা মাটার তৈয়ারি আসন উদ্ভান-থামীর, শ্রমাপনোদনের জন গ্রথিত। বাগানে বেশীর ভাগই বিলাতী ফুলের গাছ। পপি, জিনিয়া, যষ্টার, প্যান্সী, ক্যামেলিয়া, ফ্যাজেলিয়া, বিচিত্র বর্ণের নানা প্রকারের লিলি প্রভৃতি ফুলের পাতা-বাহার ক্রোটন পাম্‌ নান! জাতীয় গাছের ৰাহার ; কোথাও সারি দিয়া,: কোথাও ত্রিকোনাকারে, কোনন্থলে

৮৮ প্রত্যাবর্তন

গোলাকারভাবে সঙ্জিত। উদ্ভান-প্রাচীরের ধারে ধারে সবুজ গাছের ফাকে-কীকে এতদিনের যে রক্ত জবা! পথের লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করিত, পুরাতন স্থৃতি রক্ষা করিয়া, কেন, কে জানে তাহারাই কেবল এখনো বিতাড়িত হয় নাই!

বৈঠকথানা। হইতে বেতে ছাওয়৷ কাষ্ঠাসনগুলি দূরীভূত হইয়াছে সেখানে এখন মখমল-মণ্ডিগ পুতির ঝালর লাগান! শ্পরিংয়ের সৌথীন কৌচ সোফা শোভা পাইতেছে। বৈছ্যতিক পা! চালাইবার উপার ন৷ থাকার সেকালের টানাপাথ।৷ এখনও স্থানচ্যুত হয় নাই বটে, তবে তাহার মোটা পরিচ্ছদ খুলিয়৷ তাহাকে সৌখীন-পোষাক পরানো হইয়াছে মোট! দেশী ছিটের সতরঞ্চির পর্দাগুলির জায়গায় এখন বাহিরের কক্ষগুলিতে কাক্স কারু শিল্পের লেশ নেট সিন্কের পর্দ! সব রূতীন ফিতা! বাঁধিয়া অন্বীধরিত ভাবে অবস্থিত। বসিবার ঘরে যে সকল নারীচিত্র বিলম্বিত হইয়াছিল, তাহা সৌন্দধ্য আর্টের দৃষ্টান্ত হইতে পারে, তবে সেগুলিকে স্রুচির পরিচায়ক বলা যায় না। বীয়া, তব্লা, এসরাজ, হারমো নিয়ম, পিয়ানে। প্রভৃতিতে গৃহস্বামীর সঙ্গীতানুরাগ প্রকাশ পাইতেছে। সঙ্গীত- বিগ্কায় আলোকনাথের খ্যাতি ছিল; সম্প্রতি বা্ধশিক্ষাতেও তিনি মন দিয়াছেন। সঙ্গীতজ্ঞ ব্যক্তিরা জমিদার বাবুর প্রিয়পাত্র হইবার আশায় প্র্তি সন্ধ্যায় বৈঠকখানায় মজলিদ্‌ করিতে আদিতেন।

আলোকনাথের বয়স পয়তাল্লিশের কাছাকাছি। দেহথানি লম্বার চেয়ে চওড়ায় বেশী। মুখ গোল ভাবের, চোখছুটি বড় বড়। বুদ্ধির দীপ্তি নাই থাক্‌, চোখে উদ্জ্লত। আছে। মাথার পশ্চাদ্ভাগের চুলগুলি ঘন, সম্ুখ ভাগের চুল পাতলা। সেই পাতণা চুলে বনু নৈপুণো টেড়ী কাটি! আলোকনাথ ত্রুটি ঢ/কিবার চেষ্ট। করিত।

বাগান-বাড়ীতে প্রতি শনিবার কলিকাতা! হইতে “গহর বিবির, আগমন

পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ ৮৯

হয় আলো, আনন্দ মধুর নারীকঠের সুর-তরক্গে সে রাত্রে পল্লী- বাসীরা চম্ত্কত হইয়। উঠে, পথিকেরাও মুগ্ধ পুলকিত চিত্তে সেখানটায় কিছুক্ষণের জন্য দাড়াইয়া যায়। আলোকনাথের স্বপক্ষদল বলে, “তগবান্‌ ইহাকে শুধু ধন দিয়াই ক্ষান্ত হ'ন নাই, তাহা ভোগের শক্তিও যথেষ্ট দিয়াছেন। “বখের ধন" রহিল কি না! রহিল, সে একই কথা।”* আবার বিপক্ষ, দল বলে, “এত দিনের জমিদার-বংশ--এইবার বিলাসের স্রোতে ভািয়াই বা যায়!» সংসারে ভালমন্দ ছুই শ্রেণীরই লোক দেখিতে পাওয়া খায় কেহ পরের সৌভাগ্যে নুখী, কেহ ব! ঈর্ষান্বিত!

বৈঠকখানায় বাগান বাড়ীতে যাহাই ঘটুক, অন্দরে কিন্তু সব সৌীন ব্যাপারের কোন পরিচয়ই পাওয়া যাইত না। আলোকনাথের ম৷ বাচিয়া আছেন; নিজের শুচিতা গৃহকাধ্যের তদারকেই তাহার অধিকাংশ সময় ব্যক্ত হয়। স্ত্রী রুগ্না বন্ধ্যা, তা+ই স্থথ ষোল কলায় পূর্ণ হইলেও সংসারে প্রক্কৃত মনের মুখ কাহারও ছিল না। আলোক- নাথের জ্যেষ্ঠ মৃত। তাহার বিধবা স্ত্রী পিত্রালয়ে। জ্যেক্ঠের একমাত্র পুত্রটি কলিকাতায় থাকিয়৷ লেখাপড়া করিতেছিল। আলোকনাথ ত্টাহার জননীর ইচ্ছ৷ ছিল না যে একমাত্র বংশধরকে ইংরাজি শিক্ষায় শিক্ষিত হইতে দেন।' কিন্তু ছেদ ছেলে কাহারও নিষেধ কানে তুলিল .আ। শাসন, আদর, অনুনয়-- কিছুতেই সে দৃক্পাত করিল নাঁ। অগত্যা অনিচ্ছাতেই আলোকনাথকে তাহার মতানুবর্তী হইতে হইল। তা'ই কি জমিদার বংশের বংশধররূপে উপযুক্ত দাস-দাসী লইয়া! সে বাস! করিয়! রহিল? খামখেয়ালি” ছেলে সাধারণের সহিত" একট। সাধারণ মেসে সামান্তভাবেই দিন যাপন করিতেছে ! বংশের কলঙ্ক,-বেমন ক্ষেত্রে জন্ম, তেমনি মতি-গতি হইবে! ম্বাধীনচিন্তা মায়ের ছেলে গুরুজনের বগ্ততা! 'মানিবে কেন?

৯০ প্রত্যাবর্তন

আলোকনাথ জন্য পারিষদ-মহলে সর্বদাই ছুঃখ করিত। প্রসাদাকাজ্জীর দল খুল্লতাতের ন্নেহশীলতার প্রভূত প্রশংস! করিয়! ভ্রাতুপুত্রের নিন্দা করিত। তত্দর্শীর! বলিত, "ভোগ মানুষের কর্ণ-ফল। ভগবান্‌ হাতে তুলিয়া দিলেই কি মানুষ ভোগ করিতে পারে ? যার যেমন পাওনা !* এই সকল আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যার সহিত একটা নূতন তথ্যের আলোচনাও মধ্যে মধ্যে শুনিতে পাওয়া যাইতেছিল'। কোন কোন শুভানুধ্যায়ী আলোক- নাথকে পুনরায় দার-পরিগ্রহে অনুরোধ করিতেছিলেন। রুগ্ন বন্ধা। স্ত্রী শান্তান্ুসারে বর্জনীয় ন্থৃতরাং ধর্মতঃ এজন তাঁহাকে অপরাধীও হইতে হইবে না। সেই একটা “মর্দ-উদাসীন, 'কেতাব-কীট” বালকের মুখ চাহিঙ্া! কেনই বা তিনি বসিয়া! থাকিবেন ? জমিদারী-রক্ষার উপযোগী বিষয়-বুদ্ধি কিআর তাহার ঘটে কখনে। আসিবে? ভবিষ্যদর্শীরা মুক্ত -কঠে বলিতেন, “তাহা! কখনই সম্ভব নয়।* কথাগুলি শুনিতে শুনিতে ক্রমে আলোকনাথের কাণেও বেশ অভ্যন্ত হইয়া আসিতেছিল এবং শুনিতেও মন্দ লাগিতেছিল না। আলোকনাথ যে স্ত্রীকে কখনে; ভালবাসিত না, এমন নয়। সাধারণ গৃহস্থ-ঘরে যেমন সকল স্বামী নিজ- নিজ স্ত্রীকে ভালবাসিয়। থাকে, সেও এক সময় স্ত্রীকে তেমনি বাসিত। . হেমলতা। মেয়েটিও অত্যন্ত সাধারণ তাহার রূপের আলোয় ঘর আলে। হইত না; গুপেরও কোন বাড়াবাড়ি পরিচয় ছিল না। স্বামীকে সে হিন্দুনারীর অবস্ত কর্তব্য বলিয়াই ভ্তি-শ্রদ্ধ1! করিত, ভালবািত। কিন্তু সে ভালবাস! প্রকাশের জন্ত কোন সাড়ম্বর উদ্দ্বাস ব৷ বাহিক অনুষ্ঠান দেখ! যাইত না। লেখাগড়া যৎসামান্ত যাহা সে শিখিয়াছিল, তাহাতে বাংল! মাসিক পত্র হইতে রামায়ণ, মহাভারত পধ্যস্ত স্বচ্ছন্দে পড়! চলে। চিঠি লিখিবার তাহার কোন প্রয়োজনই ছিল না। থাকিবে বোধ করি বাঙ্গালীর ঘরের অনান্য মেয়েদের মতই ষে কার্ধাও সে অনায়াসে চালাইতে

পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ ৯১

পারিত। . রান্না-বান্না, সাংসারিক কাজ সে সবই শিখিয়াছিল, কিন্তু বছর হই আগে নিউমোনিয়া হইয়৷ দীর্ঘকাল রোগভোগাস্তে বখন সে পুনরায় চলা-ফেরা সুরু করিল, তখন দেখ! গেল, পূর্বের স্বাস্থ্য আর ফিবিয়' পাইবার নহে। -বুকে একটা যন্ত্রণা সর্বদাই রহিয়৷ গেল। আরও আন্- সঙ্ষিক অনেক রোগই ভগ্ন দেহে আশ্রয় লইতে আরম্ভ করিল | এই সমগ্জ ভাগ্য সহস! পরিবর্তিত হইয়া ইন্দ্রনাথের বিপুল বিষয়ের অধিকার আলোক: নাথের আরন্তে আমিল। বধূর বন্ধযাত্ব-অপরাধের জন্য পর্যাস্ত কোন ক্ষতিই হয্স নাই, কিছ এখন ভাগ্যচক্র-পরিবর্তনের সহিত শাশুড়ীর মনে ক্রমেই অভাবের ক্ষোভ জাগিক়। উঠিতেছিল। এত বড় বাড়ী, এত সুখ-্বাচ্ছন্দ্ের মধ্যে শুধু বাল- কণের হাসি-কারারই শবটুকু নাই! এত বড় জমিবার. বংশের নাম মা” রক্ষা করিতে সেই একটা পিতৃহীন অভাগা ছেলে ! তা”ই ব৷ তাহার উপর ভরসা কিমের? কাণুজ্ঞান-হীন বালক-_বিপদ লইয়্াই যাহার খেলা-- তাহার কাছে সংসারের দাবী কোথায় ? কোথায় ছুতিক্ষের চাদী তুলিতে হইবে, কোথায় জল-নৌৰনে গৃহ-হীনদের সাহায্যের জন্য পৃষ্ঠে খাস্ধ-স্ত,প বাঁধিয়া নদীর জলে সাঁতার দিতে হইবে, আবার কোথাও রাজনৈতিক আন্দোলনে সভাসমিতিতে যোগ দিতে হইবে বা! পুলিশের খ্বন্তায় অত্যাচারের প্রতিবিধান করিতে হইবে _-এ সকল কার্যোেই সে অগ্রণী! মৃত্যু তাহার পায় পার ফিরিতেছে। সাঁপের মুখে বাঘের মুখে যাইতেও সে ভয় করে না|? অসমসাহদিক--সেবার যুদ্ধে যাইবার জন্যই প্রস্তত হইয়াছিল। কেবল পিতৃ-পিতামহের পুণ্যবলে আলোকনাথের গোখন চেষ্টা বিপুল অর্থ- বাস্নে ডাক্তারী রিপোর্টে ফিরাইয়া দিয়াছিল ন! ? এই সকল দেখিয়। শুনিয়। পিতামহী তাহার তরস! একরূপ ছাড়িয়াই দিয়াছেন। মানুষের স্বভাব, সে এক হাতে ছাড়ে, অন্ত হাঁতে.ধরে ) নহিলে সে বাচিতে পারে না। তাই

ব্ট২ প্রত্যাবর্তন

তরুণ পৌত্রের উপর হইতে মন ফিরাইতে গিয়াই তীহার মনে হুইল, এখনও ভুল সংশোধন করিয়া লওয়া যায়। ছেলের তাহার এমনই £ক বয়স হে পুনরায় বিবাহ দেওয়া, চলে ন1? বংশ-রক্ষার জন্ কত াট সম্ভর বৎসরের বুড়াও যে দ্বিতীয় বার দার গ্রহণ করিতেছে উপযুক্ত সস্তানের মৃত্যুতে--ভগবানের সহিত রেষারেষি করিয়৷ কত বুড়। বাপ ষে পুনরায় বিবাহ করিয়৷ বংশ-রক্ষার চেষ্টা করিতেছে ক্ষেত্রে তেমন “কোন বিসদৃশ ব্য। পারও ঘটিতেছে না। এত বড় জমিদার-বংশের মান নাম যে বন্ধা। রুগ্না বধূ রক্ষণে সমর্থ হইল না-ন্ধু তাহার তরফ হইতেই দেখিলেই চলিবে না ! হেমলতাকে শুনাইয়! গুনাইয়াই আজ- কাল এ-দব কথা 'ওঠে, তা'ই আলোক নাথের ভাগ্য-পরিবর্ভনে হেমলতার এনে স্ুথ শাস্তি ছিল না যে অনর্থকর অর্থ হইতে সে স্বামী সৌভাগ্য উই হারাইতে বসিয়াছে, কেমন করিয়াই বা সে অর্থকে সে প্রীতির চক্ষে নেখিতে পারিবে ? অনুৃষ্টের যে নির্মম পরিহাস! অবসর পাইলেই সে 'তাই নির্ছনে চোখের জল মুছিয়। মনে মনে নিজের মৃত্যু কামনা করে।

সে একজন সাারণ নারী, স্বামীর সথের বা স্বুর-বংশের মান-রক্ষার সুষ্ঠ আত্মবলি দিবার মত মানসিক বল তাহার ছিল না সে বুঝিতেছিল, স্বামীর মনেও ঘন্দ পৌছিয়াছে। এতদিন স্ত্রীর রূপ লইয়৷ আলোক- নাথের মনে কোন ক্ষোভের অভিযোগ উপস্থিত হয় নাই। এখন গহরের? পে মুগ্ধ-ক্ষু স্বামী-স্ত্রীর পুরাতন মুখে কোন আকর্ষণ আর দেখিতে পায় না। বিদ্তা বুদ্ধি আচার অনুষ্ঠানের লক্ষ ত্রটি তাই অহরহ আবিষ্কত হইতেছিল।' অথচ বছর কয়েক পুর্ব্বে ইহারই বুদ্ধি-বিবেচন। ভক্তি-ভাল- বাসার মুগ্ধ তৃপ্ত স্বামী মনে করিয়াছিল, জগতে এমনটি আর হয় নাই, হইবেও না। কাল অবস্থা মানুষের মনে কত পরিবর্তন আনিতে পারে মানুষ তাহার হিনাব জানে না বলিয়াই ছ:খ পায়!

পঞ্চদশ পরিচ্ছোর ৯৩

মায়ের মনের ইচ্ছা! যখন মুখেও প্রকাশ হইতে শুনা গেল, তখন প্রথমটা আলোকনাথ বিল্বয়ে স্তব্ধ হইয়াছিল। এও কি একটা কথা না ! এই শারীরিক অস্গস্থতার উপর উহাকে আবার ষনের এত বড় ব্যথ। দওয়া কখনো! সম্ভব? বংশ-রক্ষার জন্ত ভাবনা কি ? দাদার ছেলে বীচিন্ বাক! সেই বংশের বংশধর, এমন কথা শুধু মুখে নয়, মনেও যে সে গস্থমোদন করিয়াছে? ভ্রাতুপ্পুত্রের স্বেচ্ছাচারিতা অনেক সমর বিরক্তি মানিলেও ভালবাসার হাঁস হয় নাই। মাতৃ-পরিতাক্ত এই ছেলেটিকে শগুকাল হইতেই যে সে সন্তান-বাৎসল্যে মানুষ করিয়! আসিয়াছে!

পনেরো বর পূর্বের যেদিন দেবর শাগুড়ীর সহিত কলহ করিয়া বিধবা বধূ চিরদিনের শপথ লইয়! স্বামীর ভিটা ছাড়ি পিত্রাল়ে চলিয়! বন, সেদিন আলোকনাথও ভাবিয়াছিল, তাহাদের সকল সংস্বব ছাড়িয়া দবে। মায়ের কাছে তর্জন-গর্জনে ভ্রাত্জায়ার স্বেচ্ছাচাব্রিতার দগ্স্বর্ূপ দাতাপুত্রে ইহজন্মে আর তাহাদের মুখ দর্শন করিবেন ন!, এমন প্রতিজ্ঞাও করিয়াছিলেন। তাহার পর যে ছুইটা রাত্রি কাটিয়াছিল-_হেমলত। সারা- রাত শুধু স্বামীকে এ-পাশ ও-পাশ করিতে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিতেই গুনি- দছে। সাহস করিয়৷ সে কিছু বলিতে পারে নাই। স্বামীও একটি, কথাও বলেন নাই।

তৃতীয় দিনের প্রাতঃকালে আলোকনাথকে বাড়ীতে দেখ' গেল ন' এবং তিন দিনের পর সে ষখন ফিরিয়া! আসিল, তখন মে আর একা! নক-_ দঙ্গে তাহার ভাইপো প্রফুল্ল অনুনয় বিনয় ক্ষমা। প্রার্থনা করিয়াও খন রাতৃজায়ার প্রতিজ্ঞা টলাইতে পারিল না, তখন আলোকনাথ ভাবিয়াছিল, এই সহজ উপায়ে ছেলে আটক করিয়া! তাহাকে বাধ্য করিবে। প্রকল্পের মাতামহী মাতুল আলোকনাথের জেদে ছেলে ছাড়িয়া দিলেন। কিন্ত মেয়ের অনিচ্ছায় মেয়ের ম! মেয়ে পাঠাইতে রাজী হইলেন না তখন

৯৪ প্রত্যাবর্থন

বহ্বর্য্ের আড়ন্বর ছিল না। শান্ত পর্ী-জীবনে সন্তানহীন আলো কনাধ- দম্পতী গভীর ন্গেহে এই পিভৃহীন মাতৃ-পরিত্যক্ত ছেলেটিকে ভালবাসিয়া সঙ্গ দিয়া তাহার মনের ক্ষোত মিটাইবার চেষ্টা করিত, নিজেরাও তৃপ্ত হইত। সে দিনের এখন পরিবর্তন ঘটিয়াছে। ছেলে এখন নিজের ইচ্ছায় চলিতে শিথিয়াছে। তাহারও শান্ত নিরুপদ্রব মনের নদীতে অসময়ে প্লাবন আসিয়াছে তবু সেই অতীত দিনের অভ্যাসের বশে পূর্ব ন্েহ একেবারে লুপ্ত হয় নাই লুপ্ত না হউক, তাহার যে স্থানচ্যুতি ঘটিয়াছিল, সে বিষয়ে আর সংশয় ছিল না! |

যোড়শ পরিচ্ছেদ

প্রলোভন

হিমুর বয়স বারে! বৎসর উত্তীর্ণ হইয়। তেরোয় পড়িল। ভডয়ে ভাবনায় হিমুর মার বুকের রক্ত গুকাইয়! যাইতেছিল, গলায় জল নামিতে চাছে না! কেমন করিয়া সহায়-সম্পত্তিহীন বিধবা! মনের মত পাত্রে কন্তাদান করি- বেন? গ্রামে বিবাহাধী যুবকের অভাব ছিল না। হিমুকে সুন্দরী 'বলিয়া স্বীকার করিতে 'কহ অসম্মত নহেন। তাই বলিয়। গরীব বিধবার দুকুষ-প্রকৃতির এই ছ্রত্ত মেয়েটিকে পুত্রবধূরূপে গ্রহণ করিবার ইচ্ছা কাহারও মনে মুহূর্তের জন্তও উদয় হয় নাই। বদি ঝা কাহারও ইচ্ছা 'হইত, সে পাত্র হিমুর মার পছন্দ হইত ন!। তাহার স্বর্ণলত| অবশেষে কি সেয়াকুলের কাটায় তিনি জড়াইয়! দিবেন!

মামিম। কহিলেন, «কি কর্বি বাছা, যেমন ওর কপাল, তেমনি না হবে ! হিছুর ঘরে অত বড় মেয়ে আর থুবড়ে রাখা যায় না। মুখুজ্জে- দের গোবর্ধনের সঙ্গেই দিয়ে দাও-_ছেলে এমনই বা! মন্দ কি ! বিয়ে হলে আবার রীত-চরিত্তির ভাল হয়ে যাবে। এমন আকৃছারই কত হচ্চে। যে তোমার পল্টন মেয়ে--সব ঠিক করে নেবে।* |

মালতী অশ্রু মুছিয়! মনে মনে শ্বামীকে মরণ করিতেন,_-প্তুমি বলিয়া দাও, তোমার স্নেহের ধন হিমুকে আমি কেমন করিয়। জলে ভাসাইয়। দিব! ওগো আমি কি করি,--তুমি উপার করিয়! দাও।”

এমনি করিয়। ভাবনায় দিন কাটিতেছিল। যাহার জন্ত এত ভাবনা, সে কিন্তু বেশ নিশ্চিন্তে নিরুদ্বেগে পথে পথে ছেলের দলে মিশিয়! খেলিয়।

৯৬ _ প্রত্যাবর্তন

বেড়াইতেছিল। বয়ৌবৃদ্ধির সহিত ক্রমাগত শাসন তাড়ন। সহি্ব। সহিয় আজকাল তাহার চঞ্চল গতি অনেকটা সংযত হৃইয়! আসির়াছিল ; তবে একেবারে সে টুকু সে ছাড়িতেও পারে নাই।

ম৷ কহিলেন, *হিমু, এত করে তোকে বলি রাস্তাঘাটে খেলিস্‌ নে, ত! কি কোন মতেই তুই গুন্বি না?”

একথান। ছোট কুশের ডালায় কতকগুলি কাচা পাকা করমচ| লইয় হিমু তাহার খেলার সাথীদের" উদ্দেশে বাহির হইতেছিল--কিরিয়া মায়ের মুখের পানে চাহি্। থমকিয়! দাড়াইল, “শুনি মা--আর কৈ খেলি? গাঁছে উঠে পেয়ার পাড়ি না,--দত্তদের গাছে এত পেয়ারা! হয়েছে মা,

: যেমন মিষ্টি তেমনই শীমালো-_খোল! এত পাতলা! আর ভেতরটা! ঠিক যেন গোলাপফুলের রং! অরুণদ! বলে, পরের জিনিষ নিলে চুরি কর! হয়__ হা মা, গাছ থেকে পেড়ে নিলেও কি চুরি কর! হয় ?”

“ত| হয় 1--হিসু, লক্ষ্মী মা আমার, ঘরে বসে খেল! কর্‌। র্রাস্ত! থাটে. যাস্নি বাছা লোকে নিন্দে কর্বে__বিয়ে হওয়! দার হয়েছে বে--” বলিয়া জোর করিয়া তাহাকে টানিয়। আনিয়া! কহিলেন, “আর, তোর চুল: বেধে দি।”

চুল বাধিতে বাধিতে না! কহিলেন, “মামিম! মাহেশে রথ দেখতে হাবেপ, তুই যাবি হিমু?”

হিমু আনন্দে লাফাইয়। উঠিল, কহিল, “মাহেশ! সে কোথার মা! ?

“মে এক জারগার়! শুর কে বোন্ঝির ছেলে আছেন, তার! খুব বড় মানুষ, মন্ত'বাড়ী--আগে, সেখানে ছু'চার দিন থেকে তবে মাহেশে যাবেন। যাবি সেখানে ?”

হিমু হাসিয়। তৎক্ষণাৎ সম্মতি দিল, প্ধুব, খুব। দেখ মা, সে দিন তোমায় বল্রাম, নীলাদ্বরী সাড়ীট! আমায় পর্তে দিয়ো না,--তুমি শুন্লে

ষোড়শ পরিচ্ছেদ

নাত? যেমন কুলীদের বাড়ী গেছি, অমনি. ওদের রান্না ঘরের

পেরেকে না কিসে আটুকে গিয়েছিল না! যেমন টান দিরেচি, অম্।. ফর্দাফীই* বলিয়া সে হাসিতে লাগিল তবু হাঁসির সঙ্গে একটুখানি ভগ্নের আভাষও ছিল। সে জানিত, এই একমাত্র পোষাকী সাড়ীখানির ছুরবস্থায় মা খুনী হইবেনই না, বরং বিরক্ত হইবেন। সেদিন ভয়ে বলিতে না পারিলেও এইবার যে তাহ প্রকাশের কাল আসিয়াছে তাহা সে মনে মনে বুঝিয়াছে-_কারণ এই নীলাম্বরীথানি ছাড়! ত' বাহিরে যাইবার মত আর কোন সৌথীন দ্বিতীপ্ বস্ত্র তাহার ছিল না! খবর শুনিয়া মা! কেবল একটি দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলিলেন, কোন অনুযোগ করিলেন ন। দেখিয়। হিমু খুনী হইয়৷ কহিল, «কবে যাবে মা সেখানে ?*

ম! কহিলেন, "আমি যাব না। তুই মাস্‌ মামির সঙ্গে। উনি শুর কটুম-বাড়ী যাবেন, তারা বড় লোক, আমার কি সেখানে যেতে আছে-_পাগল!”

“তবে আমিই বা কেন যাৰ, গুর কুটুম বাড়ী? আমিও যাৰ না» বলিয়া! হিমু অগ্রসন্ধ মুখে চুল বীধার বিলম্বে. অসহিষুুত। প্রকাশ করিতে. লাগিল। ম৷ তাহার একগুয়ে মেয়েটিকে ভালই চিনিতেন। জোর করিয়া যে ইহাকে বশে তন! চলিবে না, তাহা। তিনি বিলক্ষণ বোঝেন অথচ তাহার যে কি বিষম দা, তাহা তিনিই কেবল জানেন। মামি আশ! দিয়াছেন, তাহার বোন্বীর একটি পিতৃহীন পৌন্র আছে, ছেলেটি বড় সং। দুইট। ন! তিনট। পাঁশও নাকি করিয়াছে সে। মেয়ে দেখাইয়া তাহার মাতাকে যদি প্রসন্ন করাইতে পার৷ যায়, হয়ত ভাসস্তবও সম্ভব হইয়া ধাইতে পারে। মাতা-পুত্র ছু'জনেই বড় ভাল। মামির বোনবী তাহার সহোদর নহেন--দুর সম্পকিয্াা;) তবু সেখানে গেলে গরিব বলিক্ন! কেহ অনাদর করিবে ন!। তাহার কথার মান্যও তাহার রাখির। থাকেন।

৯৬ ' প্রত্যাবর্তন

বেড়াইতেধী। বিধবা! এই গোপন আশার কুহকেই মুষ্ধ হইয়৷ মেয়ের মন আনাতে ব্যস্ত হইয্বাছিলেন। নহিলে চোখের বাহিরে তাহাকে পাঠাইয়৷ তিনিই কি স্বস্তিতে থাকিতে পারিবেন! মার আগ্রহ প্রলোভনে হিমু শেষে দিদিমার সহিত মেল! দেখিতে যাইতে স্বীকার হইলে, তাহাকে সেদিনের মত বাহিরে থেলিতে যাইবার অনুমতি দিলেন, কিন্তু বলিয়। _ দিলেন--এমন কাণ্ড আর কখনো চলিবে না। সে এখন বড় হইয়াছে! এইবার গৃহ-কার্যে ন! থাকলেও চুপ্চাপ ঘরে বসিয়াও তাহাকে দিন কাটাইতে হইবে। মায়ের মুখের গান্ভীর্য্যে কণ্ম্বরের দৃঢ়তায় হিমু _ বুবিয়াছিল, আদেশ তাহাকে মান্ত করিতেই হইবে এবারকার বারণ অন্ত বারের মত ফাঁকা আওয়াজ নয় বুঝিয়া৷ সেদিনের অযাচিত পাওয়া স্বাধীনতাটুকু সে আর তৃপ্তির সহিত গ্রহণ করিতে পারিল না। সংসারের সহিত যতই সে পরিচিত হইতেছিল, ততই বুঝিতেছিল, এখানে মনে -. দ্বিতাব রাখিয়৷ চলার নামই শিক্ষ! ভদ্রতা বয়সের সহিত এমনি ধার! _ একটি নূতন ভাব ধীরে ধীরে তাহার মনে অশ্পষ্টরূপে আকারপ্রাপ্ত -. হইতেছিল। তাই. এখন সে অসঙ্কোচে দকল কথ সবার কাছে বলে না--যাহ। বলে, তাহারও পরিণাম-চিন্ত। মনে উদয় হয়। সরল! হিমু এইবার জান-বৃক্ষের কল খাইতে সুরু করিয়াছে,--ভয় হয়, আর হয়ত তাহার নাগাল পাওয়া যাইবে না। .

সপ্তদশ পরিচ্ছেদ সঙ্গ-মোহ

দিদিমার বোনবীর বাড়ী-ঘর নুখ-শ্বধ্য দেখিয়া হিমু মুগ্ধ হইল। গরিবের ঘরের মেয়ে মে--এমন সব বিলাম-এশ্বর্ধযের আড়ম্বর কখনো! চোখে দেখেই নাই, কানেও বড় শোনে নাই। অরুপের মুখে বরুণাদের বাড়ীর যে-নব বর্ণন! খু'টাইয়। জিজান! করিয়! জানিয়! লইয়াছিল, তাহাই ছিল তাহার ধনী-গৃহের আদর্শ। তা'রপর জগদ বাবুর বাড়ীর বর্ণন। ছুষ্মোসবের বিবরণ শুনিয। হিমু ভাবিয়াছিল, তাহারা উহাদের কাছে কিছুই নন্‌। ছুইদিন শ্ধু, এখানকার বাড়ীখানার ঘর কয়টা! প্রদক্ষিণ পধ্য- বেক্গণ করিতেই কাঠির! গেণ; তা'রপর বাগান। এত বড় বাগান, এত বং-বেরঙ্গের ফুল, এত বিচিত্র পাতা-গাছ,--কোন গাছের পাতার রং সিঁছরের মত রাঙ্গা, কোন গাছের পাত৷ ব। গুটাইয়। চক্রাকার ধরিয়াছে, কোন গাছের পাতায় ঘুঙ্নুরগাথ! মলের মত ৰাজন। বাজে সব গাছ পাতা ফুলের অর্ধেকের নাম হিমু জানেই না, চোখেও কখনে। এ-সব দেখে নাই। চিড়িয়াখানায় কত বাহারে পাখী-_ময়ূর, পায়রা, হরিণ, খরগোন গিনিপিগ্‌* সাদ ইদ্বর, আরো! কত-কি। এ-সব দেখিয়! হিমুর আনন্দ হইত, আব: মখও হইত। মনে হইত, অরুণ যি সঙ্গে থাকত! (লে জিনিবটি ্রিযুত্রধ$ক ন। দেখাইতে পারিলে মানুষের বধার্থ সুখ হয় না।] ত' ছাড়া এই বুহৎ অপরিচিত রাজ্যে আনাড়ির মত শুধু হাতড়াইয়। বেড়াতে? গ্রহাঃ ভাল লাগিতেছিল ন|। গৃহক্রীকর্তার-মা, দিদিমার বোন্বী-_্রায় গিহার,লমবদী। অনেক দিনের পর দেখাশুনা হওয়ায় নিকষ স্রশন

১৩৩ প্রত্যাবর্তন

সুখ স্বাচ্ছন্দ্য দরিদ্র আত্বীয়কে দেখাইতে পাওয়ার খুমী মনেই তাহাদের তিনি গ্রহণ করিলেন। হেমলতাঁও এই আনন্দমরী নুন্দরী মেয়েটিকে দেখিয়াই স্গেহমুগ্ধ হইল, শীশুড়ীকে নিভৃতে পাইন্»। কহিল, "ম| এটিকে আমাদের বৌ করে ঘরে নিলে হয় না? কি সুন্দর রূপ, দেখেছ ! সব-চেয়ে. স্ন্দর চোখ ছুটি!”

ম! একটা নিশ্বাস ফেলিয়। কহিলেন, “তেম্নি আমার কপাল কি না। সে ছেলে বিয়ে করে বৌ আন্বে, তবে আর ভাঁবন! ছিল কি? ই! বৌমা,. _ লু না আম্বে, লিখেছিল? তা৷ এল কৈ?”

হেমলত। মৃদুষ্বরে কহিল, প্যখন বলেচে তখন আম্বেই। হয্»ত আবার. কিসের কাজে আটুকে গেছে ।”

"বাবা, আচ্ছা! মা খুড়ী পেয়েছিল বাহোক্‌। বংশের মধ্যে একটা! ছেলে, তবু সব এত অগ্যেরাজ্জি! বিদ্বান মা ছেলেকে দিলেন দেশের কাজে উচ্ছুগৃগ্য করে! দেব্তার কাজে লোৌক মোষ-পাঁঠাই উচ্ছুগ্ণ্য করে-_জানি। ছেলে বলি দিতে দেয়, কখনো শুনিনি। মায়ের এত দস্ত--ভগবানও, তাই নিচ্ছিলেন--ভাগ্যে কাক] ছিল তা'ই সে যাত্রা! তরে এলো৷। আবার শুন্নুম, ছেলে স্বদেশী হয়েছে--কোম্পানি থেকে পুলিশ আদ্‌বে ধরতে!

গুলিশে চোর-ডাকাতই ধরে নে যায়, তাই জানি,_এ কিরে বাবা?” বলিয়া গৃহিণী বিরক্ত মুখে বধূর পানে চাহিয়া দেখিলেন। যেন ইহার মূলে অনেকখানি বধুরই অপরাধ!

তা সে কথা তিনি মনে করিতেও পারেন। শুধু তিনি কেন, বাড়ীর দফলেই'জানিত যে সেই অশীস্ত বুবককে শাসন করিবার কিছুমাত্র শক্তি

যদি এবাড়ীতে কাহারও থাকে মে তাহার খুড়িমারই ছিল। হেমতাঁর কথার উপর মে কখনও না বজিতে গারিত না। ছোটবেলায় কতদিন; (তাহাকে দুঃখ দিয়া সে নিজেই কীদিয়। হাট বসাইত। শেষ /ুড়িম!

সপ্তদশ পরিচ্ছেদ ১০১

'আসিয়াই তাহাকে শাস্ত করিতেন। তাঁ'ই অভিমানে পূর্ণ হয়৷ ঠাকুমা ভাবিতেন--বাহিরের লোক খুড়ী হইল আপন, আর হাতে 'করিয়া। মানুষ করিয় তিনি হইলেন পর! ইহাতে উভয় পক্ষেরই ক্ষতি হইত। অথচ কেহ ভাবিয়া দেখিত না! যে কতখানি সহিয়। কতদূর সা বধানে চিয়৷ তবে হেমলতাকে এই অসাধ্য সাধন করিতে হইত।

প্রথম দেখাতেই হিমু হেমলতাকে দিদি বলিয়া সম্বোধন করিল। হেম 'ছামিয় কহিল, "আমি তোমার দিদি হই না, বৌদি হই 1”

হিমু একটুখানি ঠোট কুঁচ্কাইক! তাচ্ছীল্যের সুরে কহিল, “উ, তুমিই দিদি ।”

আলোকনাথকে সে যে ভ্রাতৃ-সম্বোধনে সম্মত নয়, কথার ভাবে যেন ইহাই বুঝাইল। হেম হাদিয়া তাহাকে কোলের কাছে টানিয়া ন্নেহ-মাথ! কণ্ঠে কহিল, "সেই বেশ। আমি দিদি, আর উনি বোনাই কেমন ?”

হিমু বুদ্ধিমতী, কিন্তু সাসারিক অনেক জ্ঞানেই অনভিজ্ঞ যি “ছুইয়। সে কহিল, “উনি?”

“হ্যা গো, আমার স্বামী! আমি দিদি হলে তিনি তোমার তশ্রীপতি সুলেন না?”

হিমু অনাগ্রহিতভাবে কহিল, “হলেন ত।”

এই মেয়েটিকে পাইয়া, হেমও যেমন খুসী হইয়াছিল--হেমলতাকে দিদি যলিয়। হিমুরও তেমনি আনন্দ হইয়াছিল। ইহাকে ন! পাইলে এত বড় জীক-জমকের মধ্যে কেমন করিয়াই বা হিমুর দিন, রাটিত! হিমু ছোট 'বেলায় একবার থিয়েটার দেখিয়াছিল, কি আশ্চধ্য সাজ-সজ্জা-_জরির পোষাক-পর৷ মুক্তার মাল! গলায় দোলানে। সব রাজা! আর রাণী। আসন গ্রহণ করিয়! হিমুর ভাবন! হইয়াছিল, এমন দৃশ্ত কতক্ষণই বা আর দেখিতে : পাইবে? যদি সারারান্মি ধরিয়া চলিত, তবু হয়ত কতকট। ক্ষোভ মিটিতে

১৪২ প্রত্যাবর্তন

পারিত। কিন্তু সে ভুল তাহার কত শীক্গই ন! ভা্িয়। হিয়াছিন.! চঞ্চল হিমু অভিনরের না হইতেই বাড়ী ফিরিবার জন্ত ব্যাকুল হইয়া ভাবিয়াছিল-_-এত দীর্ঘ কাল কি তরী একঘেয়ে রাজা-রাণী রাজ-ইর্বধ্য _ ধৈর্য্য ধরিয়া! দেখিতে পার! যায়? গে তখন লেখাপড়া! জানিত না গল্পের' বিষয় কিছুই বুঝিতেছিল না, শুধু দর্শক মাত্র। মনে হইল, অরুণের কাছে সে আজ কত খণী। নহিলে সে দিনের সহিত দিনের আজ কোন. তফাৎ থাকিত না। আলোকনাথের সুসজ্জিত লাইব্রেরি-কক্ষের মধ্যে চাড়াইয় আনন্দের উচ্ছ্বাসে সে তাহার ভ্ঞান-দাতার উদ্দেশ্তে প্রণাম করিল। রে বাংল! বইয়ের চেয়ে ইংরাজী বই-ই অধিক। বরুণ! ইংরাজী জানে: শুনিয়া বছর খানেক হইতে লে বে ইংরাজী শিখিতে সুরু করিয়! ছিল, ' তাহা আজ সার্থক বলির! মনে হইল। শিক্ষকের অভাবে কাষ দ্রুত অগ্রসর হইতে পারে নাই ; ছুটিতে অরুণের কাছেই যেটুকু যা+ পড়া! হয়, তারপর কোনি দিক হইতে কোন সাহাষ্যই আর পায় না। ছুই-চারিট! শক্ত কথ। বা৷ বিশেষ কোঁন কঠিন মীমাংস-স্থল চিঠিতে লিখিয়! সে অরুণের কাছে জানিয়া লয়। মেয়ের আগ্রহে মালতী দেবীর একবার ইচ্ছা হইয়াছিল, পাড়ার স্থুল-মাষ্টারকে ধরিয়া যদি বিষয়ে কোন সাহাধ্য পান্‌! কিন্ত তাহার সন্কপের কথ! শুনিয়। যুক্ত! ঠাকুরাণী দশনে অধর কাটিয়া বলিয়াছিলেন, পক্ষম। দাও বাণ, শেষ কি মেয়ের স:খর জন্তে কলঙ্ক কিন্বে! একেই পাঁড়ার লোকে নিন্দে করে, রত মেয়ে দেখে ।” রর

মালতী নেব দখা ফেলিয়া ভবিবেন_ ক, কাজ নাই গরীবের মেয়ের এত সথে! | | শান সবী-ভাবে পথম ছুই চারদিন বির একটু কষ বোন হইয়া ছিল। হেমলতা বিছানা ছাড়ির। বড় একটা, উঠিতে পারে না। তাহার

অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ"

নূতন সংবাদ

রাত্রে বিছানায় শুইয়া অন্ধকারে হিমুকে একটু কাছে টা. ঠাকুরানী গানের সুরে কহিলেন, “তোরা উলুধ্বনি দে। বিরহিণীর কপাল ফিরেচে। বলি, হ্যাল! হিমি, বর মনে ধরেচে ল! '

অন্ধকারে দিদিমার মুখ দেখা গেল না। সে চেষ্টা ছাড়িয়া! দির বেশ্মিতভাবে কহিল, “বর ! কার বর, দিদিমা--?”

দিদিম। রসিকতা করিয়! কহিলেন, পার বিয়ে তার মনে পাড়া-পড়ঙীর ঘুম নেই! নাতনি লো, এবার আইবুড়ো৷ নাম ঘৃচ্ল বর তোর, আবার কার !”

হিমু দিদিমার আর একটু কোল ধেঁসির। সকৌতুকে নর দিদিমা, আমি দেখেনি”

"না, তা কি আর দেখেচ ভাই ! বর যে এখনই পায়ে পায়ে ।ধ খাছের ফুরটি ফলটি নিজের হাতে পেড়ে দিচ্চে। অত সব দামী সাড়ী আনিয়ে দিলে--কেন বল্‌ দেখি? সুধু তোমার চাদপান! মুখ বুঝি-_ ভেবে রেখেচ ? ন! গো, তা নয়। বাবু বলেছেন, বংশ-রক্ষে: বিয়ে যখন করতেই হুবে, তখন তোমায় পেলেই কর্বেন, নইলে নয়

হিমু ঘোর অবজ্ঞাভরে উত্তর দি দি, “তবে সব বয়েই গে? বৌ বেঁচে রয়েছে ।”

দিদিমা কহিলেন, “সে মিথ্যে মানুয,__ভাঙ্গা। বাসন। তা কি সং্ার-ধর্ম বজায় থাকে! এত বড় সংসার-__একট। ছো।

প্রত্যাবর্তন

বে নেই-_জল-পিণ্ডি চাই তঁ? আর তাও ৰলি'

পাঁরিত। কিন্তড়ূবে, সে অনেক কল্প তপন্তা কর্‌চে।* : . হিমু অভিনচকেরিয়। হাসিয়া কহিল, “দিদিমা, লোভে পাপ, পাঁপে ভাবিয়াছি5ন। বুড়োকে বিয়ে কর্বার জন্যে যারা অনেক কর. ধৈর্য % তাদের জন্তে পথ ছেড়ে দিয়ে, চল, আমর। বাড়ী ফিরে যাই

বিস্বলা আর হবে না--আমার মার জন্যে মন কেমন কচ্চে।” কনের ভাব-_-ভাষার উষ্ণতাতেই প্রকাশ পাইতেছিল। এই স্বাধীন- ।, আছুরে মেয়েটিকে তিনি বেশ. ভাল করিয়াই চিনিতেন, তবু আশ! পারিলেন না। .অনাথার কন্ঠ! বিনা-পণে যুবা-বরে যদি নাই বুড়ার ক্ষতি কি? অর্থ-কষ্ট, অন্ন-কষ্ট কখনো পাইবে নাঃ আছে--ত” থাক্‌ ! কিছুদিন পূর্বে ব্যাপার ঘরে-ঘরেই ছিল। বধের অনভ্যাসে মেয়েদের অত অসহিষু, হইলেই বা চলিবে কেন &. দুইটা হইলেই মন ভরিরা .যাইবে। সব দিকের সব স্থবিধাই কি পাঞ্গু মনের বিরক্তি দমন কৃরিয়া শাস্ততাবে মুক্তা ঠাকুরাণী কহিলেন, খঁদনি তা বলে-_-ওর আব বয়স কত? চুলও পাকেনি, পড়েনি। বুড়ো দেখলি কোনখানটাক্স? তুইই ৰ! কি খুকী,

দিদিমার দিকে পিছন ফিরিয়। শুইয়া স্নেহপূরণ মৃহুত্বরে কহিল, মাত্নী হতে পারি তবু তুমি বাপু গঙ্গাজোলেদের ভাব্ন৷ ছেড়ে ময়ে গড় দেখি। সকাল হলেই উঠে ওর জিনিষ-পত্র সব ফিরিয়ে ন॥ কে জানে বাপু, এ-সব আবার ঘুধ! আমি ভেবেছিলুম, দের কায়দ!-_বাড়ীতে যে আসে, তাকেই নি নতি বানি াডিগজ্ত্শ তু পর প্রবল প্রতাপান্থিত সুক্রাঠাকুরাণী আর দ্বিতট। কথা

সপ্তদশ পরিচ্ছেদ

সঙ হিমুর মত চঞ্চল প্রকৃতি মেয়ের কতক্ষপই বা মিষ্ট লা. ফল যাহ জিনিষ এত আছে যে দেখিরা শেষ কর! দার-_কিন্ত বিনা শাস্তি চোখের দেখায় তুষ্ট হওয়া! তাহার ন্বভাব নয়। এই অভাবটা। পুর্ণরূপে অন্থভব করিতেছিল, এমন সময় সহসা! অতফিত বন্ধু-লাভা সে দিন সকাল বেলা ভিজ! ঘাসের জলে প| ছুটি ভিজাইয়। হিমু'ল ভরিয়া ফুল তুলিয়! বাড়ী ফিরিতেছিল, পথে উদ্ান-বাযু-সে:: আলোকনাথের সহিত দেখা হইল। হিমুর আঁচল-ভর! ফুলের রা" ইহারই বাগানের ফুল-_হয়ত এত ফুল ন্ট করায় বাবু বিরক্ত হইবে তাই একটু কুষ্ঠিতভাবে সে পথের ধারে সরিয়া। দাড়াইল। মুখে সুধু লজ্জা-জড়িত কুষ্ঠিত হাসি! আলোকনাথ কাছে আসিয়া লি্ধম্বরে "এত ভোরে ফুল তুলতে এসেছ? আর ফুল*চাই না কি? দাড়াও, 1 তুলে দিচ্ছি।”

হিমু অবাক হুইয়! গেল,_বকুনি খাইলই না, তাহার উপ! আবার ফুল তুলিয়। দিতে চান ! হিমু আলোকনাথের প্রতি কৃতহ কহিল, “বড় একটা রাঙ্গা। গোলাপ হলে মন্দ হোত না- মালার ম। দিতুম।”

“মালা গাথ্বে? এসো, আমি গোলাঁপ তুলে দিচ্ি। তা গো তুমি তোলোনি কেন?” | হিমু কহিল, “বড় মালী বল্ছিল, ও-সব গাছে হাত দিয়ো! না”

“ওঃ!” বলিয়া! আলোকনাথ অগ্রসর হইলে হিমু ফিরিল। মা ব্যস্ত হয়৷ ফুল তুলিয়। দিতে আসিয়! ধমক খাইয়া সরিয়। গেল 9 হিমুর সাক্ষাতেই বাবুর আদেশ প্রচারিত হইল--অতঃপর যে-কোন স্কুল তোলায় কেহ যেন তাহাকে বাধা না দেয়।

ইহার পর প্রায়ই আলোকনাথ হিমুকে বাগানে দেখা

প্রত্যাবর্তন

শাঁন্‌ পাথীটার কি নাম, কোন পাক্গরাটা কেমন করিয়া পারিতুনতে শিখিল, মন্বনাটাকে কে এত কথা শিখাইয়াছে__এই সকল হি ইহার সত্য-মিথ্যা! উত্তর-পরত্যুত্তরে এই তরুণী মেয়েটি প্রৌঢ় . কর্তার সকাল-সন্ধ্যা বেশ আননেই কাটিতেছিল। মানুষ যা পায়__ তাতেই দি তুষ্ট হইতে জানিত, তবে সংসারে অনেক ছুঃখ-অশাস্তি কয়! যাইত কিন্তু মানুষের স্বভাব ঠিক ইহার বিপরীত ! আলোকনাথও শগথানের অনেক করুণাই অধাচিতরূপে পাইয়াছিল। অবিমিশ্র সুখলাভ বের আয়ত্তের বাহিরে যে অভাব ছিল, যাহা এতদিন অভাব-রূপে 'শকে গীড়িত করিতে পারে নাই, আজ এই জুন্দর মেয়েটর সঙ্গ-মোহে . অভীব-ছুঃখই তাহার সকল সুখের মাত্রা ছাপাইয়৷ উঠিল। মনে হশ, জীবনের তিনভাগ সময় বৃথাই ব্যয়িত হইয়াছে, দাম্পত্য জীবনের কান স্ুখই তাহার ভাগ্যে ঘটে নাই। মানুষ যখন অভাব অনুভব করে, “ধন তাহা পূরণের ইচ্ছাও মনে উঠে। আলোকনাথের মনে হইল, হমুকে পাইলে তাহার জীবনের সখ যোলকলায় পুর্ণ হইবে। মাত . শীভাষে ইহাই জানাইতেছেন। হিমুও তাহাকে অপছন্দ করে না। বছকাল তাহার মুখ চাহিয়। সে সময় নষ্ট করিয়াছে--চিরদিনই ব।

: 'রিবে কেন?

অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ ১০৭.

কহিলেন না। তিনি জাঁনিতেন, ইহার পর বাদ-প্রাতিবাদের ফল যাহা: ' ঘটিবে, তাহা উভয় পক্ষেই স্থখকর হইবে না। হয়ত অপরেরও শাস্তি, ভঙ্গ করিতে পারে।

রি যন্র যতই অধিক হইতেছিল, হিমুরও সেই পরিমাণে এখান হইতে পাই! যাইবার ইচ্ছায় মনট। ছট্ফট্‌ করিতেছিল। নী

বাড়ীতে আর এক-মুছু বাস করিতে ভাহার ইচ্ছা ছিলনা আলোকনাথের সহিত বিবাহের কথ! ওঠায় বাড়ীর সকলকাঁর কাছেই সে- এখন নিজেকে অপরাধিনী বলিয়। মনে করে। যে রুগ্রা দিদি যথার্থ ভগ্মী- স্নেহে তাঁহাকে বুকে টানিয়৷ লইয়াছিল; সাপের মত তাহারই রোগজীর্ণ' বক্ষে সেই কি ন| শেষ ছোবল মারিল! ছি--ছি কি ঘ্বনা! কেমন করিয়া হিমু আর তীহার কাছে নিজে গোড়ার মুখ বাহির করিবে ? তা”ই বাড়ীর, একমাত্র আকর্ষণীয় মানুষটির সঙ্গ সে ইচ্ছ! করিয়াই ত্যাগ করিয়াছে। প্রথম ছুই তিনদিন হিু মনে করিয়াছিল, হেমধতা হয়ত তাহাকে ডাকিয়া পাঠাইবে। যদ্দি ডাকে, মে কেমন করিয়! যাইবে? তবু এই ডাকের প্রতীক্ষাতেই সে উন্মনা হইয়। বনিয়া থাকিত। ক্রমে সে আশাও ফুয়াইল, সেখান হইতে ডাক আসিল ন|। চিন্তায় ছিমুর ক্ষুদ্র হায় ব্যথিত হইলেও প্রতিকারের পথ দেখিতে পাইল.ন|। সে কি নিজ হইতে দিদির পায়ে পড়িয়া বলিবে, «আমার .কোন দোষ নেই--ও-সব থাইয়ের কথা আমার একটুও ভাল লাগে না। তুমি কর্তাবাবুকে বারণ কর দিদি, ও-সব বম্তে 1--বাঃ তাও কি কখনো হয়? ছি! এসব ভারী লঙ্জ!- ভারী বিশ্রী! | হিমু এই চাপ! দিবারই চেষ্টা করিল। দিদির স্গ ছাড়া! আর একটি লোত্তের জিনিষও ছিল, বাগানে ফুল তুলিয়া বেড়ানো

১৪৮ প্রত্যাবর্তন

লোভও তাহাকে দমন করিতে হইয়াছিল। আবরকাল হিমু বাগানে 'নামিলেই আলোকনাথের বায়ুংসেবনেচ্ছা। বন্ধিত হয়। প্রথন গ্রথম জানিয়! সে বখন ইহার সাহা লইয়াছিল--তখন খুসী হইয়াই লহইয়াছিল। দূরল৷ হিমু ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য বুঝিত না। বাবুর অযাচিত অন্ুগ্রেহরও ভা'ই সে কারপ-অনুসন্ধানে ব্যস্ত হয় নাই। এই সব নুতন নূতন পাখী-__ হিমু ইহাদের নামও জানে না-_গুপাবলী জানেই না। এত রকম থে কুল,_-ইছানের সন্বন্ধেও তাহার অজ্ঞতার সীমা নাই। অরুণের কাছে লকলের গল্প করিবার সময় শুধু পরিপূর্ণ আনন্বোজ্জল মনটুকু ছাড়া তাহার তহবিলে সঞ্চয় কিছুই হইত না। এমন সময় বাবু যখন অযাচিতভাবে তাহাকে সঙ্গ দিয়া সকল সমন্তার মীমাংসায় প্রবৃত্ত হইলেন, তখন শ্বতঃই কুতঙ্রতায় তাহার চিত্ত পূর্ণ হইয়া উঠিল। বাবু তাহার দিদির স্বামী কারক বাড়ীতে ইহার! অতিথি--তা' ছাড়া সম্বন্ধ যখন হুইল তগ্ীপতি_ তখন ইহার সঙ্গ খুনী হইয়াই বা! সে গ্রহণ ন! করিবে কেন মনে ইহার প্রতি একটুখানি শ্রদ্ধাই জাগিল। এমনি করিয়া 'ঘনিষ্ঠত! বখন বর্ধিত হইল, ভখন সে দিদিমার মুখে গুনিল, বাবু তাহাকে বিবাহ করিতে চহিয়াছেন। দিদিমাকে ধমক দিয়া থামাইয়। দিলেও বাড়ীর গৃঙিণী কর্তা-মা হইতে সকলকার মুখেই শব একই কথা। বাড়ীর কর্ত্রীর আসন খালি নাই, অর্ধমূতা এখনও সেখানে সে পড়িয়া আছে যে! ধিকারে হিমুর আপাদ- অন্তক পরিপূর্ণ হইয়া উঠিল। ন| জানিয়া, না৷ বুবিয়া সে কি কাওঁ করিয়াছে? কাহাকে সঙ্গ দিয় কাহার সঙ্গ লইয়! সে আজ লোক-চক্ষে নিজেকে এত অবহেলার পাত্র করিয়া বসিল! দিদিমা! রথ ন! দেখিয়! কোন মতেষ্ই বাড়ী ফিরিবেন ন1। তাহারও এখনো৷ করদিন দেরী রহিয়াছে। কিন্ত হিমু যে এখানকার বাতাসে আর শবচছন্দে শ্বাস গ্রহণ করিতে গারে না! হরিণীকে বেড়া-জালে আব করিলে তাহার যেমন

অধ্টাদশ পরিচ্ছেদ ১৩৯.

'অবস্থ। হয়, হিমুরও নিজেকে তেমনি অনহায় মনে হইতেছিল। আলোক. নাথের মা এখন তাহাকে অধিক যত্্ দেখান, স্ানাহারের তদারকে ব্যস্ত হ'ন, দাসী-চাকরেরা সন্ত্রম করিয়! চলে। তাহার নিজের জন্য শুসজ্দিত কক্ষ, ভাল ভাল কাপড়-চোগড়,-_মুক্তা ঠাকুরাণীরও আদর-আপ্যায়নের ত্রুটি হইতেছিল না! তাহার মুখে প্রসন্নতার ছায়াই দেখা যাইত। তবু মুক্ত আকাশের পাখী সোনার পিগ্ররের ভয়ে আকুলি-ব্যাকুলি করিতেছিল। কতক্ষণে রাজ-প্রাসাদের রাজ-ভোগ ছাড়িয়া সে তাহার কুটির-বাসিন' মায়ের কোলে ফিরিয়! যাইবে, ইহাই ছিল তার প্রতি-ুহূর্তের কামনা ইহারই মধো নিজের জন্য হিমু একটুখানি নিরাপদ আশ্রয় আবিষ্কার করিয়াছিল। ইন্দ্রনাথের লাইব্রেরী কক্ষ এরন্জ্রজালিক মন্ত্রে তাহার সব ছুঃখ ভূলাইয়। দ্িত। সে জাঁনিত, বাড়ীর অনেক কক্ষে বাবুর শুভ! গমন-সম্তাবনা, কিন্তু এদিকটায় না'ই। চাকরের! সকাল বেল! ঘরে ঝাঁট দিয়! ঝাড়া-মোছার কাজ সারিয়৷ চলিয়া ষায়। তাহার পর অংশের সহিত বাড়ীর লোকের আর কোন সংস্রব থাকে না। বাবুর ভাইপোর কড়া হুকুম, তাই, নইলে বাড়ীর অন্ত কাহারও সহানুভূতি এখানে বর্তমান ছিল না। দিন-যাপনের জন্ত হিমু এই নির্জন স্কানটিকেই নিজের জন্ত বাছিয়! লইল। বাবু যে আজকাল অনেক সমক্ন অকারণে বাড়ীর ভিতর আসি! ক্ষু্জ চিন্তে ফিরিয়া! যান, সকালে সন্ধ্যায় কোন বন- দেবীর আবির্ভাব-আশায় উন্মনা হইয়। বাগানে পদচারণ করিয়া ফিরেন, মুক্তা ঠাকুরাণীর ততীক্ষদৃষ্টিতে তাহা এড়াইয়। যায় না। কিন্তুতিনি আর করিবেন কি? বিধাতা যে এখানে সমানে সমান মিগাইয়াছেন নাতিনীটি বিক্রমে তীহার নীচে নর,-_-শাসনে বাধ্য হইবে, সে পাত্রীও সে নম্ব। অগত্যা মনের ক্ষোভ মনে রাখিয়া তাহাকে সময়ের প্রতীক্ষা; করিতে হইতেছিল। মায়ের সত হউক, দেখিয়া লইবেন-_সে কত বড় জেদ

১১০ প্রত্যাবর্থন

মেয়ে--আর তিনিও “মুক্তা বাম্নি' কেও-কেটা নন ! তীক্ষবুদ্ধি দূরদশিনী ঠাকুরাণীটি জানিতেন যে ছুইট। প্রবল গ্রহের ধর্ষণে অগ্নাৎপাতের সম্তাবন!। ক্ষেত্রে সহিয়! থাকাই ভাল। ববুরেই মেওয়৷ ফলে।

উনবিংশ পরিচ্ছেদ উপহারের, পরিণাম

সন্ধ্যা হইতে তখনও বিলম্ব ছিল। লাইব্রেরী খরের জানালা-দরজ।- গুলার অধিকাংশই বন্ধ রহিয়াছে। জানালার শিরোভাগের রঙ্গিন কাচা- বরণের মধ্য দিয় নীল লাল সবুজ রঙের আলোক-রশ্মি ঘরের দেওয়ালে স্থানে স্থানে রেখাপাত করিতেছিল। দক্ষিণের ঝড় দরজাটা খুলিয়া! দিয়া তাহারই একদিকে পিঠ রাখিয়া! অপর ভাগে প। বাড়াইয়। বসিয়া হিমু একথানি কাব্য-গরন্থ পড়িতেছিল। খোল। দরজাটার বাহিরে মার্কেল- মগ্ডিত লম্ব! দালান, তাহার শেষ অংশে চিত্র-কর! লোহার বেলিং-ঘের।-_ তাহার নীচেই বাগান। দিকট। বাড়ীর পিছন্‌ দিক। বাগানটি ফুলের 'নয়_ফলের। বড়বড় আম জাম কাঠাল জামরুল গোলাপজাম পিছ বাতাবি লেবু ফল্সা নাব্িকেল তাল আরও কত গাছ-পালা। বাগানের মাঝখানে পুকুর তাহার বীধান চাতালের চাব্রিপাশে সুপারি গাছের সারি। বাগানে হিমু বড় যাইত ন|। তাহার ভয়-ভয় করিত। বড বড় গাছের ছায়ায় ঢাক! নির্জন বীথি--বাতাসের গাছের পাতা ছলাইয়া হাহা রব! সঙ্গী থাকিলে তাহাকে ভয় না দেখাইয়া প্রলোভনে হয়ত ফেলিত। গাছে উঠিবার বিদ্তাটা এখানে প্রকাশের ইচ্ছা না থাকিবেও তলায় কুড়াইলেই বথেষ্ট; কিন্তু উপস্থিত মনোতাবে অথব! রাজভোগে পরিতুষ্ট রসনা এদিকে প্রলুব্ধ হয় নাই। _ জাদরুল গাছে বসিয়া একটা কালে! কোকিল অনেকক্ষণ হুইতেই হিমুর মনোযোগ আকঙা। করিবার প্রশ্নাসেই বুঝি থাকিয়া থাঁিয়। 'কুহু

১১২ প্রত্যাবর্তন

কুহু” করিয়। ডাকি! উঠ্িতেছিল। কাব্য-রসাস্থাদিনীর সেদিকে কোন লক্ষযই ছিল না। ভিতরের দিকের খোল! দরজ। দিয়া বলাইয়ের বী একথানি রূপার পাত্রে অনেকগুলি বাছাই কর! ভাল ভাল ফুল একটি সুন্দর তোড়। সাজাইন্ন। লইন্না ঘরে ঢুকিয়৷ হাসিমুখে কহিল, “এই যে দিদিমপি, ভুমি এখানে--তোমার অন্তে আমি সার বড়ীথান্‌ তল্লাস করে বেড়াচ্চি।”

হিমু মুখ তুলিয়া! চাহিতেই ফুলের উপর চোক পড়িল। দে বুঝিল উপহার বীয়ের নয় গভীর বিরক্তিতে তাহার মন ভরিয়া গেল$ সে কহিল, “এত খোঁজাখুজির দরকার ? আমি তোমাদের কিছু চুরি' করে পালাইনি ?” কথা-শেষের সঙ্গে সঙ্গেই সে. দৃষ্টি, পুনরায় বইয়ের অক্ষরে নামাইল।

বলাইয়ের নার বয়স কম--এখনও যৌবনের সবুজ হাওয়া তাহার শরীরের মধ্যে নাচিয়! ফিরে। সে বিধবা, তবু পাড়ওয়াল। সাড়ী পরে, হাতে তিনগাছি করিয়া কাচের চুড়ি, উপর হাতে সোনার তাগা, এবং নাড়ীর নীচে গার বিছ!। ভাল করিয়! চুণ দিয়া পান সাজিয়! পাত্ল! ঠোট রাউ! করিয়। রাখে, সুবিধা পাইলে ছড়া! কাটে, গুণ গুণ করিয়। গান গায়, বধু- ঠাকুরাণীর. সহিত সময় বুঝিয়া৷ একটা-আধটা রদিকতাও করিয়া থাকে এ-ছাঁড়া তাহার আর কোন অপবাদ ছিল না। সে অল্প বয়সে বলাইকে কোলে লইয্বা বিধবা! হয়, সেই. পর্য্যন্ত এই আশ্রয়েই কাটাইতেছে। হেমলতা৷ তাহাকে ভালবাদিত। সাধারণ দাসীদের চেয়ে সে উচ্চশ্রেণীর ! সে হেমলতার পাত। কাটিয়। চুল বাঁধিয়া দিত, ছুপুরবেলার তানখেলার সঙ্গী হইত; গৃহিণীর পাক! চুল তুলিত। সংসারের ছোট কাজ তাহাকে কিছু করিতে হইত না। এখন- বিধান. সবই বদল হইয়! গিয়াছে। -হেমলতা। . জর চুল বাধে না, তাস খেলে না, রসালাপ করেনা, সে নিজের রোগ-.

উনবিংশ পরিচ্ছেদ ১১৩

ষন্্ণাতেই কাতর-_বলাইয়ের মার মন যেন হীপাইন্স! উঠিতেছিল ! নিরবচ্ছিন্ন হুঃখের ভার আর বিষঞ্ন মুখ--এ যেন সে সহ! করিতে পারিতে- ছিল না। হিমু আসায় দিনকতক মন্দ কাটে নাই। আনন্দমনরী মেয়েটি নিজের আনন্দের আলো! চারিদিকে বিকর্ণ করিস্বা কলকণ্ঠের হাস্তোচ্ছবাসে নিরানন্দ পুর্রীতে অমৃতের নির্ঝর বহাইয়৷ গৃহবাসীদের পাষাণ মনে যেন সোনার কাঠি বুলাইয়! ধীরে ধীরে আবার চেতনা ফিরাইয় আনিতেছিল। মেয়েটির আত্ম-পর বিচার নাই, আব্যার-বায়নারও অন্ত নাই! বাড়ীতে বে এই জিনিষটিরই একাস্ত অভাব। তা*ই মরা গার্ে আবার জোয়ারের উচ্ছ্বাস হুচিত হওয়ায় বাড়ীর সব লোকই একটু তাজ। হই! উঠিতেছিল। হেমলতার শীর্ণ অধরে হাসির রেখ! প্রায়ই মিলাইবার অবকাশ পাইতেছিল না মরণ প্রতীক্ষা করিয়া থাক! ছাড়া আরও যেন কিছু পাইবার আছে, এমনি একট। ভাবের উচ্ছ্বাসে রোগের গতিও দিন- কতক একটু মস্থর হইয়। পড়িতেছিল। স্বামীকে আজকাল আর কাছে পায় না-_দিন-রাত একঘেয়ে রোগের ইতিহাসে বিরক্ত হইন্না অ.নকদিন হইতেই স্বামী নিজের পথ বাছিয়া লইয়া ছিলেন। তবু অনেকিদিলের অভ্যাসদোষেও, হয়ত কতকট। আকর্ষণও ইহার মধ্যে ছিল, প্রত্য: বাড়ীর তিতর খাইতে আসিয়া! স্ত্রীর সহিত সাক্ষাৎ করিয়া! যাইতেন। এমনি এক- দিন অতকিত অবস্থার এলোকেশী রূপের ভালি প্রস্দুট-যৌবন! তন তরুনীকে দেখিয়া আলোকনাথের দৃষ্টি বিস্ময়ে মুগ্ধ হইয়া, গেল! সংসারে ভোগের জিনিষ অনেক পাইলেও তাহার মনে হইল, জীবনে এমনটি যে না পাইল, তাহার জন্মই বুথ! অবন্ঠ সেই প্রথম দিনের প্রথম দর্শনেই এমন ভাব কিছু তীহার মনে আসে নাই। তখন কেবল সৌনর্যোর আকর্ষণেই সে মেয়েটির পানে চাহিয়৷ দেখিয়াছিল ক্রমে দর্শনের আকর্ষণ ধতই বাড়িতে লাগিল, ব্য বতই হুলত হয়! দেখা দিল, ততই * মানুষের

১১৪. . প্রত্যাবর্তন

আকাজ্'-ূর্ণ র্বল মন প্রিয়পান্রকে কাছে পাইবার জন্যই অধীর হুইতে- লাগিল। মারের কাছে নির্জনে .অন্ুকুল প্রার্থনাই শুনিতে গাইল-- “গরিবের মেয়ে পার হচ্ছে না--তোর নাম করে মাসী এখানে এসেচে। দে বাবা, ওর দায় উদ্ধার করে। খাসা মেয়ে--এমনিটিই রাজার ঘরে মানার আমার কি তেমন বরাত যে কথ! দেব? সে ছোঁড়া নাই করুক্‌, তুই ওর দায় উদ্ধার কর্তে পারিস্‌।” ্‌

সাগর-সেঁচা মাণিক এত সহ বিকায়? আলোকনাথ লজ্জিত মুখে কহিল, “বুড়োকে অমন মেয়ে দিতে গুরাই বা রাজী হবেন কেন? বিশেষ সতীনে।”

রাজী হবে না! শোনে। কথা! তুই হলি বুড়ো! বেটা ছেলের কি বয়সের বিচার থাকে নাকি? শোনে। মাসী, ছেলের কথ! গুনে যাও। উনি বল্চেন, বুড়োকে তোমরা মেয়ে দেবে না-_

মুক্তা ঠাকুরাণী বাহির দালানে বসিয়। দাইলের খুব ঝাড়িতেছিলেন। গৃহিণীর আহ্বানে জলাট-ঢাঁকা! ঘোমট| টানিয়। বারের পার্থে আসির়! ধাড়াইলেন, কস্বর মৃদু করিয়। কহিলেন ণ্ওর তপিস্তে থাকে, তবে .হবে। ম! ছুঃখী রাঁড়ী--উপায় নেই বলেই 'ন। পার হচ্চে না। আর হোক ন৷ হোক, সত্যি কথ! বলব বাছা, পুরুষ মানুষের চল্লিশ পয়তাল্লিশ বছর কি আবার বয়ম? এখনকার ছেলেরা সব পাশ করে চাক্রি করে যে বিয়ে কর্‌চে, তাদেরই কি আর বিয়ের বয়েস থাক্‌চে? সে সব ছিল সেকালে রি ছেলে-মেয়ে সবারই ছোট বেলায় বিয়ে হোত। এখন আর ও"লব

* ইহার পর হেমর্লতার অনুমতি না লইয়াই--আলোকনাথ নিজ

বি যে সম্মতি জানাইবে তাহাতে আশ্চরধ্য হইবার কিছুই নাই। আলোক- নাথ পাত্রীর সহিত আলাগ জগ দেখিয়াছে, দেও তাহাকে অপছন্দ করে না। হেম? তাহার স্মাশা করাই ভুল

উনবিংশ পরিচ্ছেদ ১১৫

সে বদি সন্তান দিয়! স্ত্রীর কর্তব্য পালন করিতে পারিত, তবে এ-সব ঝঞ্াটের প্রয়োজনই বাঁ কি ছিল? লোকে যা”ই বলুক সত্যই ত, সে কচি ছেলেটি নয়। বোঝে সবই-_কিন্ধ মবের উপর পিতৃ-খাণ! আলোক- 'নাথ পণ্ডিতের কাছে এই শ্লোকাংশটি শিখিয়। লইয়াছে, *পুত্রার্থে ক্রির়তে ভাধ্য পুত্র পিওগ্রয়োজনং।” সকল সমন্তার মীমাংসা এইখানেই “হইয়া গেল।

দাসী হাসিমুখে কহিল, “দিদিমণি চোখ নামালে যে? ফুল নাও। বাবু হাতে বেছে বেছে তুলে দিয়েচে গো ! চেয়ে দেখ__

হিমু অপান্ধে তাহার হান্তময় মুখের পানে চাহিয়। বিরক্তিতে পূর্ণ হইয়! কহিল, “দিদির ঘরে দিয়ে এস। বাবুর তোলা ফুল--তিনি খুসী হবেন। আমার দরকার নেই।”

দাসী বুঝিল, হিমানী রাগিয়াছে। তবু রাগটা যে কোন্‌ দিক হইতে জন্মিল, তাহার সুত্র খু'জিয়া ন! পাইয়। সে কহিল, “তার ঘরে মালীর! রোজই ফুল পাঠার, আজও পাঠিয়েচে--এ তোমার জন্তে গো, নাও, দর ।*

হিমু কুদ্ধ স্বরে কহিল, "তবে তাকে ফিরিয়ে দাওগে-7”

“ওরে বাস্রে--তবেই হয়েচে আর কি! নাও বাপু, এই রইল তোমার ফুল, ফিরে দিতে হয়, তুমিই দিও--তোমাদের ঝগড়াঝীটির মধ্যে পড়ে গরিব কি শেষে মারা যাব?” .

হিমু নুখ তুলিয়া দীপ্ত কে কহিল, “বাবু আমার ফুল পাঠান কেন? ভার বাড়ীতে যে-কেউ অতিথ আসে, তাকেই কি তিনি এমনি করেন ?”

দাসী তাহার উত্তেজিত মুখের পানে চাহিয়া! থ' হহয়। [গয়াছিল, আম্তা! আম্তা করিয়া কধিলি,*সবাই-_সে আর কথা! বাবু তোমায় ভালবেসে দিয়েচেন, দিদিমপি_-”

১১৬ প্রত্যাবর্তন

বাধা দিয়! সবেগে হিমু কহিল, "ভালবেসে তীর স্ত্রীকে দিন গে--স্' অর্চে দিকে-_ আর বুড়োর খেল! পড়ে গেল !” হু

হিমু মুখ ফিরাইয়া! অন্তদিকে চাহিয়া! রহিল দেখিয়! বলাইয়ে ম। সহানু- ভূতির স্বরে কহিল, “্য৷ বলেচে। দিদিমণি-_পুরুষ-মানুষদের দেখে দেখে ঘেরা, ধরে গেল--নৈলে এঁ বৌঠাকৃরুণেরই কি এক দিন কম আদর ছিল? বাবু চোখে হারাত! ধযন জোড়। পায়রা ছুটি-এক দও কাছ ছাড়াছাড়ি ছিল না! তার জন্তে বৌঠা করুণকেই উল্টে মাঠাক্রুণের কাছে কত ফৈজত গুন্তে হোত ! বাবু রাস্তায় বেরুত বদি, বৌঠাক্রুণ জান্লায়- দাড়িয়ে থাকৃত--এই বলাইয়ের ম! অনেকই দেখুলে দিদি, এখন কালে- ভদ্রে খবর নিতে যান। তাও বিয়ের কথা! উঠে অবৃধি রাস্তা আর মাড়াননি। যতই হোক, সোয়ামী ত, এত তাচ্ছিলা কি সহ্‌ হয় গা? বৌঠাক্রণ যাই মাটার মানুষ, তাই মুখটি বুজে সব সইচেন তোমরা আমর! হলে কক্গনে। পারতুম না.বাপু, তা হক্‌ কথ! বল্ব !””

অতীতের আন্দোলনে সহানুভূতিতে বলাইয়ের মার চোখের পাতাক্ জলের আভাঘ কুটিয়াছিল। হিমুরও অন্যমনস্কে ক্রোধের তাপট! একটুখানি . কমিয়া আদিয়াছিল। তাহার মনে পড়িল, সে পুস্তকে পড়িয়াছে, প্দৃত অবধ্য।” সত্যই ত, ইহার! বেতন লয়, মনিবের আদেশ-পালনে বাঁধা-__ ইহার প্রতি ক্রোধ-প্রকাশে ফরই বা কি? আহা, ছুঃখিনী দিদিকে এখনও ভালবাসে।

হাত বনি লইয়া! মে উঠিয়া! দীড়াইলে বলাইয়ের ম1 আশ্বাদেশর নিশ্বাম ফেলিয়। ভাবিল, যতই হোক্‌, ছেলে মানুষ ত--এরি মধ্যে ফুল দেখিক়! রাগ ভূলিয়৷ গেল। কিন্ত এচিন্তা সুধু মুহূর্তের ভগ্ত! বলাইয়ের মার নিবেধের পূর্বেই হিমু উঠিয়া বারান্দার রেলিংযেে্র বাহিরে: অন্ধকার বাগানের জঙ্গলময় অংশের দিকে ফুলগুলি

উনবিংশ পরিচ্ছেদ ১১৭.

উজাড় করিয়! ফেলিয়! দিয়া পাত্রধান! দাসীর হাতে কিরইয়। দিল। অল্পক্ষণের এই পরিচনটুকুতে বলাইয়ের মা হিমুকে যতটুকু চিনিয়াছিল__ তাহাতে ফুলগুলির পরিণাম সম্বন্ধে কোন আলোচন! ন। করিয়। গুধু মৃহুম্বরে সে কহিল, “মুস্কিল কল্পে দিদিমণি ! বাবু যদি কিছু নুধোক়--কি বে জবাব দেব?”

তাহার বিষন্ন দুখের পানে চাহিয়া প্রশান্ত স্বরে হিমু কহিল, “সত্যি কথাই বল্বে--তারও ফুল তোল্বার সথ্‌ মিটবে, আমারও তোমাদের সঙ্গে জড়াই কর্তে হবে না ।»

“মিথ্যে বলনি দিদি ঠাক্রণ। তুমি একেবারে কেল্লার গোরা--বাবুর দেখুছি, বরাতে অনেক দুঃখু লেখা আছে--” বলিয়! দাসী এতক্ষণের বাকৃবিতগার পর একটু হাঁসিয়৷ বাহির হয়৷ গেল।

হিমু বইখান। মুড়িয। বাহিরের দিকে চাহিয়া, রহিল। কৌদ্রালোক স্নান হইয় সন্ধ্যার সুচন। জানাইতেছিল। গাছ-পালার ছালাম 'দকৃটা ইহারই নধ্যে বেশ ঝাপস! হইয়। আসিয়াছে। মুক্ত আকাশে কদাচিত ছই-একটি পাখী উড়িয়। যাইতেছে চিম্নীর পথ দিয়া কখনও পাখীর ডাক কানে আসিয়! বাছিতেছিল। বাহিরে প্রচুর স্বাধীনতা! তবু কি অসহা: সে! পৃথিবীটার এ-সৰ অংশের সহিত তাহার যে পরিচয় নাই। মনে. সে কখনো এমন সব বিষয়ের কল্পনা! জাগাক্স নাই! এখানে একমাত্র আশ্রয় দিদিমা--তিনিও শক্রপক্ষে যোগ দিয়াছেন! তবে কে তাহাকে বিপদে রক্ষা! করিবে--? চিন্তার সঙ্গে সঙ্গেই বাহিরে জুতার আওয়াজ শোনা। গেল। হিমু মুখ ফিরাইয়। লইল। মনে* হইল, বাবু এইবার সশরীরে তাহার অবা'ণতার দণ্ড বিধান করিতে আসিতেছেন। দীত দিয়। ঠোঁট চাপিয়। সে তাহার তীক্ষ-ধার রসনাকে সংঘত করিল। ছি--উহারই বাড়ীতে বসিয়। উহার সহিত কি কোমর বাঁধিয়া মেছুনীদের কত ঝগড়।

১১৮ প্রত্যাবর্তন

বাঁধাইবে সে? বাড়ী ছাড়িয়া একবার যাইতে পারিলে তখন কেই বা আর তা”র নাগাল পাইবে? হিমু ভাবিতেছিল, মার কোলে মুখ লুকাইলে কেহ আর তাহার ছাক়াও স্পর্শ করিতে পারিবে না। 4: কিছুক্ষণ কাটির! গেল-_খুব বেশী সময় নয় তবু চুপ করিয়। কৌতূহল সহ করা হিমুর স্বভাব-বিরুদ্ধ। রাগের মূলীভূত ফুলগুল! এখনও ময়ল1 গাদার পাশে পড়িয়া আছে-স্ৃতরাং অস্তরে তাহার কৌতুক-হান্তেরও একটি স্থর বাজিতেছিল। সে মুখ ফিরাইয়। অপমানিতের রোষ-দীপ্ত মুখের পানে চাহিতে গিয়া বিস্ময়ে অবাক্‌ হইয়া গেল। যে আসিতেছিল, সে একজন যুবাপুরুষ। হিমু তাহাকে এ-বাড়ীতে আর কখনও দেখে নাই-_ বাহিরের আমলা-কর্মচারীরা, বাবুর মোসাহ্ববৃন্দ সকলেই বে তাহার, পরিচিত, তাহা! নয়-_তবু অন্দরে যাহাদের যাতায়াত চলে, তাহাদের. -কলকেই হিমু চিনে। ঘরে কেদার1, কৌচ, সোফার বাহুল্য-সব্বেও কেহ যে সাধ করিয়া মাটীতে বসিয়। পুস্তকাধ্যরন করিতে পারে, সম্ভবতঃ আগন্ত- কের তাহা খেয়ালে আসে নাই। বাহিরের অন্ধকার দালান হইতে ঘরে চুকিক় প্রথমটা সে ঘরের দিকেই চাহিয়াছিল। পরে বখন হিমুর উপর দৃি পড়িল-_হিসুর বিন্মিত দৃষ্টি তখন তাহারই উপরন্তস্ত।

“আমি বুঝতে পারিনি, ঘরে কেউ আছেন !--” নিজের ' অন্নচিত আগমনের স্বপক্ষে এই একটিমাত্র কৈফিয়ত দিয়াই আগন্তক কুণ্টিত ত্রস্তভাবে বাহির হইয়। গেলে হিমু তাহার চলিয়! যাওয়া পথের পানে চুপ করিয়া চাহিয় বলহিল।

বিংশ পরিচ্ছেদ

জলদের চাকরি

সুপারিশের জোরে বি-এ পাশ করিয়াই জলদ ডেপুটি হইব়। চট্টগ্রামে 'আসিল। সঙ্গে স্ত্রী মা আসিবেন বলিয়। স্থির ছিল, কিন্তু কার্ধ্যকালে তাহা ঘটিল না। জলদের মেজ বোন উষাঙ্গিনীর ছেলের অন্ন-প্রাশনের আর সতেরো! দিন দেরী। সে প্রায় ছুই মাস পূর্ব হইতে পীচ-ছয়ধানি চিঠিতে ম। ভাজেদের নিমন্ত্রণ করিয়। রাখিয়াছে-_-খোকার ভাতে সকলকে বাইতে হইবে।. বড়মান্থয কুটুম! তাহাতে আবার অত্যন্ত অমায়িক 1. বাড়ীর ছেলো-বুড়ো৷ সকলেই মাটার মান্য। প্রথম পৌত্রের অন্নপ্রাশন। টাও খুব হইবে যাত্রা, থিক্েটার, রামকমলের কথকতা, বায়স্কোপ, আরও কত-কি আয়োজন হইবে ! তালিক1 পাইয়া! ছেলেমেয়ে বধূদের দলে উত্তেজনার সাড়া পড়িয়া! গেল। কর্তা-গৃহিণী বুড়ো বয়সে সখ মানায়ন। ভাবিয়। যেন অনিচ্ছাতেও বাধ্য হইয়। ছেলে-মেয়েদের ইচ্ছায় কুটুঘের আগ্রহে সম্মতি দির্লেস। কেবল খুনী হইল ন! জলদের স্ত্রী স্ুনীতি। স্বামীকে ছাড়িয়া, তাহাকে থাকিতে হইল বটেই, তা” ছাঁড়া উপস্থিত সুযোগ হারাইলে আবার যে কৰে সুযোগ মিলিবে, তা! কে বলিতে পারে? বড় সংসারে অন্ুখ-বিহ্থ, তা+ছাড়া নিত্যই কত অন্তত্ায় লাগিব আছে! সকল দিকে স্থযোগ থটিলে তবে বাহির হওয়া যাইবে? এই প্রথম সে বাসায় যাইবে। শীশুড়ী সঙ্গে গিয়! সব ব্যবস্থা। করিয়। দির! না নিন চগিনেমা। বোকা আবার গনিত ভাঙা তাহাকে

*

১২০ ৃ্‌ | প্রত্যাবর্তন

ছাঁড়িয়া এক রাত্রিও সে কোথাও থাঁকিতে পারে ন|। সঙ্গে সুনীতির যাওয়। ঘটিল না বলিয়া জলদও ক্ষন হইল তবু সে স্ত্রীকে উৎসাহ দির কহিল,-_“মাসখানেক দেরী হবে, তাঁর আর কি করা! যাবে? এক্‌ বুকম করে কেটে যাবে। |তোামার কি বল--কেমন মজা করে নিমন্ত্রণ থাবে, থিয়েটার, নাচ-তামাস! দেখবে, দ্মামি বেটারাই কড়িকাঠ গুণে দিন কাটাব ||, চিঠিতে একটু-আটু আমাকেও ভাগ দিও, যদি তুলে না বাও। শ্তনেও তবু পেট ভরান যাবে খোস-খবরের ঝুটোও ভাল।”

সুনীতি উদ্ভত অশ্রু রুদ্ধ করিয়৷ ম্লান হাসি হাসিয়। কহিল,--”ছাই আমোদ! আমার বদি একটুও ভাল লাগ্‌চে ! তুমি হাস্চ! তোমার আমোদ হয়েছে খুব, আমার যাওয়া! হলোনা! বলে, না? বেশ, যাও, তুমি একলাই যাও! আমি যেতে চাইব না আর-কখনও, ফিরে এসেও ন|। “বকোগে না তুমি এক্‌ল। গিয়ে ! কে চায় তোমার কাছে থাকৃতে ?”

বোল বছরের ছেলে জলদের মহিত বখন দশ বছরের মেয়ে সুনীতির বিবাহ হয়, তখন অনেকেই পুতুল-খেলার সহিত বিবাহের উপম! নিয়াছিল। অব্ত বিশ বছর আগ্চেহইলে কথা! উঠিতও. না। বরং ইহার ব্যতিঞ্রমে লোকে নিন্দাই করিত। কিন্তু এখন মেয়েদের দশ বছরে বিবাহের কল্পনাও বড় কেহ করেন ন।। ছেলেদেরও উপার্জনক্ষম হইবার আশায় অনেকে অপেক্ষা করেন। : /

জলদের বাপ-মার একটি ছোট মেয়ে আনিয়া পুতুল-খেলার সখ খুব ন! পাঁকিলেও ছোট মেয়েটিকে ভালবাসিযা' তাহার ভালবাস পাইনা ইচ্ছান্ধ- দ্ধপ তাহাকে গড়িয়। লইঘার সাধটাই হইয়াছিল বেশী। বয়স্ক বধূ আনিয়! কৃতী পুত্রের সংসার গড়িদ্া। দেওয়! চলিতে পারে, তাহাকে লইয়। পাঁচজনের সংসারে মিলাইরা পরিবারবর্গের সুথে সুখী, ছঃখে দূঃখী করিয়। গড়িয়া তোল! বড়ণকঠিন। মাটা নরম থাকিলে গড়ার স্থবিধ। বতটা। হয়, কহিল

বিংশ পরিচ্ছেদ ১২১

'ছুইক্া। গেলে তেমন আর হয়না সুনীতি মেয়েটাও বড় নমনীয় শ্বশুর- শাণুড়ীকে সে মা-বাপের মতই ভালবাসিয়! একান্ত মনে তীাহাদেরই হইয়া গেল। .দেওর-ননদ অনেকগুলি; শাশুড়ী ইহাদের আদর-যত্বের ভার স্থনীতির হাতেই ছাড়িয়া দিলেন। কোন জিনিষটি দিতে হইলে-_প্তুমি পছন্দ করে ওদের দাও”--এই কথাই বলিতেন। কাজেই নিজের জন্ত ভালটি রাখিয়! মন্দটি অপরকে দেওয়া চলিবে না; ইহাতে পরার্থপরতায় মন আপনিই উলে। লমবয়সীদের সঙ্গে সময়-সনয় ঝগড়া-বিদ্রোহ ঘটিলেও ভাপবাসারও অভাব ছিল না। স্বামীকে বন্ধু-রূপে পাইয়। তাহার ক্ষুদ্র মন আনন্দে পূর্ণ হইয়াছিল। বছর ন! ফিরিতেই তাহার! পরস্পরকে 'অতান্ত ভাল বাসিয়া ফেলিল। 'প্রবেশিক1 পরীক্ষায় উভীর্ণ হুইয়৷ জলদ কলিকাতায় গেল-_-কলেজে পড়িতে একট। শনিবার বাদ দিয়া সে বাড়ী আসিবার হুকুম পাইয়্াছিল। ইহার মধ্যে নে স্ত্রীকে তিন-চারিখানি করিয়। চিঠি লিখিত, এবং ষথা-কালে সে সব চিঠির জবাবও পাইত। লেখিকা সম্বন্ধে জলদের ননে কোন সংশয় না থাকায় হাতের লেখা সুনীতির হইলেও, রচনাট। ভগ্নী শৈলাঙ্গিনীর, ব! শ্তালিকা তরলিব।র, সে বিচারের প্রস্নোজন তাহার হইত না। জলদ তাহার বিবাহিত বন্ধুদের অনুকরণে চিঠির ভিতর নান! গ্রন্থ হইত 'গান কবিতা! উদ্ধৃত করি! শাঠাইত-_-এগুলি ববীন্দ্রনাথ-প্রমুখ কবিদের বুচনা হইতেই সে সংগ্রহ করিত। কিন্তু চিঠিতে সে কথার স্বীকার-উক্তি ন! থাকার সুনীতি আশ্চর্য্য হইয়; স্বামীর অসাধারণ কবিত্বশক্তির কথা ভাবিত। ক্রমে বয়সের সহিত দে নিজে বনিয় চিঠি লিখিতে “কোটেশন” করিতে গুরুর বিগ্ভাকেও ছাপাইরা উঠিল। | অতি-নুখেই তাহাদের জীবনের দিনগুলি জল-ল্োতের যত অনায়াসে 'বচিয়। যাইতে ছিল। কুনীতির মনে হইত, তাহার অত শিব পুঁজ রি

১২২ প্রত্যাবর্তন

হইয়াছে। এমন স্সেহময় প্রেমময় উদার উন্নতব্বদয স্বামী কয্পজন নারীর ভাগ্য ঘটিয়া থাকে ! বড় থোকার জন্মের পর সুখ যোল কলার পূর্ণ হইল। তরুণ দম্পতী পিতা-মাতার স্থান গ্রহণ করিয়া পরস্পরকে হেন আরও নিবিড় বেষ্টনে বন্ধ বলিয়৷ মনে করিল। খোকার হাঁসিটি কাহার মত? জলদ বলিত, ঠিক স্ুনীতির। স্থুনীতি তাহাতে সংশয় প্রকাশ করিত। সে বড় হইলে কাহার মত দেখিতে হইবে? জলদ বলিত, সে ঠিক মার মত হইবে। নুনীতি আপত্তি তুলিত-_তবে রূপ ধরিবে না! না-ও তোমার মত হইবে। স্বামীর সহিত তর্কে হারিলে সুনীতি শাণত- ভীকে মধ্যস্থ মানিত। ম! পাগলী মেয়ের মন বুঝিয়৷ তাহার ইচ্ছান্থুরূপ নিষ্পতি করিয়া দিতেন! জলদ কৃত্রিম কোপে মাকে শীসাইয়া! বলিত, পতুমি একচোখো, তাই বৌঝ়ের হয়ে বল্চ। বেশ, বেশ, তোমার সব, “আমি কেউ নই।» মা! হাঁসিতেন। এমনি আনন্দ উৎসাহের মধ্য দিয়? শিক্ষাকাল উত্তীর্ণ হইয়৷ এবার সে কঠোর কর্মক্ষেত্রে প্রবিষ্ট হইল। বিদ্বেশে আসিয়! প্রথম কয়েকদিন জলদের একটু ফীকা ফাঁক। ঠেকি- লেও শীপ্রই সে ভাব কাটিয়া গেল। নিজে সে আনন্দময়-.কাজেই কোথাও. তাহার সঙ্গীর অভাব ঘটিত না। এখানেও অনেকের সহিত আলাপ হুইল ! বৈকালে ফোনদিন ব৷ উকিল তারিনীবাবুর বাসার, কোনদিন বা! ডেপুটি মহেদ্রবাবুর বাসায় ছোট-খাট সভ। বসিত। অনেক পৰস্থ কর্মচারী একত্র মিলিয়৷ তাঁস-পাশ। গল্প-গুজবে তামাক টানিরা সন্ধ্যা কাটাইন্া' যে যাহার বাড়ী ফিরিত। বাড়ী হইতে অনেকেরই চাকর লগ্ন লইয়! আমির! বাবুর প্রতীক্ষায় চাকর বা সহিসদের আড্ডায় বসিয়! বাবুদের কাজেরই ছোটখাট অনুকরণ করিত। জলদও প্রথম প্রথম সে সভায় যোগ দিত। মহেন্দ্র বাবু জলদকে একটু বিশেষ ন্নেহ করিতেন। জল তাহার বড় ছেলে অমুজ্যের সহগাঠী-বন্থু। জলদ এখানে আসিরাছে গুনিগ্গা অমূল্য খুব

বিংশ পরিচ্ছেদ | ১২৩

আনন্দ গ্রকাশ করিরা বাপকে লিখিয়াছিল, তাহার বন্ধুর বেন সেখানে যথোচিত আদর-যত্র হয়। অমূল্য 'আইন পড়িতেছিল। মধ্যে কি একট! ছুটিউপলক্ষে সে বাড়ী আসিল। জলদ এবার মহেন্দ্র বাবুর বৈঠকখান! ছাড়াই! দোতালায় উঠিল। অমূল্যর ম| মেজ বোন কিরণবালাও ক্রমে তাহার সম্মুখে বাহির হইতে কথা কহিতে স্থুরু করিলেন। অসূল্যের ছুটি ফুরাইলেও জলদের আর সেখান হইতে ছুটি মিলিল না। তাহার সরল “মিগুক' স্বভাব, সদানন্দ ভাব, গল্প করিবার ক্ষমতা-_এই সব গুণে ছেলে- মেয়েদের দলে তাহার খাতির আদরের অন্ত ছিল না। মহেন্দ্রবাবু তাহার স্ত্রী অত্যন্ত সাদাসিধ! মান্য ছেলের বন্ধুকে তাহার! ছেলের মতই যত্ব করিতেন। বিদেশে এমন অযাচিত পিভৃ-মাতৃ-ন্সেহ-লাভে জলদের' আত্মীয়-বিচ্ছেদ-ক্ষুব চিত্ত পরম পরিতোষ লাভ করিল। কিরণবাল অমূল্যের মেজ বোন্‌, ম্যাটিক্‌ দিয়া স্থল ছাড়িয়াছে। এইবার বিবাতের. চেষ্টা চলিতেছে। মছেন্দ্রবাবুর মনে বতখানি ত্বরা৷ আসিয়াছিল-_বাহিরে' তাহার ছুই আনাও প্রকাশ পাইত না, তা+ই পর্যন্ত পাত্র খুঁজিবার সমস হয় নাই। কিরণ সুন্দরী, স্থভাধিণী, লোক-রঞ্জিনী। জলদের সহিত তাহার অল্লদিনেই ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তা হইয়! গেল। উযাঙ্গিনীর ছেলের ভাতের পরও সুনীতির বাসায় আস! ঘটিল না তাহার সন্তান-সম্ভাবন! বুবিয়া শাগুড়ী আপত্তি তুলিলেন_-একেবারে ছেলে কোলে লইয়া তখন বাইবে। জলদ তা'ই শুন্ত গৃহের নিরানন্দময়ত1 ভূলিবার উপায়-_মহেন্্বাবুর বাড়ীতেই আবিষ্কার করিয়া কিরণ তাহাদের ভাই-বোনের সঙ্গেই সময় কাটাইতে লাগিল

একবিংশ পরিচ্ছেদ

স্থনীতির ছুঃখ

বাসার আসিয়। ছুই-চাব্রিদিন সেখানকার শৃঙ্খলা 'ও পরিপাট্য-বিধানে 'খাশুড়ী-ননূদের সহিত নিষুক্ত থাকার দরুণ সুনীতি তেমন করিয়! স্বামীর প্রতি মনোবোগিনী হইবার অবকাশ পায় নাই কাছে বসিয়৷ মা খাওয়ান, শৈল সে রান্নাঘরে ঠাকুরের কাজে সাহাব্য করে, অথবা একুরকে বসাইয়। রাখিয়! তাহার! ননদ-ভাজেই স্চাড়াকাড়ি-করিয়। এটা- রি রাধে। শাশুড়ীর আদেশ-মত স্বামীর পাতে নিজের হাতেই সব রিবেষণ করিয়! দিয় আসে ছোট বেলায় বৌ হইয়া আসার শাশুড়ীকে সে তেমন লজ্জ। করিতে পারিত না, ঘোম্টা তাহার ললাট ছাড়াইত না, কথাও ছই-চারিখান। দুরের ঘর হইতে শুনিতে পাওয়। যাইত। বড় হইয়। ইল ব! উষা যদি নির্ণজ্জতার তর্ক তুলিত, তাহ। হইলে সে হাদিয়া বলিত, “ওটুকু ঘোস্টা যে দি, সে গুধু গুরুজনের মান্ত রাখার জন্তে। মাকে জজ্জ। করতে সত্যি বল্চি ভাই আমার ভারী লজ্জা করে ।” শাশুড়ীও মেয়েদের শাসনে বধূর অত্যন্ত লঙ্জার অভিনয় দেখিলে হাসিক্ন৷ বলতেন, শ্যার্কে যা! সাজে না» তাকে ত। ধরে করাম্‌ কেন বাপু ! আমার পাগলী মা, ওকে কলা-বৌ দেখতে আমারও ভাল লাগে না বাপু!” বাড়ীর সে এখন একটি বৌ,-_তা"ই তাহার আদরও ছিল সবার কাছে।

একবিংশ পরিচ্ছেদ ১২৫

স্বামীও অতিরিক্ত আদর দিয়াছেন, সহস! আজ হাত গুটাইতে চাহিতেছেন দেখিয়া যেন তা+ই একটু বিশ্বয়ের সহিত সে চাহিয়া! দেখিল, দেখিয়! সন্দিদ্ধ হইল।

সকালে কাছারি যাইবার পূর্বে সে খোঁকাকে দিয়া জলদকে ডাকাইয্ আনাইয়া৷ কোন্‌ ছবিখানি কোন্‌ দেওয়ালে টাঙ্গাইলে কেদ্ন মানাইবে, টিপয়টি খাটের মাথার দিকে অথব৷ পায়ের দিকে রাখিবে, এই +.

গোলমালে সময় কাটাইয়। বৈকালে বাড়ী ফিরিয়া জল পা বাহির হইয়! যাইত। সন্ধ্যার পর যখন ফিরিত, তখন & বেশ প্রুল্পই থাকিত। ন্ুনীতিরও তা+ই স্বামীর মা করিতে বিলম্ব হইয়াছিল। প্রথম যেদিন পু হার চোখে পড়িল-_সে দিন জল খাইয়। পাণ চিবাইতে চি রা কহিল, “₹ ছাই পাণ যে সাজ, হয় তেত, নয়, চণ। কিরণ খেসে পাণ আর মুখে দিতে ইচ্ছা! করে না»

সুনীতি হাসির! স্বামীর মুখের পানে চা হিয়/ রস করণ কে ? বুবি--? যেয়ে! বরং একদিন

কাছারির পাণ-উলী বুঝি ?” রি এস গিয়ে ।”

*্দুর! আমায় কি তেমূনি সুনীতি হাসিয়। ,কহিল, স্পা

যে পাণ-উলীর পাণ তোমান্ত বলাই হপ্ননি, গাণ সাজ্তে শিখে

সে যখন পাণ দিয়ে প্রাণ

খাব? কিরণ মহেম্দ্রবাবু ডেপুটির ভুলিয়ে নিচ্ছে, তখন যেতে হবে মানুষ কি এত ন্হুজে সব

১২৬. প্রত্যাবর্তন

ছাড়ে ! স্যামীর পানে চাহিন্ন। যেন খুব একটা রসিকতা করিয়াছে, এমনি ভাবে সুনীতি মৃহ মৃহ হাসিতে লাগিল। ্‌

জলদ তাহার হাসিতে যোগ ন! দিয়! যেন একটু ব্যন্ত-ভাবেই ছড়ি লইয়া. উঠিয়। পড়িল। সেদিন তাহার মনে কোন ভাবাস্তর না হইলেও ছুই-একদিনের মধ্যেই স্ুনীতির মনে হইল, তাহার সে স্বামী আর ঠিক্‌ তেমনটি নাই। রা

শৈল, গৃহিণী একদিন ছুপুর বেলায় তারিনীবাবু উকিলের গাড়ী বেঁড়াইতে গেলেন। স্থনীতি বাড়ীতে রহিল, জলদ আপিলে জলখাবার দিবে. খাবার তৈয়ারীর ভারও সেদিন তাহার উপর রহিল। ম! চলিয়া. গেলেও ছেলের খাওয়ার যাহাতে কষ্ট না৷ হয়, তাহ। অভ্যাসের জন্ শাশুড়ীর মান পরীক্ষার ইচ্ছাও ইহাতে নিহিত ছিল। স্থুনীতি ব্যবস্থা সানদ্দেই| গ্রহণ করিল। অন্তদিন সে শুইয়া, বই পড়িয়া, শৈলর সহিত মিছামিছি কলহ করিয়া, তাহার ছেলে-মেয়েদের কখনে। কাদাইর। কথনে! কোলে. লট ছপুর বেলাটা কাটাইয়া দিত। কিছু দিন হইতে এ-সবেও সে আরম .ছিতে পারিতেছিল না। আজ শৈলর ছেলে-মেয়ে বড় খোক। বাড়ী তাকায় বাড়ী যেন নিস্তব্ধ হইয়া আছে। দিনটাও খুব দীর্ঘ মনে হইতেছি স্থনীতির মনের শুন্তত! যেন ইহাতে বাড়িয়৷

কা | স্বামীকে এক ধরে পাইবে। 2 দিবেনা।

কহিল তুমি আমার চাও ভ-1-ত আনো ?”

একবিংশ পরিচ্ছেদ ১২৭-

. জলদ পোষাক খুলিয়৷ ইজি-চেয়ারে বসিয়া কহিল, “তন, তপ্সী, বড় থোকা1--কারো সাড়া পাওয়া যাচ্চে না যে! কোথায় তারা?

“মার সঙ্গে বেড়াতে গেছে। ঠাকুরঝিও গ্রেছে। আমিই শুধু বরইন্থ বাকী ।”

জলদ কহিল, “তুমিও গেলে না কেন ?”

“আর তুমি এসে এক্‌ল। থাকৃতে, শত ঘরে? খাবার-টাবার দিত কে?”

জলদ কহিল, “সে ঠাকুর কর্‌তো৷। আমার জন্তে বসে থাকৃবার কোন দবরকারই ছিল না। আমি আবার এখুনি বেরুব।”

স্নীতি শ্বামীর ডান হাতখানানিজ করতলে চাপিয়৷ কহিল, ”আমি খদি যেতে না দি?”

জলদ কহিল, “ত। হলে যাব না।* কথাটা শুনিতে বেমন মি, বধ সুখের উদ্বাসীন ভাবের সহিত তাহা। তেমন মধুর শুনাইল না। স্ুনীতির চোখে জল ছাপাইয়। উঠিল। স্বামীর হাত ছাড়ি! দিয়! “খাবার 'আনি* বলিয়। মুখ ফিরাইয়! তাড়াভাড়ি সে বাহির হইয়। গেল।' মন ধখন অভিমানে ভরিয়। থাকে, তখন একটুতেই সে ব্যথ! পায়।

সে দিন কিরণের পানের নুখ্যাতি গুনিবার পর কিরণের সম্বন্ধে অনেক কথাই তাহার জান! হইয়! গিয়াছে। দে কেমন দেখিতে, কেমন মিষ্ট; স্বভাব, কত ছেলে-মানুষী ধরণ, গল্প করিবার কেমন সুন্দর পদ্ধতি, কত: বিষয় তাহার জানা, দেশের প্রতি কেমন জলস্ত অন্থরাগ, দেশবাসীর ছুঃখে কে গভীর সহান্ৃতি তাহার প্রতি কথার ফুটিয়। ওঠে, ইংরাজী লেখাপড়া জান। থাকায় তাহার সঙ্গে কথ! কহিয়া কত আনন্দ পাওয়৷ যায় ইত্যাদি অনেক . কথাই সে গুনিয়াছে। : এবং প্রতি রাত্রেই সেদিনের বৈকালেত্ বন্ধু সম্মিলমের সকল কথাই তাহাঁকে শুনিতে হয়। শুনায় কোন

১৮০২৮ প্রত্যাবর্তন

আছে কি না, বক্তার মনে সে প্রন্ন আদৌ না৷ উঠায় জলদ আপনার মনেই বলিয়। যা, উৎসাহ ন| পাইয়া কোন এক সময় হঠাৎ থামিয়া দে অনুভব করে, সুনীতি ঘুমাইয়! পড়িযছে ] :

্বামীকে খাবারের থালা ধরির! দিয়া সুনীতি রান্নাঘরে গিরাছিল,

. ফিরিয়া ঘোর বিশ্বয়ের সহিত কহিল, “এ কি হল? উঠে পড়লে

যে? আমি সরপুরি়া কান! উড়ে নিচ্ছিনুম,--বলে গেলুঘ, | এলে উঠো নাঁ_”

জলদ গামছায় হাত মুছিয়! কহিল, *ভীড়ার যখন তোমার ক্ষু্র তখন বিপুল দ্রবা-সন্তার ঢোকাতে চাইলেই বা ঢুকৃবে কেন তা? কম-জম করে করলে আর আপশোষ কর্তে হোত না।”

সুনীতি বাগিয়াছিল, স্বামীর ব্ুসিকতান্ন রাগিয়াই কহিল, *ভীড়ার ছোট কি বড়, সে খবর ভীড়ারের চেয়ে ভীড়ারীরই জান! আছে বেশী। সত্যি, তুমি দু খান। সরপুরিয়। খেতে পার্তে ন৷ ওর উপর? তাও সিঙ্গেড়! "কখান! ফেলে রেখেচ, দেখচি। ক্ষিদের অভাব নয়, অভাব তোমার সমগ্নের। কিন্তু যাও দেখি তুমি, কেমন আজ বেড়াতে যাবে?” বলিয়! সে হাতের খাবার স্বামীর পাতের কাছে নামাইয়! রাখিয়া! স্থির দৃষ্টিতে চাহিয়া বৃহিল

জলদের আজ সত্যই একটু তাড়া ছিল। ক্ষিতি, ফতী, বুলু, বি কিরণ কলে মিলিয়! আজ তাহাকে তাহাদের সমুদ্র দেখাইয়৷ আনিবার জন্ঠ অনুরোধ করিয়াছে। অমূল্য কলিকাতায় গিয়াছে মহেন্্রবাবুও অল্পদিনের জন্য জর্নপাইগুড়িতে বদলি হইয়াছেন-_বাড়ীতে অভিভাবক অভাব, তা'ই ইহাদের দেখিতে যাইবার সখ আর মিটিতেছিল ন1। সেদিন ষতীর মাথার জলদ বাবুর কথ! উদয় হওয়ায় সে তার মার মত লইয়া! দিন/ন্থির করিয়া রাখিয়াছে। এতক্ষণে তাহারা হত প্রস্তত হইয়। পঞ্

একবিংশ পরিচ্ছেদ ১২৯

চাহিয়। বসির আছে! জলদের বিলথ্ষে কিরণ ন! জানি কতই ব্যাকুল হইতেছে।. সময় স্থুনীতি এমন অন্তায় জেদ ধরিয়া তাহাকে বিরক্ত করিয়া তুলিল! তবু স্বভাবসিদ্ধ হাসি-সুখেই সে বলিল, “সব যদি জানো, তবে রাগই বা কর কেন? দাও দেখি এখন শালখানা আজ হয়ত ফিরতে একটু রাতও হতে পারে |” «

সুনীতি কোন কথা ন। বলিয়। চুপ করিয়! াড়াইয়! রহিল। " জলদ কহিল, “যেতে দাও, চটপট ! দেরী করে অনর্থক কষ্ট দিছে কি লাভ?”

শ্যাও” বনি জুনীতি ধর ছাড়িয়া বাহির হইয়৷ গেল। জলদ ডাকিয়' কহিল, “শালখান। দিলে না? ওগে। শুন্চো, দিয়ে যাও। পরে রাগ করে তখন

পাশের ঘর ইহতে সুনীতি কহিল, “যারা এত দিন দিত, তাদের বল। আমার এখন মময় নেই।”

কথাটা যে সত্য নয় এবং অভিমানের, জলদ তাহ। বুঝিল। . কিন্তু জইয়। সাধাসাধি করিবার সময় তাহার ছিল না, সে সখও নাই। স্নীতির কিন্তু বড় উল্টা বুদ্ধি! মানুষ কিসে যে কি করে, তা'র বদি এতটুকু অর্থ থাকে! রজ্ছুতে সর্প-ত্রমের স্তায় কিরণকে সে তাহার প্রতিবন্ধী ঠাওরাই- য়াছে! ছি এ-সব কি! এমন অন্তায় চিন্তা মনে আমিতে দেওয়াও উচিত নয়! স্থুনীতির সন্দেহে সে ব্যথিত হইলেও এমন জজ্জাকর ভ্রম ভাঙ্গাইবার চেষ্ট। কর! যে তাহার উচিত ছিল, সে কথ! কিন্তু মনে হইল না। তুমি যদি পছন্দ ন। কর, নাই ৰ! গেলাম দেখানে_কেন অনর্থক সখ পাও.] এমনই কোন সান্বনার কথা বলিলে যের্ধানে সব অশাস্তি মিয়া, যাইতে পারিত, সেখানে সে কেরন ন্নীতির এ-সব চিন্তা! অন্তায় বলিগৃই 'মিজের দায়িত্ব ঝাড়িয়া ফেলিল। নিজের দিকে কোন দ্র্কই

১৩০ প্রত্যাবর্তন

ব্াখিল না! সথনীতির অপছন্দ কর! ছাড়া সে দি এখন মাধ! খু'ড়িয বুক্তগ্গ। বহায়, তবুও যে কিরণের দেখ! পাইবার লোভ সে ছাড়িতে পারিবে না--সে কথ! তাহার মনেও হইল না।

হুনীতি কিন্তু ইহার ঠিক উল্টা! পথ ধরিয়াই চবিতেছিল। তাঁহার মনে হইতেছিল, বাচিয়। থাকার তাহার আর কিছুমাত্র প্রয়োজন নাই! শ্বামীর প্রেম নিশ্চয়ই সে হারাইয়াছে। সেখানে তাহার জন্য আর কোন সাত্বনাই বর্তমান নাই। এখন স্বামীর কোন বিশেষ ন্নেহ-প্রকাশে বা আদরে সে আর আনন্দ পায়ই না, বরং মনে করে, সব কৃত্রিম ! সব তৃয়।! ঘুষ! ইহার অর্থ নাই, আছে শুধু শব্খ! প্রাণ নাই, আছে দেহ! কি ছুর্ভাগ্যের ভোগ! মৃত প্রেমের শ্মশানে দাঁড়াইয়া তাহার! স্বামী-স্ত্রী অভিন্ন হৃদয়ের অভিনয় করিতেছে! বায় ধিক্কারে তাহার চিত্ত বিদ্রোহী হইয়া! উঠিতে চাক__কিন্ধ হায়, চিরদিনের সংসার ভীরুতা সহিষ্তার মুখোষ পরিয়! বলে-_ছি! কিসের প্রমাণে, কোন্‌ দলিলের বলে স্বামীকে তুমি এমন অপবাদ দিতে সাহস কর ? তা*ই মুখে হাসি মাধিয়। বুকে বিছা! পুধিয়! তাহাকে সংসারের কাছে বথা-পুর্ব্ভাবেই চলিতে হইতেছিল। বাত্রে স্বামী যে দিন তাহার প্রতীক্ষায় জাগির়! থাকিতেন, মনে মনে সে বিরক্ত হইত, এখনই বাড়ীর কত কথাই তাহাকে শুনিতে হইবে। ঘুমাইয়! পড়িলে অভিমানে মন ভরিয়া উঠিত,-_-এখন আর আধ ঘণ্টাও জাগির1 থাকিতে পারেন না! এখন সে এমনই অনাবশ্তক হইয়াছে! নিঃশবে মশারি ফেলিয়া সে শুইয়| পড়িত। সে রাত্রে চোখের জলে কেন যে বালিশ অঞ্চল ভিজিত, তাহার কোন সহৃত্তর সে দিতে পারিত না $ জাগিয়াই রাত কাটিয়া! বাইত। প্রভাতে স্বামীর আনন্দোৎফু্ন মুখের পানে চাহিয়৷ মনে হইত, সার! রাত্রি ধরিয়। সে বুঝি গ্রকাও একটু] ছুশ্বপ্নের মধোই ডুবির! ডি। দিনের আলোর পাখীর গানে ছেলেদের বিচিত্র কোলাহলে. ভাব-

একবিংশ পরিচ্ছেদ ১৩১

সাজা হইতে ফিরিয়া! আসিয়া মনে হইত, বুঝি, কোথাও কিছু অঘটন ঘটে লাই! কিন্ত বৈকালে স্বামী বাহির হইয়! গেলেই তাহার মনে হইত, পৃথি- ৰীর শেষ পর্য্যন্ত সবটাই ফীঁকি। ইহার কোথাও কিছু সত্য নাই। এবং সেই সঙ্গে তাহার বাচিয়৷ থাকা! একাস্তই লজ্জাঙ্কর ! জলদও এই দোটা- নার মধ্যে পড়িয়া মনের সহিত লুকাচ্রি থেলিতেছিল। সে ভাবিও তাহার বন্ধুদের কথা-_সে যখন স্ত্রীর কাছে অকপটে সবই জানাইয়াছে, তখন স্ত্রীর পক্ষ হইতে তাহাকে দোষ দিবার কিছুই নাই ! আর কিরণ বখন তাহার সহিত বন্ধুত্ব বাধিয়! তাহাকে সম্মানিত করিয়াছে, তখন তাহার বিশ্বাসের মর্যাদা রাঁিয়। চলিতে সে বাধ্য শরীর মন রাখিবার জন্ত তহাকে ব্যথা! দেওয়া তাহারও কিছু কর্তব্য নয়। দেবতার 'আশীর্বাদী নিন্মীল। 'মাথায় রাখিবাঁর জিনিষ--তাহা মাটিতে ফেলিয়। দিবার নয !

আফাধণপ্রনকালয়া 1 উর, এল বা টি ১, টো? ২. 2৯৬,

দ্বাবিংশ পরিচ্ছেদ বিষের ক্রিয়া

জলদ কিরণবালার দিনগুলি এক রঙীন নেশার মধ্য দিয়! বেশ 'আননোই কাটিতেছিল। এই নেশার ঝৌকে তাহার! যে পরুষ্পরের কতখানি কাছে আসিয়া! পৌছিতেছে, তাহার খবর লইতে ছুই পক্ষে-ই কোন সন্দেহ উঠে নাই। বাহিরের লোক, বাহার! নেশার কাজল চোখে পরে নাই, তাহার। কি-ভাবে যে তাহাদের বন্ধুত্বকে গ্রহণ করিতেছে, সে সংশয়ও তাহাদের মনে জাগে নাই মহেন্দ্রবাবু বদলি হুইয়। জলপাই- গুড়িতে গিয়াছেন। ক্ষিতি যতী এবার ম্যাট পরীক্ষা দিবে। তা+ই বাসা. রাখিয়। তিনি শুধু একজন চাকর. ব্রাহ্মণ-ঠাকুরকে সঙ্গে লইয়! গিয়াছেন। এখানকার বাসার জন্ত আর একজন ব্রাহ্মণ খু'জির। লইবার কথা ছিল, কিন্তু বাড়ীর লোকের অনাগ্রহে প্রায় তিন মাসেও তাহার খোঁজ হয় নাই। ক্ষিতি বলিত, বেশ খাইতেছি। কি হইবে মিথ্যা লোক খু'জিয়। ? বতী মুখে স্পষ্ট কিছু বলে না, কাজেও কিছু করে না। অমূজ্যের পরীক্ষ! আস, তা"ই সে এ-সব চিন্তার বাহিরে গিয়! পড়িদাছে। জলদ অমূলোর উদ্দেশে নিয়মিতই তাহাদের বাটা আমিত, এবং অধিকাংশ দিনই তাহার অভাে কিরণের হাতের তৈয়ারী চা খাইয়া, তাহার সহিত গর করি সন্ধ্যার অনেক পরে যে দিন যখন মনে পড়িত, সেদিন তখনই বাহির হইয়া যাইত। বিদ্বায়-কালে কিরণ প্রত্যহই বলিত, “কাল্‌ আনবেন ত?* জলদ হাসিয়া বলিত, "ইচ্ছা রইল। দেখি ।* অবহ ইচ্ছা-পালনে তাহাকে কোন দিনই বীতস্পৃহ দেখ!,বাইত ন|। ' ঠিক্‌

দ্বাবিংশ পরিচ্ছেদ ১৩৩

সময়েই সে হাঁজির হইত কিরণ উপন্তাসের ভক্ত সে জলদের কাছে একদিন বাঙ্গল! বই কিছু আছে কি না খবর লইয়াছিল। জলদের বাঞ্জল! উপন্তাসের প্রতি কোন আগ্রহ না থাকায় পর্যযস্ত সে তাহার সংবাদ রাখাও গ্রয়োজন মনে করে নাই। পরদিন জানাইব বলিয়া! বাড়ী আসিয়া সে সুনীতিকে জিজ্ঞাসা করিল, *বাঙ্গল। নবেল-টবেল আছে কিছু? দাও হ-একখানা-_পড়ে দেখা যাবে ।” কিরণ চাহিয়াছে বগিলে সোজা! হইত, কিন্তু তাহা সে বলিল না) বলিল, নিজে পড়িবে।

সুনীতি আশ্চর্য্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, "তুমি বাঙ্গলা নবেল পড়বে £”

জলদ হাসিয়। কহিল, “দোষ কি ! অমন অবাক্‌ হয়ে গেলে যে? অন্তায় হবে কি কিছু, পড়িই যদি ?”

সুনীতি মুখ ফিরাইয়! উদ্দাসীনভাবে কহিল, *খু'জে দেখব।”

জলদের মনে হইল, অন্তায় কিছু আছে বটে ! মনে পড়িল, বছর ছুই আগে একদিন কি একখানা বাঙ্গল।৷ উপন্তাস লইয়া সুনীতি জলদকে পড়িবার জন্ত অনেক লাধ্য-সাধন! করিয়াছিল, কিন্ত জলদ ব্বভাব-বশে সে অনুরোধ রািয়! উঠিতে পারে নাই পড়িবে বলিয়। বইখানি সে লইয়। ছিল সত্য, কিন্তু তার পর দেখানি ষে কেমন করিয়া হস্তচ্যুত হইয়া কপূরের মত উবিয়া গেল, 'সে কথ! দে কিছুতেই মনে করিতে পারিল না। মাস ছুই পরে একদিন জেরায় সে বইখানি পড়েই নাই, উপরন্ধ হারাইয়াছে--এ-কথ স্বীকার করিলে সুনীতি ঘোর-অতিমানে বলিগ্নাছিল, জন্মেও সে আর কখনো! কোন বই তাহাকে পড়িতে বলিবে না। জলদও তাহাকে কাছে টানিয়৷ আদরে-সোহাগে আচ্ছন্ন কন্দিয়। বলিয়াছিল, ভালই “হুইল, কাজ নাই তাহার বই পড়িয়া ! সে বইয়ের চেয়ে বৌকেই অধিক , ভালবাদে। অকুত্রিম কবিত্ব বখন তাহার করতল-গত, তখন কৃত্রিমতার প্রয়োজনই বাকি? আজ এই মূহর্ভে সেই কথাটি ছ'জনেরই মনন পড়িয়া

১৩৪ প্রত্যাবর্তন

গেল। জলদ একটু লঙ্জিতভাবে হাসিয়া কহিল, “অ:, পুরোনো! রাগ শোধ নাও, শোধ নাও-_ছেড়ে কথ! কইবে কেন?” সে মুখের তেমন হাসিতে ব্লাগ করিয়! থাক সুনীতির সাধ্য নয়! তাই অনেক সময় রাঁগ করিতে গিয়াও তাহার রাগ কর! হয় না-_অসাক্ষাতে স্বামীর বিরুদ্ধে বে সব ধুক্তি-তর্কগুলাকে শানাইয়! সে যথাকালে প্রয়োগ করিবে বলিয়! স্থির করিয়া! রাখে, কার্যাকালে তাহার একটাও খাটাইতে পারে না। স্বামীর সদা-প্রফুল মুখের পানে চাহিয়৷ মনের তাপ কখন জুড়াইয়া যার। মনে হয়, এমন মুখ যাহার, সেকি কখনো৷ কোন ক্র করিতে পারে? আর পারেও বদি, তবে সে কথা কি কখনে! বল যায় ? ছি! ঘু্যমান রথচক্রে নশপেিতধুলিকণা উরদোৎকষিপ্ত হইলে আবার ঘুলিকেই লে আশ্রয় করিতে চায়, তা”র আর অন্ত আশ্রয় নাই ?

ইহার পর স্ত্রীর সাহাষ্য না লইয়া! সে পুস্তকের দোকানের শরণ লইল এবং মধ্যে মধ্যে কাছারির ঠিকানায় বই আনাই! নিজের অফিস-বাক্সে ভুলিয়। বাখির়! থাকালে কিরণবালার কর-কমলে পৌঁছাইক্সা দিতে লাগিল। যেখানে গোপনতা, সেখানেই পাপ। তবে কি জলদের মনে পাপ প্রবেশ করিয়াছে? সে যদি বইগুলি নিজের বাসার ঠিকানান্স আনাইস্কা স্ত্রীকে জানাইয়৷ কিরণবালাকে পড়িতে দিত, তবে কোন. সংশয়ের কথাই উঠিত না। কিন্তু স্থুনীতির সে দিনকার সেই মুখ ও. চোখের সংশয়াচ্ছনন দৃষ্টি তাহার মনকে বাকা পথেই চলিতে উপদেশ দিল। মনে হইল, বুড়ো! বয়সে সন্দেহে পড়িয়া! বৃথা! নিজে ছঃখ পাইবে, অন্যকেও. দিবে! সে তাহার স্দেহ লইয়াই থাক্‌। আমি সত্যই কোন অপরাধ করি নাই! মেয়েদের মন ভারী সংকীর্ণ! তার! কাকের মত কেবল 'আবর্জনাই খুঁজিয়। বেড়ায় জলদের মনে হইহা, কিরণ শ্রেণীর বাহিরে+ দে কই কথা-প্রসঙ্গেও কখনে। কোন ক্রটি আবিষ্কার করে:

দ্বাবিংশ পরিচ্ছেদ | ১৩৫৭ না। অবশ্ত সুনীতি সম্বন্ধে তাহাদের আলোচনাও বিশেষ কিছু হয় না। তা” হইলেও দোষ খু'জিব ভাবিলে দোষ পাইবার পক্ষে আর বাধা কি!

সে দিন কিরণের খুড়িমার ব্রত উদ্যাপনের নিমন্ত্রণ খাইন্া আসিয়া সুনীতি জলদকে গুনাইয়। অনায়াসে বলিল, “কিরণ এত বড় ধেড়ে মেয়ে,-তা৷ ওর বিয়ে দেয় ন! কেন?” জলদ হাসিয়। বলিয়াছিল, “অমন মেয়ে বাকে-তাকে প্রাণ ধরে দিতে পারে না। যখন ওর উপযুক্ত বর পাবে, তখন নিশ্চয়ই দেবে।*. তাহাতে সুনীতি উত্তর দিয়াছিল, ৭যে ব্কম পুরুষ-থেঁধ। মেয়ে, নিজেই বর বেছে নেবে, বাপ-মাকে কষ্ট পেতে হবে না” শুনিলে একবার হিংসার কথা! জলদ এ-কথ! অবশ্য সহা করিতে পারে নাই। সে বিরক্ত হইয়া বলিয়াছিল, “যার যেমন মন, সবাইকে সে তেমনি দেখে ।” সুনীতি ইহার কোন জবাব দেয় নাই। কিন্তু সেদিন হইতেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একটা মনোমালিন্ত ঘটিয়! গিয়াছিল। জলদ আর ইচ্ছ! করিয়! কিরণের কথা স্ত্রীর কাছে নিজ হইতে কিছু তুলিত না। সেও কোন কথ৷ জিজ্ঞাসা করিত না। তবু ছুইজনে একত্র হইলেই সেই এক-জনের কথাই ছুইজনেরই মনে পড়িত।. স্থনীতি ভাবিত- স্বামী এখন কিরণের ধ্যানেই মগ্ন রহিয়াছেন। জলদ তাবিত, সুনীতি যদি কিরণের মত উদার-চিত্ত হইতে পারিত ! জলদ কিরণকে একটু স্নেহ করে, তা+ই সুনীতি ইচ্ছা করিয়াই তাহার সঙ্গ লইল না- বদন করিল না? করিলে বুঝিত, সে ভাল বাঁদিবার মত মেয়ে কি ন1! এতদিন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভিতরে ভিতরে বিচ্ছেদের হাওয়। বহিতে সুরু করিলেও বাহিরে একটা! স্বচ্ছতা ছিগ। ইহার পর ছুইজনের মাঝখানে একটা! অন্তরালের ব্যবধান রচিত হইল। জলদের মনে হইল, সুনীতি অকারণে অন্তায় তাহাকে সঙ্ছেহ করে। কিরুণের পহিত একটু গল্প করা, বা তাঁদের বাড়ী বেড়াইতে যাওয়া__ইহাতে তাহার ক্রোধের কারণ কিছুই

৩৬ | প্রত্যাবর্তন থাকিতে পারে না। মনকে এত ছোট কাযা বড় অন্যায়। সুনীতি দেখিতেছিল, স্বামী বাহিরে তাহার প্রতি পুনরার ব্যবহার অঙ্গন রাখিবার চেষ্টা করিলেও তাঁহার অন্তরে তাহার স্থান ক্রমেই যেন সংকীর্দ হইয়। আিতেছে। মানুষ ছু'নৌকায় পা দিয়! চলিতে পারে না-_-এক দিকে ঝৌক দিতে গেলে 'তৌল টাড়ির' অন্য দিকৃটা হান্ক। হইয়। উঠিস়। গড়ে যে নিপুণ দৃষ্টিতে সমস্ত মন দিয়! ইহারই গতি-লক্ষ্যে চাহিয়া থাকে, ফীকট। আগেই তাহার চোখে ধরা 'পড়ে। স্বামীগত-প্রাণ। হ্ুনীতির যে স্বামীর চিন্তা ছাড়! আর কোন চিন্তাই নাই! স্বামীর পরিপূর্ণ ভালবাসাই সে গাইয়াছিল। তা+ই স্বামীর স্বচ্ছ মনটিও সে দর্পণের স্তার দেখিতে পাইত। সেখানে গোপনতার এতটুকু আববুণও কোনদিন কোথাও ছিল না ত? কিন্তু এখন যে তাহা ঘটিয়াছে, সর্বাত্তঃকরণে সে তাহা অনুভব করিতেছিল। তাই এক নিবিড় ওদাসীন্তে সংসারের প্রতি তাহার মনও ক্রমে বিরস বহি

- “মুনীতির আর কিছুই ভালে! লাগে না। সংসারের কাজ-কর্মে সে মন নাই। বেশ-ভুষ! সে ছাড়িয়া! দিয়াছে। স্বামীর সেবা করে, কিন্ত তাহাতে পূর্বের সে আনন্দ-উন্মাদনা৷ আর নাই। সে যেন অবস্ত-কর্তব্য বলিয়াই করিয়। থাকে ছেলে ছুটিকে বুকে চাপিতে চোখে অনেক সময় ব্যথার অশ্রুই বরিক়া পড়ে ! - শাগুড়ীরও ফিরিয়। যাইবার সময় আমিল। ক্নীতি মনে করিল, সেও যদি এই সঙ্গে বিদায় চায়, তবে কেহই ভাহাকে আর ব্যাকুল হইয়! বাধ! দিবে না। হয়ত,_হয়ত উনি ইহাতে খুমীই হইবেন! পুর্বে এমম সুযোগ লইয়। মিছামিছি বাপের বাড়ী যাইবার ছুতা করিয়া কতদিন সে স্থামীর নিকট ব্যাকুল মিনতি আধার করিয়াছে। কিন্তু গা আর সেদিন নাই! এখন যে মিথ্যা করিয়াও মে কথা বলিতে সাহস হয় না! ক্ষি

. দ্বাবিংশ পরিচ্ছেদ ১৩৭

জানি, আবেদন যদি প্রার্থনীক্াত্রেই মঞ্জুর হইয়| যায়! স্ত্রীর প্রতি অন্রাগই না হয় পুরাতন হইয়। যায়। কত-শত রূপসী বিস্তাধরীদের স্বামী ষে সেওড়া-গাছের প্রেতিনীর মোহে মুগ্ধ হন্! কিন্তু ছেলের1--অমন থে. সুনুমণকোমল শিশু, উহাদের জন্তও আর কৈ তেমন ব্য হন না! কাছারি হইতে আনিয়া উহাদের দিকে ফিরিয়াও চাহেন না। পাছে সেখানে যাইতে বিলম্ব হইয়া! যায়--এই ভয়! অভিমানিনীর মান-ভঞ্জনেই তবে আনন্দের কালটুকু কাটিয়৷ যাইবে? আশ্চর্য্য হইয়৷ সুনীতি ভাবে-_ মানুষের মন এমনভাবে কেমন করিয়াই বা বদ্‌লাইয়। যায়? যাহা প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তনণীল, তাহার শক্তি কেন এমন দুর্জয়? ছেলের! তাহারই, তবে উহাদের ভাঙগবাসাও আর ভাল লাগে না? ছোট খধোকাটাই হইয়াছে জন্ম-ছুঃখী ! বাপের আদ্বর কখনই তেমন করিয়া! পাইল ন।? আর উহার আবির্ভাবেই তাছার মায়ের ছঃখের হুচনা। এমন করিয়া 'দীর্ঘকালের জন্য স্বামীকে ছাড়িয়! না৷ থাকিলে হয়ত সে মায়াবিনীর মোহিনী- মায়ার স্বামীও এমন করিয়া বাধ! পড়িতেন না। বাধন শক্ত হইয়া গেলে আর কি তা কখনো! ছেঁড়া যায়? গুধু উহারই জন্য তাহার এবারকার নারী- জন্মটাই বৃথ৷ হইয়! গেল! কখনে। ভাবে, কিরণের বিবাহ হইলে সে যদি উহার সানিধ্য ছাড়িয়া চলিয়! যায়, তাহ! হইলেই উহার চোখের নেশ। কাটিক্। যাইবে__সে দিকেই ৰা আর কিসের আশ! ! মন ছাড়িয়! তআর সে চলিয়া যাইবে না। আর ভূতুড়ে বাড়ীতে বাম করার যে আনন্দ, সে সে এখনই প্রতিপলে উপভোগ করিতেছে! জন্য সে গেল ঝ৷ রহিল তাহাতে আর আসিয়া গেল কি? তবে এইটুকু ভাল যে, লোকে কিছু ববিতে গাইৰে না। উনি যা'ই করুন্‌, তবু উহার বিরুদ্ধে যে কেহ কিছু বলে, এও আর সহা যার না, অথচ এই কথাটিই যে আজকাল লোকের 'ুখে-সুখে ?. সেদিন মুন্সেফ. বাবুর মেয়ে অমল] মুখের উপর গ্বচ্ছন্দেই

১৩৮ প্রত্যাবর্তন

বলিয়। বঙসিল, " ণসিহর-কৌটার স্ুণীর মত সতীনকে স্বামী দিয়ে তাদের, ঘর সাজাতে যাবি না কি লো--বকুরাণী?” পোড়া কপাল তাহার! সে' যাইবে আবার সতীনের ঘর সাজাইতে! ভাগ্যে সে সময শাশুড়ী আসিয়! পড়িলেন, নহিলে কে জানে কি কটু উত্তরই সে দিয়! বদিত! এ-সব কথা তবে বাহিরেও উঠিয়াছে ? কথ। স্বামীকে বল! তাহার অবপ্ত উচিতও-_ কিন্তু স্ুনীতির মনের হূর্বলত বলিল, বলিতে গিয়। সে যদি ঘুমন্ত বাঘকে চেতাইয়! তোলে! জলদ যদি এট! নিজের স্বপক্ষেই ধরিয়। লয়__আক্গকাল- কার অনেকগুলি ছোট-বড় উপন্তাসে-গরেও মে এমনি সব ভালবাসার, দবতীক্ন বিবাহের বিবরণ পড়িয়াছে। উভয় পক্ষের কর্তৃপক্ষের মতামত এখানে নায়ক-নায়িকারা মানত করে না। বিবাহ হইয়া গেলে কিছুদিন মন- কষাকধির পর ঘরের ছেলে আবার ঘরেরটির হইয়াই ফিরিয়া! আসে তাহার আদরের বধূই সংলারের পাটরাণী হইয়া! বসে। সতীন ভাগ্ডারিণী হইয়া চাকর-দাসীর দর্দারী করে, এবং স্বামী সতীনের মনোরপ্রনার্থ নিজের গায়ের গহন! খুলিয়। সতীনকে পরায়, সতীনের সহিত গলাগলি ভাব করিয়৷ সংসারের স্ুখ-শাস্তি বজায় রাখে মাগো! এ-লব লেখাও- কি আবার কখনও লিখিতে আছে! সব গল্প পড়িয়াই না ছেলেদের মনে অমনি সব নৃতন প্রেমের সখ জন্মায়! তারপর ঠেল! গিয়া যেখানে, পৌছায়, সে-ই বোঝে ! ঠাকুর-ঝি ঠিকৃই বলিয়াছে, লেখকরা সব পুরুষ কি না, তাই তাহাদের মনের ইচ্ছা! কলমের মুখে প্রকাশ পার! সতীনের. জালা সহিতে হইলে আর অমন উদারতার হাওয়। বহিত না! স্ুনীতির মনে পড়িল, নারীর লেখায় ছ-একখানি এই জাতীয় উপন্ভাস' সে যেন পড়িয়াছে। গোড়ায় সতীনককে দিয় বাদী-গিরি যথেষ্ট করাইয়া! লইলেও লেখিকা৷ তাহার শেষ দিক্টায় রক্ষার চেষ্টাও . করিয়াছেন স্ুনীতির মনে হইল, সে যদি লিখিতে পারিত, তবে বিবাহিতের এই সক

দ্বাবিংশ পরিচ্ছেদ ১৩৯

অনার অনুরাগের বিরুদ্ধে খুব একট তীব্র প্রবন্ধ লিখিত। কিন্তু ভগবান তাহাকে সে শক্তি দেন নাই! মন-গ্রাণ সব দিয়া শুধু সে ভালবাসিতেই শিথ্য়াছে। আঘাতের প্রতিকার-চেষ্টার সাধ্যও তাহার ছিল না-সে এমনি অক্ষম, এমনি নিরুপায়! , স্বামীর প্রতি অভিমানের বিরাগে সে অনেক সময় কাজে-কণ্ে নিজেকে ভুলাইয়া রাখিবার চেষ্টা! করিত। তবু হতাশার দীর্ঘশ্বাস কখন বাহির হইয়া আদিত, তাহা সে নিজেই জানিতে পারিত না। এক-এক সময় কিরণের উপর বড় রাগ হইত। পরের জ্নিষে কি অন্ত তাহার লোভ ! যাহাকে ছুই দিন পরে অস্ঠের হইতে হইবে, দে থে এক দিনের অদর্শন সহিতে পারে না, এও কম মুস্কিল নয়! বন্ধু কি চাকৃরি ছাড়িয়া তাহার চোখের তৃষ মিটাইতে সঙ্গে যাইতে পারিবেন? তাক রয়.সয়, ততটুকুই থাক্‌ না কেন !--সর্বগ্রাসী কুধ। মিটাইবার শক্তি যাার নাই, তাহার কাছে নাই বা রহিল এতখানি দাবী!

প্রথম প্রথম জলদ যখন প্রতিদিনের সান্ধা ইতিহাস স্ুনীতির কাছ্ছে বপন করিত, তখন তাহাদের কোন্‌ দিন কোন্‌ বিষয়ে আলোচন! হইয়াছিল, দে খবর হইতে কিরণ কি-রফম চুল বাধিয়াছিল, কি রঙের সাড়ী কোন্‌ ধীচে পরিয়াছিল, কি কথা কেমন স্থুরে বলিয়াছিল, সকল খবর$ সে গাইত। এ-তরফ হইতে উৎসাহের অভাবে অথব! দু'একটা! খোঁচা খাইয়। অর্ধ-চৈতন্ত-লাতে সে এখন স্ত্রীর অবশ্ত-জ্ঞাতব্য সকল মনোমত ঘটনার বিশ্লেষণ বড় করিত না। ভত্রীও শুনিবার জন্ত মুখে কোন উৎসাহ দেখাইত না। তাই অন্ত কথ! তুলিয়া যাওয়ায় আপাত; তাহাদের কথ" বলাই প্রায় বন্ধ হইয়া আসিয়াছে!

মানুষের দ্বভাব, যতক্ষণ সে কোন বস্ত পান, ততক্ষণ তাহার প্রয়োজন নাই বলিয়া! মনে করে, কিন্তু গাওয়! বন্ধ হইলেই পাইবার ইচ্ছা! জন্মায়?

১৪৪ .. প্রত্যাবর্তন

সুনীতি বখন স্বামীর মুখে কিরণের প্রত্যেক খুঁটিনাটি খবর পাইত, তখন 'ঈর্ষায় জলিয়া ভাবিত, উনি যেমন বিশবভৃবনে শ্তাম-রূপ দেখিতেছেন, মনে করেন, অমিও শুর কিরণের কথ! গুনিবার জন্ত তেমনই পাগল হইয়াছি--: কিন্ত এখন সে সব কথার আলোচনা বন্ধ হওয়ায় তাহার পত্রীত্বে আঘাত 'জাগিত__সে মনে করিত, স্বামী আমায় এমনি হীন-চিত্ত মনে করেন যে, সাহস করিয়! তার কথ। আর বলিতেও পারেন না!. পাছে আমি ছিংস! করি, এই ভঙ়ে! কেন, সে কি আমার সতীন ? আমার অধিকারে কেহ হাত দিতে পারিবে না করুন্‌ না উহার ছেলেখেল! !

মন কিন্তু যুক্তি-তর্ক মানিয়! বশে চলিতে চাহিত না। দুইজনের মনের উপর আর এক জনের আড়াল যতই নীরবতার মধ্য দিয়া চাপিয়। বসিতেছিল, সুনীতির তত মনে হইতে ছিল, সে ষেন স্বামীর মনের সাড়াও সেই পরিমাণে ক্রমে হারাইয়া ফেলিতেছে। প্রেমহীন স্বামীর সহিত দ্বাম্পত্য জীবন বহন কর তাহার ধেন কঠিন দায়িত্ব বলিয়াই ক্রমে মনে হইতেছিল। অধচ ক্ষুধিত ব্যক্তি নিজে থাইতে না পাইলেও যেমন ভোক্তার পাশে বমিয়াও আনন্দ লাভ করে, তেমনি এক অতৃপ্ত সুখের মধ্যে থাকিয়াও সে স্বামীর সান্নিধ্য ছাড়িয্না আর কোথাও চলিয়। যাইতেও পা্রিতেছিল না। ০5

ব্রয়োবিংশ পরিচ্ছেদ ননদ-ভাজ

*বৌ, একটা কথ৷ বল্ৰি ভাই? সত্যি কিস্থ

শকি ভাই ঠাকুরঝি, কি কথ।? বল্‌ না?”

স্থনীতি খাটের বিছানার চাদর তুলিয়া! ঝাড়িয়! পুনরায় তাহ! বিছাইতেছিল। শৈলাঙ্গিনী মেঝেয় বসিয়া! কুপারি কুচাইতেছিল। জলদ জল খাইয়া বেড়াইতে বাছির হইয়াছে, সন্ধ্যার পরে ফিরিবে। মা! ওদিকে রান্নাঘরের রোয়াকে বলিয়া চাকরের কাছে বাজারের হিসাব লইতেছেন। ছোট থোকা দোলায় ঘুমাইতেছে। বড় খোকা একট! লক্বা কাপড়ের পাড় নিজের ছুই বগলের নীচে দিয়! চালাইয়৷ ঘোড়, হইয়! ছোকরা চাকর রামগোলামের হাতে দড়ি তুলির! দিয়া ছুটাছুটি খেলিতে- ছিল। শৈল বলিল, *তুই অমন শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছিস কেন, বল্‌ দেখি? শরীরে তকোন রোগ দেখূচি না, তবে দশা কেন অমন হচ্ছে দিন দিন ?”

সুনীতি পাতা চাদরখানি হাত দিয়া জোরে জোরে ঝাড়িয়া কহিল, “খেতে দিস্নে, বোধ হয়। নৈলে শরীরে যখন নিত তখন স্বধু-স্ধু রোগ। হতেই ব! গেলুম কেন 1”

প্দূর পোড়ারমুখী-মা শুন্লে ভাব্বে, সভাইবা। আচ্ছা, খেতেই না হয় দিই ন|। ধোপা-নাপিতও কি আমি বন্ধ করে দিয়েচি? ছু ঘণ্ট। ধরে চুল বাঁধা, তিন ঘণ্ট! সাবান মাখা, সেগুলোও কি আমার হুকুমে বন্ধ বুঝি ?”

১৪২ প্রত্যাবর্তন

“ভেবে দেখা গেল, অনর্থক বাজে খরচে সময় বা পয়সা! ন্ট কন্ধ্বার “দন আর নেই। তাই ওগুলে৷ ছেড়ে দেওয়! গেছে" বলিয়! সুনীতি ননদের দিকে পিছন করিয়া বিছানায় বালিশ সাজাইতে লাগিল। সমবেদ- নার এতটুকু স্পর্শেই চোখে তাহার জল ভরিয়। আসিয়াছিল। ঠাকুরঝি 'ভালবাসে, তাই সৰ তার চোখে পড়ে। কিন্তু স্বামীর সব আর চোখেও পড়ে না! আগে একদিন ময়লা কাপড় পরিলে কত হাঙ্গামাই ন। করিতেন! অতীত নুথের স্তি এখন অন্তরকে মন্থন করিয়৷ কেবল বেদনাহ জাগায়--আনন্দ দিতে পারে ন1।

শৈল বলিল, “আর ঘর-ভরা প্রাণখোল! সে হামি-_যাকে শাদন দিয়ে কখনো বাধতে পারা! যায়নি?”

স্থনীতি কথা কহিল না। কথা কহিবে কি? তাহার চোখের জল যে এবার চোখ ছাপাইয়! গাল বহিয়া৷ ঝরিতে সুরু করিয়াছিল! এই অতি- বাধ্য পান্‌শে চোখ ছুইটাই হইয়াছে তাহার নকল অসন্ত্রমের মূল। ইহার! স্ান-কাল কিছুই বুঝিতে চায় না; যেখানে-সেখানে আত্ম-প্রকাশ করিয়া বসে। শৈল নীরবে উঠিয়া আস্ত! স্থনীতির মুখখানা ধরিয়া ফিরাইল। তা"রু পর গভীর স্নেহে সেই মুখখান! বুকে চাপিয়৷ মৃদুম্বরে কহিল, “এ কি ভোর নখের কার! নয় বৌ? সাধ করে কেন দুঃখ পাস্‌ ভাই ?”

ননদের বুকের ভিতর মুখ গু'জিয়! সুনীতি যেন তাহার প্রাণের কান্না আর ধরিয়৷ রাখিতে পারিতেছিল না। : বুকের দাকণ বোঝ! নামাইবার জন্য সে ধেএমনি একটা! সহান্ভৃতির আশ্রয়ই খুঁজিতেছিল। এত ছুঃখ কি আর একা একা! চাপিয়! গুমরিয়া সহ! যায়? তৃষ্ণা কঠ শুকাইয়৷ উঠিয়াছে। চোখের জল যে দাহ হুইয়! বাছির হইতে চাঁহিতেছে। ছঃখ ঘে আর মহিতে পার! যায় ন1।. প্রকাশ করারও নয়-_বিশেষতঃ নারী হইয়া নারীর কাছে নিজের সর্বস্বান্ত হওয়ার সংবাদ জানানো--এ লজ্জার

ভ্রয়োবিংশ পরিচ্ছেদ ১৪৩

“কি আর. লীম। আছে? তবু চিরদিনের বন্ধু এই ননন্দার নিকট মনের . ব্যথা প্রকাশ করিয়া আজ যেন মন তাহার অনেকখানি হাল্ক। হইয়াই গেল। বিয়ের কনেটি হইয়! যখন নব বধূ সে বাড়ীতে প্রথম আসিয়া-. ছিল, তখন হইতে ছু'এক বছরের বয়সে বড় এই ননদটিই ছিল তাহার . খেলার সাথী, কর্মের সঙ্গিনী! ভাব-আড়ির ছড়াছড়ির মধ্য দিয় ছু'জনেই ছু'জনকে ঝে্টন করিয়া বাঁড়িয়! উঠিয়াছিল। স্থানীর ভালবাসার দিনেও ইহার সাহায্য নহিলে তাহার চিঠি লেখা হইত না, স্বামীর ভালবাসার সব কথা ন। জানাইয়। তৃপ্তি হইত না। স্বামী কলিকাতায় পড়িতে গেলে ছুই দখীতে এক-বিছানায় গলাগলি করিয়া শুইয়া কত সখের কথায় রাত কাটাইয়। প্রভাতের সুচনা লজ্জার হাসি হাসিয়াছে ; গলে মাতিয়া কথন যেরাত কাটিয়৷ গিয়াছে, তাহা তাহার। জানিতেও পারে নাই! তারপর শৈলর বিবাহ হইল। সে শ্বগুর বাড়ী গেলে তাহার বিচ্ছেদ-ব্যথ! যেমন করিয়৷ সে অনুভব করিয়াছিল, এমন বোধ হয় আর কেহই করে নাই। শৈলও মন খুলিয়া! তাহার মনের মব কথ সথীর কাছে জানাইয়৷ স্থখী হুইত, শৈলের স্বামী অতয়প্রসাদ বলিতেন, “শৈল, তুমি আমার চেয়ে স্থুনীতিকেই বেশী ভালবাস।* শৈল হাসিত আর বলিত, “ওটা বে ছেলেবেলার বদ্‌ অভ্যাস ওটা এম্নি দস্তি যে ওকে ভাল না বাসিয়ে ছাড়েন তাইতো! তোমায় ভয়ে ভয়ে চোখে চোখে রাখি, পাছে আবাএ আমার দশায় পড়ে বাও! দেখ্চ না, কেমন ডাকিনী! দাদাকে কি-রকম ওঠুবোস করাচ্ছে!” এখন তাহার। ছেলে-পুলের মা। তাই পদবী- অনুসারে গন্ভীর হইয়াছে এখন আর কথায় কথার কলহ সন্ধি হয় না। তবু তা*দের মনের টান তেমনি অক্ষু্ন আছে। বরং সময়ের জালে প্রেমের দুধ মরিয়। গাঢ় হইয়াছে।

শৈলর) সমবেদনায় স্ুনীতির মনের ব্যথ! গলিয়। জল হইয়! ছুই চোগে

১৪৪ প্রত্যাবর্তন

ঝরিতে লাগিল। উত্তর দিবার তাহার আছেই ব! ক্ষি? শৈলও যেমন, পাগল! কোন মেয়ে কখনে! সাধ করিয়া এমন হঃখ নাকি আবার স্বেচ্ছায়. ভোগ করিতে চায়! তাহার কপাল মন্দ, তাই সে এত হুঃখ পাইতেছে। অনৃষ্টের সহিত আর কৌদল চলে না? ৃঁ

শৈল কিন্তু যুক্তি মানিতে চাহিল না। কহিল, “অদৃষ্টর সঙ্গে কলহ ন! চলতে পারে,--ম্বামীর দঙ্গে চলে, তাকেই কেন স্পষ্ট করে বল্‌ না, এ-সৰ খেয়ালের খেল। আমি পছন্দ করি না-_সব ছেড়ে দাও ।”

স্থুনীতির মুখ লজ্জাজড়িত হান্তে রঞ্জিত হইল। সে কহিল, “্হদি বলেন, অন্তায়টা৷ কি কর্ছি, দেখিয়ে দাও? তুমি পছন্দ না করলেও আমি করছি যে,-তখন মানট। থাকবে কোথায়?”

শৈল কহিল, *পোড়ারমুখী, মান নিয়ে কি ধুয়ে খাবি ? “ঘারে ঠাকুরে. করে হেলা, তারে রাখালে মারে ঢেলা'__ন। হয় অপমানই হলি! স্বামীর কাছে আবার মান-অপমান কিরে ? বলে দ্ভাথ্‌ আগে ।”

স্থনীতি কহিল, “মরণ! সব নোংরা/ কথা! কখনো! বল! যায়? সতিাই আমি তার মনের কথা জানি না। যদি বলেন, তাঁকে আমি বোনের মতন ভালবাসি, তোমার মন অন্ুদ্ধ, তাই তুমি সাদাকে কালে! দেখ্চ ?

“ইস্‌ লো! বোনের মত ভাল বাসেন! তাই একটা সন্ধ্যে বাড়ীতে থাকতে অত বে সাধ্লুম, তা সময় হলে! না! বলে, “শশ। থেয়ে যেমন জল্কে টান'! তেমনি ভায়ের বোনকে টান। অত পোষাকের ছটা, এসেন্সের ঘটা, চুল জীঁচুড়াবার কারদা, বোনের মন ভুলুতে দরকার হয় না, ভাই।”

"তোর আপৃশো হচ্ছে, ন। ভাই ঠাকুরঝি, তার জে না হয়ে তোর জন্তে হতে! ! না?”

ভ্রয়োবিংশ পরিচ্ছোদ | ১৪৫

শৈল বিদ্প: গায়ে মাখিল না, কহিল, “তাতে ক্ষতি কি হতো ভাই? আমিও ভায়ের রাজবেশ দেখে চোখ জুড়োতাম, তোর'ও বুকের হুড়-ুড়নি ঘটত না। যাক্‌--ও সব বাজে কথা-_ন! সত্যি, একদিন বারণ করেই দেখ্ন!, কি বলেন ?.

পকরেছিলেম। বল্লেন, সারাদিন থেটেখুটে এসে ছেলেদের কান! আর বাড়ীর গোলমাল ভাল লাগে না, একটু বেড়াতে বাই বন্ধু-বান্ধব- দের সঙ্গে একটু গল্প করি, এতে রাগ হয় তোমার 1”

*কিস্ত একটিমাত্র শাস্তি-মন্দির ছাড়া কি সহরে আর বেড়াবার জায়গ৷ নেই? বাড়ীতে একটি পাল ছেলে-মেয়ে-_নিজ্জনতার আবাস বটে! মহেন্দ্রবাবুর বড় মেয়ে হিরণ এসেচে। তারও গুটি তিন-চার ছেলে-মেয়ে দেখ্লাম। মেয়েটি কিন্তু ভাই, বেশ গেরস্তালী ধরণের, নভেলিয়ান। ভাব নেই এর। আজ নদীতে চান কন্তে গিয়ে দেখা হোল। একদিন আস্বে বলেচে। আচ্ছা বৌ, মেয়েটা কি দাদাকে সত্যিই ভালবেসেচে না কি?” শৈল নুনীতির পানে চাহিয়া একটু ক্ষোভের হাসি হাসিল।

স্থনীতি কহিল, *“নব-অন্ুরাগের কি কি লক্ষণ ভাই ঠাকুরবঝি, সে আমার চেয়ে তুমি আরও ভালই জান ! আমাদের বোন কবে সেই সত্য যুগে মান্ধাতার আমলে বিয়ে হয়েছিল, জ্ঞান হয়ে পর্য্যস্ত দেখচি থে আদিকাল থেকে এই চেনা মানুষটিকেই ভাল বাম্চি। এতে ন! ছিল পূর্বরাগ, ন! ছিল প্রেমের নেশ!। হৃদয়-সরোবরে প্রেমশতদল কখন যে. তার সহস্র দল মেলেছিল-__তার সাল-তারিখ্টিও জানা যায় নি। তোদের বরং দেখা-শোনার বিয়ে-্ঠাকুর-জামাই পছন্দ করে বিয়ে করেচেন, তোরও দেখে যাবার পর পুর্ববরাগের জবকাশ. মিলেছিল-_তুই বরং এসব তবে পাকা” রা

নও

১৪৬ প্রত্যাবর্তন

*ও হরি! তাই বুঝি এত গলদ? তোদের বিয়ে তাহলে বিয়েই নয়, বল্‌? দাদার বা হোক্‌ সাধ মিটুলো!। পূর্বরাগ, অনুরাগ, “সএব যমুনা- তীরঃ সএব মলয়ানিলঃ-_অন্রাগিণী রাধারাণীও পথ চেয়ে প্রতীক্ষায় থাকে কিন্তু তোর জন্মটা যে মিথ্যে হয়ে গেল বৌ, তার এখন কি প্রতিকার করা যার, বল্‌ দেখি--?” বলিয়! শৈল ছুষ্টামির হাসি হাসিল।

সুনীতি ননন্দার গাল টিপিমা! দিয় হাসিয়া কহিল, "আমি তরু-অকুর মা। আমার জন্ম আগেই সার্থক হয়ে গেছে।”

"বৌ, আমি এম্নি কথাই তোর মুখে শুন্তে চাইছিলাম সত্যিই ত! স্বামীর ভালবাসার বদি কিছু অভাবই পড়ে থাকে, তাতে কাতর হব কেন? পুরুষের কত কাজ,--কত রকম সঙ্গ? একভাবে তারা কি চিরকালই আমাদের মত জীবন' কাটাতে পারে ? কিন্তু আমর! যে মায়ের জাত! আমাদের প্রেম সঙ্কীর্ঘতার় বন্ধ রাখ্বার জিনিষ নয়। স্বামীর প্রেমের অংশ নিয়েই যে সন্তান-বাৎসল্য আমাদের বুকের ম্মুধায় জন্মেচে। 'এ প্রেমের মূল্য নেই, কাড়াকাড়ি নেই--বত পার বিলোও। দানে এর ক্ষয় নেই। এমন বিশ্ব-ভর। আনন্দ যখন আমাদের হাতে, তখন কল্পনার পিছনে কেন আর ছুটোছুটি! আমার মনে হয় স্বামীর ভালবাসার অভাব সকল নারীর মনেই অল্প-বিস্তর থাকে তবে কারে! বেশী, কারে! কম, এই ঝ। কেউ ভাবে_ তার প্রিয় ভালবাসে না, বা ভালবাসা, তা অপাত্রে ব্যয় করে। কেউ ভাবে, ভালবাসতে জানে না ! ফলে প্র একই অবস্থা অভাবের ভাব সবার মনেই জেগে থাকে কেউ খুলে বলে, কেউ চাপা আমরাও যদি গোড়া থেকে বুঝে-নূঝে ভালবাস্তে শিখ্তাম্‌, তা'হলে এমন করে দেউলে হতাম না!” নুনীতিকে বাহু-বেষ্টনে জড়াইয হাত ধরিয়৷ পুনরায় সে কহিল, *তার চেয়ে আয় ভাই, একবার এমন কাউকে ভালবাসি, যার ভালবাসায় সন্দেহ করে কাদতে হবে না,

ভ্রয়োবিংশ পরিচ্ছেদ ১৪৭

শ্রতারিত হবার ভয় থাকবে না, হিংসা, ক্রোধ, অভিমান আস্বে না,_ শুধু আনন্দ আর শান্তিই তোগ কর! যাবে। বার ভালবাসা যৌবন- বার্ধক্যের খোজ রাখে না, রূপের মোহে ছলাকলায ভোলে না, মনের ভিতরের লুকোনে! মনকেও খুঁজে বার করে। বে প্রেম ক্ষমা কর্বার জন্তেই ব্যাকুল হয়ে থাকে, সেই প্রাণের গ্রাণকে প্রাণ ভরে ভালবাম্‌ ভাই !. ভালবাসাও ধন্ত হবে--মনের. অভাবও সব মিট্ুবে। অমুতের আধকারী আমরা-_আমর। কখনে। দুখী নই। অতিথশালার কাঁজ বজার রেখে শুধু কর্তব্য করে যাব। এখানকার সরা-বাটাতে লোভ করবে৷ কেন--সে যে আবার ছুদ্দিন পরেই ফেলে যেতে হবে? বেচ্ক! ৰেধে আর সঙ্গে নিতে পার্বে! না?”

ফাল

চতুবিংশ পরিচ্ছেদ প্রফুল্লের পণ

হিমুর সহিত শক্রুত| সাধিয়াই যেন রথের দিনটি আর নিকটবর্তী হইতে চাহিতেছিল না। দিদিমার ধন্নুকভাঙ্গা পণ--তিনি রথ না দেখিয়া কিছুতেই বাড়ী ফিরিবেন না। অথচ হিমুর দিনগুলা যে কেমন করিয়া কাঁটিতেছে, সে খবর লইতে তাঁহার অবকাঁশই হইত ন!। একটিমাব্রও - সঙ্গী নাই। হুড কথা বলিয়া মনের বোঝ। নামাইবে, এমন একটি মানুষও নাই! ছুটিয়! বেড়াইবারও স্থানের অভাব। পিঞ্জরাবন্ধ পাখীর মত সে যেন ছটফট করিতেছিল। এই কর়দিনের মধ্যেই এখানকার এত বড় বাড়ীখান। তাহার চোখে ক্ষুদ্র কারাগারে পরিণত হইয়! উঠিয়াছে। এখানকার পৃথিবীর বর্ণ ষেন কেমন ধূ-মলিন হইয়া গিয়াছে। দিদিমা নীচে গৃহিণীর মহলে থাকেন। সেখানে গেলেই দাসী-মহলে, আশ্রিত প্রসাদাকাঁজিণীর দলে “আহা” “উহ” সহযোগে কতই না আদর-আপ্যায়ন চলিতে থাকে গৃহিণী মুখে স্পষ্ট করিয়৷ কিছু না বলিলেও চোখে যে স্নেহ ভরিয়৷ চাহিয়া দেখেন--এখন হিমুর তাহাতেও সন্দেহ জাগে।' এ-মব আদর-আপ্যার়ন তাহার সহ হয় না। সে বিরক্ত চিত্তে রাত্রে ঘমাইবার সমর ছাড়া দিদিমার সঙ্গও ত্যাগ করিল বাগানে সকাবে- বিকাবে আলোকনাথ বেড়াইতে যায়, তাই সে বাগানে যায় না। হেমলতার কাছে যাইবার জন্য তাহার "ব্যাকুল মন ধ্ননেক লময়ই চুটিতে চার, কিন্ত কতক লজ্জায়, কতক ভরে সাহস করিয়া নে যাইতে পারে না। _ অনিচ্ছাতেও সে যে তাহার নিকট অপরাধিনী! আর খথা--এবাড়ী

চতুব্বিংশ পরিচ্ছেদ ১৪৯

সথাড়িয়! যাইবার পুর্বে তিনি যে বুঝিতে পারিলেন না | তিনিও হয় ভাবিয়। রাখিয়াছেন, গহনা-কাপড়ের লোভে হিমু তাহার বুড়া স্বামীকে বিবাহ করিবার জন্য পাগল হইয়াছে! তা? বা? খুনী--ভিনি ভাবুন! যতক্ষণ ন! সে বাড়ীর বাহির হইতে পারে, অনেকেই অনেক কথ! ভাবিবে। তা*র পর--সে যখন সকলকে বৃদ্ধা দেখাইয়! বাড়ী ছাড়িয়! মার কাছে ফিরিয়৷ যাইবে, তখন সবাই বুঝিবে, হিমুকে বিবাহ ক€। কেমন সহজ! আর হেমলতাদি'ও তখন নিশ্চয় নিজের ভুল বুঝিয়। ।হমুর জন্ত কাদিতে বসিবেন। এই সকল জটিল সমন্তায় বিব্রত হইয়াই সে লাইবেরী- ঘরের নিরাপদ আশ্রয়ে আত্ম-গোঁপন করিয়াছিল। এখানে তাহার জন্ আশ্রয় আনন্দ ছুইটাই প্রচুর পরিমাণে সঞ্চিত ছিল। লোকসঙ্গের অভাব সে পুস্তক-পাঠের আনন্দে ভুলিয়াছিল। এখন ভাবন! হইত-_-এত বইয়ের মধ্যে কয়খাঁনিই 'বা সে পড়িয়। লইবার অবসর পাইবে! এমনও তাহার মনে হইত যে বুড়া কর্তীর মতিচ্ছন্ন না হইলে সে বাছা-বাছ। থানকতক বই স্টাহাকে.. বলিয়৷ সঙ্গে লইত, আবার পড়া শেষ হইলে কাহাকেও দিয়া ফিরাইয়। আনিবার কথা বলিয়! যাইত।

আজ লাইব্রেরীর নিরাপদ আশ্রয়টুকুও খন তাহার ভাঙ্গিয়া গেল, তখন দারুণ শৃন্টতা় তাহার মন ভরিয়া উঠিল। সে গুনিয়াছিল, এই লাইব্রেরী-কক্ষে একটিমাত্র মানুষেরই পূর্ণ অধিকার ! এখানকার সহিত আর কাহারও কোন সহানুভূতি'ব। সংন্রব নাই কয়দিন সে অনধিকারে যাহার রান্যে প্রবেশ করিয়াছিল, তাহার আ্রমনমাত্রেই দেখান হইতে তাহার নির্বাসন হইয়! গেল। তা*ই দণ্ডদাতাকে সে বাড়ীর অন্ত কাহারও চেয়ে অধিকতর প্রীতির চক্ষে দেখিতে পারিল না। পাছে দৈবাৎ েই অপ্রীতিকর লোকটিরই চোখে পড়িয়া যায়, এই ভয়ে সে যখন হেম- লতার কক্ষে বা অন্ত কোথাও থাকিত, সে সময়ও পাহস করিয়া হিমু

১৫০ প্রত্যাবর্তন পুস্তধাগারে যাইতে পারিত না। অথচ তাহার আনন্দ-রস-লুৰধ মনটি সেই সব ঝকৃঝকে বীধানো, স্বর্ণ অক্ষরে নামাঙ্কিত, রাশি রাশি ইংরাজী বাঙ্গল! বইয়ে-ভর! কাচের বড় বড় আলমারীগুলির সামূনেই ুরিয়া বেড়াইত। কাচের শাশির ভিতর দিয়। বিকাল বেলার রোম খানিকট। ঘরের ভিতর আদিয়! পড়িয়াছিল। বাহিরের নীল আকাশ খোল! দরজা! দিয়! চোখে পড়িতেছিল। পাখীর ঝাঁক উড়িয়া চলিয়াছে। একট! চিল উড়িতে উড়িতে আসিয়া সম্মুখের গেটের মাথায় বিশ্রাম লইতে বসিল। ঠিক যেন ধাতু-গঠিতের মতই সে স্তব্ধভাবে বসিয়াছিল। খাটের বিছানায় শুইয়া 'হেমলত! এই দৃণ্তগুলিই চোখ দিয়া চাহিয়া দেখিতেছিল। কার্যহীন রোগ- ্্রণা-কাতর শরীরের মনের অস্থাচ্ছনদ্য তাহাকে ক্রমেই অধিক পীড়িত করিতেছিল। সে বুবিতেছিল একঘেয়ে রোগের দীর্ঘ সেবায় বাড়ীর লোকও ক্রমে ক্লান্ত হুইয়! পড়িয়াছে। ন্বামী দিনান্তে একবার কাছে আসিয়। ঝসিতেন, কুশল প্রশ্ন করিতেন--তিনিও আজ ক'দিন আর আসেন নাই। আর যে কারণে আসেন নাই, সেটা এমনি দাম্পত্য প্রেমের অন্তরায়, যে হেমলতাও নিজ হইতে তাহাকে আসিবার জন্য ডাকিয়। পাঠাইতে পারে নাই লঙ্জা, সঙ্কোচ, বিরাগ, গঁদাসীন্য সবই যেন সেই চিন্তার ভিতর জড়াজড়ি করিঝ়। বাস! বাধিয়াছিল। দিনের পর দিন একই তাবে শুইয়া থাকা, ওধধ খওয়া, ডাক্তারের নিকট পরীক্ষ দেওয়৷ ছাড়া আর কোন কাজ তাহার নাই! অথচ এমন একঘেপে আধ-মর! জীবন, এও যেন সে আর বহিতে ব৷ সহিতেও পারিতেছিল' না। ঘরের যে দিকে চাহিয়। দেখে--টেবিল, চেয়ার, আল্না, আন্নার উপর ঝোলান কৌচান সাড়ীগুলি, দেওয়ালের ছবি, ব্রাকেটের উপর ঘড়িটি পর্য্যন্ত সবই যেন সেই একঘেয়ে বিমর্য চাহনিতে তাহারই দিকে চাহিয়। আছে। এই আনন্দ- লেশহীন একাস্ত হূর্বহ জীবনে কবে যে মুক্তি লাভ করিবে, ইহাই হইয়াছে

চতুব্বিংশ পরিচ্ছেদ ১৫১

এখন তাহার জপমাল!! স্বামীর বিবাহ বার্তায় সে তাহাকে দোষারোপ করে না। কগ্না স্ত্রীর সেবা করিয়া চিরদিন বদি তিনি নাই কাটাইতে* পারেন! কিন্ত স্বামীর তাচ্ছীল্যে সে ব্যথ৷ অন্গুতব করিত-_দিনান্তে একবার চোখের দেখ দেখিয়া গেলে ক্ষতিই ব| কি এমন ছিল? হিমুকে প্রথম দর্শনেই সে ভালবাসিয়াছিল $ মনেও একটি মধুর সাধ তাহার জাগিয়াছিল। হেমলতা৷ ভাবিয়াছিল, প্রফুল্লের সঙ্গে *এই সুন্দতী মেয়েটির বিবাহ দিয়া ইহাকে রাণীর সাজে সাজাইয়। সে তাহার অতৃপ্ত কামন। মিটাইবে। তাহার বন্ধ্যা-হৃদয়ে নবোচ্ছুসিত ন্নেহধারা এই মেয়েটির পানেই তা*ই স্লিগ্ধ শীতলতায আর্ হইয়া ধীরে ধীরে বহিতে সুর করিয়াছিল। সে আর কতটুকু, কত দিনেরই বা! স্বামীর কাছে প্রসঙ্গ তুলিবার উপক্রম না করিতেই সব অদল-বদল হইয়া গেল। কল্পনায় যাহাকে রাণীর সাজে সাজাইয়! বুকে চাপিয়! সে ব্যর্থ স্নেহের সকল ক্ষুধ! মিটাইতে চাহিতেছিল, সে তেমন: রাণী সাজিয়াই রহিল বটে, গুধু তাহার বুকের ব্যথা! জুড়াইয়! ন! দি! সেখানে ব্যথ। হইয়াই বাজিয়৷ রহিল! হেমলত! গুনিল- স্বামী নিজেই তাহাকে বিবাহ করিবেন। শুনিয়! সে হূঃখিত হইল। সে তবে এতদিনের এত ভালবাস! দিয়াও তীহাকে তৃপ্ত করিতে পারে নাই? তা"ই নৃতনের মোহে তিনি উচিত জ্ঞানও হারাইলেন কিন্তু নিজের স্বার্থ-হানির চিন্তার চেয়ে বড় চিন্তা হইয়াছিল সেই অবাধ্য যুবার-_ যাহাকে সে হাতে করির। মানুষ করিয়াছে ) মা-হার! শিশুকে কত পরিশ্রমে, কত বত্বে কত ন। আদরে-সোহাগে বড় করিয়াছে--সেই ফুলুর জন্য! সে যে চিরদিন শুনিয়া আসিগ্লাছে, সে-ই জমিদারীর ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারী এখানকার আধার ঘরের মণিদীপ সে! আজ সেই দীপের আলো, শুধু তাহারি' রুগ্নত্বের অপরাধের ঝড়ো। হাওয়ায় নিজেই নিবাইতে বিল, সে এমনি অপরাধিনী খুড়ি-ম। ! ফুলুরই কি কথ এতক্ষণ আর

১৫২ প্রত্যাবর্তন

শুনিতে বাকী আছে? ইহা গুনিলে অভিমানী সে, সে কি আর গৃহের কিছুন্পর্শ করিবে! হয়ত কোথাও চথিয়া যাই বে! হয় আর কখনো! খবরও দিবে না, কাহারো! খবর লইবেও না! কিন্তু হেমলত| যে এখনও তাহারই হাতের প্রজ্জলিত অগ্নিকণাতেই নিজ ব্যর্থ জীবনকে শীতল করিবে বলিয়। আশা! রাখিয়াছে ! সাধও কি তবে তা*র পূর্ণ হইবে না?

সহস! তাহার চিন্তার ধার! বিপর্যস্ত হইয়া! গেল। *ও মেয়েটি কে থুঁড়ি-ম1? ভারী সুন্দর দেখতে ত!” বলিয়া হালিমুখে গরুর আসিয়! ঘরে চুকিল। মাথার কাছে খাটে বসিয়! হেমলতার ললাটে হাত রাখি তাপ-পরীক্ষান্তে পুনরায় বলিল, “ও মেয়েটি কে, খুঁড়ি-ম1?” :

হেমলতা মৃদু হাসিয়া কহিল, «ও হিমু_ছু'দিন বাদে তোমার খুড়ি-মা হবেন ।”

্রফুপ্ন যে কাহার কথ! জিজ্ঞাসা করিতেছে, সে তাহার কথার বিশেবণেই হেমলতা| বুঝিয়াছিল, উদগত নিঃশ্বাসট। তা+ই চাঁপিয়! ফেলিতে হুইল। বড় আশার জিনিষ যেন হারাইয়া গেণ--প্রফুল্লের প্রশ্নে এমনি একটা বার্থতার ব্যথ। তাহার মনে বাজিল।

“কে হবেন?” বলিয়া প্রফুল্প হাসিমুখে তাহার অবিন্তত্ত চূলগুলি গুছাইয়৷ দিতে লাগিল। যাহা শুনিল, তাহ! এমনি অবিশ্বান্ত, যে বিশ্বয় বোধ করারও প্রয়োজন ছিল না) সে কথার উত্তর না৷ দিয়া হেঘলত। কহিল, “জল থেয়েচ? মার কাছে গেছলে 1” |

*নিশ্চয়! অবস্থ। দেখে বুঝ্তে পাচ্ছ ন! বুঝি? সোজা হয়ে বস্বার যো -আছে-_পেটের ভারে ?. 'ঠাকুম! ভাবে, পেট্ট! 2 থলি। এগারে। মাসের বাকী খাবার একমাসে এর মধ্যে ঠেলে বেশ ধরাতে পারে !”

হেমলতা চোখ তুলিয়! হিদান তাহার পানে চাহি উরি

চতুব্বিংশ পরিচ্ছেদ ১৫৩

পযে ছিরি করে আসো, বাবা ! না করেই বা. করেন কি, বল? ছুটিটাও বদি এখানে কাটাতে, ত৷ হলেও যে আমাদের আশ মিউতো।»

রসুল্প হাসিয়া কহিল, “সেই যে একটা! গান্‌ আছে,--“সাধ কখনো। “মেটে না৷ ভাই-_সাধে পড়ুক বাজ! বেলা-বেলি চল্রে চলি দাধি আপন কাজ"! সাধ বুঝি আবার কখনে! মেটে, খুড়িমা ? ওকে যত বাড়াবে, ততই বাড়বে। ছুটিতে সময় কোথা পাই, বল? আমারও যা! কিছু কাজ তাও এঁ সময়টুকুর জন্তেই তোল! থাকে ।»

হেমলত। একটা! নিশ্বাস ফেলিয়। কহিল, “তোমার কাক। জন্তেই রাগ করেন। শুন্লুম, তুমি ন! কি পিঠে মোট বয়ে কোথায় স্বদেশী কাপড় বেছতে গেছলে। কোথায় দ্বতিক্ষ হয়েছে, তার জন্তে দোরে দোরে ঘুরে দুরে চাদা চেয়ে বেড়িয়েছ, সবকেন কর, ফুলু? শরীরটাকে তুমি একটুও যত্ব কর না!”

“শরীরের চেয়েও ষে আমার দেশকে আমি বেশী ভালবাসি খুড়িম।? আমার দেশের লোক, খেতে পাচ্ছে না, পর্তে পাচ্ছে না, অত্যাচারে জর্জরিত হচ্ছে,__এ দেখে শুধু শরীর বাচাবার জন্যে আমি লুকিয়ে বসে থাকৃবো।? সে শরীর কখনে। বাঁচে, তুমি মনে করেচ ? অর্থে না পারি, সামথ্যে যতটুকু সম্ভব তা কেন কর্বনা? তুমি নিজে ভেবে আমায় বল, কি ভারী অন্তায় করি ?”

”তোমার কাজে স্তায়-অন্যায় বিচার আমি কখনও করিনি বাব1। যা তুমি কর, সবই আমি মনে করি, তুমি যখন বুঝে করেচ, তখন তা! অবশ্তই ভাল। কারণ_মন্দ কাজ করা তোমার স্বভাব নয়। তবে তুমি যা কর্বে নিজেকে বাচিয়ে করো! শরীর রেখে ধর্ম,--.আমাদের মেয়েলি শান্তরেও বলে থাকে। তোমরা কত সংস্কৃত গ্লোকট্যোক জান। মানুষকে মানুষ ভালবাস্বে না, কি আর কেউ কখনো বল্‌তে পারে ?” ঘলিয়। ফ্কহমলত। একটু ন্নিগ্ধভাবে হাসিল।

১৫৪ প্রত্যাবর্থন প্রফুল্ল কহিল, "তোমার শান্ত্ই আমি মেনে চলি। শরীর না রাখ্লে কি এমন থাকে ? দেখ দেখি আমার হাতে গুলি। আচ্ছা, আমার সঙ্গ কে পাঞ্জা লড়তে আস্বে-আনুকৃ__”” বলিয়া সে পাঞ্জাবির আস্তিন গুটাইয়। খুড়িমাকে অনাবৃত বলিষ্ঠ বাহু-শোভা দেখাইয়! হাসিতে লাগিল। হেমলতা! মৃদু হাসিয়া! কহিল, "তুমি ভারী ছুষট, ছেলে। কেবল তর্কে জিতৃতে শিখেচ। কিন্তু লোকে তোমায় কি বল্চে, জান ? লেখাপড়া শিখে তুমি যেমন কাজ হারালে-_সহজ বুদ্ধিতে কেউ কখনে। এমন করতো ন!। জমিদারীর কাজ কর্ম শিখলে না,--ঘর-বাসী হলে না বলে তোমার কাকাও আগে আগে অনেক ছুঃখ কর্তেন। এখন অবশ্ত আর কিছু বলেন ন!।” প্রফুল্ল হাসিয়৷ কহিল, “ভালকে ভাল বলে বুঝেচেন তাই বলেন না লেখাপড়া শিখলে কি বুদ্ধি এম্নি কেঁচে যায়--যে কর্তব্য কাজও মানুষ কর্তে পারে না? জমিদারী চালাবার জন্তে কি লেখাপড়া একট! অন্তরার. না কি? প্রজ! ঠেঙ্গানো__-ত| সেটা কোনো জমিদারই নিজের হাতে করে না? আমি. এমন অনেক শিক্ষিত জমিদারকে জানি, বার! প্রজ্ঞা পীড়নে--কশাইয়েরও বাবা। যাদের মেহনতে তাদের নবাবী-__তাদেরই এতটুকু ক্রটতে__ক্রটি আর কি, খাজ্ন দিতে দেরী হলে বা বিনা পরসার বেগার খাটতে রাজি না হলে-_পাইক দিয়ে ধরিয়ে এনে মার-পিট্‌, এমন কি ঘরে বন্ধ পর্য্যন্ত করে রাখে, কেউ-কেউ আবার প্রজার খবরের ঘটি-বাটি ধান-চালের সঙ্গে তাদের স্ত্রী-বোন্-মেয়েকে পধ্যত্ত নিজের পাওন! মনে করে। অবশ্য সবাই এক ধাতুর হলে পৃথিবী সইতে পার্‌তো। না। ভাব মন্দ সকল শ্রেণীতেই আছে তৰে শিক্ষায় যে মাহুয-চরিত্র বদ্লায়, তা ভেবে না। যে যা থাকে, সে ত| থাকেই, বাইরেট। গুধু মার্জিত আর অমাঞ্জিত। গোথ্রো সাপের মাথায় মাণিক থাকে, ত৷ বলে সেকি কেউটের চেয়ে কাস্ড়ায় কম? বাইরের ব্যরহারটা শ্রোতন আর:

চতুবিবংশ পরিচ্ছোদ ১৫৫

অশোভন-_এইটুকুই যা তফাৎ! শিক্ষিত জজ-ম্যাজিষ্টেটদের বিবেক-বৃদ্ধি তুমি কি মনে কর আত্ম-সর্বস্থ মোড়লদের চেয়ে বেণী তফাৎ? কখনই না ! যে উৎপীড়ন-অরবিচারে দক্ষ ন। হয়, সে তার কর্মগত দুর্বলতার জন্তেই হয় না। ন! হ'লে শিক্ষায় মানুবকে অকর্মণ্য করে না, বরং কাজের লোকই করে। যে একট! শিখতে পারে, সে আর একটাও পারে। বরং লেখাপড় শেখা থাকৃলে মাথা বুদ্ধি চালাতে শীগ্গিরই পারে আমার কিন্ত অত-শত পোষাৰে না। জমিদার হওয়! আমার ধাতে সইবে না, দেখ্ছি। তিন পুরুষ ধরে চাষ করেছেন বাপ-পিতামহেরা, হাড়ের ভিতর এখনও সেই রক্ত বইচে যে। ধরে-বেধে বাবু সাজা কি সাজ্বে কথনও ?” বলিয়। লে হাসিমুখে খুড়িমার চুলের ভিতর কুরাইয়। দিতে লাঁগিল।

এই একটুখানি স্নেহের অভিবাক্তি! তবু অন্টারষ্টির দিনে এতটুকু জলের আভাষ-_তৃষ্া-কাতর মুমূর্ং: ধরণী যেমন মুহূর্তেই শুধিয়া লয়, ক্ষ বটে তবু ষে কত কাজ্কিত, তাহা! তৃষগরগ্ধ মরুবক্ষই শুধু অনুভব করিতে পারে ! চোখে তাহার বন্যার ধারা উপ্চাইয়৷ পড়িতে চীহিতেছিল, তবু হেমলতার সহিষ্ণু চিত্ত সে বিডৃম্বনা ঘটিতে দিল না| এই ্লেহাম্পদকে ক্সেহ, ইহার মহৎ হৃদয়ের প্রতি শ্রদ্ধা, ততপ্রতি অবিচারের ব্যথা---সমস্ত মিলিয়। তাহার.ব্যথা-কাতর মনটিকে বিক্ষোভিত করিয়া তুলিলেও মুখে দে একটু করুণ হাঁসি হাসিয়া! কহিল, "তাই হবে তোমার, বাবা চাষ করে কোদাঙ্গ পেড়েই তুমি খেয়ো। জমিদারের ফর্মাস দেওয়া হচ্চে। যে যেখানে সাজ্বার, সেই সেখানে সাজ্বে। ঘুটে-কুড়,নির ম| কি কখনো! রাজার ম! হয়? তুমিও এবার মনের স্থুখে বত খুনী গুগ্ডামি করে বেড়াওগে। কেউ মান! কর্‌ৰে না, খবরও নেবে ন। তোমার !*

প্রফুল্ল মনে করি, হেমলতা! নিজের শারীরিক অবস্থার কথ! ভাবিয একপ বলিতেছে | সে সবিশ্বয়ে কহিল, "মানে? মতলবটি কি তোমার,

১৫৬ _ প্রত্যাবর্তন

গুনি? ফাঁকি-ফুঁকি কিছু ঠাউরে রেখেছ না কি? সে সব চল্বে না, তা কিন্তু সাফ্‌ বলে দিচ্চি। তারপর-ফরমাসি জমিদারি আদ্বেন কোথা থেকে, শুনি ?”

হেমলতা! হাসিবার চেষ্টা করিয়া কহিল, “উজ দুই পেয়ে বাবা |”

শ্ঘরে ঢুকে--?” বলিয়! প্রসুল্ল অতীত”ক্ষণের ম্মরণে কিছুক্ষণ বৃখ। কাটাইয়৷ কহিল, “হার্লাম! আমার বিদ্দু-বিসর্গও মনে পড়ল না, কখন আবার নৃতন জমিদারের কথ। হোল ?*

হেমলতা কহিল, “নেক! ছেলে! আগে গাছ, না! আগে ফল? তোমার নতুন-খুঁড়ির কথ! প্রথমেই কি বলিনি? আকাশ থেকে পড়লে যে?” | .

প্রফুল্ল বিষগ্ঈভাবে কহিল, “তোমার আমি ছেলে-বেল! থেকে মায়ের মান্ঠ দিতে পারিনি-_মা, খুঁড়ি, বোন্‌, বন্ধুং-সব মনে করে সব দৌরাত্ম্য করে এসেচি, তুমি তাতে বাধা দাওনি, মান্ত করতেও শেখাওনি কখনও! কিন্ত কাকাকে আমি কতখানি ভক্তি করি, শ্রদ্ধা করি, তা৷ তুমিও জান। তার সম্বন্ধে রকম তামাঁসা করাও তোমার উচিত নয়।”

হেমলত! বলিতে গেল--সে বংশ রক্ষার জন্ত'__কিন্তু মুখে তাহার বাধিয়া যাওয়ায় শুধু কহিল, পতিনি যদি দ্বিতীয়বার বিয়েই করেন--তা৷ হলে কি তি আর তাকে ভক্তিশ্র্ধা করতে পার্বে না বাবা? ওট!কি এতই কণ-তঙ্গুর ?”

প্রফুল্ল উদ্ধত-ভাবে কহিল, "না, ত| আমি লারা কা ব্যাপারটা কি? কাদের মেয়ে? জুটুলই ঝ৷ কেন এসে? -কে সব ঘর্ব,দ্ধি গর মাথায় দিলে? আর তোমাকেও 'বলি-তুমি হতে দেবে ?” |

চতুবিবংশ পরিচ্ছেদ ১৫৭

“আমি 1 আমি তোমাদের সংসারের বোবামাত্র-_ফুলু? শুধু সেক নিচ্ছি, দিতে পার্লুম না কিছু। উনি যদি সুখী হতে চান--*

খাটের ডাণ্ডাক় মুষ্ট্যাঘাত করিয়। তীব্রম্বরে প্রফুল্ল কহিল, তখন পতিব্রত। হয়ে তাঁকে পাগ্লামিতে উৎসাহ দেওয়। তোমার উচিত বই কি ! বেশ--তোমার্দের তরফ ছাড় আর একট! দ্িকও আছে? সুখী হওয়াটা তার এক্লারই জন্তে নয়-_-বুড় মানুষকে বিয়ে করে মেয়েটির কি হবে, শুনি ?”

একটুখানি বিষাদের ম্লান হাঁসি হাসিয়া! হেমলত! কহিল, *হাসালে তুমি ফুলু! আইবুড়, ছুঃখীর মেয়ে ! বিয়ে জুটুচে না বলে বিধবা-মায়ের গলায়, কাট! হয়ে ফুটে আছে ! এমন রাজ-সংসারের রাণী হবে, হুঃখ তার কোথায়, পেলে? বদি বল, সতীন? সে অনেক দিনের নয়। আর জ্যান্তে বে মরা, সে মরার বাড়া! স্বামীর একটু বয়সের কথ! যদি বল,_-সে আর এমন কি বেশী! এর চেয়ে কত বেশী বুড়ে। মানুষে দ্বিতীয় ছেড়ে তৃতীয়- চতুর্থ বার যে বিয়ে কচ্চে--তা কি চিতিজির যি ন। পাচ্চে? এই কি অনেক নয়?”

“না, অনেক নয় আর বে যা! বলুক্‌, তোমার মুখের কথ! এ- মনের নয়।. সত্যি বলৃচে খুড়িমা? মেয়ে মানুষের এই চরম পাওয়া? তার! র্থরধ্যকে সব-চেয়ে বড় পাওনা! মনে করে? বিশেষতঃ অমন মেয়ের_-»

ফুলু জানালাটা বন্ধ করে দাও বাবা, চোখে পড়ন্ত রোদ্‌ট! লাগৃচে।”

রসুন উঠিয়। আদেশ-পালনাস্তে ফিরিয়া! আসিলে হেমলতা একটা! কান্ত নিশ্বাস ফেলিয়া! পাশ ফিরিয়! গুইপ়্া। কহিল, গোপালের মাকে ডেকে দিয়ে

যেয়ো ত, একটু বাতাসু দেবে ।” _.. খুড়িমা যে এ-প্রসঙ্গে আর একটুও অগ্রসর হইবেন না, তাহ! বি

১৫৮ প্রত্যাবর্তন

প্রফু্ বিষষ্জ-সুখে উঠিয়া গেল। “আমি বাতাস দিতেছি, গোপালের মাকে প্রয়োজন 'কি' ?--এ কথাটা! মনে উঠিজেও সে মুখে কিছু বলিল ন|। সে জনিত, খুড়িমা আপাততঃ একটু নির্জনতা চাহিতেছেন। বিশ্বের সহিত সে বিদ্রোহ করিতে পারে, কিন্তু কোনে! দিক্‌ দিয়াও ইহার মনে এতটুকু আঘাতও সে ইচ্ছা! করিয়া অকারণ দিতে পারে না। এখানে সে যে কত পাইয়াছে এখনও পাইডেছে, সে কেবল সেই জানে সে বাহিরের লৌফিকতা৷ বজায় রাখ সাধারণ স্নেহ নয় ! সেই জন্তই মে এমন বিসদৃশ বাপার একেবারেই ঘটিতে দিবে না। স্থির করিল--ইহার একটা হেস্ত-নেস্ত করিয়া ভবে সে ছাড়িবে ! এ-সব কি?

পঞ্চবিংশ পরিচ্ছেদ হিরণের উপদেশ

সেদিনকি একট বিশেষ কাজে জলদকে কিরণদের বাড়ী হইতে মকাল সকাল বাসায় ফিরিতে হইল তাহার শান্ত মুর্তি জানালার বাহিরে ধখন অদৃস্ত হইয়া! গেল, তখন পৃষ্ঠে মূ করস্পর্শে সচকিত হইয়া ফিরিয়া স্মিতকণ্ঠে কিরণ কহিল, “দিদি! ্ি ভেবেছিলুম, কে ? এমন নিঃশন্দে এসেচে তুমি !”

“নিঃশবে ? না। আসাট। রর দশব্দেই হয়েছিল। তখন পুজারিণীর ধ্যান ভাঙ্গেনি তাই যা! এতক্ষণ হচ্ছিল কি--কোর্টসিপ্‌?” বলিয়! দিদি হিরণবাল। সহান্তে ভগিনীর মুখের পানে চাহিল। কিরণের মুখ এই আকন্মিক আঘাতে লজ্জায় রাঙ্কা হইয়। উঠিল। সলজ্জ বিরক্ত-মুখে সে কহিল, “যাও-_-ও সব কি ! 'ও আমি ভালবাসিনা |”

হিরণ কহিল, “কি ভালবাদিস্‌ না ? কোটসিপ্‌ করা? না--সে কথ। কারে বলা?” হিরণের কণ্ঠে তেমনি প্রচ্ছন্ন বিদ্রপের সুর !

কিরণ মুখ ফিরাইয়। তীব্র-স্বরে কহিল, “জলদবাবু রোজ এখানে আসেন। সবাই গুর সঙ্গে কথ! বলেন, আমিও বলি। বাবা, মা, দাদা, কেউ আমায় মানা করেন নি কখনো ? বরং দাদাই প্রথম কথা বল্‌তে বলেন। তাতে দোষ হয় বলে জানি না !*

হিরণ কহিল, “দাদা, বাবার কাওই অম্নি। মা, খুড়ীম! সংদার সাম্লাতেই ব্যস্ত-ঃগুদের রান্না-ভীড়ার ছাড়া আর কোন দিকে চোখ আছে কি?”

১৬৬ . প্রত্যাবর্তন

"গুদের নেই”--তোমার আছে !* বধিয়৷ কিরণ বিষ-বিরক্র-মুখে ফিরাইয়! কহিল, প্রাগ করলি ভাই? সত্যি বল্টি, তোকে দেব বলে আমি কিছু বলিনি। বড় বোনের.বল! উচিত ভেবেই বলেচি,_তুই বুদ্ধিমতী, লেখাপড়াও শিথেছিস্‌, নিজেই বুঝে স্ভাখু। এই যে জলদ বাবুর সঙ্গে এতট! ঘনিষ্ঠতা1--“ন! দেখলে বই: ত-নারি+ ভাব, একি ভাল? অন্ঠেরও চোখে পড়ে ?”

“পড়লেই বাকি করেচি আমি-_যার জন্যে যা খুমী তাই বল্বে-?* অভিমানে কিরণের স্বর রুদ্ধ হইয়া, আসিল। বজবাটুক সে শেষ করিতে পারিল ন|।

ভি ভাতার নিজাম সিল বকে রি উর নর পাশে বসাইল। বোনটির বেদনাহত মুখের পানে চাহিয়! তাহার গ্নেহ-তরঙ্গ উলাইতে চাহিলেও সে স্থির হইয়া! রহিল। অপ্রিয় হইলেও চিকিৎসককে অনেক সময় রোগীর দেহে অস্ত্রোপচার করিতে হয়। কিন্তু সে নিষ্ঠুরতা সুধু রোগীর মঙ্গলের জন্তই॥ আজ সে উপদেষ্টার যে পদ গ্রহণ করিয়াছে, ইহার দায়িত্ব তাহাকে পালন করিতেই হইবে! বিচলিত হইলে চলিবে কেন? হিরণ কহিল, “একটা কথা জিজ্ঞাসা কর্ব--ঠিক জবাব দিবি ?”

«কেন দেব না?” বলিয়া কিরণ জানালার বাহিরে একটা ফরে-ফুরে ভরা নিম গাছের প্রতি বিষ দৃষ্টি নিবন্ধ করিয়া রহিল।

হিরণ কহিল, প্জলদবাবু যদি হঠাৎ বলি হয়ে এখান থেকে চলে যান? আর কখনও গুর সঙ্গে দেখা হবার আশা যদি না থাকে, তাহলে তুই কি করিন্‌?”

“আফিং খাই কি কেরোদিনে পুড়ি--এমনি কিছু করি বোধ হয়?” কিরণের কথায় ঝাঁক্স থাকিলেও হিরণ বুঝিল, এইবার মনের ঠিক জারগাটি

পঞ্চবিংশ পরিচ্ছেদ ১৬১

সে স্পর্শ কবিতে পারিয়াছে। সে কহিল, পনা, অত বড় কিছু করিস্‌ না। তবে ছুঃখ ষে পাস্‌ খুবই, তা নিশ্চয় শুকিয়ে লুকিয়ে কাদিস্‌ও,_মনের ভেতরট: সব শৃন্ঠ হয়ে যায়। সত্যি কি না, ভেবে বল্‌ দিকি ?”

কির" কহিল, "কেউ কোথাও গেলে কেদে আমি চিরকালই থাকি। তখন হি ত! করি, আমার নিজের কাছে তাতে একটুও আমি আশ্চর্যা হব না। দেখ দিদি, আমিও "দিন থেকে দেখছি, তুমি আমায় সারাক্ষণ কেবল চৌকী দিয়ে ফির্ঠ1--ক* কেন বল দেখি? আমার দোষ কিছু খুঁজে পেলে কি? দাদার বদং হন, আমিও গুঁকে দাদার মত-ই মনে করি গুর সঙ্গে কথ৷ কইলে দোষ হয়, তা আমি জানি ন1।”

হিরণ ক্ষুপ্নভাবে কহিল, “কথ! বলায় দোষ কি থাকবে? তুই রাগ কর্চিন্‌-_আমি কিন্ত ঠিক সেভাবে বলিনি, কিরণ। সব জিনিষেরই একট। স্থক্ম দিক আছে কি না। আমি বল্ছিলুম সেই মনের দিক থেকে-_ ব্যবহারের দিক থেকে নর | দাদার পথ চেয়ে বে চোখ-কাণ তোর এমন করে পথের উপর পড়ে থাকে না-_ত৷ তুইও জানিস! আর কোন্‌ সাড়ী- খানিতে কেমন মানাবে, চুলগুলি কোন্‌ ছাদে কেমন করে বাধলে মুখ- খানির বাহার বেশী খুল্বে, এ-সব গুরুতর সমস্তাও মনে ওঠ্বার দরকার হস না। যদি বল-_দাদার মতন নয়, প্রিয় বন্ধুর মত-_তা"হলেই কতকটা ঠিক্‌ কথ! বল! হয় কিন্তু তোমার মত ছেলে মানুষের এমন বন্ধু থাকূলে লোকে নিন্দে কর্বার স্বযোগ পায়। জলদবাবু একজন শিক্ষিত ভদ্রলোক তার ছেলে আছে, স্ত্রী আছে। নিন্দের কারণ কিছু নেই অবশ্ত | তবু জান ত, ও. জিনিষটা এমনি মন্দ যে, সীতা-হেন সতীকেও সে জন্যেবনে যেতে হয়েছিল লোকের কথ! তত গ্রাহা কৰি না-তৰে আমি একালের আর সে কালের অনেক নভেলই পড়েচি। সথী ঢের থাকে-_কিন্তু সখ! থাকৃলেই সুস্কিল হয়! একজন নায়িকাকে তিনজন নায়কে ভালবাম্তে পারে।

১১

১৬২ প্রত্যাবর্তন

গ্রন্থকার ছু'জনকে সন্গ্যাসী বা যা-হয়-কিছু করে একজনের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে শেষ রক্ষ। করে থাকেন কিন্ত উল্টে! হলেই না বিপদ ! এমন বিপদে অনেকেই পড়েচেন। এখনকার দিনে ভদ্র-সংসারে ছুচারটে বিয়ে অবশ্ত কেউ করে না। তাগ্ছাড়া কর্তৃপক্ষও আছেন। কিন্ত আমরা যে সীতা- সাবিত্রীর জাত। নুধু দেহ নয় ত,_-মনকেও যে আমাদের হৃর্য্যের মত উজ্জল নির্মল রাখতে হবে।: মনের আর্সিখান! যদি আজে-বাজে, যাঁ-তা! একে-জুকে আগে থেকেই ভরিয়ে রাখি, তা'হলে আসল ছবিটি মনের সবখানটি জুড়ে পড়বে ন! ভাই? হয়ত সংসারের ঘাত-প্রতিঘাতে কত বারই তুলনায় কত খু'ত-খু'তুনি মনে উঠে তার সব শাস্তিটুকু-ই নষ্ট কৰে দেবে। হয়ত এমন কত--*

কিরণ শাস্তমুখে উঠিয়া দাড়াইল, ধীরভাবে কহিল, “তোমার বোধ হয় আমি কোন ক্ষতি করিনি 1”

হিরণ স্মিত-সুখে কহিল,”না, তা করিনি তুমি আমার ক্ষতি করলেও আমি তোমার ক্ষতি কখনো কর্তুম ন1। আমার স্বার্থে আঘাত লাগলে হয়ত তোমায় উপদেশ দেবার সখ আমার উবে যেত। কিন্তু তখনও আমি তোমার গুভাকাজ্িণী বড় বোনই থাকৃতাম। এর পরে ঠাণ্ডা-মাথায় ভেবে দেখো কিরণ, অপাত্রে ভালবাসা দিতে বারণ করে খুব অন্যায় আমি করিনি ।”

“যা খুী, তাই কিন্ত বল্চ দিদি। কেচায়? বয়ে গেছে আমার” বলিয়া ঝড়ের বেগে সহসা৷ সে ঘর ছাড়িয়! ছুটিয়া বাহির হইয়া গেল।

হিরণের মনে হইল, ঝড়ের সহিত বৃষ্টিও যেন দেখ দিরাছে! উপস্থিত সে নির্জনে কাদিবার জন্যই পলাইয়া। গেল। যাক্‌--ঝড়ের উদ্দাম বাতাস হাহাকারই টানিয়৷ আনে ! বৃষ্টির শীতল ধারা! তাহারে শান্ত করে! মৃছু ভাসিয়৷ টিপয়ের উপর হইতে সেলায়ের ঝাঁপিটি নামাইয়্! সে মনে মনে

পঞ্চবিংশ পরিচ্ছেদ ১৬৩

ৰলিল, "এ রোষ রবে ন! চিরদিন-_”» বলিয়! ঝাঁপি খুলিয়া সেজ-খুকীর ফ্রুক্‌ সেলাইস়্ে পুনরায় মনঃ-সংযোগ করিল।

এই কাজটি প্রায় ঘণ্টা ছুই পুর্ববে সে আরম্ভ করিয়াছিল) এবং জলদের আবিভাবে ইহা উঠাইয়। রাখি! সেখান হইতে চলিয়া গিয়াছিল। তখন কিরণও এখানে উপস্থিত ছিল। তাহার ব্যগ্র দৃষ্টি ঘড়ি ঘরের আর্সি- খানার পানে যতটা! নিবিষ্ট হইতেছিল, তাহাতে দিদিব্র তীতের কাপড়ের সসৌবীন ফ্রকের প্রতি মনোযোগ দিবার মত স্থবিধাও তখন ছিল না। মানুষ মাত্রেই নিজেকে বুদ্ধিমান মনে করে। অল্প-বয়সীদের মধ্যে আবার রোগট। কিছু বেশী। ছুই বোনে পাশাপাশি বসিয়৷ পরস্পরকে ফাঁকি দিতে পারিয়াছে বলিয়া মনে করিতেছিল। হিরণ ভাবিতেছিল,--কিরণের মনটিকে সে এইবার ঠিক নখ-দর্পণে দেখিয়। লইপ্লাছে। কিরণ ভাবিতেছিল, ' _ আশ্চর্য মানুষ দিদি ! তাই জলদ বাবুর সহিত মন খুলিয়া কথ! কয় ন|। বরং কেন উনি নিত্য আসেন, এমন অভিযোগও উহার কথায় কথায় বিদ্রোহীর ভাবে প্রকাশ পায় দিদির মতে এক। শরৎ বাবু ছাড়া জগতে আর আদর্শ মানুষ নাই! পৃথিবীতে মানুষ একটি মাত্র ! কেমন করিয়া মানুষ ভালবাসায় এমন এক-চক্ষু হইয়া! যার, কে জানে? স্বামীকে ভক্তি করিতে হয় কর, ভালবাসিতে হয় বাস, কে মানা করিতেছে? তা*ই বলিয়! তাহার দোষ-গুণও দেখিতে পাইবে না? কি অঞ্ধ-ভক্কি? এমনি করিয়। পুজা দিয়াই আমরা নিজেদের সম্মান খোয়াইয়া। বসিয়াছি। ধর, জলদ বাবু-_মানুষটির অনেক গুণ»_-তা'ই বলিয়৷কি তা"র সবই ভাল ভাবিতে হুইবে না কি?

কিরণ মনে মনে জলদ বাবুর ছ্ৌমান্সন্ধান করিবার চেষ্টা করিয়া দেখিল,_-আপাততঃ,কৈ কিছুই স্মরণ হইতেছে ন|। শেষে সে সিদ্ধান্ত করিল, মন এখন চঞ্চল রহিয়াছে, তা*ই স্মরণ হইতেছে না, পরে ভাবির!

১৬৪ প্রত্যাবর্তন

দেখিলে নিশ্চয়ই কোন না কোন ত্রুটি উহারও পাওয়া যাইবে। কিরণের' মনে হইল, জলদ বাবু আজ অথ! বিলম্ব করিতেছেন কাছারি হইতে ফিরিয়াছেন, সেই পাঁচটায়-_-এখন ছন্ট বাজিয্! তেরে! মিনিট হইয়াছে! এখনও তাহার আসিবার নাম নাই! আশ্চর্য্য মানুষ ! গল্প পাইলে তা*র আর কিছুই মনে থাকে না! হয় কোথা গল্পে জমিয়া গিয়াছেন। আর কি সময়ের হু'স্‌ আছে? যাই হোক্‌, কিরণের প্রতীক্ষা ব্যর্থ হয় নাই অতঃপর নিঁড়িতে জুতার শবের সহিত জলদের হাসি কথার স্থর শুনিতে পাঁওয়। গেল। আর সে আওয়াজটি কিরণের কাণেই আগে আসিয়! পৌছিয়াছিল।

বড়বিংশ পরিচ্ছেদ

মেঘ রৌদ্র

পরদিন নিয়মিত সময়ে যে উচ্ছুসিত আনন্দ উৎসাহের ভরে জলদ তাহার তীর্থ মন্দিরের অভিমুখে যাত্রা করিয়াছিল--ফিরিবার সময় তাহার সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থাতেই ফিরিল। সহসা অতাধিক আহত হইলে বা কোন প্রিয় বস্ত হারাইলে মানুষের মুখের ভাব যেমন হয়, জলদের মুখেও তেমনি বেদনা হতাশার রেখ ফুটিয়! উঠিয়াছিল। সেখানে গিয়া সে শুনিয়া আসিয়াছে, কিরণ সেদিন সকালে তাহার মামার সঙ্গে ত্রিপুরায় চলিয়। গিয়াছে। কিরণের মাতামহ কিছু অসুস্থ, তা'ই কিরণ তাহার সেবার জন্ত গিয়াছে। ত্রিপুরায় সে কখনে। বায় নাই। সেখানে যাইবার লোভও তাহার মনে পুর্বব হইতেই ছিল। এই সময» কি একটা মোকর্দমা উপলক্ষে মাম! আসিয়াছিলেন; হিরণ আসায় মার কাজের দৌঁসর মিলিয়াছে, তান্ই সে এমন গুভ অবসর ত্যাগ করিতে রাজি হইল না। শুনিয়া জলদ বিশ্মিত হইল। কাল সন্ধয-বেলায় সে বিষয়ের কোনো! আলোচনাই গুনিয়৷ খায় নাই ! একট! রাত্রির মধ্যেই সব স্থির হইয়। গেল? না--অনাবশ্থক- বোধে বিষয়টা কিরণ ইচ্ছ। করিয়াই তাহার কাছে কিছু বলে নাই? কিন্ধ বলিলে ক্ষতি কি ছিল? জলদ তাহার মূনের শুভ-ইচ্ছায় বাধা দিতে পারিত না? না হয় সেক্ষুপ্ন হইত! সে আজও হইয়াছে--এবং চিরদিনই হইবে! তাহাতে কাহার ক্ষতি? তবুজান৷ থাকিলে বিদায়- ক্ষণে বাড়ীতে ন! হয় ্রেশনে গিয়াও একবার চোখের দেখা দেখিয়া আমিত! আর দেই মধুর দৃষ্টি মোহন হাসিটুকুই ভবিষ্ব জীবনের

১৬৬ প্রত্যাবর্তন

সম্থলরূপে সে সঞ্চয় রাখিয়। দিত ! সে যখন ফিরিয়। আসিবে, জলদ হয়ত তখন সরকারী কাজে বদ্‌লি হইয়া,_-কে জানে, _কত দূরে চলিয়া! যাইবে “হয়ত আর কখনও তাহাকে দেখিতেও পাইবে না! তাহাদের আনন্দময় বন্ধুত্বের এইখানেই হয়ত শেষ! দেখা ন। হওয়াই যে ছিল ভাল। বা, এত ভঙ্গুর, এত অনির্দিষ্ট, তাহার জন্য কি ব্যর্থ ব্যথা! জলদের মনে হইল, নিজেকে এমনভাবে জড়াইয়া সে ভাল করে নাই। সত্যই কি কিরণ তাহার বন্ধুত্ব আর চায় না? সেকি ইচ্ছ! করিয়াই তাহাকে বাথ! দিয়া গিয়াছে? তাহাদের এত দিনের তিলে-তিলে গড়া এমন যে ভালবাসার মন্দির, সে কি এমনি বিনা-বাতাসেই ভাঙ্গিয়৷ গেল? সবটুকুই চপল! বালিকার খেয়াল ? মূলে তাহার কিছু-ই নাই, কিছু ছিলও. না? সেই যে ব্যাকুল আগ্রহে পথ চাহিয়। থাকা-_ষে চাহনিতে ভিন্ন- পথের পথিক সে, _পথ হারাইয়। বিপথে পাড়ি দিতে বসিয়াছিল, সেও তবে মিথা৷ ? সে দিন জলদ স্থির করিল, কিরণকে একখান চিঠি লিখিয়া৷ সে তাহার মনের কথ! জানিয়৷ লইবে। নীতীশের কাছে ঠিকান! জানিয়া আসিল। সেই সঙ্গে কিরণের পৌছানো সংবাদও শুনিয়া আসিল। চিঠি লিখিবার ইচ্ছা! মনে উঠিলে সে যেন ইহার মধ্যেও একটুখানি উন্মাদনার আনন্দ অতি-গোপন অন্তরের তলে তলে অনুভব করিল। এই একটিমাত্র উপাক্কে তাহাদের বন্ধুত্বকে সে এখনও বাচাইয়া রাখিতে পারে। হারাইয়াও আবার তাহাকে কাছে পাইবে। পূর্বে জলদ কোন দিন কিরণকে কোন চিঠি লেখে নাই। কিন্ত কিরণের হাতের লেখা! ছোট-খাট চিঠি সে ছুই-চারিখানি পূর্বে পাইয়াছে। তাহাদের চাকর মধু বাজার যাইবার সময় সে চিঠি ডেপুটি বাবুর নিজের হাতে দিয়! গিয়াছে। চিঠিতে অবশ্থ কথ! বেশী কিছু থাকিত ন, এবং যাহা থাকিত, তাহা বৈকালে দেখ। হইলে বল! চলিত, তবু

ষড়বিংশ পরিচ্ছেদ ১৬৭

কিরণের মনের তাড়া বেশী থাকায় সে দময্বের অপেক্ষ। রাখিত ন!। পত্রের বিষয় থাকিত এমনি-_“সে দিন জলদ যে বইখানি আনিবে বলিয়া গিয়াছিল, তাহা যেন ভুলিয়া না যায়, অথবা--'অমূল্যের মেসের ঠিকান! সে ভুলিয়। গিয়াছে, তাহ লিখিয়। দিতে হইবে--এমনি অনুরোধ অমূল্য পরীক্ষ' দিতে কলিকাতায় গিয়াছে ।-_-তবু সেই ছোট চিঠির টুক্রাগুলি জলদকে প্রীত করিত। সেগুলি যে জেখিকার কতখানি উদ্বেগ বহন করিস! আনিয়াছে, তাহ! সে কলনায় অন্থুতব করিত-_করিয়৷ তৃপ্তির হাদি হাঁসিত। কয়েক দিন ইতস্ততঃ করিয়। কাটাইয়। কিরণকে চিঠি লিখিয়া তাহার কৈফিয়ৎ লওয়াই সে স্থির করিল। কেন সে চলিয়া যাইবার পৃর্ব্বে জলদকে জানাইয়া গেল না? মধুর হাতে ছ"লাইন লিখিয়! দিলেও জলদ যথ!- সময়ে হাজির হইতে পারিত ! কি অপরাধ সে করিয়াছিল যে এমন কঠিন শাস্তি তাহার জন্য বাহাল হইল? হয়ত জীবনে তাহাদের দেখা-শোনার এই শেষ। আর হয়ত কখনও তাহারা! স্থযোগ পাইবে না। তবে বিদায়-কালের পাথেয়__বন্ধুত্বের দাবীটুকু পুরণ করিলে কিই বা তাহার ক্ষতি ছিল ? হঠাৎ এক ব্বাত্রের মধ্যে এমন কি অপরাধ সে করিল, যে জন্ঠ এই কঠিন দও? পত্রের সন্বোধনে কল্যাণীয়! শেষাংশে গুভার্থী লিখিয়! চিঠিখান। ডাকে ফেলিয়া! উৎকণ্ঠিত-আগ্রহে সে তাহার উত্তরের পথ চাহি রহিল। পোষ্ট-অফিসের ঠিকানায় চিঠির জবাব দিবার কথ লিখিয়াছিল। বাড়ীতে চিঠি আসিলে যদি সুনীতি তাহা৷ কৌতৃহল-বশে খুলিয়া পড়ে! সুনীতির নিকট গোপন করিবার এই ইচ্ছ৷ তাহার নিজ-কার্ষ্যে তাহাকে লজ্জিত করিলেও নিরস্ত করিতে পারিল ন|। মনকে সে বুঝাইল, কার্যের জন্য স্থুনীতিই অংশতঃ দায়ী: িরণকে সে তাহার বন্ধু বলিয়া স্বীকার করিয়াছে, কিন্ত স্থনীতি

১৬৮ প্রত্যাবর্তন

কিরণের কথ শুনিতে চায় না। কখনো! মুখ ভার করে, কখনে! ছুতা। করিয়া উঠিয়া! যায়। তা”ই জলদও আর সে সব কথা তুলিত না। এই যেন! বলিয়! কিরণ হঠাৎ চলিয়! গেল, সে কথ! সেই রাত্রেই সে স্থনীতির কাছে আগে জানাইয়াছিল ; ভাবিয়াছিল, সেখানে সে সহানুভূতি পাইবে। কিন্ত হায়রে, যে পাথরে তাহার জল ঝরাইবার সাধ! সুনীতি শুধু অনাসক্তভাবে জবাব দিয়াছিল, “আস্বে এখন ফিরে।” ব্যস্‌- সহানুভূতির চূড়ান্ত হইয়া! গেল! মে যেন কিছুই না। ছোট খোকার বা বড় থোকার কান্নার মতই মে যেন অনায়াসলভ্য নিত্য ঘটনা ! তাপ্রপর সাত দিনের ভিতর একৰারও সে স্বামীর চিন্তার সংবাদ লইয়াছে কি? কিছু ন। কেনই ৰা লইবে? সে কিরণকে ভালবাসিত ন/, বরং হিংসাই করিত। বুড়া-বয়সে তাহার সবই বাড়াবাড়ি! বুথ! সন্দেহে পড়িয়া নিজেও ছুঃথ পায়-_-অন্তকেও দেয়। এ-সব কি? মেয়েগুলা মনে করে, মন্ত্র পড়িয়। ববাহ করিয়া স্বামী তাহাদের কেন৷ হইয়া গিয়াছে। কাহারও সহিত কথ। কহিলে বা হাসিলে-_-এতটুকু এদিক-ওদিক হইলে পৃথিবী উণ্টাইয়! গেল! কিরণের মত মেয়ের বন্ধুত্ব পাওয়। জলদ গৌরবের বিষগ বলিয়া মনে করে। মানুষ আর পাখী নয় যে সে শুধু নিজের খাঁচার মধ্যেই বসিয়৷ থাকিবে, বাহিরের সহিত কোন যোগ রাখিবে না। এখন সকল শিক্ষিত পরিবারের মেয়েরাই বন্ধু-বান্ধবের সহিত এমন মেলামেশ। করিয়া থাকে, তাহাদের সংসারে জন্য এমন বিপ্রব বাধে না। তবে কিরণের মহিত ধনিষ্ঠত। করিয়। সেই বা স্ত্রীর কাছে অপরাধী হইবে কেন?

কিছুদিন হইতে তাঁহার মনে একট সংশগ্ন জাগিয়াছে। তবে কি সত্যই শ্বনীতির সন্দেহের কোন ভিত্তি আছে? কিরণকে সে তাহার বন্ধুত্বের পাওন। ছাড়৷ কি বেশী কিছু দিয় ফেলিয়াছে? |

যদি দিয়াই থাকে, তাহাতে ক্ষতিই বাকি! সে কোনরূপ নীতি-

ষড়বিংশ পরিচ্ছেদ ১৬৯

বিগহিত অন্তায় কাজ কিছু করে নাই। যোগ্য ব্যক্তিকেই ভালবাসিয়াছে। সথী বলিয়। শ্রদ্ধা করিয়াছে, ইহা কি এননই অপরাধ? প্রতিদানে সেও কি সেখানে কিছু পাইয়াছিল ? হয়ত পাইয়াছিল!

জলদ ভাবিয়। দেখিল, বুঝি দেওয়ার চেয়ে পাওয়ার তালিকা বড় হইয়। উঠিয়াছিল। তাহার প্রত্যেক কথা, হাসি, ভঙ্গিমা-_সমস্তই যেন জলদের চিত্তবিনোদনের জন্যই স্্ট ছিল। তাহাকে নিজের হাতে খাবার দিয়া, বাতাস দিয়া, গর করিয়া গল্প শুনিয়। সে ধেন বিশ্বের আনন্দ উপভোগু করিত। অতকিতে কতদিন সে তাহার এত কাছে আগিয়া বদিত--ষে আপন-ভোলা৷ জলদকেও চকিতে একবার অন্তের দৃষ্টি-পর্ধ্যবেক্ষণে বাধ্য হইতে হইত। প্রতিদিন বিধায়-কালে, কোন দিন আসিবার সময়েও সেই হুইটি যাদু-করা কালে! চোখে কি মধুর দৃষ্টি ভরিয়াই সে তাহার পথের যাত্র! মধুময় করিয়। দিত! সে চোখের ভাষা কি ভালবাসার চোখে কখনও গোপন থাকে? যাতায়াতের পথট। ছিল অপেক্ষাকৃত নির্জন, তা'ই সুবিধাও ছিল খুব। নহিলে কিরিয়৷ তাকাইতে গিয়। কতবারই যে তাহাকে লোকের ধাক্কা! সহিতে হইত, তাহার কি আর হিসাব ছিল! ইদানীং মা স্ুনীতির উপত্রবে প্রায়ই তাহার প্রতীক্ষা দীর্ঘতর হইয়। উঠিত। জলদের সময়ে যাওয়। ঘটিত না, তাহাতে সে কতই ন। ক্ষুব্ধ হইত। আপনাকে রোজ রোজ আস্তে বলে কেবল জালাতন করি, এখন আপনার গল্প কর্বার আর লোকের অভাব নেই, তাই আর আস্তে ইচ্ছা হয় না! স্থনীতি দিদি বুঝি মানা করেন এখানে আম্‌তে ?” এমনি সব অভিমানের কথায় অভিমানিনী নিজ অনুকুল উত্তর আদায় করিয়া! 'তবে ছাড়িত। দে- মুখ বলিত--জলদকে সে অশ্রদ্ধা করে না তাহার সঙ্গ তাহার অনাক।- জ্ষিত নয়। হরত,--হয়ত সে তাহাকে ভালও বাধিত!

চিন্তাকে জলদ প্রশ্রপ্ন দিতে সাহস করিল না। ইহার যৌক্তি-

১৭০ প্রত্যাবর্তন

কতাকে সমর্থন করিতে সে কু্া অন্থভব করিল। তবু অন্পষ্-চিন্তাসস কত সুখ! ইহাতে যে বিষ-মিশ্রিত সুরা ছিল। তাজ্য হইলেও তাহ! লোভনীয়! নীলকণ্ঠের মতই তা'ই সে হলাহল দে ক্ঠমধ্যেই ভরিয়া রাখিল।

কিরণ যখন কাছে ছিল, তখন তাহার আত্মান্ুসন্ধানের প্রয়োজন ছিল না! সে তাহাকে দেখিতে তাহার সহিত গল্প করিতে ভালবাসিত। পা'ওন' যখন পূরামাত্রায় পাইতেছিল, তখন মনে কোন দ্বন্দ ছিল না। এখন কিরণ সহস! চলিয়! যাওয়ায় নিজের মনের ভাব সে যেন অত্যন্ত সহসা অনুভব করিয় বিম্মিত হইল। বিশ্মিতই হইল, কিন্তু দুঃখিত হইল না। লোভ যে কখন্‌ কোন্‌ ছিদ্রপথে মানুষের "মনে প্রবেশ করে, তাহার গতি- নিরূপণের শক্তি বদি মানুষের থাকিত, তবে মানুষ “মানুষ' না৷ হইয়। দেবত; হইতে পারিত। সংসারে নর-রূপী দেবতার অভাব না থাকিলেও সাধারণ মানুষ মান্্যই ! জলদের নিফলুষ বন্দুত্ব__-বন্ধুত্বের সীমা ছাড়াইয়! গ্রনুক হইয়া উঠিতেছিল কি না, তাহা সে কোনদিনই যাচাই করিয়া দেখে নাই। সে চিরদিনই ভাব-প্রবণ। সংসারের ছোট ছোট দোষ-ত্রটি দেখিয়া ব! মানিয়! চল। কোনদিনই তাহার স্বভাব নয় মানুষের জীবনের পথ যদি চিরদিনই সুগম থাকিত, প্রলোভন মদি মূর্ডি ধরিয়া দেখ। না দিত, তকে তাহার জীবনে অনেক অন্ুখ-অশাস্তিই জন্মিতে পারিত না! ..

সাধারণ মানুষের চেয়ে যাহাদের মধ্যে আবার একটু অসাধারণত্ব, সংসারে তাহাদেরই জীবন-পথ আরও জাঁটল হইতে দেখা যায়। তাহার কারণও অসাধারণত্ব। কেহ ঘরে বসিয়া যুদ্ধের স্বপ্র দেখিতেও ভীত হয়, আবার কেহ সাধ করিয়া তাহারই মধ্যে যোগদিতে চায়, এবং কখনে৷ দু'একটা গোলা- গুলির আস্বাদও হয়ত অনুভব করে। মানুষে-মানুষে এই যে বিভিন্নতা, ইহা তাহাদের নিজ নিজ গ্রক্কৃতি অনুসারেই জন্মায়। তাঁ”ই ফলাফলের জন

ষড়বিংশ পরিচ্ছেদ ১৭১

মানুষ নিজেই দায়ী। যাহার জীবনের পথ বাধা-বন্ধনহীন, সরল সুগম, আমরা তাহারই প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করি এবং অপর পক্ষে বীরত্ব থাকিলেও তাহাকে বুদ্ধিমান বলিয়। প্রশংসা! করিতে পারি ন7া। অথচ এই শ্রেণীর লোকের যে আকর্ষণী-শক্তি থাকে, তাহাতে অনিচ্ছাতেও আকু হইতে বাঁধ্য হই।

সরল-চিন্ত জলদের স্বচ্ছ মনে কোন দিনই কপটতা ছিল না। সেশুধু ভাবের আ্রোতে ভাসির্না চলিয়াছিল। নূতন আকর্ষণের আনন্দ তাহাকে তৃপ্ত করিলেও সময় সময় পীড়াও থে ন। দিত, এমন নয়। মনে হইত, দে যেন তাহার অধিকারের সীম৷ ছাড়াইয়। কোন্‌ সন্কীর্ণ পথে যাইতেছে। স্থনীতির সহিত অনেক সময় কিব্ণকে লইয়! এই সব গোপনতা সৃষ্টি করিতে হওয়ায় এই ভাবট! তাহার মনে জাগিতেছিল। কিন্ত কোন সাধারণ বিষয়ে চিত্ত করাও তাহার স্বভাব ছিল না--এ লব তর্ক মনে উঠিলেও সে তাহাকে বেশী একটা প্রশ্রয় দিত ন। বর্তমানকে সে পুরাপুরী দখল করিতেই ভালবাসিত। মানুষের বিচার সে নিজেকে দিয়া করিত। যে কার্ষে তাহার মনে সংশয় ন1 জন্মায়, অন্তেরই বা তাহাতে সংশয় জন্মিবে কেন? তা*'ই নিজের ব্যবহার সংশোধন না করিয়া! অন্টের প্রতিই সে কুদ্ধ হইত।

আজ চূনিয় চুনিয়৷ অতীত দিনের কথাই তাহার মনে পড়িতেছিল! কিরণকে হারাইয়। তাহার ভালবাসার নিদর্শনগুলি সে যেন স্পষ্ট করিয়াই দেখিতে পাইতেছিল। এমন একটি দিন যায় নাই, যে দিন কিরণ তাহাদের সান্্য-সভায় মোগ ন| দি্বাছে। ঘরে ফত জারগাই থাক, কিরণ কখনও তাহার একেবারে কাছটি না বেঁষিয়৷ বসিত না। সে এত কাছে, বে তাহার স্থরতি-নিশ্বাসের বাতাসটুকু জলদকে স্পর্শ করিত। ছবি দেখিতে, বইয়ের পাত! উল্টাইতে কতবারই তাহার কোমল করের মধুর স্পর্শ সে

১৭২ প্রত্যাবর্তন

অনুভব করিয়াছে! ঠাকুর চলিয়া যাওয়ায় ক্কোন দিন রারাঘরে মা'র কোন কাজে আবদ্ধ থাকিলে সে যেন পিপ্ররাবদ্ধ পাখীর মতই ছটফট করিত। ছুতা করিয়। কতবারই ন] ছুটিয়া৷ আসিয়া একটু হাসিয়া, ছুইটা যা” তা” বকিয়৷ আবার কাজে চলিয়! যাইত। তাহার উৎসুক মন ষে জলদের এতটুকু কথার আওয়াজ, একটু হাসির সুর শুনিলেও ব্যস্ত হইত। কিরণ না থাকিলে সে-বাড়ীর আব্র কোন আকর্ষণই তাহার থাকিত না। ঘরে অন্ত যাহারা--কিরণের ভাই-বোনের! থাকিত, তমোনাণী এক চন্দ্রের অভাবে সেই শত তার! জলদের অন্ধকার মনে আলো! দিতে পারিত না। সে দিন জলদের হাতের নৃতন আংটটা তাহার হাত হইতে টানিয়৷ খুলিয়া কেমন অসক্কোচে সে নিজের আঙ্কুলে পরিয্না ফেলিল। আবার জলদের ফিরিবার সময় তেমনি অবলীলায় তাহার হাতখান। টানিয়।৷ লইয়া আংটিট। পরাইয়! দিয়াছিল! জলদ হাসিয়া! বলিয়াছিল, “কি করলে, জানো? অঙ্গুরীয়- বিনিময় !” সে তৎক্ষণাৎ জবাব দিয়াছিল, প্বিনিময় নয়)_গচ্ছিত-প্রত্যর্পণ! গচ্ছিতও নয়, ডাকাতির মাল ফেরৎ দিলাম।” কথাটা সে অবলীলায় বলিলেও জলদের কথায় তাহার মুখখান৷ লজ্জায় রাষ্গ। হইয়! কি মনোহরই ন। দেখাইয়া! ছিল! সে মুখের পানে চাহিম্বা জলদও যেন ক্ষণেকের জন্য আত্মবিস্থৃত হইয্লাছিল। সে দিনও দে তেমনি মধুর দৃষ্টি দিয়াই তাহাকে বিদায় দিয়াছিল, উপহাসে নয়। পথে চলিতে চলিতে যতদূর ৃষ্টি যায়, জলদ তাহার হাসিমাথা স্থবেশ-সঙ্জিত মুষ্তিধানিই যে দেখিতে পাইয়াছিল!

অতীতের সহিত বর্তধানের ব্যবহার মিলাইয়া মে কোন সামগ্রস্ত আনিতে পারিতেছিল না। কিরণ তাহার মামার বাড়ী গিয্াছে। কথাটা এমন কিছু আশ্চর্য্য বা অস্বাভাবিক নয়, তবু জলদের মনে হইতেছিল, যেন অত্যন্ত অন্তায়রূপে তাহাকেই আক্রমণ কর! হইরাছে। আজই সে

ষড়বিংশ পরিচ্ছেদ ১৭৩

তাহার কাছে এমন অনাবশ্তক পর হইয়া! গেল? হিরণ বলিয়াছে, "দে একরকম জেদ করেই চলে গেল-_যা ধর্বে, তা নড়বে.ন1?” দে তবে ইচ্ছা করিয়াই গিয়াছে? কেহ বাধ্য করিয়। তাহাকে পাঠায় নাই! “শীতটা সেখানেই থাকিবে*্-_গৃহিণী এমন মন্তব্যও প্রকাশ করিয়াছেন এখন সবে এই কার্তিকের সুরু-_শীত শেষের এখনও বহু বিলম্ব। তাছাড়া শীতের পর- আবার কোন নূতন ঘরে চিরদিনের জন্য চলিয়া যাইবে কি না, দে কথাও কিছু বলা যার না? জলদও এখানকার স্থায়ী মানুষ নয়। হয় জীবনে আর কখনও তাহাদের দেখা-সাক্ষাৎ্থ ঘটিবে ন!। সে বার বার মনে মনে আবৃত্তি করিবার চেষ্টা করিল,-_বাহ। চিরন্তন, তাহ! ঘটিয়াই থাকে। ইহাতে ক্ষোভ করিবার কিছু নাই। আর পাঁচ জনের মত সেও এখানে দর্শক,_তাহার কার্যে চুপ করিয়া অন্থমোদন করিতেই বাধা! তাহার ম্বাধীনতাত্র উপর জলদের কিসের দাবী ! না বলিয়া চলিয়! যাওয়া-_ সে ভাল বুঝিয়াছিল, তা'ই গিয়াছে--বেশ করিয়াছে

কিন্তু তবু এই শেষের চিন্তাটিকে সে যেন কোন মতেই স্বীকার করির়! লইতে পার্িতেছিল না। এই কথাটাই বারবার মনে তোলাপাড়। করিরা ইহার গুরুত্ব পাষাণ-ভারের মতই তাহার বুকে চাপিয়া ব্িতেছিল। হাস্ত- কৌতৃকময়ী লীলা-চর্চলা! কিরণের মৃষ্তি তাহার বর্তমানের ধ্যান-ন্তান হইয়া উঠিল। সুনীতিও এই কয়দিন স্বামীর নিত চিন্তাক্স অনসর দিবার জন্তই যেন তাহাকে সম্পূর্ণ এড়াইয়! চলিতেছিল। শাশুড়ী শৈল চলিয়া যাওয়ায় তাহার কাজও বাড়িক্নাছিল; তা”ই তাহার অনাসক্ত দুরত্ব-ভাব জলদকে সংশয়ান্বিত করে নাই সে মনে করিত, এখন আর কাজের জন্য সুনীতি তাহার কাছে বড় বেশী আসিবার সময় পায় না। ইহাতে সে ক্ষুপ্ন না হইয়। খুদীই হইস়্াছিল। এখনকার মনের অবস্থায় পত্রীর মনো এঞ্জনের অক্ষমতা৷ সে পদে পদে অনুভব করিতেছিল। ইচ্ছ! করিয়া স্ত্রীকে কেন,

১৭৪ প্রত্যাবর্তন

কাহাকেও সে ব্যথা দিতে চাহে না। স্ত্রীকে সে ভালবাসে ; তবে অবশ্- প্রাপ্য ঘরের জিনিষ জানিয়া, তাহার প্রতি সর্বদা! মনোযোগ দিবার প্রয়োজন বোধ করিত ন৷। যাই কেন হউক না, যত ত্রুটি ঘটুক না, এখানে আর বাধন দিয়া ভাঙ্গন বাচাইতে হইবে না। সে যে নিজের বাধা-ঘাটের শীতল বারি,_প্রয়োজন-কালে মিলিবেই। তাহাতে নৃতনত্ব বা বিশেষত্ব কিছুই নাই। তাহার সবটুকুই ষে জানা, তাই তাহার রক্ষার জন্য ভয়ও ছিল না। থাহা দুর্লভ, তাহাই সুন্দর ! সংসারের নিয়মই এই !

সপ্তবিংশ পরিচ্ছেদ ভুল ভাঙ্গা!

নিঃশঙ্ক পথিক চলিতে চলিতে সহস! পথ হারাইয়া৷ একটা! প্রকাণ্ড বড়ের ধারে আসিয়া পড়িলে যেমন ভর়-ব্যাকুল দৃষ্টিতে চাহিয়। দেখে, জলদও তেমনি ভাবে সুনীতির হাতে কিরণের লেখা চিঠিখানির পানে চাহিয়া রহিল। এই চিঠিখাঁনির জন্য যে সে সপ্তাহ-কাল কাতর আগ্রহে কম্পিত-বক্ষে পথ চাহিয়া বসিয়াছিল--সে কথ! এখন আর যেন তাহার মনেই রহিল না। এই সেই প্রাধিত উত্তর! সেই পরিচিত হাতের সুছাদের অক্ষরগুলি! তবু অধিকারী-ভেদে যেন 'অমিয়-সায়রে সিনান করিতে সকলই গরল ভেল ! কিরণ তাহার অভিযোগের উত্তর তাহাকে দেয়ই নাই--সে আবার উত্তর দিয়াছে নুনীতিকে। বামাল-শুদ্ধ আসামী যদি ধর! পড়িয়! যায়, তাহার অবস্থাও বোধ হয় এমনি শোচনীয় হইয়া উঠে। সুনীতি খোল! চিঠিখান! প্রসারিত অবস্থাতেই টেবিলের উপর ফেলিয়া দিয়! বলিয়াছিল, “তোমার কিরণের চিঠি।”

চোখ মেলিলেই চিঠিখানি দেখা যায়। জলদ প্রথম দৃষ্টিপাতেই দেখিতে পাইল, সন্বোধনে_“পূজনীয়! নীতি দিদি' লেখ! চিঠিখানি কিরণের ভাতেরই লেখা বটে। জজদ যে কিরণকে চিঠি লিখিয়াছিল, তাহা সুনীতি তবে জানিয়াছে? আজ আর জানায় যে সে জরক্ষেপও করে না--সে কথ৷ কিন্তু মনে করিতে পারিল না। বরং একটা কুন্ঠিত অপরাধের ভাবেই তাহার মুখ,ম্লান হইয়া গেল। জোর করিয়া মুখে একটু হাসি নিয়া মনের অপ্রতিত ভাবটাকে তাড়াইয়৷ দিবার জন্তই যেন সে

১৭৬ প্রত্যাবর্তন

বলিল, প্তুমি যে কিরণের চিঠি পেয়েচ, দেখুচি। বাঃ!” কথাটা দে সাধারণভাবেই বলিতে গেল, কিন্তু উচ্চারণে কণ্ঠস্বর বেস্থরা বাজিল !

স্থনীতি একটি কথাও ন! বলিয়া নিঃশবে ঘর হইতে বাহির হইয়! গেল। সেজানিত, স্বামীর হাতে এইমাত্র সে যাহ। দিয়! আসিল, তাহাতে আর বাহাই থাক, আনন্দ ঝ৷ সাস্বন৷ ছিল না। নিজের ছুঃখে ব্যথিত হইলেও স্বামীর ছু:খও যে সে সহিতে পারিত না! এমন ছুর্ববল মন লইয়াই সে জন্মিয়াছিল!

চিঠিখানায় বেশী কথা কিছু লেখা ছিল ন।। কিরণ লিখিয়াছে, “জলদবাবুর পত্রে বুঝিলাম, তাহাকে ন! জানাইয়৷ এখানে আম! আমার অন্যার হইয়াছে তাহার নিকট অন্থুমতি লওয়া৷ যে আমার কর্তব্যের অঙ্গ ছিল, তাহা আমি বুঝিতে পারি নাই। আপনার স্বামীকে বলিবেন, তিনি যেন ক্ষমা করেন। দাদামহাশয়্ বেশ ভালই আছেন। তীহার নিকট পড়াসুনার খুব সুযোগ পাইতেছি। জায়গাটিও তারী সুন্বর। আমার ইচ্ছা, অনেক দিনই এখানে থাকি ।” উপসংহারে কাহারও কুশল যাচ্ছ! করিয়া পত্রের একট! উত্তরও সে প্রার্থনা করে নাই। প্প্রণতা কিরণ” বলিয়। নাম সহি করিয়াছে।

চিঠিখানা সুনীতির নামে, তবু কাহাকে লেখা, দৃষ্টি-মাত্রেই জলদ তাহা বুঝিল। সম্পূর্ণ বাছুল্য-বঞ্জিত উত্তর ইহাকে রূঢ় বল! চলিতে পারে--কিস্ক মিথ্যার অপবাদ দেওয়! যার না। জলদের ব্যথিত অন্তর ৰলিতে চাহিতেছিল, এমন অপ্রিয় সত্য ন। বলিয়া একটু মিথ্যা বলিলেই বা! ক্ষতি কি হইত ?'এতদিন এই মিথ্যা খেলাতেই তাহারা ভূলিয়াছিল ! জলদের যে সেখানে কিছুই পাইবার ব৷ চাহিবার ছিল না, সে কথ! সেও তকোনদিন কোন ব্যবহারে তাহাকে বুঝিতে দেয় নাই? কর্তব্যজ্ঞান যদি তাহার এতই প্রথর, তবে তাহা দু'দিন আগে প্রয়োগ করিলেও

সপ্তবিংশ পরিচ্ছেদ ১৭৭

চলিত। তা” হইলে সেও তাহার কর্তব্ ক্রেটি ঘটিতে দিয়! চিরদিনের শান্তি-মুখ হারাইয়। বদিত না। অতিমান তাহাকে গীড়িত করিয় তুলিলেও, তাহার বিচার-বুদ্ধি বলিতেছিল, কিরণ ভালই করিয়াছে। এই তাহার উচিত প্রাপ্য ! সত্যই সে তাহার অধিকারের বাহিরে পা! বাড়াইন্না- ছিল। কিরণের উপর তাহার লোকতঃ ধন্মতঃ কোন দাবীই ছিল না। তবে এমন প্রবলরূপে সে কেন তাহাকে ভালবাসিতে গিয়াছিল? স্বধু বন্ধুত্ব? সত্যই কি তা*ই-_? তাহার বন্ধু-বান্ধবের অভাব নাই। কৈ, এমন আকর্ষণ দে কাহারো উপর কোনদিন অন্থুভব করে নাই। তবে একি ! রূপের মোহ? কথা মনে করিতে সে নিজের কাছেও যেন লঙ্জিত হইল। সে স্বাধবী স্ত্রীর স্বামী-_সন্তানের পিত।। নিজেও কখনো! চরিত্রে কোন দর্বলত| পোষণ করে নাই। কিরণের সহিত বন্ধুত্ব যে ক্রমে তাহাকে মোহাবিই করিতেছিল, তাহা! দে বুঝিতে পারে নাই। পারিলে হয়ত কখনই সে এব্বহারে অগ্রসর হইত ন|। সে স্থির করিল, ষে ভুল করিয়াছে, তাহ! পুরুষের মতই এবার সংশোধন করিবে। যে আগ্ন নিবাইতেই হইবে, তাহাতে ইন্ধন যোগাইবার প্রস্নোজন কি! কিরণের সকল সংস্রব সব চিন্তা ত্যাগ করিয়াই তাহার প্রতি অগ্ঠাক় ব্যবহারের প্রায়শ্চি্ত করিতে সে আজ উদ্যত হইল।

জলদ ভাবিম্া দেখিল, কিরণের প্রতি অঙ্জাতে সে অত্যন্ত অন্থায় করিয়াছে। তাহার কুমারী-ন্দয়ে ন| ধুঝিয়া দে হয় অন্ুরাগের বীজ বপন করিয়া! বসিয়াছে। অত্যন্ত অকন্মাৎ জাগ্রত মনের লক্জা ক্কর সমস্তার মীমাংসা! করিতে তাহার সাহদ হইল না। তবে'এ টুকু ফে বুঝিল যে, কিরণের সহসা! এমন নূতন ব্যবহারের নিশ্চন্ন ফোন অর্থ আছে। হয়ত এমনি একট! কিছু আভাষে শুনিয়। বা বুঝিয়! দে তাহার ভবিষ্যৎ নির্ণ করিয়া লইয়াছে। তাহাদের সম্বন্ধে হত এমন কোন কথ!

১২

১৭৮ প্রত্যাবর্তন

উঠিয়াছিল, যাহ! উঠা! উচিত ছিল না। কিব্রণকে এমন কঠোরতার মধ্যে ফেলিবার উপলক্ষ্য হওয়ায় সে নিজেকে দুর্ভাগ্য বলিয়াই মনে করিল। কিন্তু অনুশোচনা ছাড়া অতীতের জন্ত কিছুই আর তাহার করিবার নাই! দ্বিতীয়বার পত্র লিখিবার কথা সে মনেও ঠাই দিল না। সে বুঝিয়াছে, কিরণ তাহার মহিত নকল সম্বন্ধই ত্যাগ করিয়াছে।

সারাদিন এই একই চিন্তায় জলদের মনটা বিব্রত রহিল। কখনে! 'করণের তাচ্ছীল্য-অন্ুতভবে বেদন1, কখনে। বা নিজের চিত্তের দুর্বলতায় ক্রোধ জন্মিতেছিল। অথচ কথ! আলোচন! করিবার উপায়ও ছিল না। একবার ইচ্ছা হইয়াছিল, স্থনীতিকে সে তাহার মনের সব কথা খুলিয়া ধলে-_-বলিয়া মনের পাষাণ ভার লঘু করিয়া! লয়। সে ক্ষমাময়ী, এখনি ঠাহাকে ক্ষমা করিতে পারিবে কিন্তু সে ক্ষম৷ করিতে পারিলেও জলদ তাহা চাহিবে কেমন করিয়া? কেমন করিয়|। সে তাহাকে বলিবে---একরণের প্ূ্পে মজিয়। তাহাকে আমি ভাল বাপিয়। ফেলিয়াছিলাম গো! এখন ভূল বুঝিয়াছি, অতঃপর এমন ভুল আর করিব না”! কথা তাহার মনের কথা হইলে'ও যাহাকে জানাইবে, জলদের নিজের মুখে কথ শুনিলে সে শিহরিয়। উঠিবে না ? সে কি মনে করিবে না,_-ধিরা। পড়িয়া গিয়াছ,-_ সে এখন হাতের বাহিরে চলিয়৷ গিয়াছে, তা”ই সন্ধির প্রস্তাব? ছি! কাল তএ ধশ্ম-বুদ্ধি দেখ! দেয় নাই। তবে? সে ভাবিল, কাধ্যের দ্বারাই সে তাহার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করিবে।

প্রতিদিন যদি কাহাকেও কোন নিধি স্থানে নিয়মিত দেখা যায়, তাহা। হইলে তাহাকে নিত্য দেখাটাই আমাদের অভ্যাসে দীড়ায়। দৈবাৎ কোন- দিন যদি সেই মানুষটিকে দেখিতে ন1 পাই, কোন বিশেষ কারণ ন। থাকিলেও দৃষ্টি অজ্ঞাতসারে যেন সেই নিত্য স্থানটিতেই ুরিয়। বেড়ায়। অভ্যাস মনে মনে কেবলি যেন তাহাকে খুঁজিতে থাকে কেন সে আমিল না?

সপ্তবিংশ পরিচ্ছেদ ১৭৯

না জানি তাহার কি হইল! এমনি একটা অকারণ ব্যাকুলত। মনের মাঝে ঘুরিতে থাকে জলদের মনে হয়ত এমনি একট! অভ্যাসের ভাব জন্মিয়! গিয়াছিল,_দাহার অস্ফুট বাগ্রতা রহিয়া রহিয়! কিরণের সংবাদ লইবার আশায় সে বাড়ীখানার পানে তাহাকে ফিরাইয়! দিত। কিন্ত মনের সে আবদার নে রক্ষা করিত না। জানিয়া ভুলের পথে বে দে আর চলিবে না, ইহা নিশ্চিত। ক্রমে অনভ্যাসে কিরণের চিন্ত। তাহার মনে অস্পষ্ট হইয়া আসিল। দিনান্তে--হয়ত সব দিন--আর মনেও পড়িত না। এখন সে. ক্লাবে অনেকের সহিত পরিচিত হইয়াছে। কেহ কেহ তাহার বন্ধুও হইয়াছে। অতীতকে দে অল্পদিনের মধ্যেই অনেকখানি অস্পষ্ট করিয়! আনিতে পারিল।

এমন সময়ে অরুণের লেখা একখানি পুরাতন চিঠি তাহার চোখে পড়িল। পত্রে অরুণ প্ররস্কল্নদাঠর সংবাদ জানিতে চাহিয়াছিল। সে নিজে তাহার কোন সংবাদই পায় নাই, জলদ যদি জানে, তবে ধেন অবিলদ্ধে জানায়। চিঠিখান। পড়িক। জলদ মনে মনে লক্ষিত হইল। মনে পড়িল উহার উত্তর দেওয়াও হয় নাই! এখানে আসিয়া! অভিনব বন্ধু-লাতে সে যেতাহার বহুদিনের বন্ধুদের ভূলিয়াছিল, সে কথা সে মনের কাছেও অস্বীকার করিতে পারিল না। রমণী-ব্ূপমোহের এই বিচিজ্তায় সে বিস্মিত হইল।

সকল অবস্থাতেই সন্ধষ্ট থাক! জলদের স্বভাব। দুঃখ বিষার্দকে গভীর- ভাবে মে কখনও গ্রহণ করিতে পারিত না। কিরণের আননদমী মুর্তিতে আক্ুষ্ট হইস্নাই সে মুগ্ধ হইয়াছিল। হতাশ প্রেমিকের অন্থকরণে ছু'খকে বিষাদের ভাৰে বুকে পুষিয়। লালন করা তাহার স্বভাবে সম্ভব হইল না। আত্ঙ্ঞানীর শ্ায় নিজের দিককার ত্রুটি আবির করিয়া মনকে ধিক্কার দয়া দে কিরণের চিন্ত। হইতে তাহাকে নিবৃত্ত করিল।

অষ্টাবিংশ পরিচ্ছেদ

হিমানী-সানিধ্যে

আলোকনাথের অযাচিত প্রস্তাবে মুক্তা ঠাকুরাণীর মনে মনে পূর্ণ সন্মরতি থাকিলেও সুখে স্পষ্ট একট। উত্তর তিনি দিতে পারেন নাই মেয়ের মাকে না জানাইয়া তিনি আর এত বড় একট। দায়িত্বের ভার ঘাড়ে লইতে পারেন না-_ইহাই তাহার উত্তর |

তা” স্পষ্ট করিয়া মুখে তিনি নাই বলুন, বাড়ীর লোকেরা সকলেই জানিয়াছিল-_-এ বিবাহ হইবেই ! সময় প্রফুল্ল বাড়ী আদায় আলোচনা! একটু নন্দা পড়িম়াছিল মাত্র। হাক-ডাক থামিয়। কানাকানি চলিতেছিল। উপনুক্ত পৌত্রের বিবাহ না দিয়া, বধু-বর্তমানে ছেলের দ্বিতীয় বিবাহের উদ্ভোগ-আয়োজন গৃহিণীর মনেও যেন একটু বিসদৃূশ ঠেকিতেছিল, তা, ছাড়। নাতির মতি-গতির খবরও তাহার কিছু জানা ছিল। লোকে যাহাকে বলিবে স্যার, উহার চোখে তাহাই হইবে অন্তার ! লোকে যদি চলে সোজ! বান্ত দি সে হাটিবে উল্টা পথে--এমনি সে অবাক-কর! ছেলে। তাই গৃহিণীর কড়া হুকুমে নূত্তন আলোচনা আর মুখে মুখে তেমন ফিরিতে পারিতেছিল না। |

ইহাতে হিমু একটু আশ্বস্ত হইলেও, অন্য পাচ্ধনের অস্বস্তির সীমা ছিল না। ন্বয়ং আলোকনাথও অস্বস্তির ভাঁত এড়াইতে পারে নাই। যে ভ্রাতু- পুত্রকে ভুলাইয়া ছুইদিন কাছে রাখিতে পারিলে তাহার আনন্দের সীম! থাকিত না, সেই এখন যেন তাহার স্থখের পথে কণ্টক হইয়াছে! হিমানীর তল্লাসে দ্বিতলের কক্ষে দৈবাৎ আসিয়া গড়ার ছলে একবার থুরিয়া

অফ্টাবিংশ পরিচ্ছেদ ১৮১

যাওয়াও আর চলে না। তাহার জন্ত কোন নূতন উপহার পাঠাইবার উদ্যোগ করিতে আর সাহস হয় না। তবু সে সোনার অঙ্গে সোনা কেমন মানায় দেখিবার ইচ্ছায় যে নৃতন চুড়ি জোড়াটি কলিকাতা! হইতে অনেক মুল্যে ক্রয় হইয়া আসিয়াছে, সে গুলি নিজে হাতে করিয়া তাহার হাতে দিবার সাংটুকুও আপাততঃ চাপিকা! রাখিতে হইয়াছে!

মেয়েটাও আবার এমন বেয়াড়া থে বিবাহের কথ হওয়া পর্যন্ত সম্মুখে আর আসেই না, বরং ডুমুর ফুলের স্ঠায় একেবারেই অদৃপ্ত হই থাকে ! সে দিন বুক-ভর! সাধ লইয়া! নিজের হাতে তোলা! কুলের রাশি উপহার দিয়া যে প্রতিদান পাওয়া গিয়াছে, তাহা কোনো প্রেমিকের চিত্তেই আনন্দ দিতে পারে না।

আলোকনাথ ভাবিয়া পায় না যে, মনে করে কি? ভাহার সহিত বিবাহে যে উহার চতুর্দশ পুরুষ কৃতার্থ হইবে, কি বোঝে না? এতই বোকা! ব্ূপের গর্বে মনে করে, বোধ হয় কোন যুবরাজই ব1 উহার সঙ্গে মাল! বদল করিতে চাহিবে! তা” গর্ব করিবার রূপ বটে! দে কথা আলোকনাথ অস্বীকার করে না। তবে কিন। সংসাব্রটা ভিন্ন রুচিতে তৈয়ারী। নুধু রূপের এখানে আদর নাই--সঙ্গে চাই রূপচাদ ! নহিলে এমন রূপের ডালি মেয়েরও আবার বিবাহ হয় না? আব্র বিবাহ হইবেই বা কেমন করিয়া ? বিধাত। যে নিজ্জনে গড়! তাহার এই মানস-প্রতিমাকে ভাগ্যবান আলোকনাথের জন্তই সথষ্টি করিয়াছেন! নহিলে এই কয়দিনের দেখা-শুনাতেই এমন করিয়। সে তাহার সমস্ত মন জুড়িয়া বসিবে কেন? মার অতফিত দ্নেখাগুনার সংযোগও কি সেই অদৃশ্ত মিপন-কর্তারই ইঙ্গিত নয়? নহিলে কোথায় কোন্‌ অজান! কুটিরে দরিদ্র-গৃহে মহামূল্য মণি খনিগর্ভে লুক্কাফ্িত রত্বের মত লুকানে। থাকিত-_-আলোকনাথ তাহার বার্তাও জানিতে পারিত না।

১৮হ প্রত্যাবর্তন

মুক্ত। ঠাকুরাণী বলেন, মেয়েটি অত্যন্ত আদরে একটু বেয়াড়। হইয়! গিরাছে। তা” হউক, আলোকনাথ ভালবাসার বশীকরণ-মন্ত্র দিয়া উহার চঞ্চল মনকে একদিন যে বাধিয়৷ ফেলিবে, ভরসা তাহার বিলক্ষণ আছে। এখন ভালব্ধ ভালয় শুভ-কর্ম্মটি সম্পন্ন হইয়। গেলেই হয়। অনেক সময় প্রফুল্ল কোথায়--সেকি করিতেছে, খবরও সে লয়। মেয়েটার টাদ- পান৷ মুখ দেখিয়া! ছেলে না আবার ভূলিয়। বায়! হায়রে, স্বার্থপর ন্নেহ-- মানুষের মনকে এমনই সঙ্ীর্ণ করে !

কার্যের অভাবে হিমুকেও এখন অনেক দময় তাহার নিদ্দিষ্ট শয়ন. কক্ষটিতেই চুপ করিয়া বসিয়! থাকিতে হয়। সে যখন বাড়ীতে আসে, পড়িবার জন্ত সে একখানি “সদালাপ, তৃতীয় ভাগ” সঙ্গে আনিয়াছিল। বইখানি অরুণ দিয়াছিল। সে বইখানিও সে লাইব্রেরী-ঘরে কেলিয়! আসিয়াছে পাছে প্রফুল্লের সঙ্গে দেখ! হইয়া যায়, এই ভরে সেখানি অ'্ব আনা হয় না।

সকালবেলা খোল! জানাল। দিয়া রোদ আসিয়! হিমুর মুখে মাথায় পড়িয়া? ছিল। জানালার ধারে বঙিয়। হিমু অদূরে খিড়কীর পুকুরের দিকে চাহিয়া- ছিল। দাসীর! কেহ বাসন মাঁজিতে, কেহ কাপড় কাচিতে, কেহ বা চাউল শাক ধুইতে আগিয়াছে। হাতে কাজ, 'ও সেই সঙ্গে সঙ্গে মুখে গল্প9 চলিতেছিল। কেহ মনিবের, কেহ রাধুনীর, কেহ অপর চাক্রাণীর নিন্দ! করিয়! সকালবেলাকার সভাটিকে বেশ সরম করিয়। তুলিয়াছিল। তীরস্থিত সজিন! গাছের পাত! অনবরত ঝরিয়! পড়িয়৷ জলের তিনভাগ আচ্ছনন করিয়া! ফেলিয়াছে। এখন বাতাস ভিন্ন মুখে বহিতেছিল, তাই এপারের জলটুকু বেশ স্বচ্ছ দেখাইতেছিল। তীরে ঘাসের বিছানায় কুগুলী পাকাইয়! শুইয়! একটা কুকুর মাঝে মাঝে জিহ্বা কম্পিত করিয়! আলগ্ত'ভ্ঞাপন করিতেছিল। গলায় দড়ি বাধ! বাছুর ছুইটি ছাড়া পাইয়া! কখনে। লাফাইয়। কখনো৷ ঘাস

অফ্টাবিংশ পরিচ্ছোদ ১৮৩

খাইয়। আপন-মনে খেলিয়৷ বেড়াইতেছিল। পুকুর-পাড়ের আম্ডা গাছ ছুইট মুকুলের মধুর গন্ধে দিক পূর্ণ করিতে ছিল। হিমু বসিয়৷ এই-সব দেখিতেছিল। হঠাৎ ঘরের বাহিরে জুতার শব্দ এবং সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ছায়৷ পড়ায় সে ঘাড় ফিরাইয়া যাহ দেখিল, তাহাতে বিশ্মিত হইল। প্রফুল্ল আসিয়। দরজার কাছে দরাড়াইয়াছিল। তাহার হাতে 'সদালাপ* বইথানি। হিমু বিরক্ত হইল-_বইথানি দিবার ছলেই প্রফুল্ল তবে তাহার সহিত যাচিয়! কথ! কহিতে আসিয়াছে?

কিন্ত হিমু এখন ঠেকিয়৷ শিখিয়াছে। সে প্রদুল্লের সম্বন্ধে কিছু ন' জানিলেও এ-বাড়ীর লোকদের আর কাহারে! সঙ্গে কথা কভিবে না৷ তা”ই মুখ ক্ষিরাইয়া সে আবার তাহাব্র অনভিপ্রেত দৃশ্ঠাবলীতেই ক্লান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করিগ।

প্রফুল্ল ঘরে ঢুকিয়া বিন! ভূমিকায় একেবারেই কহিল, “তুমি হিমানী ? অরুণের বোন্‌? ঝাল্দায় তোমাদের বাড়ী?

অরুণের নাম শুনিয়! হিমু কিন্ত তাহার 'দাসীন্য বজায় রাখিতে পারিল না। তাহার সহসা! মনে হইল, এই প্রফুল্ল বাবুই অরুণদা'র সেই প্রফুল্লদ। নন্ত? নিশ্চয়ই তাই! আনন্দ কৌতুক-পূর্ণ চোখের দৃষ্টি ফিরাইঃ়! দে কেবল ঘাড় হেলাইয়! এক কথায় তাহার সব কথার উত্তর দিল, “হ্যা ।*

প্রফুল্লের মুখ মুহূর্তে ম্লান হইয়। গেল। সে কহিল, “এই বইখানায় অরুণের নাম দেখে আমারও তাই মনে হয়েছিল। অরুণ জানে__-এ সব কথ? এতে তার মত আছে?”

অরুণের কোন্‌ বিষয় জীনার কথ! প্রকল্প জিজ্ঞাস। করিতেছে বুঝিতে ন! পারি হিমু বিশ্বিতিভাবে চাহিয়। রহিল। প্রকুল্প একটু হাসিয়। কহিল, "অরুণ আমার “প্রকুল্লদ' বগে আমায় তুমি তার মতই বিশ্বীন কর্‌তে পার ।”

১৮৪ প্রত্যাবর্তন

প্রফুল্ল হয়ত মনে করিয়াছিল, হিমু তাহার প্রশ্নে সন্দিগ্ধ হইয়া উত্তর দিতে অনিচ্ছুক হিমু কহিল, “আমি আপনার কথা অনেক শুনেছি। অরুণদা আপনাকে খুব ভালবাসে |”

প্রফুল্ল একটু ইতস্ততঃ করিয়া! বলিল, “কাকার সঙ্গে এই বিষ্লেয় তোমার মত আছে ?”

হিমু জানিত, নিজের বিবাহের সম্বন্ধে কোন কথ! কহা। মেয়েদের পক্ষে অপরাধ--লোকে তাহাতে নির্লজ্জ! বলে। তাছাড়া এই কয়দিনের ঘটনাবলী তাহার মনেও একটুখানি সংসার-জ্ঞান আনিয়। দিয়াছিল। কিন্তু সে ভাবিম্না দেখিল, প্রকুলপ বাবু অরুণদা'র বন্ধু। ইনি বাড়ীর লোক হইলেও ইহাকে বিশ্বাস করিতে আপত্তি নাই। সে ইহার অনেক নুখ্যাতি শুনিয়াছে, লজ্জা করিবে কি না-_দ্বিধা-গ্রস্ত হয় ইতস্ততঃ করিতেছে দেখিয়। প্রকুল্ন পুনরায় কহিল, *্য| বল্বার থাকে, আমায় তুমি অসক্কোচেই বল্তে পার। 'অরুণের মত আমায় তুমি তোমার বড় ভাই বলেই মনে করো |”

এমন ঢালা হুকুম পাইবার পর লজ্জার কারণ আর হিমুর মনে কি বাকিতে পারে? সে মুক্তির আনন্দে উৎসাহিত হইয়া কহিল, "আমার জাপনি বাড়ী পাঠিয়ে দিন। আমি ওঁকে কখনোই বিয়ে কর্ব ন1।”

“করবে না কেন? উনি খুব বড় মানুষ ত! খুব সুখে রাখবেন, ঢের গহন৷ কাপড় থেলন! দেবেন।”

প্রদুল্লের কণ্থস্বরে তাহার মনের ভাব বুঝ। গেল না। হিমু কহিল, "উনি হেমলতাদি'র স্বামী আমি বড় মানুষ হতে চাই না ।”

সে যে কেন আলোকনাথকে বিবাহ করিতে চায় না, এই অল্প কথাতেই তাহা এমন স্পষ্ট প্রকাশ হইল যে, প্রফুল্ল মনে মনে মেয়েটির প্রতি একটুখানি করুণ কৃতজ্ঞতা অনুভব না করিয়! থাকিতে পারিল ন!।

অক্টাবিংশ পরিচ্ছেদ ১৮৫

ধশ্বর্য্ের লোভে মুগ্ধ হইয়া সে তাহার দিদি-আখ্যায়িতা নারীর প্রতি অন্তায়াচরণ করিতে চাহে না, ইহা মনে হওয়ায় প্রফুল্ল খুসী হইস়! কহিল, তাহলে বিয়ে বন্ধ হওয়ায় তোমার অমত নেই ?”

হিমু হাসিয়া মুখ করাইয়া! কহিল, “একটুও না”

এইবার সত্যই তাহার লজ্জা করিতেছিল। মাগো, কেবল কেবল নিজের বিয়ের কথ! কি বল| বার? কি কুক্ষণেই যে সে ৰাড়ীর বাহির হইয়াই ': . ধোপানীর মুখ দেখিয়াছিল। দিদিমা অপ্রসন্ন মুখে তখনই দুর্গা নাম” স্বরণ করিয়া ছিলেন। সে কিন্ু তাহ করে নাই। সে অরুণের কাছে শুনিয়াছিল, সব মানুষের কুসংস্কার! এইবার দেখা হইলে সে তাহাকে বেশ করিয়া! বুঝাইয়! দিবে যে লেখা-পড়া শিখিলেই শান্ত শেখা হয় না! দিদিমার মত শান্্র-জ্ঞান হইতে তাহার এখনও বিশ বৎসর বিলম্ব আছে।

প্রফুল্ন কহিল, “আমি কাকাকে আগে বুঝিয়ে বলি, তিনি যদি মত বদল করেন, ভালই। না হলে”--বলিয়া সে ইতন্ততঃ করিতে লাগিল। হিমু পরবর্তী উপায়ট শুনিবার জন্য উৎসুক দৃষ্টিতে চাহিয়। রহিল।

প্রফুল্ল কহিল, "ন1 হলে তোমার এখান থেকে চলে ধাওয়া দরকার। €কন্ধকি করে ত। হয়, তাই আমি ভাব্‌চি | কাক! হয়ত যেতে দেবেন ন1।৮

হিমু সিংহিনীর স্তায় মাথ! হেলাইয়৷ দ্ধ কে কহিল, “ইস্‌, দেবেন না! কার সাধ্যি আমায় জোর করে রাখে? রাখুক দিকি। আমি ঠিক চলে যাব।* না

প্রফুল্প হামিয়৷ কহিল, "সাধ্য অনেকেরই আছে! আচ্ছা, তুমি যদি দিদিমার সঙ্গে মেল! দেখতে যাও, আর সেখান থেকে অরুণ তোমায় বাড়ী নিয়ে বায়,-দিদিমা,কি তাহলে ভারী রাগ্‌ কর্বেন ?”

হিমু কহিল, “কি করে সে জান্তে পার্বে ?”

১৮৬ প্রত্যাবর্তন

প্রচলন কহিল, “আমি তাকে খবর দেব। ব্যাপার গুন্লে সে নিশ্চয় আম্বে। আচ্ছা, অরুণ কি তোমার আপন ভাই ?*

হিমু কিছুক্ষণ নীরবে থাকিয়া! এবাটু ইতস্ততঃ করিয়। অনিচ্ছাতেই আস্তে আস্তে কহিল, “না, মার পেটের নয়, আপনও নম্ন। ওকে, তা।ও নিজেই জানে না। কে একজন বড়লোক ওকে জল থেকে এনে মানুষ করেছিল। হঠাৎ সে বড়লোক মারা গেলে দিদিনার কাছে থাকৃলে! আপন ন! হলেও অরুণদা* এখন আমাদেরই ।”

সব কথ। প্রফুল্ল পুর্ব্ব হইতেই জানিত, তবু হিমুর মুখে শুনিতে চাহিল। জানিত বলিয়াই অরুণের কাছে সে নিজের বাড়ীর কথ তেমন করিয় কিছুই কখন বলিত না। অরুপেরই এশ্বধ্যে যে তাহারা রাজভোগে থাকিয়। তাহাকে বঞ্চিত করিয়া আসিতেছে, এই ভাবের প্রেরণাতেই দে অরুণের নিকট নিজেকে অপরাধী বলিয়। মনে করিত। আশ! ছিল, সুদূর ভবিষ্/তৈ সে তাহাদের এই অন্তায় আচরণের প্রারশ্চিত্তও একদিন করিবে। কিন্ত এখন তাহার ভাগ্যলিপি বদল হইয়া গিয়াছে কাক: যখন বিবাহের সখে মাতিয়াছেন, তখন ইহাকে না পান, অন্ত কাহাকেও বিবাহ করিবেন, নিশ্চয় সংসারের নিকট তাহার আর কোন মূলাই নাই। সে এখানে এখন অনাবস্তক ভার মাত্র! তাহাতে ক্ষতি অবশ্ঠ তাহার কিছুই নাই। কেবল এই শধ্যাশায়িনী খুড়ীমার মরণ পর্যন্তই তাহার এখানকার বাধন! তা”র পর সে সম্পূর্ণ স্বাধীন। হা, আরও এক জায়গায় কিছু কর্তব্য তাহার আছে বটে। সে তাহার মা। যে মাকে সে কোনদিনই বোঝে,নাই,--এবং তিনিও তাহাকে বুঝিতে চাহেন নাই। হয়ত, ক্রটিটা! তাহার তরফেই অধিক হ্ইয়৷ থাকিবে নহিলে, কুপুত্ু হইলেও কুমাত। কখনো হয় না। হতভাগ্য সে-ই তবে সে অমূল্য মাতৃ- স্নেহে চিরবঞ্চিত রহিয়। গেল কেন?

অফ্টাবিংশ পরিচ্ছেদ ১৮৭

অতি শৈশবে কাকা যখন তাহাকে মাতৃক্রোড-ঢাত করিয়া! লইর়া আসে, তখন অবগ্ব এই আশ! করিয়াই আনিয়াছিল যে সন্তান-বাৎসগ্য সকল অভিমানের উপরে জয় লাভ কব্রিবে। কিন্তু সেট কাক! ভূল করিয়া. ছিল। মা সন্তান ছাড়িলেন_-তবু সংকল্প ছাড়িলেন না। তা*র পর অদ্ভুত ভাগা-পরিবর্তনে আগোকনাথ বখন রাজ-শ্বর্যোর অধিকারী হইল, তখনও প্রফুল্ল তাহার মাকে ভূলিয়! বায় নাই! বরং সেবার প্রফুন্পই নাসের দাসদাসী সঙ্গে করিয়া! তাহাকে আনিতে গিয়াছিল। তখনও ম! আদিলেন না। দিদিমা! তখন মরিয়। গিয়াছেন। মাম! ব্রাজদ্রোহ-অপরাণে অনন্ুভূত নির্ধ্যাতনে মরণাধিক শোচনীয় অবস্থায় জেলখানা হইতে মুক্তি পাইয়া বাড়ী আসিয়াছেন। নিয়াঙ্গ তাহার পক্ষাঘাত -গরান্তের শ্যার অসাড় হইয়। গিয়াছিল। ম! সেই অর্দমূত ভাইয়ের সেবাতেই শরীর-মন উৎস করিয়! দিয়াছিলেন। তা”ই ছেলের ডাক্‌ তাহার কানে পৌছাইল ন1। প্রফুল মামাকে বাড়ী লইয়৷ গিয়া! ভাল রকম চিকিৎসা করাইতে চাহিল ! মা তাহা অস্বীকার করিলেন। যদি সমানে সমানে কুটুষ্বিত। হইত-_ত্ে ইহা অনায়াসে চলিতে পারিত। কিন্তু ক্ষেত্রে তাহ! সম্ভব নয়। তাহার জীবন্মৃত ভাইকে তিনি ধনী আত্মীয়ের উপহাসের লক্ষ্য হইতে দিতে পারেন না। নায়েব অনেক বুঝাইল। প্রফুল্ল রাগ করিল, চোখের জল ফেলিল-_ফলে কিন্তু কিছুই হইল না। ঘোর অভিমানে প্রফুল্ল মনে করিল, মা তাহাকে কোনদিনই ভাল বাসেন নাই। ছুইদিন কাছে থাকিয়। বাইবার জন্ত মার করুণ অন্ুরোধও সে তা'ই উপেক্ষা করিয়া চলিয়া আসিয়াছিল।

ইহার পর সে তাহার জীবনের গতি গালা করিয়া লইল ! লেখাপড়ায় প্রবল অনুরাগ থাকায় পূর্বেও সে তাহ! করিত। এখন ইহাকেই সে তাহার জীবনের উদ্দেশ্ত করিয়া লইল। সমগ্ন সময় বিপন্নের

১৮৮ প্রত্যাবর্তন

ডাকও তাহার কাণে পৌছিত। সে নিজে ছুঃখী, তাই ছঃঘীর প্রতি তাহার সমবেদনা জন্মিত। স্থান-কাল-অবস্থ। সব ভূলিয়া সে তা*ই দশের কাজে নিজেকে স'পিয়া দিত। লইয়া! আলোকনাথের সহিত কতদিন বনান্তর হইয়াছে, হেমলত। কান্নাকাটি করিয়াছে, ঠাকু”মা” নিজ মৃত-মুখ দর্শনের ভয় দেখাইয়! দিব্য দিয়াছেন তবু তাহাকে কেহ কোনদিন ফিরাইতে পারে নাই। আজও তাহার বিবেক বখন বলিল, হিমুকে বিবাহ কর! কাকার অন্তায়, তখন সারা অন্তঃকরণ দিয়াই সে তাহার মনের বুক্তির অনুমোদন করিল ! বিশেষতঃ এই হিমু--এ তাহার বন্ধুর আত্মীরা। তাহার অজ্ঞাতেই বিবাহ ঘটিতেছিল ! বিবাহ কখনোই সে হইতে দিবে ন|।

প্রচুল্প স্থির করিল, মালতী দেবীর সহিত সাক্ষাৎ করিয়া সে তাহাকে সংকল্প হইতে নিবুত্ত করিবে মেয়েব্র বিয়ে হয় না, আবার একট। কথা নাকি? মানুষ এখন মনুষ্যত্বের দিক্‌ হইতে সাড়া দিতে শিখিয়াছে। দেশের জন্য লোকে হাসি-মুখে কত মহত ছুঃখ বরণ করিয়। লইতেছে, এও সেই দেশেরই কাজ, মায়েরই সেবা! গরীবের অপরূপ রূপসী কন্ত/কে বিনা-পণে গ্রহণ করিয়া কৃতার্থ করা, কি এমনই ভরঙ্কর স্বার্থত্যাগের বিষয়? বিবাহের জন্ত ভাবন। নাই। সে ভার প্রফুল্ল লইবে। এখন উহ্থাদের মতি পরিবর্তন করিতে পারিলে হয় ! খুড়ীমার স্থান__তা'ও আবার হিমুকে দিয়া দখল করাইতে, সে কিছুতেই দিবে না। ইহাতে কাকা রুষ্ট হ'ন্‌, হইবেন। কর্তব্য-পালনে সে কখনও ভয় পার নাই-__ আজও পাইবে না। কাকার বিরুদ্ধাচরণ করা অবশ্ত তাহার অনুচিত। তা"ই সে স্থির করিজ, প্রথমে তাহাকে সংকল্প হইতে নিবৃত্ত করিবার সে চেষ্টা করিবে। উচিত কথ। তিনিও কাহারও মুখে শুনিতে পান না? দত সব স্তাবকের দল! প্রফুল্লের অনুরোধে অন্ততঃ কাকিমার বাচিয়। থাক। পর্য্যন্ত কথাটা রাখিতে পারিবেন।

উনত্রিংশ-পরিচ্ছেদ খুড়া-ভাইপো

দুপুর বেলায় ঘৃম ভাঙ্গিয়া সদর অন্দরের মাঝখানে একথান৷ সুসজ্জিত ঘরে খাটের বিছানায় তাকির়ায় অর্ধ হেলান দিয়া শুইয়! আলোকনাথ রূপার গড়গড়ায় তামাক টানিতেছিল। ঘুম ছাড়িয়৷ গেলেও তন্ত্রার ঘোর তখনও ভাল করিয়া কাটে নাই। অর্দমুদিত চোখের কাছে হিমুব্র পুম্পিত-যৌবন দেহ ঢল-ঢল মুখখানিই ভাসিতেছিল। এখন নিত অবসরে সেই মুখখানির ধ্যান করাই আলোকনাথের কাজ হইয়াছিল সেই বূপাধিকারিণী কবে যে তাহার পার্খ-সঙ্গিনী হইয়া পরমানন্দ দান করিবে, কল্পনায় তাহাই অন্ধাবন কর! তার এখন প্রধান সুখের মধ্যে দাড়াইয়াছে। পায়ের শব্দ করিয়। প্রফুল্ল আসিয়। ঘরে ঢুকিলে আলোকনাথের আনন্দ-স্বপ্ন ভাঙ্গিয়। গেল। বিছানায় বথেই্ট স্থান থাকিলেও সে ঘরের কোন হইতে একখান! চৌকি টানিয়া আনিয়। কাকার কাছে বদিল। ব্যবহার নৃতন। আলোকনাথ লক্ষ্য করিলেও কথা৷ কহিল না।

ছুইজনের মনেই মেঘ জ্মিয়াছিল। কথা কহিবার মত কিছুই খু'জির না পাইয়া কিছুক্গণ চুপ করিয়াই কাটির! গেল। প্রচুল্লের বলিবার কথা এত অধিক ছিল যে তাহার চাপে সে ক্র হারাইয়া ফেলিয়াছিল। আলোক- নাথের বলার কথ! কিছুই ছিল না। ঘা ছিল--সে সেই প্রথম সাক্ষাতে কুশল প্রশ্নেই ফুরাইয়া গিয়াছে নৃতন আর কি আছে? হা, একটা! ছিল,_ “কবে যাচ্চ?* এইই প্রশ্নটাই এখন প্রধান। আপদ বিদায় হইলেই বাচা বায়!

১৯৩ প্রত্যাবর্তন

ইতস্ততঃ-ভাবট। কাটাই গ্রফুল্লই প্রথমে কথ। কহিল। সে বলিল, “কাকিমার জবর দেখ্ঠি আর বন্ধই হয় না। আনুসঙ্গিক উপদ্রব সমস্তই রগ়েচে। বরং গতবারে ঘ| দেখে গেছি, তার চেয়ে বেড়েচি। এখন উঠে বস্তে-টস্তেও পারেন ন|।*

জালোকনাথ মুখের নল ন। সরাইয়। অনাগ্রহভাবে কহিল, পু

“কিন্ত তাঁর জন্তে কোন ব্যবস্থাই হরনি। কবিব্রাী ওষুধ উনি জার খাচ্ছেন না। কবিরাজ মশায় বল্লেন, হাত-টাতও দেখান না! উপকার না হলে--অনেক দিন ভূগ্জে রোগী অসহিঝু হয়ে ওঠে, তা বলে খাড়ীর লোক হাল-ছাঁড়া হলে চলে না। আমার মনে হয়, একবার কল্কাতায় নিয়ে গিরে কে ভাল করে দেখানো! উচিত !*

“উচিত, ত| কর না বাপু কেউ বারণ করে রাখেনি, আমায় ওমবের ভেতর জড়িও ন! শুধু। বারোনান রোগ আর ব্রোগ__ক্ষেপিক়্ে ভুলেচে ধেন! দ্বদিন সরে গেলেও হাপ ছেড়ে বাঁচা যায়” বলিয়া আলোকনাথ গডগড়ার নলট। ফেলিয়া দিয়া অপ্রসন্ন মুখে ডাকিল, “রেধো, এই বেটা রেধো |”

“আজে যাই” বলিয়া বাবুর খাস-খানসাম। বরাধানাথ সজ্জিত কণিকার দি: দিতে ঘরে টুকিয়। কলিক। বদ্‌লাইয়। দিয়! চলিয়। গেলে আলোক- নাথ পুনরায় গড়গড়ারর নল মুখে তুলির। 'অন্তমনক্কভাবে টানিতে লাগিল

প্রফুল্ল বিপদে পড়িল। খুড়ীমার সম্বন্ধে কর্তব্যের মীমাংসার পরিণাম ত্াহাব্র রোগোপনোদনের ভেষঙ্গ হইবে কি না,কে জানে! হয়ত এই সুযোগে গৃহকর্তীর শূলট স্থান পুর্ণ হইয়। এই বিদায়ই গৃহলক্ীর চিরবিদায়ের শ্বাচ্জোজনে নাড়াইবে বিয়ার পৃর্বেই বিসর্জনের পালা সাঙ্গ হইবে। জ্আন্র ঘটনার উপলক্ষ হইবে-সে নিজে না, ব্যবস্থায় সে এখন আর দম্মতি দিতে পারে না। সে শান্তভাবে কহিল, "এখনই ওঁকে নিয়ে

উনত্রিংশ পরিচ্ছেদ ১৯১

বেতে পারা যাচ্চে না। তার আগে একবার কোন বড় ডাক্তারকে আনিয়ে শাবস্থা নিতে হবে। যাতে বাবার কষ্ট সহ করতে পারেন, তাই আগে করা চাই। হ্রিশ আজই বাক্‌, ডাক্তার সাম্যালের কাছে। তিনি বাঁকে বল্বেন, তাকে নিয়ে আস্বে।”

আলোকনাথের ললাট জ্রযুগ কুঞ্চিত হইয়! উঠিল। মনে হইল, আবার এক গ্রহ জুটিল। যে মরিতে বসিয়াছে, তাহাকে শান্তিতে যরিতে দাও,--তা না--কলিকাতা৷ হইতে ডাক্তার আনাও ! পয়সার শ্রাদ্ধ করাও! তা'র পর সত্যই যদি বাচিয়া উঠে, তখন? তাহার ঝর সামলাবে কে রে বাপু? তোর এত মাথ! ব্যথা কেন?

আলোকনাথের মনে পড়িল না যে অভাগিনী রুণগ্রার নিকট একদিন তাহাবাও কত পাইন্নাছে ! ম! ছাড়া প্রফুল্ল অকৃত্রিম মাতৃ-ন্সেহই সেখানে পাইয়াছে,_-সে অনুপাতে কি-ই বা সে দিয়াছে করিয়াছে! আর মে নিজে? কিছুই কি পায় নাই? ছুঃখের দিনের সঙ্গিনী,__সেবা-বন্র, প্রাণটাল।-ভালবাস। দিয়! সেকি আলোকনাথকেও দেবতার মত পুজা করে নাই? রোগে পড়িয়। এখনও সে কি তাহারই স্ুুখ-স্বাচ্ছন্দ্য-বিধান কলে মনোযোগী হইরা নাই? তরুণ জীবনে বসস্তেব্র নবপল্লব মাত থে দুগ্জরিত লতারটি স্ুগন্ধে সৌন্দর্যে তাহাকে পুলকিত পরিতৃপ্ত করিয়াছিল, আজ সে শীত-শীর্ণ মরণাতুর, তবু তার মধুর স্থৃতি- টুকুও কি আর মনে স্থান দেওয়। চলে না? জীর্ণ লত| এখনও যে সেই নাবী বাখিয়াই বাচিয়া আছে! আশ্রম্ম হইতে চ্যুত হইলে সে আর বাচিবে কি লইয়]? প্রশ্ন আলোকনাথের মনে উঠিল ন।! বুঝি, এমন অবস্থায় কাহারও তা উঠে না

আলোকনাথ বিরক্ত স্বরে কহিল, “অনর্থক ফের কতক গুলো পয়ম। জলে ফেলা বৈত নয়। সেসব চেষ্টাও গোড়ায় গোড়ার ঢের কর!

১৯২ প্রত্যাবর্তন

গেছে। আর কেন বাপু? এখন ওর পরকালে কিছু স্থৃবিধে হয়, এমন: কিছু করাতে হয়ত করিয়ে দাও! আসে জন্মে আর এমন করে ন! ভুগে মরে !”

কথাগুলি বুট ! তবু শেষের দিকটায় যেন একটু ন্েহের উচ্ছ্বাসে আর্র হইয়া বাহির হইল।

কাকার কথায় প্রফুল্ ক্ষুব্ধ হইলেও আম্মসন্বব্ণ করিয়া কহিল, “সে সক যা কর্তে হয়, আপনার করাবেন। আমি এখনই হরিশকে চুণী ডাক্তারের কাছে পাঠাচ্চি। তা”ছাড়া আর একট! কথা আমার বল্বার আছে।”

আলোকনাথ অপহিষ্ণভাবে কহিল, প্য৷ বল্বার থাকে, চটপট বলে ফেল ! কেনই যে বলা, তা তুমিও জান কর্ত! দেখ্চি তুমি। তোমার ইচ্ছাতেই যখন কাজ, তখন অনুমতি চেয়ে অনর্থক আমার অপমান ন! কর্লেই ভাল হয় না? দেওয়ানকে ডিস্ঞাসা করো,_-ডাক্তার বলেছে, রোগ সার্বার নয় ।”*

্রফুল্প উঠিয়া আলোকনাথের পায়ের ধূলা মাথায় দিয়া অনুতপ্ত স্বরে কহিল, “আমায় মাপ্‌ করুন, কাকা আমি বড় অবাধ্য কিন্ত এটায় আমায় অনুমতি দিন আপনি, নৈলে আমি বে শান্তি পাচ্চি না। সত্যি আমারই তক্রটি। আমিত এতদিন তেমন করে মন দিই নি-__সেব! করিনি--কিছুই না আপনার তরফ থেকে অনেক হতে পারে। আমার কিছুই হয় নি।”

আলোকনাথ কথা কহিল না, তাম্রকুট-সেবনে মনোযোগী হইল। প্রফুল্লের কথার তাহাধ্ধ মনের মধ্যে হয়ত ক্ষনিক একটা দুর্বলতা আসিঙ্গা- ছিল। একবার ইচ্ছ1 হইয়াছিল, তাহাকে কাছে টানিয়া দুইট! মিষ্ট কথ! বলে, কিন্ত কিছুই বলা হইল না। মনে পড়িল, উহার আরও একট! দাবী মত জুএবং এখনই তাহা শুনিতে হইবে আর সে দাবীটা খুব সম্ভব

উনব্রিংশ পরিচ্ছেদ ১৯৩

তাহার ুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিধানের চিন্তার ফগ নয়-_প্রকুল্লেরই স্বার্থরক্ষার অর্গল। এই কথাট৷ মনে উঠিবামাত্র স্বার্থপর আলোকনাথের মনের ক্ষণিক ছুর্বলতাটুকু দূর হইয়া! গেল। মনে হইল, সংসারে স্বার্থপর কে নয় ? এই যে উচ্চশিক্ষিত প্রফুন্প ! দেশবনু প্রফুল ! পরোপকা রী স্বার্থত্যাগী প্রকুল্ল যাহার প্রশংসা-বানী সাধারণের মত একদিন তাহাকেও মুগ্ধ করিয়াছে, পুলকিত করিয়াছে--নেও কি অপর সাধারণের মত স্বার্থ-রক্ষায় ব্যাকুল নম্ব? এই যে খুড়ীর জন্ত এত উদ্বেগ, এত এ্কাস্তিক যত, এ-সব এতদিন ছিল কোথার ? ছেলে দেশোদ্ধার করিয়া, গ্রামে গ্রামে তাত বসাইয়!, চরক! চালাইয্না প্রচার-কাধ্যে ব্যস্ত ছিল। তা”ই ঘরের খবর লইবার তাহার অবমর হয় নাই! স্বীকার করি, রোগের বাড়াবাড়ির খবরটা! লে পুবের জানিত না। কিন্তু জানিতেই ব! মানা করিয়াছিল কে? জিজ্ঞাসা করিতে পারিত না কি? দেশের খবর রাখিতে পার, আর ঘরের খবর রাখিতে পার না, বাপু? ও-সব চালাকি ! এবার স্বার্থে ঘা লাগিতে চলিয়াছে। তাই মরা গাছে জল ঢালিবার এত আয়োজন হইতেছে বাহাকে যে লইবে, তাহাকে কি মানুষ বাচাইতে পারে? পাগল! আলোক নাখও মানুষ প্রফুলের স্ায় হৃদয় জিনিষটা তাহারও বর্তমান | কপণও সে নয় তাহার আর বাপ-পিতামহের উপার্জনের কড়ি নয় বে যগ্‌» দিবার ব্যবস্থা করিবে। পয়সা খরচ করিতে সেও জানে জমিদার-গৃহিণীর অবশ্ত-প্রাপ্য চিকিৎসা-সেব! কিছুরই ত্রুটি এখানে হয় নাই। বরাতে তাহার সুখভোগ নাই, লোকে তাহার করিবে কি? কে তাহাকে মবূণে সাধিয়াছিল ? তবু ভাগ্যবানের হাতে পড়িয়াছিল বলিয়া! মরণ-শয্যাটাও রাণীর মন্ত ঘটিয়াছে। তবে আবার চোখ রাঙ্গাইতে আইস, কিসের জন্য বাপু? আসল কথা--এঁ রক্ষা-কবচ গলায় ঝুলাইয়৷ আত্মরক্ষা করা। সেআর হয়ন! গো" শ্মশান-যাত্রীর পথ তাকাইয়া দে তাহার বাকী জীবনট। আর ব্যর্থ ১৩

১৯৪ প্রত্যাবর্তন

হইতে দিবে না। স্বামীর চিতায় পুড়িয়া মরিবার বাবস্থা পূর্বকালে ছিল বটে-_কিন্তু স্ত্রীর চিতায় স্বামীর পুড়িবার ব্যবস্থা কোন কালের কোন শাস্বই দেয় নাই!

খুড়ার চিন্তাচ্ছন্ন মুখের পানে চাহিয়৷ গ্রকুল্ল দ্বিতীয় আবেদন নিবেদন করিতে ইতস্ততঃ করিতে লাগিল। অথচ সেটাই যে উপস্থিত প্রয়োজন। “বলম্ব করিলেও চলিবে না। কিছুক্ষণের নিস্তবূতার পর দ্বিধ! কাঁটাইয়। সে কহিল, “আমি শুন্ছিলুম, আপনি আবার--আবার নাকি বিয়ে করবেন! কথাট। কি সত্যি?”

আলোকনাথ বারকতক জোরে জোরে তামাকের ধোয়। টানিয়া তাহ। ছাঁ়িয়। দিয়! অন্য দিকে চাহিয়! দ্রুত উচ্চারণে কহিল, “সত্যি হ'লে বোধ হয় অস্কুত কাণ্ড কিছু হবে না! আমার ছেলে নেই, মা! বখন ধরেচেন, তখন তার ওপরও আমার একট। কর্তব্য আছে ত?”

প্রফুল্ল ক্ষুব্ধভাবে কহিল, “কাকীমার শরীরের এই অবস্থার উপর এট পুৰ সাংঘাতিক আঘাত হবে না কি ?”

আলোকনাথ উদ্বাসীনভাবে কহিল, “বল্তে পারি না। মেয়েদের গুংসে শুনেচি-_খুব। হতেও পারে।”

প্রফুল্ল কহিল, “আমায় কিছুদিন যত্র-চিকিৎসার ভার নিয়ে দেখতে *দন। যদি না সারে, তখন--”৮ তখন যে কি হইতে পারে, প্রফুল তাহ! কতক লজ্জায়, কতক ক্ষোভে ঠোটের বাহির করিতে পারিল ন|।

আলোকনাথ কুদ্ধ কুর দৃষ্টিতে ভ্রাতুদ্পুত্রের বিষাদ-মগ্ডিত মুখের পানে চাহিয়। বঙ্িল, প্ডাক্তার বলেচে, রোগ কখনই সারবে না হ'তে পারে, চ'ব্ছর পরে যাবে,_হ'তে পারে, ছু দিনেও তা৷ ঘটতে পারে। হঠাৎ হাট ফেল্‌ করেও যেতে পারে। এখনও কি বল্বে, মৃত্যুকে আঁকৃড়ে আমার চিরদিন বসে থাকৃতে হবে? আমার দ্দিক্‌ট! দেখ্চ কি ?”

উনত্রিংশ পরিচ্ছেদ ১৯৫

প্রকুলল জানিত, খুড়ীম। শব্যা লইবার পর-_-না৷ কাকা, না সে, কেহই ন্তাহারা তাহাকে আকড়িয়। বসিয়া নাই ; এবং তাহার অভাবে কাকার কোন সখ, কোন আমোদ-প্রমোদও পর্য্যন্ত বন্ধ হয় নাই। বরং কণা কন্ত্রীর কর্তৃত্ব না কুরাইতেই ঘটনাটি এখন অবাধ আনন্দলাভের জুযোগেই দীড়াইয়াছিল। তবু সম্বন্ধের গুরুত্ব মনে রাখিয়৷ সে নম্র-কঠে কহিল, “তা'হলে এখন ও-সব হাঙ্গাম বন্ধ রাখাই ভাল নয় কি ? তাতে যদি 'ছুবছরটা-_-আমরা ডুদিনেই ডেকে আনি?” উদ্বেগে আশঙ্কায় তাহার কথস্বর কাপিতেছিল। এই মাত্র পাষাণ পুরুষের কঠোচ্চার্রিত যে নিষ্টুর মন্তব্য ডাক্তারের বাণী-রূপে সে প্রাপ্ত হইল, তাহার কঠোরতা সে তখন সারা মনে-প্রাণে অনুভব করিতেছিল। ইহার পরেও মানুষ যে এমন করিয়। কাহারও স্ন্ধে অবিচাব্র করিতে পারে, যেন সে ধারণাই করিতে পারিতেছিল না।॥ তাহার তরুণ হৃদয় সেই একমাত্র পরম ন্নেহশালিনী, অসাধারণ ধৈর্য্যময়ী নারীর চরম ছুর্গীতির কল্পনাতেও শিহরিয়া৷ উঠিতেছিল। সে পুনরায় কহিল, "না না--এ আমি কখনই হ'তে দোব না-তিনি বেচে থাকতে তার জায়গায় আর কেউ এসে বস্তে পাবে না-_কিছুতেই না 1” আলোকনাথের মুখে ক্রুর হাসি ফুটিরা উঠিল। ক্রোধ-কম্পিতস্বরে সে কহিল, “কেন বল দেখি? এত জোর খাটাবার সত্যি অধিকার তোমার কি কিছু আছে এখানে? স্বার্থে পড়চে বলে জ্ঞান হারিও না। তুমি যেমনই হও, আমি উচিত-কর্তব্ই কর্ব। ভবিষ্যতে জমিদার হতে ন! পাও--ভাতের ব্যবস্থা তোমার থাকৃবে--ভয় নেই। ছিংসেতে তুম যে মেম়্েদেরও ছাড়ালে, দেখ্চি ?” প্রদুল্ল উদ্বেগ-বজ্জিত শান্তমুখে কহিল, “ন। কাকা, জমিদারা হারাবার তয় আমি একটুও করি না। কারণ আপনার কৃপার দরকার হলেই টাক। হতে আসায় ভাবনাটা শিথ্তেও পারিনি। আঙজগ যখন মনে করিয়ে*

১৯৬ প্রত্যাবর্তন

দিলেন, আর আপনার মনেও খন এটা উঠেচে, তখন বল্ছি, আপনার জমিদারী, সম্পত্তি, অর্থ, বা-কিছু--আমি যদি তার কণামাত্রও কখনে: গ্রহণ করি, তবে যেন মাতৃঘাতীর দেশদ্রোহীর মহাপাতকে পাতকী হই! এর বাড়া বড় শপথ আমি আর কিছু জানি ন1।”

আলোকনাথ এক সময় প্রফুল্লকে বথার্থই ভালবাসিয়াছিল। এরশ্বর্ষোর' সহিত রুচি পরিবর্তনে খুড়া ভাইপোয় বছর কয়েক হইতেই খিটিমিটি, মতভেদ প্রায়ই উপস্থিত হইত। তবুস্ত্রীর উপর তাহার থে বিদ্বেষের ভাব জন্মিয়াছিল, প্রফুল্লেব্র উপর তেমন কোন বিদ্বে-ভাব তাহার ছিল ন1। নবপ্রণয়ের রঙ্গিন চিন্তার বাধা-ন্বরূপ মে যখন আসিয়। দাড়াইল, তখন মনে করিয়াছিল-_মর্থের প্রলোভনে তাহাকে ভূলানে৷ চলিবে ধর্মত; উহার প্রাপ্য কিছুই নাই! ছেলেও শ্রিক্ষিত! অবস্থা বুঝিয়' ব্বস্। সে অবগ্তই মানিয়! লইবে। সত্যই তাহার ফুলুকে সে কিছু আর অন্ন-কষ্ট দিতে পারিবে না?

ছু'একখান। ছোট-খাট তালুক বরং লিখিয়। দিলেই চলিবে ইহাতে পাক খেলোয়াড়ের মত 'বোড়ের চাল”ও চাল! হইবে। চাই কি, ভবিষাতে তাহার নাবালক পুক্রদ্দের বিষয়-সম্পত্তি প্রকুল্লই দেখিতে শুনিতে পারিবে ছোড়া আর যা*ই হক, মিথ্য। বা চুরি উহার দ্বার! কখনো! সম্ভব হইবে না এটুকু চরিক্রাভিজ্ঞতা তাহার জন্মিয়াছে। ভবিষ্যতের জন্ত এইবূপ একট! মানসিক দলিল লিখিত! রাখিয়া আলোকনাথ প্রফুল্লের সম্বন্ধে একরূপ নিশ্চন্তই হইয়াছিল। কিন্থ আজ অতফিতভাবে প্রফুল্লের মুখে এই অনাবশ্তাক গর্বিত ত্যাগের মন্ত্র তাহার ধৈর্য্যের বাধ ভাঙ্গিয়া বুকে যেন একটা প্রচণ্ড আঘাতের দোল! দিয় শরীরটাকেও আমূল নাড়। দিয় দিল। ওঁ গর্বিত, অবাধ্য, দুর্বিনীত যুব! এই মাত্র যে কঠিন শপথ গ্রহণ করিয়। সর্বত্যাগী হইল, তাহাকে কিছুতে কোনমতেই যে আর কেহ

উনত্রিংশ পরিচ্ছেদ ১৯৭

তাহার গন্তব্য পথ হইতে ফিরাইতে পারিবে-সে সম্ভাবনা মোটেই নাই!

আলোকনাথ ইহা ভালই জানে ! বাঘকে পিঞ্ররে রুদ্ধ করিয়। তাহার সম্মুখে প্রচুর আমিষ খান্ রাখিয়া! যদি তাহা স্পর্শ করিতে না দেওয়া! হয়, হাহাতে মে যেমন ভীষণ হুইয়৷ উঠে--আলোকনাথও ক্রোধে, নিরুপায় ক্ষোভে, ঈবীয় জলিয়৷ তেমনি ভীষণ হইয়া উঠিল। ভাহার মুখে তখনও তেমনি ক্র হানি। চোখে তখনও তেমনি ঈার তীর জালা ! কণম্বরে সে জালা ঢালিয়া দিয়া সে কহিল, "তুমি মস্ত লোক, বিষয়ের লোভ তুমি কর না! তবে সত্যিট] কি, বল্বে কি? আমার চোখের দিকে চেয়ে সত্যি বল্বার সাহস যদি থাকে, তোনার মনের কথ! ?*

প্রকুল্লের দৃষ্টি ক্ষণেকের জন্য বিপন্ন বিমুটের মত দেখাইল। খুড়ীমার স্বার্থ রঙ্গ! ছাড়। আরকি অভিযোগ তাহার আছে বা থাকিতে পারে ? হা, আছে বই কি, এখনই সে কথা সুুলিলে চলিবে কেন? সেই ষে একটি নিরপরাধিনী বক্ষক-হান! বাপিকাকে সে আশ্বাস দিয়া আসিয়াছে, তাহার কথা সে ভুলিয়াই বসিয়া আছে! এই যে কাকার সহিত আপ্রিয় আলোচনা, ইহার মূলে সেই--কি না? তাহাকে রক্ষা! করিবার জন্তই ন! সে কাকার আশ্রয় চাহিতে আঁসয়াছিল ! হিমানীর অনিন্দিত মৃর্িধানি মনে পড়ায় প্রকুল্লের মুখে একটা কোমল মাধুধ্যের ভাব কুটিয়। উঠিল শুধু মরণ- প্রার্ধিনীর জন্যই নয়__-জীবনমাধুধ্যে পারপূরণাঙ্গী তরুণীর জন্তও সে আজ 1বচার-প্রাথ্থী! এইমাত্র ভবিষ্যৎ জীবন-মাত্রার যে পাথেয় সে স্বেচ্ছায় ত্যাগ করিল, তাহাতে স্থুধু বিসজ্জনের বাদ্য নয়--আগরামনীর সথরও তাহার অজ্ঞাতে বাজিন়াছে! আজ সে রিক্ত হয় নাই, ধন্য হইয়াছে!

প্রকুল্লের মুখে যবে মেঘ রৌদ্রের ক্রুত নণ্ঁন-লীল! ঘটিয়া গেল, তাহ। 5ত্বর আলোকনাথের হিংসা-কুটিল দৃষ্টি এড়াইতে পারিল না তাহার মনে

১৯৮ প্রত্যাবর্তন

হইল, এইবার ঠিক রাস্তা! সে ধরিতে পারিয়াছে। আতে ঘা! লাগিয়াছে, তা+ই বাছাধন একেবারে অ-বোল হইর! গিয়াছে! মুখে কই আর সে খই ফুটিতেছে না? আলোকনাথ ক্রোধ-কম্পিত-কঠে কহিল, "কৈ, জবাব দাও! ভারী যে সত্যি কথার গুমর কর ! আজ সত্যি বল দেখি, পরোপকার পরম ধর্মুটা ছেড়ে দিয়ে বাকী যেটুকু নিছক সত্যি সেই মনের কথাটি বল ত-_বাপু! কাকার অতর্কিত অদ্ভুত প্রশ্নে প্রফুল্ল প্রথমটা! ফেমন যেন উদ্ভ্রান্ত

এেইহারা” হইয়া পড়িয়াছিল কিন্ত আবার তাহারই চোখের ঈর্ষা-বিদ্রপভর কুটিল ক্র দৃষ্টি শ্লেষপূর্ণ কণ্ন্বরে আত্মস্থ হইয়। নিজের উত্তর সে পহজেই খু'ঁজিয়। পাইল নিজ অচঞ্চল চোখের দৃষ্টি আলোকনাথের চোখের উপর স্থির রাখিয়া, মু অকম্পিত-কঠ্ঠে সে কহিল, "আপনি ধাকে বিয়ে কর্তে চেয়েছিলেন তিনি আমার নমন্তা। আমার বন্ধুর বোন্‌ তিনি, তবু আমি বল্চি, হিমু আমার না! আর সেই জন্তেই অরুণের অমতে তার বিয়ে হবে না। অরুণের বিষয় আমর! ভোগ কচ্চি, কিন্ত তার বেশী অন্যায় আর ঘটতে দেওয়! হ'তে পারে ন! !”

আলোকনাথের ক্রুদ্ধ ঈর্ষ-কাতর দৃষ্টি সহস! লঙ্জানত হইয়া পড়িল। বিশ্বয় তাহার মনে__সীম। ছাড়াইয়। উঠিতেছিল। মনে হইল, মানু কখনো এত উদ্দার, এমন ত্যাগী হইতে পারে? এমন অগ্নরীতেও মুগ্ধ না হইয়। বিচার করিয়। চলিতে শেখে? ইহাকেই না তাহারা কোলে পি করিয়া মানুষ করিয়াছে? তবে ইহার মনের কোন খবর জানিতে পারে নাই কেন? মানুষ এই জন্যই ঘরের ঠাকুর ফেলিয়া তীর্থ-পর্ধ্টটনে বাহির হয় রে! ফুলুংষে সেই ছেলে-বেলার দেই ফুলুই আছে, তাহার নিজের চোখে হিংসার আগুন জলিয়। ছিল বলিয়াই প্রফুল্লের “সত্য মূর্তি কোথায় অন্তহিত হইয়াছিল? কিন্ত এখন এই স্কট মুহূর্তে সে তবে করিবে কি?

উনত্রিংশ পরিচ্ছেদ ১৯৯

ছেলে যে দর্প করিয়! সকল তাতেই জিতিয়! যাইবে, আর সে সেই অপমানের বোঝা৷ অবনত-মাথায় তুলিয়। লইবে, এও কিছু উচিত ব! সম্ভব নয়! চিন্তিতভাবে আলোকনাথ মুখ ফিরাইয়! জানালার বাহিরে চাহিল। দরে সাদ। চুণকাম-করা কাছারি-বাড়ীর ছাদের আলিসার উপর ছুইটি সাদ! পায়রা পরস্পরের গ! থেষিয়া ঘুরিয়। ফিরিয়৷ বেড়াইতেছিল। তাহাদেরই অনতিদূরে কয়েকটি কালে। পায়রা যেন সাদা-কালোর পার্থকা রাখিয়া চুপ চাপ বসিয়াছিল। মুখ ন! ফিরাইয়। উদাসীন অনাগ্রহের ভাবে সে কহিল, *সেই চেষ্টাই করে দেখ তবে।»

প্রফল্পন আসন ছাড়িয়। উঠিয়া কহিল, “না--সে ভার আপনার উপরই রইল। আপনিই তাকে মুক্তি দেবেন। দে আমার বন্ধুর বোন্‌, আপনার অতিথি আমার এখানকার সব কাজই ফুরিয়ে গেছে” বলিয়! দে অর্ধ-নতভাবে আল্‌গোছে আলোকনাথকে একটা! প্রণাম করিয়া ধীরে বীবে ঘরের বাহির হইয়! গেল।

আলোকনাথের গড়গড়ার নল অনেকক্ষণ হস্তচ্যুত হইয়াছিল-_এবং কলিকার আগুনও নিবিয়! গিয়াছিল। এইবার অবকাশ পাইয়া! কলিকার অবস্থা পরীক্ষান্তে অবসন্ন-ভাবে তাকিয্বার উপর হেলিয়া৷ পড়িয়া! বিরক্কির সুরে সে ডাকিল, পরেধো, এই বেটা রেধো--”

*আন্তে কর্তা, বাই” বলিয়! উত্তরের সঙ্গে সঙ্গেই রাধাচরণ নিঃশব্দ আসিয়া ঘরে ঢুকিল।

ত্রিংশ পরিচ্ছেদ

রাহুনমুক্তি

সূর্য্য এই খানিক আগে অন্ত গিক্লাছে। এখনও তা”র রাঙ্গ। আলো! খানিকটা নীল আকাশের গায়ে দূরস্থিত অগ্রিদাহের ক্পান আলোক-শিখার মত ছড়াইয়৷ ছিল। নিম নারিকেল গাছের শাখার ফাকে ফাকে পাতার আড়াল এড়াইয়া৷ তাহার রঙ্গের খেল। দেখা বাইতেছিল। ছাদে দাড়াইয়। হিমু উদাস-দৃষ্টিতে কখনও বা সেই পাতার অনুজ্জল মনমোহন আলোর দিকে, কখনও তাহার বিপরীত দিকের ধুর আকাশে চাহিয়া ছুইখানা উদ্ভীয়মান ঘুড়ির লড়াই দেখিতেছিল। তাহার দেশের কথা, মার কথা, খেলার সাথীদের কথা, বড় বড় তেঁতুল গাছের ছায়ায় ঢাক! সরল-গতি অপরিসর পল্লীপথ, রাখাল বালকদের মাঠে মাঠে গোচারণ, সন্ধ্যায় তাহাদের ঘরে ফের! হইতে থলি-কাধে ডাক্‌-হরকরার ঝম্ঝম্‌ শবে ছুটিয়। চলার শব্দটি অবধি তা'র মনের মধ্যে ভিড করিনা! আসিয্। দাড়াইতেছিল। সেখানকার অসংস্কত অপরিসর পথ, অধিকাংশ মাটীর বাড়ী, জঙ্গলাকীর্ণ স্থান--সবই আজ তাহার চোখে নৃতন ব্রঙ্গে ফুটিতেছিল। সকালে সন্ধ্যায় এখানেও গাছে গাছে পাঁখী ডাকে বরং আলোকনাথের পাখীশালায় কত রঙ্গের, কত রকমই না পাথীর ডাক শুন! যায়,_-তবু সেখানকার তেঁতুল গাছের ভালে বসিয়া, ভোরের পাখী যেমন মধুর স্থুরে ডাকিয় প্রতিদিন তাহার ঘুম ভাঙ্গাইত--সালিক, টুন্টুনি, চড়ই যেমন গান করিয়। তাহার মন ভুলাইত, এখানকার এই এত পাখীর কে তেমন সুর কোথায়? হিমুর মনে হইতেছিল, সে যদি দৈববলে পাখী হইয়া! এখনি উড়িয়া গিয়। তাহাদের

ত্রিংশ পরিচ্ছেদ ২০১

উঠানের সেই আমড়।-গাছটির উপর বসিতে পারিত ! সেখানে বসিয়৷ সে ভাহার মাকে দেখিতে পাইত ! ম| আজ সেখানে একা! কেহ মার সঙ্গী নাই। নিজের জন্ নিয়মিত ব্রান্না-খাওয়াও করেন কি না, কে জানে! আচ্ছা, মা এখন কি করিতেছেন? চুপ করিয়! রোয়াকে বসিয়৷ তাহারই মত আকাশটার দিকেই চাহিয়া আছেন কি ? মা এখন নিশ্চয় তাহারই কথা ভাবিতেছেন মা জানেন না, কোথার কোন শক্রপুরীতে তিনি ভাহার আদরের হিমুকে পাঠাইয়। দিয়াছেন! এখান হইতে সেকি আর কখনে! বাহির ভইতে পারিবে? বলাইয়ের মার মুখে যে কথা সে এই কতক্ষণ পুর্ব্রে শুনিয়াছে, তা*র পর যে সে আর কোন ভরসাই পাইতেছে না। তাহার দশ যেন এখন রাম-বাবণের মধ্যবর্তী মারীচের মতই হইয়া! পড়িয়াছে! কাল যিনি ভাই বণিয়া, বন্ধু বলিয়। তাহাকে রক্ষা) করিতে প্রতিশ্তি দিয়াছিলেন, আজ তিনিও আবার শত্রু হইস্া দাড়াইলেন ! ঘণ্টাখানেক পুর্বে বলাইয়ের ম৷ দিদিমার অন্ুজ্ঞা জানাইক়া যখন তাহাকে নীচের ঘরে চুল বাধিবার জন্ত ডাকিতে আসিল, তখন সে তাহার নিন্দিষ্ট কক্ষেই বসিয়াছিল। দাসী আহ্লাদ করিয়া বলিয়াছিল, “চল দিদিমপি, চুল বীধ্‌বে চল। কর্তী-মা৷ তোমার পর্বার জন্যে কেমন খাস। কুল-চিরুণী গড়িয়ে আনিয়েচেন, দেখবে চল। এক একটি নক্ষত্রের ভেতর এক একটি রাঙ্গা চুনি। রক্তের মতন টকটকে রাঙ্গা! খাসা পালিশ কঃরেচে বাবু। তাও বলি, বল্‌লে বল্বে হয় বাড়ানো! কথা-_-ত। বাবু, কলাইয়লের ম1 কিন্তু ক্ষণে! বাধে কথা জানে না» কলঙ্ক তাকে কেউ কথন দিতে পার্বে না। বৌঠাক্রুণের আমাদের কত ব্লকমের কত ফুল, টাটা, গ্রজাপতি--তবেগে-_বাগান-টাগান মাথাব্র সাজই বা কত রুকম! ভতা”হলে কি হবে, বন্স ? এমন মুগু-মালিনীর কেশ আর নেই ! চুলে কেবল একটি এলে! খোঁপা জড়িয়ে রাঙ। টুকটুকে একটি গোলাপ ফুল

২২ প্রতা।বর্তন

গুজে দিলেই কত বাহার দেখায় ! সোন। দিয়ে একে সাজাতেও হয় না” বলিয়া দাসী মুগ্ধ-চোখে হিমুর রেশম-চিন্কণ ঘন-কুঞ্চিত কেশ-পাশের দিকে চাহিয়া রসিকতার হাসি হাসিল বুদ্ধিমতী বলাইয়ের ম! একসঙ্গে ছুই দিক রাখিতেছিল। ছুইদিন পরে ইনিই যখন মনিব হইবেন, তখন এখন হইতে ইহাকে খুসী রাখিতে পারিলে ভবিষ্যতে সেটা কাজে লাগিতে পারে ; মেয়েটি একবগৃগা হইলেও সরল খুব। সংসারের বুদ্ধি এতটুকুও নাই। তাছাড়া সেও আর এমন কিছু মিছ! কথ বলিতেছে ন!!

হিমুর চুলগুলি এতক্ষণ খোলাই ছিল। দাদীর কথায় সে ব্ন্তভাবে সেগুলি খুব উচু করিয়া মাথার মাবখানে ক্ষিপ্রহস্তে তাল পাকাইয়া জড়াইকন' লইল-_লইক্া উদাসীনভাবে কহিল, “দিদিমাকে বলগে, আমার চুল ভিজে, ৰাধ্ব না।”

দাসী বিশ্বয় প্রকাশ করিয়া! কহিল, “ওমা, সেকি গো? ভিজে-_তবে জড়ালে কেন আবার? এস না_ আমি কুরিয়ে দি। হাওয়া পেলে এখনি শুকিয়ে যাবেখন। চুল বড় সুখী প্রাণী, দিদিষণি,__এদের যত্র না কর্লে আবার থাকেও না” বলিয়া কাছে আদিয়। হিমুর মাথায় হাত দিতে গেলে হিমু সবেগে মাথ! সরাইয়। লইয়! অপ্রসন্ন-কণ্ঠে কহিল, “আমার মাথায় হাত দিয়ে। না বল্চি।”

বলাইয়ের ম! কহিল, "তবে পশ্চিমের বারান্দায় চল। সেখানে এখন. গড়ন্ত রোদ একটু আছে। একবার মেলে দিলেই শুকিক্ে যাবে। চল, দ্দিকি।”

হিমু কহিল, “পড়ন্ত রোদে আমার মাথ! ধর্বে। তুমি বলগে যাও, চুল ভিজে, বাধ্বে ন7া। তোমার এত সাত-সতেরোস্ব দরকার কি ?”

তাহার অগ্রসর মুখের পানে চাহিয়া! দাসী একটু ক্ষোভের হাসি হাসিয়া কহিল, *বুঝেচি দিদিমণি, বর তোমার মনে ধরে নি। তাই সবেতেই

ত্রিংশ পরিচ্ছেদ ২০৩

তোমার গৌস1! ত| কি ক'র্বে ভাই, বল,_-দবই কি আর পছন্দ-মতন হয় ?”

হিমু মুখ ফিরাইয়! একট! রুদ্ধ জানালারু বদ্ধ খড়খড়ির দিকে চাহিয়া ছিল-_তেমনই রহিল, একটিও কথ কহিল না। তাহাকে নীরব দেখিয়। বলাইয়ের ম৷ সাহস পাইয়৷ সহানুভূতির সুরে কহিল, “আমরাও সব তাই বলাবলি করি, যে বিয়েটি কর্তা বাবুর সঙ্গে ন1 হয়ে দাদাবাবুর সঙ্গে হলেই খাস মানাত। আর বৌ-ঠাকুরুণও শষা। ছেড়ে বরুণ-ডাল! মাথায় ক”রে বৌ-বেটা ঘরে তুল্ত। তা আর হবার নয়। হা! গ! দিদিমণি, দাদা বাবুকে তোমার মনে ধরেচে, বুঝি? কাল যে দেখ্লুম, দাদাবাবু একখান বই হাতে করে তোমার ঘরে ঢুক্ল। দাদাবাবু তোমায় দেখে পাগল! কিন্ত পিত্যেশ ছেড়ে দাও, কর্তাবাবুর খাস খানসাম। রেধো সকাল বেলার রান্নাঘরে টিকে ধরাতে গিয়ে বামুন ঠাক্রুণের কাছে চুপিচুপি বল্ছিল কি, জান? এই কথা নিয়ে দাদাবাবুর সঙ্গে কর্তাবাবুর নাকি বিকেল বেলার একটা কুলুক্ষেত্তর হ'য়ে গেছে ! দাদাবাবু তোমায় বে কর্তে চেয়েছিল বলে কর্তীবাবু তাকে বাড়ী থেকে দূর হ?য়ে যেতে বলেচে। দাদাবাবু চিরকাল অভিমানী সেকি এমন মর্মীস্তিক কথ! কখনো সইতে পারে-_না, সম়্েচে? সেই রাঁতেই বাড়ী ছেড়ে তিনি চলে গেছে। দাদাবাবুর চাকর বিনোদ সকাল বেল। ঘরে গিয়ে দেখে-_না, সেখানে যা ষা জিনিষ-পত্তর সব অমনি পড়ে আছে। বাকৃস, বিছানা, মণিব্যাগ, ঘড়িটি পর্যন্ত পড়ে, কেবল দাদাবাবুই নেই। শৃন্তি শখ্যে পর্শ পর্য্যন্ত করে নি। ভয়ে সব চুপ চাপ করে রয়েচে। কর্তীবাবু নাকি সব গুনেছে__কুর্ভাবাবুকে চিঠি লিখে রেখে গেছে কি না-_-তাই গুম্‌ হ”য়ে আছে। যেন কেউ খোজ না করে! কর্লেও দেখা পাবে.না, এই কথ বলে গেছে। কর্তাবাবু চিঠি পড়ে কারে! সাথে কথাটি কপ নি। আগেকার দিন থাকৃলে এই নিযে বাড়ীতে কি.

২০৪ প্রত্যাবর্তন

কাওই না বাধ্ত! বৌ-ঠাক্রুণ মাথা খুঁড়ত, মৃচ্ছে৷ যেত। মা-ঠাক্রুণ চীৎকার কর্ত। আজ সব চুপ-চাপ। হায্প রে, আীতের টান যে আলাদ। জিনিষ! আমর! যে দাসী-চাকর, শুনে আমরাই লুকিয়ে কেঁদে মরি। ছেলে ব'লে ছেলে কি! ছেলের মতন ছেলে। তাই বলি দিদিমণি, যা পাচ্চ, তাই খুসী হয়ে নাও, ভাই রাগ-দুঃখ করে কেবল কষ্ট পাওয়! আর দেওয়া বই তনয়!”

হিমু মুখ ফিরাইয়া সস! তজ্জনের সুরে কহিল, "তুমি বাবে কি ন। বলতে পার ? না যাও, বল, আমিই যাচ্চি।” বলিয়া সে সবেগে ঘরের বাহির হইয়া গেল। যাইবার সময় শুনিল, দাসী ঝলিতেছে, “তোমাদের হালর তরেই বলি, দিদিমণি। নৈলে বলাইয়ের মা কারো পিত্যেশ রেখে কথ কয় না। ছেলে মানুষ বোঝ না কিছুই এই বিয়েটা চুকে গেলে আবার ঘরের ছেলে ঘরে ফেরে, তা আমাদের তাতেই স্থুথ !*

বরের বাহিরে আসিয়া ছাদের সিড়ি চোখে পড়ায় হি নির্জনতার আশায় বরাবর সিঁড়ি ভাগ্গিক়্। ছাদে উঠিল। সেখানে ছুই চোখে জল ভরিয়া দে আকাশের পানে শুস্ত-ুষ্টিতে চাহিয়৷ বরহিল। গভীর অভিমানে তাহার বুকখান। মাঝে মাঝে কেবলই ফুলিয়া উঠিতেছিল। না তাভাকে কোথাকস পাঠাইয়্াছেন ? যেখানে মানুষের মন লইয়া মানুষ কেবল শিকার খেগ! খেলে! ওগো, তোমর। হিমুকে ছাড়িয্র। দাও। সে বনের পাখী, বনের কোলে উড়িয়া যাক। অন্ধকার কুঁড়ে-ঘরে মার বুকে মুখ রাখিয় সে পরম সুখে দিন কাটাইবে। চাহে না সে তোমার এই রাজ-প্রানাদের আলো, আনন্দও চাহে না সে-মণি রত মুক্তার মালা, তাও সে চাহে ন|।

হিমুর জল-ভব্র! চোখের উপর অরুণের মুখ ভাসিয়। উঠিল। বিপদে সেই তাহার একমাত্র আশা ভরসা কিন্ত মে এত তত্ব কিছুই জানে না-_সে জানে ন! যে হিনু আজ শত্র-পুরীতে বন্দিনী হুইয়! আছে?

ত্রিংশ পরিচ্ছেছ ২০৫

প্রচুল্প-দা' আশা দিয়াছিলেন, আশ্বাস দিয়াছেন। সে বে একান্ত মনে তাহারই পথ চাহিষ্াছিল ! ভাগ্য-দৌোষে তিনিও বিরূপ হইলেন! ছি, এমন মতিত্রম তাহার কেন ঘটিল! হিমু যে তাহাকে বড় ভাইফ্লের মতই মনে করিয়া বিশ্বাস করিয়াছিল। সে মুখে, সে গোখের দৃষ্টিতে হিমূ যে অরুণের ৃষ্টিই দেখিয়াছিল। তবে তিনিই বা এমন পাগলের কাণ্ড করিলেন কেন * বাড়ী ছাড়িয়া কোথার চলিয়া গেলেন£ হিমু গল্পে পড়িয়াছে, এমনই করিয়৷ কত বড় লোকের ছেলে, কত রাজ-পুক্র গৃহত্যাগ করিয়া গিশ্না কত বিপদে পড়িয়াছিল কত লাঞ্চন! সহ করির! দস্থা-ত্স্তে বন্দী হইয়। পাতাল- পুরীতে বন্ধ থাকিয়াছে। কে জানে, প্রফুল্প-দা"র অনুষ্টে আবার তেমনি ছুঘটন! লেখা আছে কি না। হিমুর চিন্তার ধারা একভাবে বহিতেছিল না। ৰালিকার চিন্তা কখনে! এক বিষয়ে বদ্ধ থাকিতেও গাব না! সেমাব কথা, অরুণের কথা, সতাদগ়ালের ছয়মাসের খোকাটির কথাও ভাবিতেছিল __এবং ভাবনার সহিত কখন ঘে তাহার চোখের দৃষ্টি আকাশের রঙ্গের ঘুড়ির প্যাচ খেলায় বন্ধ হই গিয়! সব চিন্তাই অল্পন্ট হইয়৷ মনের ছুঃখ হাল্ক1 হইয়া আদিয়াছিল--তাহ। সে জানিতেও পারে নাই।

সহস! সিঁড়ির মাথায় শিকল নড়1 পায়ের শবে হিমু সচকিতে চাহি যাহ! দেখিল, তাহাতে ভীত হইল। যে আমিল, দে আলোকনাথ প্রা আট দশদিন হিমু এই দৃষ্টি এড়াইয়! নিজেকে লুকাইয়৷ কাটাইয়াছে। আজ এমন অসময়ে এখানে যে? নিশ্চয় হইনি আবার জালাতন করিতে আসিঙ্বাছেন। হিমু দমিল না। আলোকনাথকে মে এখন অশ্রন্ধাই করিত, তা*ই তাহার সঙ্গ এড়াইগ! চলিত পুরুষের নিকট যে এমন নিচ্জন অবসর--তরুণী রূপসীর পক্ষে ভঙ্গের কারণও হইতে পারে, সে অভিজ্ঞ ই: তাহার জন্মায় নাই। দেখিয়াও যেন দেখিতে পায় নাই, এমনই অনাগ্রহ উদ্দাস দৃষ্টিতে হিমু আকাশের পটেই দৃষ্ট নিবন্ধ রাখিল। আলোকনাগের

২০৬ প্রত্যাবর্তন মুখ আজ বিষ&। হিমুকে দেখিয়া তাহার মান ওঠে একটু স্নিগ্ধ হাসির রেখা ফুটিল। কাছে আসিয়া সে কহিল, “অনেক দিনের পর তোমার দেখা পেলুম। আর তে। বাগানে যাও না? তুমি কি আমাক এখন লজ্জা কর, ক্মু? এমন ভাবে লুকিয়ে থাক কেন ?*

হিমু তেমনি ভাবে রহিল, জবাব দিল না। আলোকনাথ কহিল, “ভাল লাগে না তোমার-_ আমার সঙ্গ? কিন্তু আমিযে তোমান্ন ভালবেসে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি, হিমু,-_-আমার যে আর উপায় নেই?”

হিমু অবাক্‌ হইয়া! আলো কনাথের পানে চাহিয়া কহিল, "সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন? মকদ্দমায় হেরে গেছেন, বুঝি? ওঃ না, না, আমারই ভূল হয়েচে। আপনার ভাইপো চলে গেছেন, তাই বল্‌্চেন, বুঝি ?* আলোক- নাথের কণ্ঠে আন্তরিকতার এমন একট! ব্যথিত স্থর বাজিয়াছিল, যাহাতে স্বভাব-কোমলা। হিমু মনে অত্যন্ত ব্যখ! পাইল। অনেকগুলি নাটক- নভেলের কাহিনী তাহার জানা থাকিলেও, স্বাভাবিক অজ্ঞ স্বভাবের বশে সে বুঝিল ন! যে, ইহ! প্রণম্ীর প্রণয়-নিৰেদন ! তাহার মনে হইল, তাহাকে উপলক্ষ করিয়া খুড়া-ভাইপোয় এই যে চিন্রবিচ্ছেদ ঘটিয়! গিয়াছে, জন্ট ধন্মতঃ সেও কতক দায়ী! অনাবিল ভ্রাতৃন্নেহে নৃত্যুরূপিণী হইয়া! প্রজাপতির যে মানসকন্ত' নুন্দ-উপনুন্দের মধ্যবস্তিনী হইয়াছিল, হিমু কি তাহাকে মার্জন। করিতে পারে ? না, কখনই না। সে দুর্ভাগিনী ভাগ্য- নিয়োজিতা। তবু হিমু একদিন তাহার কঠিন বিচারই করিয়াছিল।

হিমুর অত্যধিক সারল্যে অনভিজ্ঞতায় লজ্জিত হইয়া! আলোকনাথ কহিল, “হ্যা, তাই। সে চিরকালই আমায়'এমনি করে ছুঃখ দিয়ে আস্চে। সে ষ! হোক্‌, সে এখন বড় হরেচে, লেখা-পড়া শিথেচে, তার আশা! আমি ছেড়েই দিয়েচি। তুমি বুদ্ধিমতী, সবই বুক্‌তে পার্চ-_সেই জন্তেই, এই তার অবাধ্যতার শিক্ষা! দিতেই আমার আরে দরকার-তাকে জব্দ করে

ংশ পরিচ্ছেদ ২০৭

বঙ্গেওয়া। দেখ্চ ত, আমার স্ত্রী মব্রারই;সাঁমিল। সংসারে সব থেকেও-_ ভগবান্‌ আমায় সব দিয়েও যেমন ছুঃঘী করেচেন, রাস্তার একট! মুটে-মনজুরও হার চেয়ে দুখী! বুঝ্চ সবই! তুমি শিক্ষিতা, বুদ্ধিমতী, তোমাক বেশা বঙ্গতে হয় ন।” হিমু আজ নিজেকে বুদ্ধিমতী বলিয়। বারবার উল্লিখিত হইতে শুনিয়। একটুখানি খুনী হইতে গিয়াও পারিল না। বুদ্ধির প্রশংসা তাহার একমাত্র অরুণ ছাড়া আর কেহ কোন দিন করিয়াছে বলিয়া মনেও পড়ে না। অরুণও যে টুকু প্রশংস। করে, সেও যেন তাহার নিকট কাজ আদায় করিয়া লইবার ফন্দীর মত। কেবল শীত মুখস্থ করার শক্তি-মন্তা বা পাঠে অত্যন্ত মনোযোগিনী এমনি সব কথায় তাহার কতটুকু সত্য আর কতটুকু চষ্টামি, সে বিষয়ে হিমুর মনে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তবু অরুণের মুখে প্রশংসার বাণী এমনি মধুর যে, বিদ্রোহ করতেও ইচ্ছা হয না। অবিশ্বাসী পুজকের পুজোপহারের মত সে তাহা অবলীলা ক্রমেই গ্রহণ করিয়। থাকে আলোকনাথ যে কিসে তাহার বুদ্ধির পঞ্জিচয় পাইল, সে চিন্তা তাহার মনে না আদিলেও নিজের বিবেচনার সংবাদ অন্তের সুখে শুনিতে বেশ লাগিয়াছিল, তবু সেই সঙ্গে জড়িত বাকী কথাগুলির স্পষ্ট অর্থ কিছু বুঝিলেও সে কেমন মনে মনে অস্থাচ্ছন্দ্য অনুভব করিতে লাগিল। আকাশের রঙ্গীন বর্ণ ক্রমে মলিন হইয। একথান। পাংশু-বর্ণের চাদরের মত দেখাইতেছিল। বাগানের বড় ঝড় গাছের মাথায় কাটারির মত সরু চাদ স্বান-বর্ণে উদ্দিত হইতেছিল, অন্ধকার অন্নে অল্পে ছায়। বিস্তার করিতেই দূরে ঠাকুর বাড়ীতে সন্ধ্যারতির আগমন-সথচক কাশ্র-ঘণ্টার শব্ব উিত হইল। ৃহমু একট। দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়। কহিল, “আপনি বড় লোক দয় করে আমায় মার, কাছে পাঠিয়ে দিন। আমি আর একদিনও এখানে থাকৃতে পার্চি ন11”

স্২৩৮ প্রত্যাবর্তন

তাহার চোখের জল কণ্ঠের কাতরত মুহূর্তে আলোকনাথকে দ্রবীভূত করিয়া ভুলিল। হিমুকে সে ষথার্থ ভাল বাসিম্নাছিল। তাহার অনেক- খানি রূপের মোহ হইলেও, কয়দিন হিমুর সঙ্গ-লাভে, তাহার বাল-স্ুল5 সরল আনন্দময় স্বভাবের পরিচয়ে একট! স্নেহের ভাবও জন্মিয়াছিল। দে কোমল-কঠ্ে কহিল, “কেন পাচ্চ না হিমু? সুধুমার জন্যে তা বদ হয়-_-বল, মাকে আমি নিজে গিয়ে নিয়ে আস্ব। পাসে ধরে হোক্‌, বেমন করে হোক্‌, তাকে আমি এখানে নিয়ে আস্ব। আর কেনই বা তিন সেখানে এক। থাকৃবেন £ তোমার বাতী, তার মেয়ের বাড়ী, কি তারই বাড়ী নয়?”

"আমার ৰাড়ী? না, না গো” হিমু ভয়া্ত ব্যাকুল স্বরে সহস' চীৎকার করিয়া উঠিল। “আমায় এখনি মার কাছে পাঠিয়ে দিন্‌, নৈলে এই ছাদ থেকে আমি লাদিয়ে পড়ব মা! এলেও আমি বাচ্ব না, কিছুতেই না।” সে ছুই হাতে মুখ ঢাকিয়। হাফাইতে লাগিল। কাদিবার চে করিলেও দারুণ ভয়ে কান বাহির হইল না।

আলোকনাথ অনেকক্ষণ স্থির-দষ্টিতে তাহার দিকে চাহিয়। থা কর়' ধারে ধীরে তাহার কাছে আসিয়া অত্যন্ত করুণ হতাশপুর্ণ স্বরে কহিল, “আমি বুঝতে পাচ্চি। তুমি আমার কখনও কোন কালেও ভালবান্তে পার্বে না। তাই আমার দেওয়া উপহার মর়লার গাায় ফেলে দাও-_ আমার দেওয়া! কাপড়-গহনা ব্যভার কর না। শুন্ছিলাম, অন্থুখের ছুতো৷ করে খাচ্চ না সবদিন ! তোমার জীখন বার্থ করে দিনে শুধু নিজের সুথ,-_থাক্‌! তার ত*সবই ফুরিয়ে গেছে, লোভও না হন আমি ত্যাগ কর্লাম্‌! জের করে" বিষে করলে সত্যিকার তোমায় আমি পাবনা? ভয় নেই, শ্বচ্ছন্দে তুমি তোমার মার কাছে কিরে যেরো। আমার বাড়ী এসে যে ছুঃখ পেয়ে গেলে, পারে। ত, কগনে! ত। ভূলে বেয়ে! |”

ত্রিংশ পরিচ্ছেদ ২০৯

হিমানী মুখের হাত সরাইক়। অশ্ররুদ্ধ গাট়স্বরে কহিল, “আপনার দয়? আমি ভুলে যাব না। সম্বন্ষেও আপনি আমার দাদা হন। আপনাকে বরাবরই আমি ভাল বাবে! ।”

আলোকনাথ এইমাত্র না বলিয়াছিল--সে বুঝিয়াছে হিমু তাহাকে কথনে। ভালবাসিতে পারিবে না৷? মানুষ বতক্ষণ চার, ততক্ষণই প্রাপ্যের ল্নভিতা! যেই সে ত্যাগ্গের মন্ত্র উচ্চারণ করিল, অমনি ছুন্লভ স্থলভ হইর়! দেখ! দিল। তা"ই প্রকৃত শাস্তি বুঝি বৈরাগ্যেই মিলে!

অযাচিতভাবে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত হিমুর ভালবাসার প্রতিশ্রুতি-লাভে আলোক নাথকে কিন্তু একইও খুসী হইতে দেখা গেল না। সেআর একটি কথাও ন! বলিয়া! যেমন নিঃশন্দে আসিয়াছিল, তেমনি নিঃশক্র সন্ধ্যার ছায়ান্ধকার-ঢাক1 নিড়ির পথে নীচে নামিয়া গেল। পরাজয় আজ বিশ্ব জুড়িয়া শুধু তাহার পরাজরের বার্ভাই বহিতেছিল। ক্ষেত্র জয়ী হইয়াও, তা'ই সে জগতের কাছে পরাজিতই রহিয়। গেল ! জগতে সে আজ এক]! তাহার কেহই নাই! সেও কাহারও নয় !

১৪

একত্রিংশ পরিচ্ছেদ ঝড়ের পর

একগাছা মুড়া ঝাঁটা দিয়। বাড়ীর বাগানের অনেক দিনের সঞ্চিত ধুলি-জঞ্জাল ঝাটাইয়া হিমু একত্র জমা করিতেছিল; মধো মধ্যে অদূর- বন্তিনী মায়ের সহিত কথাও কহিতেছিল। মালতী ছোট একটি চেঁচাড়ীর চুপ্ড়ি হাতে নোটে শাকের ক্ষেতে ঘুরিয়। থুরিয়া শাক তুলিতেছিলেন, এবং "অনন্ত রাখিল নাম অন্ত না পাইয়া, কৃষ্ণ নাম রাখে গর্গ ধ্যানেতে জায়” ইত্যাদি নাম-সন্বীর্ভন করিতেছিলেন। এমন সময় গানান্তে মুক্তা ঠাকুরাণীকে মেই দিকে আসিতে দেখিয়! হিমু কথা বন্ধ রাখিয়া দ্বিগুণ মনোযোগে দই হাতে ঝাঁটা গাছটা সাপটিয়া ধরিয়৷ কাজ সুরু করিয়া দিল। দেখিয়। মা আবৃত্তি বন্ধ করিয়। বিরক্ত কঠে কহিলেন, ধুলো উড়িয়ে চার্দিক্‌ অন্ধকার করে দিলি যে,__দেখুতে। চুলগুলোর কি দশী। হলে! ?”

মুক্ত! ঠাকুরাণী কাছে আসিয়৷ নিজ দক্ষিণ গণ্ডে দক্ষিণ করতল উল্টারূপে আধ্মোড়1 ভাবে রাখিয়া কিছুক্ষণ বঙ্কিম ঠামে দাড়াইয়া হিমুর দিকে চাহিয়া, তাহার ধুলিধূদরিত মুষ্ঠি দেখিতে দেখিতে শ্লেষের স্বরে কহিলেন, প্যারে যা মানায় ! হীরে-মুক্তোয় রাজরাণী সেজে সোনার পাটে বদ্বার যুগ্যি মেয়ে তু তোমার নয়, রাণু! ওর ত৷ রুচবে কেন?”

হিমু ঝাটা-সমেত ডান হাতখান! মাথার উপর ঘুরাইয়৷ ধরিয়! হাসিয়া কহিল, "বল দিদিমা__সত্যি--এ মানাচ্চে না? ধোসামুদে কথা বল্‌লে শুনবে! না কিন্কু।”

একত্রিংশ পরিচ্ছেদ ২১১

দিদিমা মুখ ভার করিয়া বিদ্রপব্যপ্রক স্বরে অহিলেন, “খোসামুদে কথ। মুক্ত বাম্নীর চোদ্দপুরুষে কখনো শেখেনি। মানিয়েচে বৈকি ? ধাঙ্গড়নী মেথরানীর মত মানিয়েচে ! হ্যারে রাণু, কর্তা ষে আমাদের পাঠিয়ে দিলে নিজে হতে, মানেট। কি বল্‌ ত? তারপর একটা খোঁজ সা, খবর না, সেই হতে দেখি, সবই চুপ্চাপ্‌। বীয়েরা সব চুপি চুপি বলাবলি কচ্ছিল,_-ভাইপে। নাকি হিমিকে বিয়ে কর্তে চেয়েছিল, ভাতে কর্ত। রাগ করে তাকে বাড়ী ছেড়ে চলে যেতে বলে--এ সব কথা বলেইচি আগে। তা আমিও বলি, ভাইপোটিই বা কেমন, বাছা? খুড়ো। বিয়ে কর্তে চাইচে,__বুড়ে। না, হ্াব্ড়া না, ধনের 'অধিবিধি নেই--বেটা হয়নি,--আহা! বেটার সাধ কারই বান! ভয়, বল? তা চাচ্ছেবে কর্তে, করুক্‌ না? ঢুধের স্বাদ কি ঘোলে নেটে ! তোরই কি মেয়ে নৈলে আর বে জুটুতো না? কথায় বলে, বাপ খুড়ে £ সত্যি বাপের কাজ কচ্চে! খুড়ো মানুষ করুলে,_- ওমা, তিন তিনটে পাশ দিয়ে চারটে পাশের পড়া ছেলে, তোর এই কাণ্ড! তা হলে ছোট লোকের ঘরে কি না কর্বে, বল্‌ দেখি ? বৌ ছু'ড়ির অত রাগ-গোৌঁসা নেই,_-বল্লে,“বাবুর সাধ হয়েছে, ছেলে হবে, করুন ন! *বয়ে, মাসী-মা! আমি ভাবি কেবল ফুলুর জন্তে-_মানুষ করেচি” ।”

মালতী মুখ তুলিয়। মৃছুম্বরে কহিলেন, “কি জানি মামি! রোজই মনে করি কোন খবর পাব, অন্ততঃ প্রচুল্লও একদিন আস্বেন। তাত এলেন না, অরুণের এত বন্ধু, শুনি। গর দয়ার কথা অনেক দিন অনেক শুনেছি। নিজে না থেয়েও গরীবকে খেতে দেন। কষ্ট করে থেকে সেই পয়সায় কত গরীবের ছেলের পড়ার খরচ দেন,-_-অরুণ এই সব বল্‌্তে অজ্ঞান হতো ! অরুনের বই-টই সবই উনি-ই দেন, না হলে ওর অত পড়া এতদিন চুকে যেতো !

২১২ প্রত্যাবর্তন

প্রকুল্লের প্রতি মুক্তা ঠাকুরাণী মনে মনে অপ্রদন্নই ছিলেন। মাকে পড়িয়া সেই তাহার পাক! খুঁটি কাটিগ। দিল। গরীবের মেয়ে বড় ঘরে পড়িত,-_-সোনা-দানায় অঙ্গ মুড়িয়া থাকিত। ছুই হাতে দান-ধ্যান ব্রত তীর্থ কতকি সব করিত। পাঁচজনকে অন্ন দিয়া, পাচের পৃজা! হইয়া থাকাতেই সংসারের সখ ! নহিলে স্থখ কিসের ? ঠাকুরানী বক্রমুখে ঠোট টিপিয়! কহিলেন, প্যা বল আর ঝ| কও, আমি বাছা হক কথা কব। এ্ঁকীচ। বয়েস ছাড়। আর কোন পিত্যেশ তোমার ওর কাছে নেই। বড় ঘরের ছেলে, দ্ঃখু-কষ্ট করে যে থেটে খাবে, তা কিছু পার্বে না। কর্তাও যখন জেদ ধরেচে, তখন তা! বজায় রাখতে বিয়ে করুবেই। ছেলের সঙ্গে কি আব কাড়াকাড়ি করবে? তাই এ-কে দিলে সরিয়ে। মাঝে থেকে পড়লে! তারই গুড়ে বালি।”

মালতী বিষগ্লভাবে কহিলেন, “আমার সেখানেও কোন আঁশ। ছিল না, মামি! আমি ভাবি, আমাদের জন্যে ওঁদের একট। ঘরোয়া বিবাদ, হোল,_-সেই জন্তেই আমার ছুঃখ হয়!”

“সে ছুঃখ তোমার অন্তায়, বাছা! কি যেতুমি ভেবে রেখেচ মনে, তা তুমিই জান। আমার পরামর্শ নাও বলি, এখনই কর্তাকে চিঠি লিখে গলার কীটা উলোও। তুমি কি মনে কচ্চ, ওর চেয়ে ভাল বর তুমি আর পাবে কোথাও?” বলিম্ন৷ তিনি ভাগিনেত্বীর বিষ নত মুখের পানে বিরক্তিভর! দৃষ্টিতে চাহিয়া বুহিলেন।

মালতী নত মুখে শাকের ডগাগুলি খুঁটিয়। তুলিতে ছিলেন, নিরুত্তরেই রহিলেন। তাহার পল্লবে-ঢাঁকা ছ/টি ব্যথিত চোখের নত দৃষ্টি জলে ভরিয়৷ ঝাপ্স। হইয়৷ গেলেও তাহ! মাতুলানীর দৃষ্টিতে পড়িল না; এবং তাহার যুক্তিপুর্ণ সছুপদেশের ফল ফলিংতছে কি না, তাহাও ঠিক বোঝা? গেল ন!।

একত্রিংশ পরিচ্ছেদ ২১৩

হিমুর ঝাঁট দেওয়। শেষ হইয়$ গিয়ছিল। বঝাঁট। গাছটি যথাস্থানে রাখিয়া ফির্রিবার সময় মুক্তা ঠাকুরারীর শেব কথা গুলি তাহার কানে গেল। [সে হাসিয়! কহিল, “দিদিমা, বুড়ে। হলে মানুষ ভারী পেটুক হয়, শা? পরের বাড়ীর ক্ষীর সন্দেশ ভাতরী মিষ্টি লাগে ?*||

সুখরা হিমুর যথেচ্ছ আচরণ একেই দিদিমার গ্রীতি প্রদ ছিল না। তার উপর এখন তিনি তাহার প্রতি মনে মনে যথেষ্ট ক্রুদ্ধ হইয়াই আছেন সে-ই তাহার মাকে বাধ্য করিয়া বিবাহে সম্মতি দিতে দেয় নাই। বুড়া বর বলিয়া মেয়ের আবার মনে ধরে নাই ! মেয়ে কি খুকি ? বুড়। ছাড়া কে আবার বুড়া-হাতী 'দজ্জাল+ মেয়েকে বিবাহ করিবে? মুর বাঙ্গোক্তি তা"ই অগ্রিতে দ্বতাছতি মিশাইল। ক্রুদ্ধ কঠে ঠাকুরাণী কহিলেন, “হা, ক্ষীর সন্দেশের লোভেই মর্চি আমি দেখিনি কখনে। চোখে! আর সেই পাত্রীই তুই বটিস্! থুকুড়ো৷ কলাগাছ, বিকুৰি কি দিয়ে, তাই বল্‌তো। আগে আমায়, গুনি ?”

হিমু হাসিমুখে কহিল, “শুন্বে দিদিমা? আমার পরামশ যদি নাও

আমি বল্চি,_“বে! মাং জয়তি সংগ্রামে যে! মে দর্পং ব্াযপোহতি। যে! মে

প্রতিবলো লোকে সমে ভর্তা ভবিধ্যতি'__তা*হলে কেউ আর সাহস করে এগুবেও না ।”

দিদিম। এবার অসহ্য ক্রোধে হিমুকে ছাড়িয়া মালতীর নত মুখের পানে সাহিয়। কহিলেন, “বত নষ্টের গোড়া অরুণে! এত বড় দত্তি দজ্জাল মেয়েকে কেউ কখনো। লেখা-পড়া শেখায়? মেয়ে আবার ইংরিজিতে অরুণের সঙ্গে কথা কয়! অত বড় বেট! ছেলে, সেই গ্লেন চোরটিরু মত নুখ ব্রাঙ্গা করে সরে পালায় দে ন! গে রাণু, পণ্ডিতনি মেয়েকে একটা টোল খুলে দে না, সংস্কৃত পড়াবে, স্ায় শান্তর শেখাবে। ঢের পড়ে

জুটুবে অথন !”

২১৪ - . প্রত্যা বর্থন

মালতী এবার মুখ তুলিয়। তিরস্কারপূর্ণ ত্ুদ্ধ কে ডাকিলেন, হিমু”

*ন| মা, দিদিমা সতা রাগ করেনি ! করেচে। দিদিম। ? ভাঁরী মানু আমি, আমার উপর আবার রাগ করা ! আমায় যদি দূর করে দাও, তুমিই ৰা ছাই ফেল্বে কিসে, বল ত?* বলিয়া মা! দিদিমার দ্বিতীয় মন্তব্য শুনিবার আশ! না রাখিয়াই সে,“ যা-_দিদিম! পুরুত মপায়ের ছাগল তোমার তুল্সী গাছটি সুড়লো”-_বলিয়। উদ্ৃশ্বাসে বাড়ীর দিকে দৌড়াইল।

“ৰলি, আজ কি শুধু শাগসেদ খেয়েই থাকৃতে হবে নাকি? ক্ষেতট। যে উজোড় কল্লি, বাছ ! সবই কি তোদের বাড়াবাড়ি! এমন ধার! কখনে। দেখিনি, বাব! !” বলিয্! মুক্ত! ঠাকুরাণী অনুপস্থিত ছুষ্টা হিমুর অপরাধের দণ্ডবিধানে অক্ষমতার ক্রোধের ঝাল একটুখানি তাহার মান্সের উপর ঝাড়িয়া লনা গৃহাভিমুখিনী হইলে মালতীও নিঃশব্েে তাহার পশ্চাদনুদরণ করিলেন।

মেয়ের জন্য মামীর কাছে মাঝে মাঝে এমন ছুই-চারিটা শ্রুতিকটু মন্তব্য তাহাকে প্রায়ই শুনিতে হয়। ইহাতে তাহার দুঃখ হইত না। তিনি জানিতেন, নামী তাহাকে ভালবাসেন অবিনীতা নাতনীকে পারিয়। উঠেন ন! বলিয়াই “উড়ে! খই গোবিন্দার নমর মত এগুল! পরোক্ষে তাহারই উদ্দেশে ছুঁড়িয়া মার! ! তা” হউক-_তীহার কিছুতেই আমিয়। যায় ন|। কিন্তু হিমু বড় অবাধ্য হইয়। উঠিয়াছে। অত অবাধ্যপন! তাহার_ পরে সহিবে কেন? অথচ বারণ করিয়া! ফল হয় না-সে কেবল হাসিয়া জড়াইয়! ধরে, শতবার মাপ্‌ চায়, দিদিমার পায়ের ধুলা! লয়। আবার পর মুহূর্ভে তদপেক্ষা! কঠিন অপরাধই করিয়। বসে ইহাকে শাসন করিতেও. যে হাত উঠে না। অবুঝ ছুরস্তকে শাসন করিবার লোকের অভাব

একক্রিংশ পরিচ্ছেদ ২১৫ কখনো হয় না) সে চিরদিনের জন্তই পড়িয়। আছে। ক্ষমা করিবার লোকেরই না সংসারে অভাব! অভাগিনী মা, 'এমন মেয়েকে মনের মত বর দিতে পারিলেন না-_ শুধু শাসন দিয়াই কি তাহাকে বিদায় দিবেন? তবে বাকী দিনগুলা তীহার কিসের স্থৃতি বহিয়! কাটিচে পারিবে?

দুপুর বেলার রান্না-খাওয়। ঢুকাইয়। দাওয়ায় মাছুর বিছাইয়। মালতী চুপ করিয়। শুইয়াছিলেন। কাছে বসিয়া হিমু তাহার চরক! লইয়া! সুতা কাটিতেছিল। মুক্তা ঠাকুরাণী অদূরে কম্বলের আসনে বসিস্না, চোখের উপর টিনের ফ্রেমে বাধা চশমাখানি অঁটিয়! কাশীখণ্ড পাঠ করিতেছিলেন, মধ্যে মধ্যে মালতীকে তাহার বিশদ ব্যাখ্যা বুঝাইয়। দিতে ছিলেন। শুনিতে শুনিতে হিমু কহিল, *দিদিম।, একবার কাশী চলনা গা! কাণী হেন স্থান, তাও্জন্মে কথনে। দেখ্লাম ন|। পুজোর সময কন্শেসন টিকিট*__হিমূর সহিত দিদিমার কলহ সন্ধির কোন বিশেষ পদ্ধতি নির্দি্ট ছিল না, কারণ তাহ দিনের মধো কত বারই হইত। সকাল বেলার ঝগন্ডা কখন মিটি! গিয়। এখন সন্ধির কাল চলিতেছিল। মুক্তা ঠাকুরাণী বইন্ের উপর হইতে চোখ তুলিয়। হিমুর দিকে চাহিয়। কহিলেন, পকি টিকিট, বন্লি? আধা ভাড়া, বুঝি? তা যাবি রাণু? তুইও দেখিন্নি কখনো] না, বাব! বিশ্বনাথের মাথায় একটু জল দিয়ে তীর্থের রজে একবার গড়াগড়ি দিয়ে আসি ?”

প্রশ্নটা যত সহজ, উত্তর তত সহজ ছিল না। একেই তাহার! না মেয়ে বসিয়া! বসিয়৷ বিধবার পু'জি ভাঙ্গিয়! খাইতেছেন। তাহার উপর এই যে প্রকাণ্ড পব্বতভার, আসন্ন কন্ঠ দায়_-এ দায় উদ্ধারের সামর্থ্যও তাহার নিজের নাই। সেও ষে উহারই করুণার উপর নির্ভর! ইহার উপর আবার তীর্থের সখ? আধ! ভাড়া হউক, তবুসেও তবড়কম

২১৬ প্রত্যাবর্তন

নয়,_-তাহারা তিনজন, সেথোও একজন চাই তীর্থের পথে বাহির হইলেই কত রকম খরচ আছে। এই সব ভাবিয়াই অনাগ্রহভাবে মালতী কহিলেন, “তীর্থ স্থানে বেরুলেই বিস্তর খরচ থামকা কাজ কি মামি?”

মামীর মন এতক্ষণ বতটা অগ্রসর না হইয়াছিল, ভাঁগিনেয়ীর আপত্তির কথায় বিরুক্তিতে কাশীনাথের প্রতি ভক্তিতে মনটি আরে৷ দ্বিগুণ আকৃষ্ট হইয়া পড়িল। তিনি কহিলেন, “খরচ পেটে খেলেও আছে, রোগে ধর্লেও আছে, সবেতেই আছে তা বলে মানুষ কি পরকালের কাজও কর্বে না £ হিমি কঁছুলে হোক্‌, ঝগ্ড়াটে হোক্‌, স্তাষ্য কথাও বলে। হাল! হিমি, অরুণ কবে আম্বে ল1? ছুটির কি এখনও দেরী আছে নাকি ? মেথো একজন চাই ত? আবার-_সে ছাড়। আর কাকেই ব। ভরসা করি বিদেশ বিভীয়ে ? যতই হোক্‌, ঘরের ছেলের মতন ছে, মায়াও বসেচে-__” *

হিমু ইতঃপূর্ধে পাঁজি দেখিয়া! ইংরাজী তারিখ মিলাইয়া অরুণের আসিবার দিনটি স্থির করিয়াই রাখিয়াছিল। মধ্যে কতগুলি দিন এবং বাত্রি এখনও বর্তমান, তাহার হিসাবও তাহার কঠস্থ ছিল। তবু দিদিমাকে ব্লাগাইবার অভ্যাস-বশে কহিল, «দিদিমার যে আর তর সইচে ন। ? থামে, এখন ছুটির কোথায় কি? তা ছাড়! সে বদি তোমার কাশী বুন্দাবন করতে যেতে ন! চায়? জোর নেই খাবু--পরের ওপর !”

দিদিমা মালতীর দিক হইতে মুখ ফিরাইয়! মু কে খোঁচ। দিয়া কহিলেন, পন! ভাই, জোর আর আমার কিসের? আমার সঙ্গে কাশী বুন্বাবন যেতে সে না চাইতেই পারে-_কিন্ক যার সঙ্গে চাইবে, বার োর চল্বে, সেও সঙ্গে থাকৃবে ?”

বুদ্ধিমতী মুক্ত! ঠাকুরাণী কিন্ত ক্ষেত্রে একটু হিসাবে তূগ করিলেন! আলোকনাথকে হিমুর বিবাহে অপন্মতির কারণ তিনি মনে করিয়াছিলেন,

একত্রিংশ পরিচ্ছেদ ২১৭

মুর অরুণের প্রতি অন্ুরাগ-বশতঃ | সেট! তাহার ভ্রম! হিমু অরুণকে ভালবাসিত--সত্য ! কিন্তু সে ভালবাসা তাহার কামনাজড়িত নয়। সে হাহার মাকে ভালবাসিত, অরুণকে ভালবাদিত। সে ভালবাসা আত্মীয়ের নিকট দাবীর স্তায় অভ্যাসের মধোই দাড়াইগ্ভাছিল। ভাল না বাসিয়৷ সে অব থাকিতে পাব্িত না। সে জানিত, সে যাহাকে ভালবাসে, সেও হাহাকে ভালবামে। কিন্ধখ তাহার অন্য কোন অর্থ সে কখনে। কল্পনাও করে নাই। তা"ই দিদিমার শ্লেষপুর্ণ বাক্য বার্থ হইয়াই ফিরিয়া গেল, চাহাকে স্পশও করিতে পারিল ন|।

দ্বাত্রিংশ পরিচ্ছেদ

অরুণের ভবিষ্যৎ

সেবার বি-এ পরীক্ষার ফল বাহির হইলে দেখা গেল, অরুণ ফাষ্ট ক্লাশ অনারে পাশ হইলেও বুন্তি পায় নাই পরীক্ষার কৃতকাধ্যতাব্র যে আনন্দ তাহ! সঙ্গে সঙ্গেই ফুরাইল। তা'র পর ভবিষ্যৎ ভাবিয়া অরুণ যেন কুল খুঁজিয়া পাইতেছিল না। এম্-এর গৌরব বহন করিবার জন্য বে বিপুল ব্যয়-সাপেক্ষ পুস্তকাবলীর প্রয়োজন, তাহ! অরুণের ন্যায় গরীব ছাত্রের পক্ষে সংগ্রহ কর! একেবারেই সম্ভব নম্ব | পাশ হইলে ও-__ষাট টাক! মাহিনার চাক্রিও একটা হয় হাতে জুটিবে না।

ঝাল্দায় থাকিতেও এ-সব চিন্তা অরুণের মনে উঠিত। মুখে সে বিষয়ে কোন আলোচনাই করিত না। কারণ সে জানিত, এই দয়ালু পরিবারের সামর্থ্য অল্প। তাহার উপর একট৷ প্রকাও বায়ের তালিক! তাহাদের সম্মুখে উপস্থিত। মালতী একদিন নিজ হইতে মুখ ফুটিয় বিষয়ে অরুণকে তাহ! বলিয়াছিলেন। তাহারই সাহাবা চাহিয়াছিলেন, বলিয়াছিলেন, যদ্দি কোন স্ব-শ্রেণীর ছাত্র গরীবের মেয়েটিকে দয়া করিয়া গ্রহণ করিয়া অনাথার জাতি-মান রক্ষা করে, _-সে বিষরে একটু চেষ্টা দেখিতেও বলিয়াছিলেন। অরুণ জানিত, প্রকুল্নের সঙ্গে তাহার বিবাহ বাধে না। প্রথমেই তাই যোগাতা বিচার করিতে গিয়। প্রচুল্লের নামই তাহার মনে পড়িল। কিন্ত সে চিন্তাকে মে উদয়েই চাপি রা ফেলিল-_কারণ হিমু-হীন ঝাল্দা, যেন কল্পনাই কর! যায় না! হিমু

দ্বাত্রিংশ পরিচ্ছেদ ২১৯

চলিয়া গেলে সংসারে সব দেনা-পা'ওনাই যে তাহার চুকিয়া৷ বাইবে ? তখন শুধু কলেজের রসহীন বইগুলা কি এই একঘেয়ে জীবনকে বাচাইয়া রাখিতে পারিবে? অরুণ ভাবিল, ম! মনে করেন, হিমু বড় হইয়। গিয়াছে কোথায় সে বড় হইয়াছে? এখনও অনেক দিন তাহার বিবাহ না দিলে চলিতে পারে। তা” পারে বখন, তখন এত তাড়াতাড়িই বাকি? হইবে--এখন। তা"ছাড়। প্রফুল্পলকে নিজ হইতে সেত কোন কথাই বলিতে পারিবে না। তাহার বাড়ীর ঠিকানাও সে জানে না_ স্থৃবিধা-মত যখন তাহার কোন আত্মীয়ের সহিত দেখা. হইবে, তখন কথ তুলিবে। অরুণ মালতী দেবীকে আশ্বাস দিক়্। বলিল, হিমুর জন্য ভাবনা কি? সে বথাকালে যোগ্যপাত্র নিশ্চয়ই আনিয়া দিবে মালতী আরামের নিশ্বাস ফেলিয়। কিছুদিনের জন্য নিশ্চিন্ত হইলেন। কিন্ত ছুই বৎসরের মধ্যেও অরুণ খন যোগ্য জনের দর্শন দেওয়াইতে পারিল ন।, তখন অগত্যা তিনি নিজের হাতে সে সমস্যার ভার গ্রহণ করিলেন। সে কথ! পূর্বেই জানাইয়াছি। আপাততঃ আমরা অতীতের অন্থনরণেই প্রবৃত্ত রহিলাম।

কলিকাতায় আসিয়া প্রথমেই অরুণ প্রকুল্লের সংবাদ লইল। গুনিল, সে দেশে নাই, খুলনায় গিয়াছে। ক্লাশ আরম্ত হইয়া! গিয়াছে, দেখিয়া অরুণ হতাশ হইয়। পড়িল।

প্রচুল্ল খুলনা, বরিশাল ঘুরিয়৷ ফিরিক্! আসিল। অরুণকে নিবগ্ঘ্ তাবে ঘরে শুইয়া! থাকিতে দেখিয়া কহিল, প্ব্যাপার কি? ভর্তি হও নি যে?”

অরুণ ইতস্ততঃ করিয়। কহিল, “মনে কচ্চি, আর পড়বো! না। বদি একট! কাজ-কন্মমজুটিয়ে নিতে পারি, তারি চেষ্টা কচ্চি। পড়। যা-হোক্‌ এক রকম হল!”

২২০ প্রত্যাবর্তন

প্রফুল্ল হাসিয়া কহিল, পবিষ্যা-সমুদ্রের তল দেখতে পেয়েছ, ত। হলে ? আর না হলেও চল্বে? ন! হে না, ও-সব বাজে কথা রেখে কালই ভর্তি হয়ে পড়। ডাক্তারখানা় শুনে এলুম, কাল নাকি সর্ব-সিদ্ধিষোগ ! তার পর আবার অশ্নেব। মঘা, এড়াবি ঘা? কালই ভদ্ভি হও, অর একদিনও দেরী নয়।*

অরুণ শ্লান হাসি হাসিয়া কহিল, পতাতে আমার দাম আর কত বাড়বে, প্রশনল্প দা? এটা গরীবের পক্ষেও ঠিক সঙ্গত কি ?”

অরুণ যে এবার স্কলান্রণাপ পার নাই, আর তা”র অবস্থাও কত অসচ্ছল, প্রফুল্ল তাহা জানিত। সে তা'ই লজ্জিত মুখে “ওঃ” বলিয়া ঘরট। একবার প্রদক্ষিণ করিয়া অরুণের খুব কাছে আনিয়া মৃহ্স্বরে কহিল, “অরুণ, তুমি আমায় দাদা বল। আচ্ছা, এট শুধু ভদ্রতার পাতানো! সম্ন্ধ+ না, এর মধ্যে সত্যিও কিছু আছে ?” |

প্রকুল্লের বক্তব্য বুঝিয়৷ আনন্দে অভিমানে অরুণের ছুই চোখে জল ছলছল করিয়। উঠিল। সে কুঠা-মলিন মুখে কহিল, “তুমি সবই জান প্রফুল্ল দা!”

“জানি ভাই। জানি বলেই বল্চি। পয়সার ভাবনাট।--পরীক্ষ পাশ না হওয়। পর্যান্ত তুমি আমার উপরই ছেড়ে রেখে দাও না?”

অরুণ অপরাধীর ভাবে জড়িত কণ্ঠে কহিল, পকিন্তু তুমি আমার কখনে। তোমার সংসারের কোন কথা জানাও নি। তোমার কাকা তোমায় অনেক দেন, বঙ্গ, কিন্তু সে কি--” বলিয়। অরুণ চুপ করিল।

্রসথু্ন কহিল, “হ-জনের পক্ষে তা পর্য্যাপ্ত নয়, এই বল্‌চো৷ ? না_ অরুণ! কাকা ইচ্ছে কল্পে, অনেক ছান্রকেই পড়াতে পারেন।. তা ছাড়া আমার কাজে তিনি কখনো কৈফেৎ চান না কিন্তু আমার মনে হচ্চেঃ

দ্বাত্রিংশ পরিচ্ছোদ ২২১

তুমি মন স্থির করতে পার নি। বেশ, ভাইয়ের আদর না নাও, ধারই না হয় নিয়ো»

অরুণ হাসিয়। কহিল, “গ্তধৃব কিসে ? নবডঙ্কা যে! তুমি কি মনে কর, পাশ করলেই তার দাম আমি তুল্তে পাঁর্বে। ?”

“করি বই কি! আর কোন ওজোর করো! না! তোমার খণে আবার মাথা থেকে পা' পর্য্যন্ত যে বাধা, ভাই-_কিছু মায় করতে দাও, তোমার জন্যে ।”

প্রকুল্লের কথার ভ্ডাবার্থ বদিও হেয়ালিপৃর্ণ, তবু অরুণ শাহ! রিধ্েনপ করিতে চেষ্ট। মাত্র করিল না। ৯.

অরুণের মনে পড়িল, নেবার নিউমোনিয়া রোগে কাতর হইয়। প্রকল্প বখন ছুটিতে বাড়ী গেল ন৷ বা খবর পাঠাইতেও দিল না, তখন তাহার বুদ্ধির নিন্দা করিয়! মেসের সকল ছাত্রই বাড়ী চলিক্৷ গেল। গের্ল ন! কেবল অরুণ। সারাদিন রাত অক্রাস্ত যত্র সেবার সে তাহার প্রফুন্নদা”কে সুস্থ করিয়! তুণিয়াছিল। তাল হইস্স! প্রকুল্প কিছু একবারও সে কথার উল্লেখ করিয়া অরুণকে ধন্যবাদ দেয় নাই। আত্মীয়ের জন্ত আত্মীক্নের যা” কর্তব্য, যেন তেমনই কর্তব্য-পালনের ব্যাপার অঞ্ণ ইহাতে খুনীই হইগ্াছিল। প্রফুল্ল যদি পরের মত তাহার কাছে ভদ্রতার ক্রটি স্বীকার বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিত, তবে তাহার লজ্জ! রাখিবার স্থান থাকিত না। বরং কেহ পরে কথার আর উল্লেখ করিলে লজ্জায় তাহার মুখ কাণ বরাঙ্গা হুইয়্াই উঠিগ্াছে ! তবু অনিচ্ছাতেও সেই ঘটনা স্বরণ করিয়া অরুণের মনে হইগ, বোধ করি সেই খণেরই কথ! ! প্রকুল্লের কে যে ব্যথার সুরটুকু ধ্বনিত হইয়! অরুণের মনে বাজিল, তাহাতে বাদ- প্রতিবাদ কর! চলে না। অকুণ প্রকুল্লের প্রস্তাবে সম্মতি দিল।

অপরাহ্ছে প্রিয়নাথ বাবুর বাড়ী পড়াইতে গেলে এ-কথ! সে-কথার

২২ প্রত্যাবর্তন

পর তিনি নিজ হইতেই কহিলেন, "সকলারশিপটা ন। পেয়ে এবার একটু অন্থবিধ৷ হলে! ত৷ হলে। পরীক্ষার সময় য! মাথার যন্ত্র! গেল, তাতে ফা্টক্লাসই আমি আশ! কর্‌তে পারিনি। বড় খুসী হয়েচি! কিন্ত দেখ হে, আমি একটু গোলে পড়ে গেছি। দিদিমণিটা শীগৃগিরই পরের বাড়ী চলে যাচ্চে। তখন খোকার দিন কাটুবে কি করে? আমার্দেরও বড় ছক ঠেকৃধে। তুমি বাপু বাসাটি ছেড়ে দিরে এবার এখানে এসে থাক হব্রও মেল! খালি রয়েচে কোন অন্ুবিধ। হবে ন। তোমার_কোন ওজোর আমি শুন্ব না বাপু। উপকারটি তোমায় করতেই হবে।” প্রিয্নাথ খাঝুর কণম্বর স্নেহ সহৃদয়তা-পূর্ণ। অরুণ বুঝিল, প্রয়োজন কার) তা"ই তাহার শ্নেহপিয়াসী চিন্ত, সহজেই গলিয়। গেল। অবাঁচিত করুণা, সে বিধাতারই দান! নহিলে প্রয়োজ্জন-কালে এমন স্েহময় হৃদয়ের স্পর্শ, অযোগ্য দে-কোন্‌ গুণেই বা বার বার লাত করে!

প্রিযনাথ বাবুও তাহাকে এম্-এ পড়িবার পরামর্শ দিলেন। একট! প্রোকেসারি অন্ততঃ পাওয়া সম্ভব হইবে--আইন পড়িয়া উকীলদের যা অবস্থা ! ঘরে সচ্ছলতা থাকিলেও ঝকৃমারির ব্যবসায় ন1 করাই ভাল। ছিপ ফেলিয়া অটুট ধৈর্য্যে বসিয়। থাকিতে পারিলে হয়ত জীবনের মন্ধ্যা বেলায় রুই কাতলা পড়িতে পারে! কিন্তু সে অটুট ধৈর্য্-_যাহাকে এখনই সংসার চিন্ত! করিতে হইবে--তাহার জন্ত নয়।

মাষ্টার মহাশয় বাড়ীতেই থাকিবেন শুনিয়া প্রায় বরুণ! খুসী হইয়৷ উাহার জন্ত নির্দিষ্ট কক্ষের সঙ্জাসংস্কারে প্রবৃত্ত হইল।

অরুণ জানিত না, ছুটির সময় ঝরুণার বিবাহের দিনস্থির হইয়া গিয়াছে। ২২শে শ্রাবণ তাহার শুভ-বিবাহের দিন। পাত্র চন্দনার জমিদারের ছেলে সত্যবরত। সত্যবরতের মন্বন্ধে অরুণ বেশী কিছু জানিত ন|। বেটুকু জানিত, তাহাতে তাহাকে আত্ন্তরী, রূপ ধনগর্বিিত যুব! বলিয়াই

দ্বাত্রিংশ পরিচ্ছেদ ২২৩

সাহার ধারণা ছিল। ইন্টার-মিডিয়েট ফেল করিয়া সে কলেজ ছাড়িয়া দেশে চলিয়! গিয়াছিল। তা*র পর কয় বৎসরের মধ্যে তাহার কোন সংবাদই আর সে পায় নাই-_লয়ও নাই। এমন শিক্ষিতা বুদ্ধিমতী মেয়েটির স্থামী-নির্ব্বাচন উপযুক্ত রূপ হয় নাই বণিয়া বিশ্বাস হওয়ায় অরুণ সংবাদে মন খুলিয়। তেমন আস্তত্রিক আনন্দ জানাইতে পারলি ন|।

বরুণার সহিত দেখা হইলে সে তাহাকে প্রণাম করিয়। নত মুখে একটুখানি লজ্জা-বিজড়িত মিষ্ট হাঁসি হাঁসিল। এই কয় দিনের ব্যবধানে সে যেন অনেকগানি বাঁড়িয়। উঠিয়াছে। আনন্দের ফাগুণ-রাগ তাহার দেছে.. মনে ইহার মধ্যেই বেন রাঙ্গ। আলো। ছড়াইক্ দিয়াছে হাসিতে, ভঙ্গিমায়, কথায় তাহারই ঝল-মল কিরণ ঠিকরাইয়া পড়িতেছিল। হাতে গড়! শ্লেহ-পাত্রীটির জন্ত মনে মনে সে একটু উদ্বিগ্রও হইল। সে তাহাকে আবার্বাদ করিয়! মনে ননে কহিল,__'তোমার কল্পনার স্বর্গ যেন মিথ্যা না তয়! ভগবান্‌ তোমার ভবিষ্যৎ সুখময়, আনন্দময় করুন”! বরুণার লঙ্জা- জড়িত মু হাসিটুকু তাহার মিষ্ট লাগিলেও--সঙ্গে সঙ্গে বাথাও দিল। কৈশোরের জুথ-নিকেতন ছাড়িক়। এবার ষে অজান। স্থানে সে সত্যের সংগ্রানে চলিয্াছে, সেখানে জয়ী হইতে পারিবে কিনা, কে জানে? অমনি মধুর হাসিটি ভবিষ্যতেও তাহার থাকে যেন, ভগবান্‌!

আরুণের মনে হুইল, এবার পকিরিষ্া গিয়। হয়ত দেখিবে, হিমুও এমনই করিয়। তাহার কাছ হইতে দূরে চলিয়া গিয়াছে!

ভাগ্য-নির্য় হইয়। গেলে লে নিশ্চিন্ত মনে পড়া আরম্ত করিয়৷ দিল। রুল প্রথমটা ব্যবস্থায় বাধ৷ দিয়াছিল। কিন্তু বখন শুনিল, প্রহায়ের তন্থাবধান প্রিযননাথ বাবুর লোক-সঙ্গম্পৃহ। শুধু ছলের কথা, আসলে ব্যবস্থা অরুণেরই 'জ্ন্ত--তখন সেও আর আপত্তি করিল না। গৃহস্থ ঘরে, বিশেষ এমন সহ্ৃদয় পরিবারে, থাকায় অরুণের শরীরের পক্ষেও

২২৪ প্রত্যাবর্তন

উপকার হইবার সম্ভাবন। মনে করিয়াই সে আরও মত দ্িল। মান্ুবের ভালবাস! পাওয়া মানুষের কাছে যে কত মূল্যবান, তা” সে বেশ জানে

এই সময় জলদ ডেপুটির পদ পাইস্স! চট্টগ্রামে গেল। বন্ধুর উন্নতিতে আন্তরিক আনন্দ জানাইয়া অরুণ তাহাকে ট্রেনে তুলিয়। দিয়া আসিল। বিদেশে ছুদ্দিনে সে জলদের কাছে অবাচিত অনেক সাহাধ্যই পাইস্নাছে। আজ তাহার একজন প্ররুত বন্ধু দূরে চলিয্না গেল--কে জানে. আবার কবে তাহার সঙ্গে দেখা হইবে!

পঞ্চত্রিংশ পরিচ্ছেদ ২৩৯

ভাহার কোন উল্লেখও সে অস্থানে প্রকাশ করিল না। নন যদ্দিও তাহার প্রফুল্লর অনুসন্ধানের জন্য ব্যগ্র হইতেছিল--তবু এতগুলি দেব- শশনাশাব্যাকুল চিত্তের অনুরোধ সে প্রত্যাখান করিতেও পার্ল না। ইহার! যে যাত্রার জন প্রস্তুত হইয়াই বসিয়। আছেন--এখন দে আর ন! বলে কেমন করিয়া ? ফিরিয়া আগে বন্ধুর সংবাদ লইয়া তবে সে নিজের কাজে মন দিবে।

পঞ্চত্রিংশ পরিচ্ছেদ

কাশীতে .

কাণী আসিয়। হিমুর আর আনন্দের সীম! ছিলনা চারিদিকে দেব- মন্দির, সকাল সন্ধ্যায় মন্দিরে মন্দিরে নহবৎ বাজে | বোম্‌ বোম্‌ হর হর শকে গঙ্গাঙ্ানার্থীরা পথ চলেন। চারিদিকে ভক্তি আনন্দের স্থুর। গঙ্গার নিগ্ধ নির্মল জলে গা ডুবাইক়। চারিদিকের উন্নত মন্দিরচূড়ার পানে চাহিয়া কি একটা অভিনব আনন্দ ভক্তির ভারে হিমুর সারা দেহ ভাবতরক্গে ওত:প্রোতঃ হইয়! উঠিত। মনে হইত অরুপদার ছুটি যদি খুব--খুব দীর্ঘ- কাল হইত--কেমন মজাই তবে হইত কাশী ছাড়িয়া যাইতে হইবে মনে করিতেও তাহার যেন ভাল লাগিত ন। অরুণকে সঙ্গী করিয়া সকাল বিকাল সন্ধ্যা পর্য্যন্ত তাহার! মন্দিরে মন্দিরে ঠাকুর দেখিয়! বেড়াইত। “কাশীথণ্ড” পড়া থাকায় দেব দেবীদের নাম, ধাম,, অবস্থা, ইতিহাস অনেক বিষয়ই মুক্তাঠাকুরাণীর কণ্ঠস্থ ছিল। তাছাড়। পৃর্েও তিনি আর একবার এই দেবধামে ঘুরিয়৷ গিয়াছেন। অরুণ তাহাদ্দের অভিভাবক ব্ধপে ব্যবহৃত হইলেও আসলে “সেখোর' কার্য তিনিই করিতেছিলেন। হিমুর দেখিয়। দেখিয়! আর আশ! মিটিতেছিল না। একই মন্দির ছুইবার তিনবার করিয়। সে দেখিতে যাঁর ক্রমে অরুণের ছুটি ফুরাইয়া আসিল দেখিয়! মুক্তাঠাকুয়াণী ত্বর1 দিয়! কহিলেন, প্চটুপট্‌ এইবার সেরে নাও ৰাছ!, এখনও ওদিকট! সবই বাকী রইল বে। ছর্গামন্দির, মনক্কামনেশ্বর, জগরাথদেব, অসিমাধব বড় বড় ঠাকুরই সব বাকী রম্মেছেন এমন করে খু'টিয়ে দেখতে গেলে কি ফুরাবে কখনও 1”

পঞ্চত্রিংশ পরিচ্ছেদ ২৪১

স্থির হইল পরদিন দুর্গীবাড়ী হইয়। জগন্নাথ মন্দিরে বাঁওয়া বাইবে। তাহাদের বাস! বাঙ্গালীটোলায়, পথ অনেকখানি, একটু সকাল সকাল বাহির হওয়। চাই।

কাশী সহরটি যথে্ ৰড়-__চকে বিস্তর দোকান, পাথরের বাঁড়ী, মন্দির রাজপথের ছু'ধারে সারিবন্দী বিপনি শ্রেণী ইহাদের কোথাও বর্ণ-বহুল ফল, ফুল, ফুলের মাল! সাজান। কতকগুলি জুতার দোকান কাপড়ের দোকানে নানাবিধ পাড় খোলের চুনরী, বেনারসী, বুন্দাবনী কত রক- মারি সাড়ী ঝ্লাইয়। রাখিয়াছে। ছিটের ফ্রক, প্লাউস্‌, সার্ট, কোট, পিনাফোর, রঙ্গিন পাতল! কাপড়ের কৃত্রিম পত্রপুষ্প-খচিত বিলাতী বনেট এখানকার দোকানদার খরিদ্দারের হাত এড়াম্ন নাই বে দিকে চাও চোখ যেন ঝলমাইয়া যায়__কিন্ত যথার্থ আনন্দ হয় কি ন1 বোঝ যায় না সদৃশ স্থমাঙ্জিত পিতলের সিংহাসন, বাক্স, গালার চুড়ি, স্থগন্ধি জরদা, দোক্তা, স্থুরতীর গুলি, কাঠের খেলনা--এই গুলিই কাণীর বিশেষত্ব পথিকের সব হর্ষোতফুল্প--অধিকাংশ লোকেরই হাতে জল-পাত্র, পরণে ক্ষৌমবন্ত্র, দেখিলেই দেবমন্দিরের যাত্রী বলিয়া বুঝ! বায়। হিমু স্বপ্রপূর্ণ বিহ্বল দৃষ্টিতে সবটুকুই লক্ষ্য করিয়া! দেখিতেছিল, তাহার চক্ষে সমস্তই অনৃষ্টপৃবব !

মুক্তা ঠাকুরাণী প্রত্যেক ছোট থাট মন্দিরে ঢুকিয়। পথের ধারে জড় কর! নোড়া হ্ুড়িতেও একটুখানি জলের ছিট। দিয়। মালতীকে বলিতে ছিলেন__ “যদি মানস কর্বার কিছু থাকে এই বেল! ভাল করে করেনে, রাণু ওঁরা এক এক জন সকলেই জাগ্রত দেবতা ! দেখিস্‌ বাছা কাউকে বেন ছোট বড় করিস্নে-_বাবা, মা, তোমরা সব আমার রাণুর মনস্কামনা পৃণ কর। আমর! আবার এসে তোমাদের পৃজে। দিয়ে যাব ।”

মনম্বামন। পুর্ণের ইঙ্গিত মালতীরও বেশ জানাই ছিল। মেরেবর

১৬

২৪২ প্রত্যাবর্কন

জন্য বর প্রার্থণাই যে তাহার উপস্থিত কামা, কর্মের মধ্যে প্রধানতম, তাহ! তিনি ভালই জানেন। তবু সংসারের ঘাত প্রতিঘাতে বিরক্ত বিষণ্ন চিত্ত আনন্দ ধামে-_-তাহার সে ছ£খের পশরা! যেন নামাইতে চাহিতেছিলন| হপ্তমন পরিপূর্ণ আনন্দে কেবলি যেন বলিতে চাহিতেছিল, “আর কিছুই চাহিনা, কিছুই না-_শুধু তোমাকেই যেন চাহিতে পারি। সব অভাব মন হইতে দূর হইয়া যাক! শাস্তির সিংহাসনে শুধু তুমি থাক_ আমার অন্তঃকবরণের সবখানি জুড়িয়৷ !' তা*ই মামীমার আদেশ অনেক সময় কাণে পৌছাইলেও মনে ঠিক পৌছিতেছিল ন1। প্রার্থনার ভাষ। হারাইয়া গিয়া মন যেন নিঃসংজ্ঞ হইয়। গিয়াছিল।

অরুণ তাহাদের একস্থানে অধথা বিলম্বে ব্যস্ত হইতেছিল। হৃর্গী- মন্দিরে অঞ্জলি প্রদানান্তে মালতী তন্ময় হইয়। দেবী-মুখপানে চাহিয়] যুক্ত করে ব'সয়। থাকায়, মুক্তা ঠাকুরাণী ভ্রত অঙ্গুলি চালনায় নির্দিত জপ সংপ্যার কতকট! সারিয়া লইতে ছিলেন ভাবিতেছিলেন_-আবার বাড়ী ফিরিয়া! গ্রান্না খাওয়ার অয়োজন আছেই। আজ আবার ফিরিবার পথে “কছু আনাজ পাতিও কিনিয্না লইতে হইবে। ঘরে যাহা! আছে 'অকুলান? হইবে হিমানী মন্দিরের বাহিরে আসিয়া দাড়াইয়্াছিল। একদল যাত্রী মন্দিব্র প্রদক্ষীণ করিয়া ফিরিতেছিল,--সেও তাহাদের দলে মিশিল দেখিয়। অরুণকেও অগত্যা তাহার অন্ুমূরণে বাধ্য হইতে হইল। যে মেয়ে সে-_ এখনি ভিড়ের মধ্যে কোথায় যে জ্ঞানশৃন্ত হইয়া ছুটিবে-__কাগজ্ঞান কিছুই নাই তাহার ?

মন্দির প্রদক্ষিণ হইলে অরুণ চাহিয়া দেখিল মন্দির-দ্বারে জনতা! অনেক বাড়িয়। গিয়াছে। 'সিন্দুর গাঁদাফুলের মালায় চচ্চিত হিমুকে বাহিরে যেখানে দোকানীরা ফুলেরমালা, ফুল, বেলপাতা৷ বাতাস, রুলী, সিন্দুর, পেঁড়া, ছোট ছোট মাটির খুরি সরায় পূজায় উপকরণ “ডালি” সাজাইয়া

পঞ্চত্রিংশ পরিচ্ছেদ ২৪৩

বমিয়াছিল,_সেইখানে শিষ্টভাবে অপেক্ষা করিবার অনুরোধ করিয়! সে পুনরায় মন্দির মধ্যে প্রবেশ করিল।

মালতী মুক্তা ঠাকুরাণীকে ভিড়ের নধ্য হইতে উদ্ধার করিয়া মন্দির প্রদক্ষিণ করাইর৷ বাহিরে আসিয়া অরুণ দেখিল হিমু তাহার অনুরোধ রক্ষা করিয়। বথানিদিষ্ট স্থানে দাড়াইয়া নাই। দেখি! মুক্তা ঠাকুরাণী 'পুরুষালী” মেয়ের বিরুদ্ধে মালতীকে শুনাইয়। বিরুক্তিপ্রকাশ করিতে লাগিলেন। আর এই অন্তাষ্য স্বভাবের জন্ত ভবিষ্যতে কোনদিন যে তাহার ললাটে বিস্তর ছুথ সঞ্চিত আছে--তাহারও ভবিষ্ম্ধাণী করিয়া চিন্তাভারাতুর মায়ের মনে আশঙ্৷ উন্দীপিত করিবার প্রয়াসে সচেষ্ট হইলেন।

অরুণ অস্কুলিনিদ্দেশে হ্র্থাকুণ্ডের দিকে তাহাদের দেখাইয়া! দিয়া কহিল, “আপনার! এখানে গিয়ে দাড়ান একটু, আমি তাকে এখান খুঁজে আন্চি। খুব সম্ভব সে ভিড়ের মধ্যে গান গুন্তে চুকেচে।” মুক্তা ঠাকুরাহী মালতীকে অগ্রবন্তী হইতে আদেশ দিয়া [হমুর উদ্দেশে বিরক্তিপ্রকাশ করতে করিতে কুণ্ড অভিমুখে চলিয়া গেলে অরুণ হিণুব্র সন্ধানে মন্দির পার্থে যেখানে জনতামধ্য হইতে গানের শখ আসিতেছিল সেইদিকে চলিল।

এক জায়গায় . দুইজন লোককে দীড়াইতে দোখলে ভূতীর়ব্যক্তিকে কারণেও একবার সেখানে দাড়াইতে হয__ত্রমে চতুর্থ পঞ্চম করিয়। জনতা ধে পরিমাণে বাড়িতে থাকে, দ্রষ্টব্য যতই অনৃষ্ঠ হয়-_মানবের দেখার বা শুনার কৌতুহল সেই পরিমাণে বন্ধিত হয়। ক্ষেত্রেও তেমনি ঘটিয়াছিল। গায়ককে দেখ! যাইতেছিল না, কেবল ঠেলাঠেলি হুড়াহড়ির ধুম লাগিয়া গিয়াছিল। যে গান করিতেছিল, সে একজন অন্ধ গারক। যদিও সে বাংল গান গাহিতেছিল, তবু কঠন্বরে তাহাকে বাগালী ৰলিয়! মনে হইতেছিল না। ান্বক বেহালা বাজাইয়। গ|হিতেছিল,_

২৪৪ প্রত্যাবর্তন

শুধু আসনপাতা৷ হল আমার সারাটি দিন ধ'রে।

ঘরে হয়নি প্রদীপ জালা তারে ডাকৃব কেমন ক'রে?

আছি পাবার আশা! নিয়ে তারে হপ্ননি আমার পাওয়1--*

গায়কের কগস্বর যেমন মিষ্ট, __সুরবোধও তেমনি অসাধাব্রণ। শিক্ষিত-

কঠের সুমধুর সঙ্গীতধবনি শ্রোতৃ-বর্গকে মন্ত্র মুগ্ধ করিয়! কখনো! নিষ্চে গড়াইয়। কখনো উর্ধে উঠাইয়া আকাশ বাতাসকে যেন প্লাবিত করিয়! ফেলিতেছিল। অরুণ ভিড় ঠেলিয়া৷ ভিতরে ঢুকিয়া মুহূর্তের জন্য যেন নিজের প্রয়োজন ভূলিয়! গিয়াছিল। গায়কের সম্মুখে একখানি মাটার সরা-_ তাহাতে পয়সা, আধ্লা, ছু'চারিটি আনি ছুয়ানিও জমিয়াছে।

হিমুও এই ভিড়ের মধ্যে একপাশে স্থান করিয়া লইয়া গান শুনিতেছিল। এইবার ফিরিবার কথা মনে পড়ায় সে অগ্রসর হইয়া হাতের অবশিষ্ট ুয়ানিটি গাক্পকের মৃতস্থালীতে ফেলিয়৷ দিয়! দেবতার প্রসাদী শালপাত| মোড়া পেড়! ছুইখানিও তাহার মধ্যে রাখিয়া! দিল। সে ফিরিতে গিয়া শুনিতে পাইল, “আহা মেয়েটি বড় দয়াময়ী? মা! ভগবান: তোমার মঙ্গল কর্বেন।”

আশীর্বচন কাহার ? ভিক্ষা প্রাপ্ত অন্ধের নহে? হিমু বিশ্মিত- ভাবে চাহিয়া! দেখিল, এক গেকরুয়াধারী সৌমাদর্শন পুরুষ এক বিধঝ! নারী তাহারই পাশে দীড়াইয়। আছেন। সঙ্গীত-মুগ্ধ হিমু এতক্ষণ তাহাদের অবস্থান উপলব্ধি করিতে পারে নাই।

প্রথম প্রথম সে সন্ন্যাসী দেখিলে ভয় পাইত। তাহাদের গ্রামে সন্ন্যাসী বড় একটা দেখা যাইত না। ছোট বেলায় সে শুনিয়াছিল জটাধাবীরা! ছোঁট ছোট ছেলে মেঝে দেঁখিলেই ধরিয়! নিজেদের ঝুলির মধ্যে পুরিয়া লয়েন। হিমু তখন বন্থতত্ব জানিত না সুতরাং একটিমাত্র সাধারণ ঝুলির ভিতর কেমন করিয়া যে ক্রমাগতই ছেলে ভর্তি হইতেছে-_-এ সংশয় বা তৎসংক্রান্ত

পঞ্চব্রিংশ পরিচ্ছেদ ২৪৫

বিতর্ক ইহার কিছুরই সে আবশ্তকত। অন্থভৰ করে নাই। বয্লোবৃদ্ধির সহিত ক্রমশঃ ভ্রম তাহার ভাঙ্গিয়। গেলেও ভক্তির সহিত এঁ সম্প্রদায়ের লোকেরা যে ভয়েরও আধার--এ বিশ্বা এখনও তাহার বলবৎ বুহিয়াছে। এখানে পথে ঘাটে মন্দিরে সব্বদ। সন্গ্যাসী, দণ্তী, ব্রহ্মচারী, পরুমহংস প্রস্থতি দেখিয়৷ দেখিয়া তাহার ভয়ের ভাব অনেকখানি কমিয়া গিয়াছিল। ম] দিদিমার অনুকরণে সুবিধা পাইলে সেও এখন সন্াসী দেখিলে গলবস্ত্রে প্রণাম করে। তবু এই গেরুত়াধারী সৌম্ন্ুন্দর মুস্তির পানে বারেক চাহিয়। দেখিয়াই হিমুর মনে কেমন একট! ভক্তির সহিত আনদ্দের ভাবও জািয়। উঠিল। সে গলায় আচল বেড়িয়! জনতার মধ্যেও কোনমতে সন্যাসীর পায়ের তলায় নাথ! ঠেকাইল। পার্খবর্তিনী বৃদ্ধার সাদা কাপড়ের জন্য সে তাহাকে প্রণাম কর! প্রয়োজন বোধ করিল ন|। ভক্তির আবশ্তকতা যে আমর! অনেকখানি বাহিরের পরিচ্ছদ দেখিয়া নিপ্ধারন করি? গেরুয়াধারী তাহার মাথায় হাত রাখিয়া স্েেহমধুরস্বরে কহিলেন,_-“মা লক্ষেশ্বরী হও। দীনের প্রতি চিরদিন যেন তোমার ধরা থাকে !”

বৃদ্ধা কহিলেন,-_"মেয়েটি বড় সুন্দরী !”

গেরুয়াধারী কহিলেন, *গুধু সুন্দরী নর-__ম! সর্ববস্লক্ষণ। !”

হিমু ঘন ঘন বাহির হইবার পথপানেই তাকাইতেছিল। অভিপ্রায় ছুএকজন সরিক্না একটু স্থান করিয়া দিলেই সে বাহির হইয়৷ পড়িবে। অরুণ ফিিয়। তাহাকে ন৷ দেখিয়। না জানি কতই বিরক্ত হইয়াছে তা” ছাড়া অপরিচিতের মুখে আত্মপ্রশংস! গুনিতে তাহার লজ্জাও করিতেছিল। হিমুর আবার এত লজ্জা জন্মিল কবে? অবটন-ঘটন-পটিযসী প্রকূতিঠাকুরাণীর "অসাধ্য কিছুই সংসারে নাই। বয়োবৃদ্ধি জনিত মনোভাবের পরিবর্তনের মহিত আলোকনাথের ব্যবহারে এবার স্বভাবচঞ্চল।

২৪৬ প্রত্যাবর্তন

বালিক1 হিমুকেও অনেকখানি পরিবর্তিত করিয়। দিয়াছিল। বাহিরে তাহার বালিকাভাবের এতটুকু ব্যতিক্রম দেখা না গেলেও মনে মনে সে এখন সংসারকে চিনিতে বুঝিতে শিখিতেছিল।

হিমুর উদ্দেগ-চঞ্চল ঢৃষ্টি অরুণের উপর পতিত হইতেই সে তাড়াতাড়ি আগাইয়া ভিড় ঠেলিয়া৷ তাহাকে বাহির হইবার পথ করিয়া দিল। বাহিরের মুক্ত বায়ুতে আসিয়! ভিজ! চুলের গোছা! হাত দিয়া জড়াইয়। লইয়া হি হাসিমুখে কহিল, “ভাগ্যে তুমি এলে অরুণদ! ! নৈলে গিয়েছিলেম্‌ অর কি? কেমন করেই যে বের হতাম!”

“কেন! যেমন করে ঢুকেছিলে ।” বলিয়া! অরুণ তাহার পরিশ্রমের প্রতিশোধ লইবার জন্য মুখ ভার করিয় রহিল। কিন্তু তা” দেখিয়! হিমুর মনে যাই হোক্‌ মুখে সে তাহ! ফুটাইল না, তেমনি সপ্রতিভ হাসি-মুখেই কহিল,_-দবাঃ ব্রে, তখন বুঝি এমন ভিড় ছিল! অকুণদী, সন্গ্িদী আর বুড়ীটি আমাদের দিকে কি রকম করে দেখ্‌চেন দেখ !”

হিমুর দৃষ্টির অনুসরণে অরুণ চাহিয়া দেখিল- রাস্তার অপর দিকে দড়াইয়। এক বৃদ্ধা-নারী অনিমেষ বিহ্বলদৃষ্টিতে তাহার পানেই চাহিয়! আছেন। সে চোখের পানে চাহিয়৷ অরুণের সারাদেহ কি এক ভাবাবেগে কীপিয়! উঠিল। মনে হইল-__এ দৃষ্টি যেন তাঁহার বড় পরিচিত। সে যেন যুগ-বৃগান্তর ধরিয়া অমনি করিয়! উহারই ছুটি স্থির শাস্ত অথচ অন্তর্ভেদ্ধ দৃষ্টির লক্ষ্য হইয়াই আসতেছে! স্বপ্নময়, ভাবময়, জ্যোতি, আনন্দময়, দ্ঃখ-_বিশ্ময়--বিশ্ররণময়-_সে দৃষ্টি যে কি তাহা সে যেন বুকের ভিতর দিয়। প্রাণের ভিতরে অনুভব করিতেছিল অথচ কিছুই বুঝি অন্গভৰ করিতেছিল ন!। মানুষকে মেন্মেরাইজ্‌ করিলে তাহার যেমন অবস্থা হয়__. হয় এও নেই একই ভাব ! তেমনি অনমুভূত স্বপ্রপূর্ণ অভিনব আনন্দ বিষাদের নীতল আক্রমণ সারাদেহে মনে যেন ধীরে ধীরে বেষ্টন করির়!

পঞ্চত্রিংশ পরিচ্ছেদ ২৪৭

ধরিতেছিল। বৃদ্ধার দক্ষিণপার্খে পিতলের কমগুলু হস্তে যে গেরুয়াধারী সৌমা-সুন্র মস্তি! কে ইনি? অরুণের পরিচিত কেহ কি হইবেন? কে জানে কে-ন্মরণ হয় না! তবু মন কেন ছুটিয়। এঁ ছু'খানি ধুলি- ধূনরিত চরণতলেই লুটাইতে চাহিতেছে ? অরুণ ব্যাকুলভাবে নিজ দৃষ্টি ফিরাইয়। লইল। মনকে বুঝ!ইতে চাহিল, হয়ত এই কাশীর পথেই আর কোনদিন ইহাদের সে দেখিয়া থাকিবে। হয় তেমন করিয়৷ চাহির। দেখে নাই। এমনি আব্ছায়াব্র মত সেদিন ভাসা ভাস দেখিয়াছিল, তাই ভাল ম্মরণ হইতেছিল না। তাহাই হইবে। কি আশ্চর্য্য! এই সহজ তথ্যটি বুঝিতেও এত সময় লাগে? কিন্তু কার পথে সন্ন্যাসীর অভাব নাই। পথের ধূলার পড়িয়া! কয়জনের পায়ে লুটাইবার তাহার সাধ হইয়াছে? এচিস্তাটিকেও সে প্রশ্রন্ন দিলনা! পথে 'নোড়ানুড়ী” অনেক থাকে) তা”ই বলিয়। সকলকেই আর “বিশ্বনাথ বলিয়। অন্তরের সমস্ত ভক্তি শ্রদ্ধার অধ্থ্য রচন। করিয়া দিতে সাধ হয় না,-ভক্তি তাহার যোগ? আধারেই আশ্রয় লয়। হয় এঁ মহাপুরুষে ভগবানের কিছু বিভূতি আছে! নহিলে এমন ভাবই ব। অনুভব হইবে কেন?

হিমুকে ত্বত্র৷ দিয়া সে অগ্রসর হইল।

রৌদ্রের তাপ বাড়ার মুক্ত। ঠাকুরাণী মালতীকে লইর়৷ ছর্গা-কুণ্ডের অনাবৃত ভূমি ছাড়াইর়! গিয়াছেন। আজ তাহাদের অযথা বিলম্বের কৈফিয়ৎ দিতে সারাটা দিনই হরত বকুনি খাইয়! কাটিয়া যাইবে--মনকে এই সব বিভিন্ন-চিন্তার অবসর দিবার চেষ্টা করিয়াও অরুণ কৃতকাধ্য হইতে পারিতেছিল না। চলিতে চলিতে ক্ষণে ক্ষণে সে মুখ ফিরাইয়! চকিত-দৃষ্িতে পূর্ব-দৃ্টদের দিকে চাহিয়া দেখিতেছিল। সে যেঠিক ইচ্ছ! করিয়াই চাহিতেছিন তাহ! ন়-_সে যেন ন! চাহিয়া থাকিতে পারিতেছিল না সে দেখিল- _সেই বৃষ্ধা! নারীও তেমনি করিয়াই অপলক-নেত্রে তাহারই

২৪৮ প্রত্যাবর্তন

দিকে চাহিয়৷ আছেন গেরুয়াধারীরও কোমল ন্নেহময়-দৃষ্টি তাহার উপরেই সংন্তস্ত। সে দৃষ্টির লক্ষ্য হইতে সুখ কি দুঃখ, আনন্দ ঝা বিষাদ-_কি ষে তাহার মনে উঠিতেছিল, সে তাহা ঠিক বুঝিতে পারিতেছিল না॥ কেবল এইটুকু বুঝিতেছিল, বে ইহাদের সান্নিধ্য দে আর সহ করিতে পারিতেছে না। এখান হইতে পলাইয়। যাওয়াই তাহার এখনকার একমাত্র কাম্য কিন্তু তবু পা যে চলিতে চাহে না? দৃষ্টি সেই অনীগ্দিতদেরই পুনঃ পুনঃ দেখিতে চাহে। অরুণ লক্ষ্য করিয়াছে--হুন্দনী হিমুই তাহাদের লক্ষ্য নছে। তা» বদি হইত,--তবু কিছু অর্থ বুঝা যাইত! কিন্তু দীনহীন অরুণের পানেই যে উহার৷ চাহিয়। আছেন ইহারই বা অর্থ ক? কি আছে তার? কেনই বা তাহাকে ছু'জন অপরিচিত লোকে অমন করিয়! দেখিতেছেন?

চলিতে চলিতে মুখ ফিরাইয়। পশ্চাদ্ন্তী অরুণের উদ্দেশ্তে হিমু কহিল,__ “হোলো কি তোমার অরুণদা ? তুমি যে আঙগ চল্‌্তেই পাচ্চ না ! আমি ঠা দাড়িয়ে দীড়িক়ে চলেছি, তবু তুমি পেছিয়ে পড়. চে৷ বে? শোধ নিচ্চ নাকি আমার গান শোনার ?”

উত্তর ন৷ পাইয়া-_এবার সে অরুণের বিবর্ণ স্রান-মুখের পানে চাহিয়। বিশ্মিত হইয়া কহিল, *ওমা! তোমার মুখ চোখ অমন হয়ে গেছে ৫কন? অন্গুখ কচ্চে না কি? পায়ে লাগলো বুঝি, কিছু-_দেখি ?” বলিয়া সে থমকিয়া দীড়াইতে, অরুণ গন্তীর আদেশব্যঞ্কম্বরে কহিল,__প্এগিয়ে চল-_মা ব্যস্ত হচ্চেন কত।” নিজের সম্বন্ধে সে কোনই উত্তর দিল না।, তাহার গম্ভীর মুখের পানে চাহিয়। হিমুও দ্বিতীয় প্রশ্ন করিতে সাহস করিল ন1। সদ। প্রসন্নচিন্ত শান্ত-মুর্তি অরুণদা+র মুখের ভাবও কণ্ঠের সুর যে তাহার সম্পূর্ণ অপরিচিত-ন্তা'ই সে বিশ্িতের অপেক্ষা ভীতই হইয়াছিল।

বট্ত্রিংশ পরিচ্ছেদ ংশয়-দোলায়

"মা! শরীর £ক বড় বেণা খারাপ মনে হচ্ছে? আর খানিকটা যেতে পার্লে স্বামী-ভাক্করানন্দের মন্দির দেখে সেখানেই একটু বিশ্রাম করেনিতে পার্তে। পার্বে কি তা?” বলিয়। পূর্বোক্ত গেরুয়াধারী পুরুষ সঙ্গিনী বৃদ্ধার পানে চাহিয়া! দেখিলেন।

রমণীর বিশ্বয়-মথিত ব্যাকুল অনিমেষ-দৃষ্টি তাহার দৃষ্-পদার্থের পানেই তখনও অচল হইয়। বাধিয়াছিল। ছেলের কথ। যে তীহার কাণে গিয়াছে' এমন বুঝাইল ন|। ইহা দেখিয়া! তিনি মাতৃ-দৃষ্টির অন্থসরণে চাহিয়া দেখিলেন-_ক্ষণপূর্বদৃষ্টা সেই সুন্দরী মেয়েটির পাশে দীড়াইয়া সেই সুন্দর তরুণ বুবা তাহাদের দেখিতেছে। সংসারে সৌন্দর্য্যের উপাসক কে নয়? রূপ দেখিয় যুগ্ধ হয় সকলেই রূপ বিধাতৃ-সথষ্টির উৎকৃষ্ট অংশ। মানুষ স্বন্বরকে ভালবাসিয়াই চিরন্ন্দরকে লাত করিতে পারে !

এই সৌন্দর্যের কষ্টিনাশী শক্তি দেখিরা যদি তাহার নিন্দা কৰিতে চাও তবে ভুল করিবে। .মানুষ নিজের প্ররুতি প্রবৃত্তি অন্ুমারে আপন আপন ছঃখের স্থষ্টর করে। যে নারী-সৌন্দর্যোর মোহে জগতে কত বিপ্লব বাধিয়াছে, কত সুখের রাজ্য অরণ্যে পরিণত হইয়াছে, পৃথিবীর ইতিহাসে কত শত দ্ুরপনেয্র মসীরেখ। আকিয়! দিয়াছে-_সেই নারীরূপই আবার শ্ুদ্ধচিত্তের দৃষ্টতে বিশ্বজননীর সাক্ষাৎ কল্যাণময়ী-মৃত্তি বলিয়া প্রতিভাত হইয়াছে সংসার-বিরাগী 'ও সংসার-অন্ুরাপীর রুচির পার্থক্য

২৫০ প্রত্যাবর্তন

ধত বড়ই থাক, তবু ছু'জনেই স্ন্দ্রকে দেখিতে ভালবাসেন-_দেখিলে আনন্দলাভ করেন। সাধক তাহার চিরনুন্দরের মুর্তি সৌন্দর্যের মধ দিয়াই অনুভব করেন। সংসার-বিরাগীর শান্ত-দৃষ্টি ছুইটি সুন্বর মুখের পানে নিবদ্ধ হইয়া! সহস। যেন গ্রীতিরসে সিক্ত হইয়া! উঠিল। হ্নিগ্ধ-কণ্ঠে কহিলেন, “কি দেখ্চ মা-_হরগোরী-ৃর্তি? কিন্তু আমি বোধ করি ইল কল্লেম। মেয়েটির মাথায় সিন্দুর দেখ্চি না ত! ভাই বোন হবেন ।*

মা'র দৃষ্টি এতক্ষণে স্বপ্নরাজ্য হইতে যেন ধীরে ধীরে বান্তবে ফিরিয়া আমিতেছিল। গভীব্র আবেগপূর্ণ-স্বপ্ে মা কহিলেন, “চবিবশ বছর আগের চোয্নিরে আম কাকে দেখচি-_গোৌব্ি ? মাঝখানের কুড়ি বছর তার প্রত্যেক ভয়ানক দিনটি নিয়ে কি সত্যি সত্যিই কেটে যায় নি?”

রমণীর দেহ হৃদয়াবেগে থর থর করিয়! কাপিতেছিল। মনে' হই তিনি তখনই পড়ি যাইবেন।

পথে কাছাকাছি কোথাও ছাস্া-শীতল স্থান নাই। ব্রাস্তার ওপারের বড় ঝড় বাগান-বাড়ী গুলির পশ্চাভাগ রাস্তার দিকে থাকার বাগানের প্রাচীর-বেষ্টনীর উপর দিয়া কোন কোন গাছের শাখা রাস্তার দিকে ঝুলিয়া পড়িস্াছে। তাহাবরই অন্ন একটুখানি ছারা বৌদ্র-তপ্র-পদ পথিককে সময় সমম্গ আপনার শীতল আকর্ষণে টানিগ্ আনিত। নন্দিরে কিরিয়। মাওয়৷ ছাড়া কাছে আর কোথাও ছায়াময় আশ্রর গান ছিল ন1। পুত্র মনে মনে ব্যাকুল হইয়া কহিলেন, “না, আমার কাধে মাথ। বাখ। আস্তে আস্তে চল, আমরা 'এ পাঁচিলের ধারে একটু বসি। কাল একাদণা গিয়েছে, আজ এতথানি পথ তোমায় হাটিক্জে এনে ভাল কাজ করি নি। চল্তি গাড়ী পেলেই একখানি ডেকে নেব।*

রমনী তেমনি কাপিতে কাপিতেই কহিলেন “ওকে তুমি দ্রিজ্ঞাস। কর

ষট্ত্রিংশ পরিচ্ছেদ ২৫১

গৌরি--ও কে? অনেক বছরের অনেক চোক্ষের জল পড়ে চোক আমার দৃষ্টিহারা,__-তবু সে ভূল করবে ন1। হয় আমি স্বপ্র দেখ্চি নয়-_ নয়- জানি না আমি কি বল্‌্বে। তোমায় !”

“মা শান্ত হও! বসো এইখানেই তুনি আমার কাধে মাথা পরেছে বসে! স্বপ্নই তুমি দেখ্‌চো। বা চিরকালের জন্তে চলে গেছে, ত৷ ফিকে আস্বে না। য| বিশ্বনাথকে দিয়েচ, তা আর ফিরে চেও না। সে এখানে না থাক্‌-সেখানে আছে ॥। ফিরে তাকে আমরা একদিন পা বইকি? মিথ্যে আশ। করে ছুঃখ পেও না!”

“গৌরি ! গৌরি ! ওরে না রে,_-সে আছে-সে এই খাঁনেই আহে সেই চোক, সেই মুখ_-সেই তোর মতন নিষ্টি হাঁসিটি”-__

বীরে বীরে তাভার মাথাটি গৌরীপতির কোলের উপর লুটাইর়; পড়িল ।' গৌরীপতি দেখিলেন_মা'র সংজ্ঞা! নাই। ধৈর্ধ্যশালী পুত বিচলিত হইলেন না। কমগুলু হইতে জল লইয়। অল্প জুল্প চোখে মুখে ছিট। দিয়া উত্তবীয়ের বাতাস দিতে দিতে অন্ন কিছুক্ষণ পরে রমণীর সংজ্ঞা ফিরিয়া! আসিল। চোখ মেলিয়াই ব্যাকুল-দৃষ্টিতে যেন কাহাকে খুঁজিতে লাগিলেন। পুত্র নত হইয়! ধীরে ধীরে কহিলেন, “তার! চলে গেছে ম1!”

ম! একটা গভীর পরিতাপের নিশ্বাস ফেলিলেন। অনেকক্ষণ নীরবেই কাটিয়া গেল।

মন্ির-ফেরৎ যাত্রীর দল, পথবাহী লৌকের! অনেকেই তাহাদের পানে চাহিয়। দেখিতেছিল। যাহাদের কৌতুহল অধিক তাহার! কাছে ভাসি বৃদ্ধার কি হইয়াছে খবর লইতেছিল। কেহ সহানুভূতি দেখাইয়', “আহা, বুড়ো মানুষ, রোদটা৷ আজ হয়েচেও তেম্নি* বলিয়া চলিয়া যাইতেহিল। কেহ গৌরীপতির বুদ্ধির নিন্দা করিয়া, দাদীর দিন উপবাস-পীড়িভাকে টানিয়। আন! ভাল হয় নাই বলিয়া মন্তব্য প্রকাশ করিয়া চলির:

২৫২ প্রত্যাবর্তন

হ্বাইতেছিল। এমনভাবে পথের ধারে লোকের কৌতূহলোদ্রেকের বিষয় হইয়। বসিয়া থাক। গৌরীপতিরও ভাল লাগিতেছিল না। এতক্ষণের পর একখান! ভাড়াটিয়। খালি গাড়ী বাইতে দেখিয়া তিনি তাড়াতাড়ি তাহাকে ভাড়া যাইবার জন্য বলিলেন। গাড়ী আদিলে মাকে সাৰধানে গাড়ীতে উঠাইয়া দিয়া নিজেও উঠিয়। বসিলেন।

কিছু পথ ছু'জনেই চুপ্‌ করিয়। ছিলেন। গাড়ী দশাশ্বমেধের রাস্ত। ধরিলে ম] একটা ক্রান্ত-নিশ্বাস ফেলিয়া কহিলেন, "তারা চলে গেল-_কিছু জিন্তাস! কল্লিনে গৌরি!»

“না মা” বলিয়া গৌরীপতি রৌদ্র-পুর্ণ ধুলি-ধূসরিত রাজপথের দিকে চাহিয়া ব্রহিলেন। সারা-পথ মা ছেলের মধ্যে আর একটিও কথ! হইল না। গৌরীপতি ভাবিতেছিলেন-__ম ভ্রান্ত হইয়াছেন, যা” হারার, তা?

আর ফিরিয়া, পাওয়া যায় না। বৃথা আশায় মানুষ নিজের ছঃখকে কেবল বদ্ধিতই করে। ভাই ছুরাশা সকল সময়েই পরিত্যজ্য ! মা ভাবিতেছিলেন__”সে আছে, সে আছে। একদিন সে নিশ্চয়ই ফিরিয়া আদিবে,-বিশ্বনাথ তাহাকে ফিরাইয় দিবার জন্যই বুঝি তাহাদের আহ্বান করিয়া এত্দুরে আনিয়াছেন। নহিলে একি অচিস্তনীয় দর্শন! এমন অভিন্ন পিতৃ-ূর্ভিতে দেখা৷ না৷ দিলে .তিনিও তাহাকে চিনিতেন না? কিন্ত হাতে পাইয়াও হারানিধি কি তাহার! ছুড়িয়৷ ফেলিলেন ? হে বিশ্বনাথ! দয়াল! দিনবন্ধো! দি চোখের দেখ! দেখিতে দিলে, তবে সত্য যে কি তাহাও বুঝাইয়৷ দাও। প্রভু ! হাতে না দাও-_-নাই দিও, তবু জানিতে" দাও--সে আছে। তোমার এত বড় বিশাল-রাজ্যে মাতৃহীন ক্ষুদ্র শিশুর স্থানাভাব হয় নাই! এইটুকু,-শুধু এইটুকু শাস্তনাই ভুমি ফিরাইয়! দাও

পিপি

সপ্তত্রিংশ পরিচ্ছেদ হারানিধি

সেদিন বাড়ী ফিরিবার পথে অরুণ এমনই অগ্ঠমনস্ক হইয়া রহিল যে “আনন্দ বাগ” কখন ছাড়াইয়া আসিল সে জানিতেও পারিল না। মোড়ের মাথায় অপ্রসন্ন-মুখে মুক্তা ঠাকুরাণী মালতী দেবী অপেক্ষা কৰিতে ছিলেন। তাহাদের আসিতে দেখিয়! মুক্ত! ঠাকুরাণী কহিলেন,__

“তবু ভাল! আমি ভাব্‌ছিল্ম--ঘরধাড়ী পেতেই বা বসে গেলে কোথাও? ভ্যালা মেয়ে বা হোক্‌ তুই,হিমি! তোর খুরে খুরে দণওবং! সবই কি স্থষ্টিছাড়া তোর 1”

অরুণ নিরুত্তরে চলিতে লাগিল। হিমু কহিল, “তুমি এগিয়ে চল দিদি-মা, ভাল ভাল সন্ন্যাসী দেখছিলেন, দেরী হয়েচে, তার জন্যে আর হয়েচে কি? তুমি সন্ন্যাসী দেখলে দাড়াও না? সেদিন বেনীমাধবের ধ্বজায় ওঠাই হোল না-_-কার জন্ঠে ?”

মুখর! নাতিনীর সহিত পথে কলহ করিবার ইচ্ছা ন1 থাকান্ন মুক্তা- ঠাকুরাণী মালতীর উদ্দেশ্তে ক্ষোতপূর্ণ-কে কহিলেন,_“শোন্‌ রাণু! তোর মেয়ের বাক্যি শোন্‌ !*

মালতী মেয়ের পানে বারেক ফিবিয়। মৃছ, অন্থুযোগের স্থুরে কহিলেন, “হিমু !”

"এই যাচ্চি মা” বলিয়া! হিমু এবার “হন্ হন্, করিয়া সকলের আগে আগে চলিতে সুরু করিল। কিছু পণ রক্ষা তাহার ঘটিয়া৷ উঠিল

২৫৪ প্রত্যাবর্তন

না--ভাহা কোন দিনই প্রায় ঘটে না। তাহার মনে হইতেছিল--“মা গো! এমন করি মুখ বুজিয়া-_নাজান। বিষয়ে প্রশ্ন না করিয়। মানুষ না কি কখন কলের পুতুলের মত কেবলই চলিতে পারে ?' মুক্তা! ঠাকুরানী ৰা» হতে ফুলশুন্ত সাজিটি ঝুলাইর। ডা+ন হাতে হরিনামের মালা ফিরাইতে “রাইতে পথের ছুই ধারে চাহিয়। চলিতেছিলেন। কোন দোকানে কি জিনিব বিক্রয় হইতেছে, কে কি দর করিতেছে, পথ চলিতে কোন দুষ্ট বালক কি জম্পৃগ্ত দ্রব্য মাঁড়াইয়। গেল_এ সকলের কিছুই তাহার দৃষ্ট ওড়াইতেছিল না। দাল্তী মুছুতর স্বরে স্তব আবৃত্তি করিয়া চলিতে- ছুলেন। হিমু বারকতক দুখ ফিরাইয় তাদের পানে চাহিয্মা। যখন উত্তর পাইবার সন্তাবনা নাই বুঝিল, তখন পিছাইয়। অরুণের সঙ্গ ধরিল | কিন্তু সাজ অরুণও তাহার সহিত ভাল করিয়া কথা কহিতেছিল না। তাহার শনর্থপ প্রশ্নের উত্তর দিলই না, দিই কোনটার দিতেছিল--তাহাও তি মক্ষিপ্ন অসংলগ্র থে হিমু হাসিয়া কহিল,_-“হোলো কি তোমার জ্কণ দা! কাণেও কি তুমি আজ শুন্তে পাচ্চ না? বুঝতে কিছুই াচ্চ লা দেখ্চি। মন্ন্যাসী তোদায় যা করে দিলেন না কি?” ম'ঘিভশ্বাসে অরুণ কহিল, “কি জানি কি করেন। তবে কিছু ষে কহরেচেন ত। সভ্যি। আমার ধনে হচ্চে কিজান? পালিয়ে না এসে ঘর ছুটে গিয়ে দের পারের উপর লুটিয়ে পড়ে চারখানি পা চোখের জলে ভিছছিয়ে দিতেম__তা+হলেই বেশ কর্ডেম। হয় জন্মান্তরের আমার কেউ

ণ্ব

নি

ছিলেন ওুরা।” ২৯৬০

হিমু একটুখানি ভাবিয়া একট নিগ্রাস ফেলিয়া কহিল, “কিন্তু বদি জন্েরেই হন্,-ভাও হতে পারেন ?”

“আ্যা! পারেন তা?” বলিয়া হঠাৎ যেন স্বপ্ন হইতে জাগিয়া বশ্ব্ব্যাকুলকণ্ঠে অরুণ কহিল “কই সে কথ! আমার মনে হয়নি?

সপ্তত্রিংশ পরিচ্ছেদ ২৫৫

'এ জন্ম” বলতে আমার বে বাবার মুখ, মা”র মুখ, বীরগঞ্জের বাড়ী, সেখানকার মানুষদের-- গাছপালা” মন্দির, অতিথিশালা,-_পেখানকার ব্রান্ত|, ঘাট, এই সবই মনে পড়ে। তারও পেছনে যে আর একটা! জন্ম ছিল-_সে যে আমি ভুলেই গেছি। চেষ্টা করেও কিছু মনে আনতে পারিনা কিছু কিযে ছেলেমান্ষি কচ্চি আমি! চল হিদু, গুর! এগিয়ে গেলেন আবার” বলির। সে জলভব্রা চোখ লুকাইবার জন্যই ইচ্ছা কররিন্না হিমুকে পিছনে রাখিয়া অগ্রসর হইল। পিছনে থাকিলেও তাহার বুক-ফাট। চাগা-নিশ্বাসের শবট| হিমুর কাণ এড়াইল না। সে দ্রুত চলিয়। কাছে আসিয়া মুগুম্থরে কহিল “এবার থেকে রোজ আমরা ছুর্গাবাড়ী আস্বো, কেমন? হয়ত একদিন না একদিন আবার তাদের দঙ্গে আনদের দেখা! হবে। এবাৰ দেখা হলে তাদের আমি সব জিভাসা কর্বো-_কে তারা, কোথায় বাড়ী__ এইসব ?”

অরুণের বিষাদাচ্ছ্ মুখের পানে চাহিয়। সদবেদনার তাহারও চোথছুটি জলে ভরিয়া গিয়াছিল। ইচ্ছ। করিতেছিল আগেকার মত পাশে গিয়া অরুণের্‌ ডান হাতথানা সে নিজের হাতের মধো টানিয়া লইর়! সান্তনার কোন কথা কিছু বলে। কিন্তু মনের ইচ্ছাটিকে সে কার্ষ্য পরিণত করিতে পারিল না। এবার দিদিমার বোনবীর বাড়ী গিয়। সে ধেনব অভিজ্ঞতা লাঁভ করিয়। আপিয়াছে, তাহাতে এইটুকু বুঝিয়্াছে ষে_-সে এখন আর বালিক! নাই, এবং যে কোন পুরুষ সমন্ধে এঁ প্রকার কাধ্যগুল৷ ভাহার অনুচিত, লোক তাহ1 পছন্দ করে ন|। আব-কেহ না হউক-_ দিদিমাই এখনি হয়ত বিরক্ত হইয়। তর্জন করিয়া উঠিবেন ]

হিমুর চিন্তা অন্যদিকে ফিরিল,_-মে মনে করিল-_আহা-_উহার! বদি সতাই অরুণদা”র কেহ হন,__কোমন আনন্দ হয়! হিমু মনের আবেগে এককালীন পাচপয়সার হরিরনুউ মানসিক করিয়। ফেলিল। “হে হরি,

২৫৬ প্রত্যাবর্তন

উহাদের অরুপদার আপনজন করিয়া দাও ঠাকুর! হিমু তোমাক পীঁচগয়সার হরিরলুট দিবে। অরুপদা? বড়ছুখী, উহার কেহ আপনজন' নাই। মান্থষের কেহ ন| থাকা বড় কষ্ট। উহাকে তুমি কষ্ট দিও ন1। মা বঙ্গেন--যে ভাল হয়, তুমি তা'কে ভালবাস অরুণদা/ বড় ভাল। ুতরাং তাহাকে ছুঃখ দেওয়া তোমার উচিতও নর, এবং তুমিও তাহাকে ভালবাঁসিতে বাধ্য।” এইরূপে ঠাকুরের কর্তা মীমাংদা করিয়। দিয়া মনে মনে খুসী হইয়া সে এইবার প্রফুল্পমনে পথ চলিতে লাগিল। থে ভগবানে যথার্থ নির্ভর করিতে পারে-_মেই সুখী সরলা হিমু নির্ভরের আনন জানিত তা'ই তাহার চিরর-প্রগন্ন মুখে বিষাদেনু ছায়াটিও কখন পড়িতে পারিত ন|।

কয়েকদিন পরে একদিন নকালবেলা দুর্গামন্দির হইতে ফিরিবার কালে ভাস্করানন-ম্বামীর সমাধি-মন্দির-বেষ্টিত উদ্যানদ্বারে ছড়াইয়া হিমু কহিল_ ণঅরুণদা, মন্দির দেখে যাবে ন1?”

মুক্ত। ঠাঁকুরাণী কহিলেন, “চল্‌ চল্‌ বাপু*মার দাঁড়ায় না, আজ আবার হাট-বাজার 'উন্কুটি চৌষটি' সব কর্লে তবে রা খাওয়া। রোদ চড়ে উঠূল মাথার ওপর। এই সেদিন দেখে গেলি বাগান-- বাগানের আবার দেখবি কি রোজ রোজ ?”

দিদিমা বারণ না করিলে হয়ত হিমুর জেদ এতট! চাপিত ন|। বাধ! পাইন্॥। সে নিজ অভ্যাদ মত হাসিয়া কহিল, শদিদিমার কেবল বাড়ী আর বাড়ী! তবু যদি সে বাড়ী ম্যাতানে অন্ধকৃপ না হোতো! আরাদোলা, ইছুর, চু'চো, বাঁদর। রাস+--ও বাড়ীতে মান্গষের একদণ্ডও থাকতে ইচ্ছে করে? চল একবার্টি-রার। খাওয়! চিরদিন ধরেই আছে?” এই বমিয়। নে চৌকাটের ভিতর পা! গলাইতেই মালতী ডাকিলেন_

প্হিমু 1%

সপ্তত্রিংশ পরিচ্ছেদ ২৫৭

হিমু বুঝিল মা বিরক্ত হইয়াছেন আদেশ তাহাকে পালন করিতেই হইবে। তা*ই ফিরিয় দীড়াইয়। কুনঃস্ঘরে কহিল, “আমরা তবে এগুই-_ তুমি পরে যেও অরুণদা! ! দেখগে দেখি সেই সন্গেসীদের ঘদি দেখতে পাও ওখানে ?”

মুক্তা ঠাকুরাণী বঙ্কার দিয়! কহিলেন,__“হিমি যে সন্নেসীর জন্তে পাগল হয়ে উঠুলি দেখ্‌চি-_মন্তর তন্তর নিবি নাকি লো! ? না,আর কিছু? বর তে৷ জুটুলে! না,__বলি তপস্থিনী হবি ঠিক করেছিস্‌ নাকি ?”

হিমু কহিল,_-্পাগল আমি হইনি দিদিমা, অরুণদ| হয়েচে। তোমরা যে চোখ চেয়ে ঘুমোও কিনা-_-তাই দেখ্তে পাওনা, কেবল রান্না আর খাওয়! বুঝতে পাঁর। দেখ দিদিমা--বল! মুখ আর চল! পা_এর' কক্ষনো! থামেন।। যখন থামে সেই-_” বলিয়া সে অত্ন্ত দ্রুতপদে চগ! আরম্ভ করিয়৷ দিল। সে জানিত এইমাত্র রসনার বে স্থব্যবহার সে করিয়াছে তাহাই যথেষ্ট, তাহার অনেকখানি ভাষ! উহ রাখিলেও যতটুকু প্রকাশ করিয়াছে, তাহার একটা! প্রতিক্রিয্নাও বাকি-_কিন্তু সেটা৷ আব ঘটল না। মুক্ত! ঠাকুরাণী উদ্দেশে 'যাট্‌ যাট্‌” বলিয় বারছুয়েক যষ্টীদেবর কুপা ভিক্ষা করিয়াই আপাততঃ বিধবার একমাত্র ন্নেহাধারকে ক্ষম' করিতে বাধ্য হইলেন। ইহার পর তিনজ্জনেই নিঃশব্দে পথ চলিতে লাগিলেন।

অরুণ সঙ্গে না থাকায়, আর কল্পনায় তাহারই অগ্ুকুলে দিবাস্বপ্ দেখিতে ব্যস্ত থাকায়_হিমুর বলা-মুখও বন্ধ রহিয়! গেল।

কাণী আসিয়া পর্য্যস্ত অরুণ বরাবরই তাহাদের সঙ্গে করিয়৷ লইয়! বেড়াইয়াছে। কদাচিৎ যুক্তা ঠাকুরাণী এক। কোথাও গিয়াছেন। কিন্তু মালতী হিমু সঙ্গে থাকিলে অরুণকে না লইয়া তিনি পথে চলিতে সম্মত হইতেন ন|। কাশীর পথ তাহার অনেকথাঁনি, পরিচিত হইলেও,"

১৭

২৫৮ প্রত্যাবর্তন

বাঙ্গালীটোলার একরকমের গলি একরকমের ৰাড়ীগুলি চিনিয়৷ বাহির কর! তাহার নাকি বড়ই মুস্কিল মনে হইত।

আজও তিনি ব| মালতী কোন কথ! বলেন নাই। অরুণকে তীহারা পথিমধ্যে ছুটিও দেন নাই, দিবার ইচ্ছাও তাহাদের বিশেষ ছিল না। হিমু তাহাকে মন্দিরে যাইতে অনুরোধ করিয়াছিল মাত্র হিমু এমন অনেক কথাই বলে, সবই থে অরুণ নিবিবচারে পালন করে এমন নহে। কিন্ক আঙ্গ হিমুর অন্থুরোধ যেন কাহার অলঙ্কব্য আদেশের স্তায় অরুণের কাপে শুনাইল। এর পর যে কাহারও অনুমতি লওয়ার কোন প্রয়োজন আছে, দে কথ! আর তাহার মনেও হইল ন|।

তাহাকে ব্যাকুলভাবে বাগানে ঢকিতে দেখিয়া মুক্তা ঠাকুরাণী বিরক্ত- ভাবেই পথ চলিতে লাগিলেন তবু মনে মনে তাহার বিশ্বাস ছিল-_-অরুণ শীদ্রই তাহাদের অস্থুদরণ করিবে সত্যই কি আর সন্্যাসীর লোভে মধ্য- পথে ভীহাদের ছাড়িয়া দিয়। নিশ্চিন্ত থাকিতে পারিবে?

ঠাকুরানীটি আজ কিন্ধ তাহার অন্ুমানে ভুল করিয়াছিলেন। অরুণের নখ দেখিলে হয় ভুল তাহারও হইত না। মে সময় অরুণের মুখের দিকে চাহিয়া! দেখিলে নিশ্চয়ই তিনি তাহার প্রকৃতিস্থতায় সন্দিহান হইতেন। লৌতাগ্যক্রমে তিনি তখন পথের দিকে বিরাগনর! দৃষ্টি নিবদ্ধ করিয়! চলিতে ছিলেন।

বাগানের মাঝখানে শ্বেত-পাথরের চত্বরবেষ্টিত শ্বেত-পাথরের মন্দির- চুড়ার উপর সুবর্ণরঞ্জিত কলদ। মন্দির মধ্যে শিবলিঙ্গ পুজারী ক্ষণ:পূর্ব কয়েকটি ফুল বিৰপত্রের মহিত গোট! কতক আতপচাউল ছড়াইস়। দিয়৷ পুজা সারিয়৷ চলিয়া গিয়াছেন। স্বার খোলাই ছিল। একজন গেরুয়া পর! নামাবলী গায়ে পুরুষ বাহিরের দিকে পিছন করিয়া! মন্দির মধ্যে বসিয়া জগ করিতেছিবেন। জপ-নিমগ্ের শান্তিভঙ্গ ন| কারয়। অরুণ নাচে ভুত!

সপ্তত্রিংশ পরিচ্ছেদ ২৫৯

খুলিয়া নিঃশকে উপরে উঠিয়। দ্বারপ্রান্তে প্রণাম করিয়৷ তেমনি নিঃশবে চলিয়৷ যাইতেছিল, পশ্চাৎ হইতে শুনিতে পাইল, “একটু বসে যেও বাব! আমি তোমারই প্রতীক্ষ। কচ্ছিলাম এতক্ষণ !”

অরুণ বিস্মিতভাবে চারিদিকে চাহিয়া দেখিল। মন্দির মধ্স্থ জ্প-নিমগ্ন ব্যক্তি ছাড় কাছাকাছির মধ্যে কেহ কোথাও নাই। কি হবে উহবারই আদেশ? উনি অরুণের প্রতীক্ষ করিতেছিলেন? কে উনি? কিই বা উহার বক্তব্য! অরুণের সহিতও তৰে লোকের প্রয়োজন থাকে ? মানুষটি যেন চেনা মনে হুইতেছিল--সন্মুখভাগ ভাল দেখ! না! যাওয়ায় স্পষ্ট বুঝ! গেল ন|। বিশ্ময় সংশয়ান্দোলিত চিত্তে সে টপ করিয়া বাহিরেই বসিয়া রহিল। যন্ত্র-রক্ষিত উদ্ধানে নানাজাতি পুষ্ণে বুমণীয় শোভ। বিস্তার করিয়াছিল। দুইধারে বৃন্তাকার গঠন মধ্যে এক এক শ্রেণীর কুলের গাছ। নাঝথানের চলন পথের দুইধারে ঘনবিত্তস্ত সমান মাপে ছাট! মেহেদির বেড়।। চলন পথগুলি পাথর বাধান--দিকে দিকে পথ গিয়াছে গোলাপের ক্ষেত্রে অজস্র গোলাপ ঞুটিয়া আছে। অপর অংশে তেমনি গাঁদা, জিনিয়া, রজনীগন্ধার বাহার চন্ত্রমল্লিকায় সবে কুঁড়ি ধরিতে সুরু হইয়াছে, এখনও ফুল ফুটে নাই। মালীর। কুয়া! হইতে জল ভুলিয়। নালীতে ঢালিতেছিল। সেই জল প্রত্যেক গ্গেত্রের ধারে ধারে সরু সরু নাণীপথ দিয়া পুণ্পক্ষেত্রে সঞ্চারিত হইতেছিল। সগ্ধধৌত গাছগুলির শ্তামবর্ণ__কুলের সহিত মিলিয়। সুন্দরতর দেখাইতেছিল। অন্যদিন হইলে মুগ্ধ দৃষ্টিতে অরুণ সব শোভা-সম্পদ দেখিয়াই তৃপ্ত হইতে পারিত। কিন্তু আজ তাহার মনের অবস্থা! অন্থরূপ থাকার, চোখ মেলিয়! সনে চাহিয়া বই দেখিতেছিল বটে, কিন্তু চোখে তাহার কোন কিছুই পড়িতেছিল না।

কিছুক্ষণ এমনি কাটিয়া গেলে সন্স্যামী মন্দিরের বাহিরে আদিলেন।

২৬০ প্রত্যাবর্তন

অরুণ তাহাকে প্রণাম করিয়া! উঠিয়াই বিন্িত হুইয়! গেল। যে সেই তিনি--ধাহাকে দেখিয়া! অরুণ আত্মহার! হইয়াছিল! বাহাকে দেখিবার আশায় আজ এক সপ্তাহ ধরিয়৷ সমন্তদিন পথে পথে উদ্ধান্তের মত দে খুরিয়া বেড়াইয়াছে! আজও এখানে এই ইহারই দর্শনাশাই কি তাহাকে টানিয়। আনে নাই? সেই ঈপ্সিত জনের দেখা এমন অবলীলাপ ঘটিয়া যাওয়ায় সে কেবল বিশ্মর-বিমূঢ়ভাবে তাহার পানে চাহিয়া রহিল। কারণ-_ কি বে তাহার কাক্ষিত,_-সে তাহা! স্পষ্ট করিয়া! নিজেই জানিতন!।

গৌরীপতি তাহার হাত ধরিয়! মন্দিরের বাহিরে বদাইয়। নিজেও কাছে বসিলেন, কহিলেন,--”বাবা ! আমি তোমার চেয়ে বয়সে অনেক বড়! যদি কিছু জিজ্ঞাসা করি রাগ কর্‌্বে না ত?”

অরুণ মাথ! নাড়িয়! জানাইল,_না! রাগ সে করিবে না। চে করিয়াও সে কণ্ঠে শবো!চ্চারণ করিতে পারিল ন!।

গৌরীপতি কহিলেন,__পবাবা, তোমার নামটি কি জান্তে পারি কি ?”

অরুণ জড়িতস্বরে কহিল,-_-“অরুণচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায় ।”

প্গঙ্গোপাধ্যায় ? বলিয়া তিনি কিছুক্ষণ মেঘাচ্ছন্ন প্লান আকাশের পানে তেমনি বিষর দৃষ্টিতে চাহিয়া! রহিলেন। কণেও তাহার যেন একটা! নিরাশ! ব্যঞ্তক ক্ষুরস্বর ধ্বনিত হইল। একটুক্ষণ চুপ করিয়! থাকিয়া কফহিলেন,_-“নিবাস ?”

অরুণ কহিল,__*আপাততঃ ঝাল্দ। ! কল্কাতায় থেকে পড়ি, ছুটিতে ঝাল্দায় একজনদের বাড়ী থাকি ।”

গৌরীপতি আর একটু কাছ বেসিয়া উৎসুক কে কহিলেন,__পসে তবে তোমার দেশ নয়? নিজের দেশ? পৈত্রিক নিবাস? বাবা! বুড়োমানুষের অন্ায় কৌতৃহলে অসন্তষ্ট হচ্চ কি? তোমার বাবার নামটি কি বল তবাবা!” |

সপ্তত্রিংশ পরিচ্ছেদ ২৬১

অরুণের বিষননমুখে লজ্জার অরুণ আভ। ফুটিয়! উঠিল। সে নুখ নামাইয়৷ একটু ইতস্ততঃ করিয়া মৃহত্বরে কহিল,_“৮ইন্ত্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় -_বীরগঞ্জের জমীদার। তিনি আমার পিতা! নন্‌--পালক-পিতা। আমি জানি না, কেন আপনি আমার পরিচয় চাইচেন। আমি হতভাগ্য, পৃথিবীতে আমার কোন সত্যকার পরিচয়ই নেই ! ভয় হয়--যা অন্ধকারে আছে-_তা জান্তে ! জানি ন! আমি কে,_বা কি?”

এমন করিরা মনের স্পষ্ট কথা সে কখন কাহাকেও জানায় নাই। আজ ইচ্ছ। না থাকিলেও “কেমন” আত্মবিস্মতের মতই এত কথ! বলিয়া ফেলিল। |

সন্ন্যাসী ধীরে তাহার কম্পিত হাতখানি দিয়া অরুণের মাথার স্পর্শ করিয়া কহিলেন,_

“তৌমার মুখ-ই তোমার পরিচয় দিচ্চে যে? ভয় কিসের বাবা? কিন্ত একি সত্যি? একি গুন্চি? তুমি কি তবে নদী-জলে ভেসে মহাপুরুষের কোলে আশ্রয় পেয়েছিলে? কিন্তু বীরগঞ্জ সে দেশ থেকে ষে অনেক দূর-_বহুদূর যে!” আত্মগত ভাবে এইরূপ বলিয়া! গৌরীপতি চিন্তাবিষ্ট হইলেন।

অরুণ ব্যাকুলভাবে কহিল,--"বাব! নৌকা-পথে--বিদেশ থেকে ফির্- ছিলেন, পথে সন্ধ্যা থেকে ঝড়-বুস্তর জন্ত আঘাটায় নৌক! বেঁধে রাতে খাকৃতে হয়েছিল। সকালবেল! জলের ধারে গাছের তলায় মরার মত অবস্থায় আমায় তিনি কুড়িয়ে পান। বাব! মার! যেতে আজ ছ'বছর আমি সে শাস্তির আশ্রমও হারিয়েছি ! তিনি থাকৃতে যদিও আমি জান্তে পারিনি যে আমি তার ছেলে নই!” ইন্দ্রনাথের স্মরণে অরুণের চোখে জলের আভাস দেখা দিল। "

গৌরীপতি কহিলেন,_-৭পুর্ববীবনের কোন নিদর্শন কি তোমার ছিল

২৬২ প্রত্যাবর্তন

না তা হলে? গলায় ত্রিকোনাকৃতি সোনার পদক--ভিতরে ভূর্জপত্রে লেখা এমন কিছু? তিনি বোধ হয় তোমার আত্মীয়দের কোন সন্ধানের চেষ্টাও করেন্নি-_ তেমন করে !”

“না,না! অনেক চেষ্টাই তিনি করেছিলেন বইকি ! বহুকাল বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। কিন্তু কেউ কখনে! আমার খবর নিতে আসেনি; হয় তাদের কেউ বেচেও ছিলেন না। নৌকা-ডুবিতে মকলেই বোধ হয় মারা গেছলেন। বাব! তাই অনুমান করে আমার অতীত আমার জান্তে দেন্নি। তিনি ন৷ দেখ্লে,_-তার অসীম যত্র চেষ্টা না পেলে-_. সবাই বলে__আমারও বাচার কোন সম্ভাবনাই ছিল না। হ্যা, ত্রিকোণা- কৃতি সোনার কবচ একট! গলায় ছিল বই কি! তূর্জপত্রে লেখা-_কিছু পড়া যায়নি, শুধু “শর্মা” কথাটুকু জান! গেছল, তাই বাবা আমায় ব্রাহ্মণ বলে, প্রচার করেছিলেন।” |

গোৌরীপতি অশ্রুসিক্ত চোখে উর্ধাপানে চাহিয়! যুক্ত-করে প্রণান করি ্িগ্ধকঠে কহিলেন,_“সত্যই তিনি তোমার পিতা! ছিলেন। তাই তোনার মৃত-দেহে জীবন সমর করে নিজের করে নিয়েছিলেন! কিন্তু

তোমার হতভাগ্য জন্মদাতা, সেই তুর্য্যোগ রাত্রে একমাত্র শ্নেহের ধনকে ঘরের ভিতর বন্দ করে নিরাপদে রাখতে পারেনি,_-নদী-জলে ভাসিয়ে দিয়েছিল !” .

অরুণ সহসা গেরুয়।-ধারীর পায়ের উপর লুটাইয়। পড়িয়। ব্যাকুলভাবে কহিল,--”এ সব কি বল্চেন আপনি--কেন বল্চেন আমায়? আমার মনে হুচ্টে আপমি সব জানেন! আমার একি মনে হচ্চে? ৰা কখনও হযনি-_তাই হচ্চে। আর--আর--এ সব আমি কি দেখুচি! গাছের ছায়ায় ঢাক! একতাল! বাড়ী, পাশে পুরু, মন্দির, বিগ্রহত_-কি ঠাকুর? কানী না শিব? উহ্-__রাশ-ফুল দিয়ে ঘর সাঞানে।_গোপালৃস্ি

সপ্তত্রিংশ পরিচ্ছেদ ২৬৩

তুলসীমঞ্চ ! বায়স্কোপের মত কোন দেশের ছবি আমি দেখৃতে পাচ্চি-_ মন্দিরের ধারে কুষ্চিফুলের গাছ, সাদ| ফুলে সব্ট। ভরা, পাত। দেখা ষায় না!” অরুণ তাহার স্বপ্রাভিভূত দৃষ্টি তুলিয়া পুনরায় কহিল-_*জস্ত- চিতায় দাহ হচ্চে_কার সে দেবী মূর্তি? আপনি-_আর তিনি_ সে দিন ধাকে আপনার সঙ্গে দেখেছিলেম--আপনি আর তিনি-_-আমার কোনো €কোনে। জন্মের কেউ কি? আমায় বলুন--বলুন আমার !”

». অরুণের দেহ কাপিতেছিল। গৌরীপতি অভিভূত প্রায় অরুণকে বুকের খুব কাছে টানিয়। ব্যথাবিজড়িত মৃদু-স্বরে কহিলেন,--“তোমার জন্মেরই সন্তান-হার! অভাগা বাপ-_আমি। আৰ আমার ছূর্ভাগিনী মা, তিনি তোমার ঠাকু'ম! গোপাল ! গোপাল ! অরুণ,_-বাব। আমার, চোখ চাও বাবা ! ম1 ষে তোমার পথ চেয়ে বসে আছেন আমি বাপ হয়েও চিন্তে পারিনি। তিনি থে একবার দেখেই কুড়িবছর পরেও তোমান্ব চিনেছিলেন। ম৷ আমায় ভোর হতেই এখানে পাঠিয়ে দিয়েচেন। বলেছিলেন-_তুমি আব্দ এখানে নিশ্চই আম্বে। বাবা আমার--কথা কও! আজ তুমি পরিচয়-হীন গৃহ-হার1__-আর আমি সর্বন্বহারা হয়েও সক্ষানিত গৃহী !__হা৷ জগদীশ্বর !”

অষ্টাত্রিংশ পরিচ্ছেদ বিয়ের চিঠি

একদিন সকাল বেলার ডাকে সুণীতি শৈলাঙ্গিণীর একখান! চিঠি পাইল -ভাড়ার ঘরের সাম্নে দালানে বসিয়া সে তখন আনাঙ্গ কুটিতেছিল। জলদের চ। জলখাবার দেওয়া! হইয়! গিয়াছে। এখন আর কাজের তেমন তাড়াতাড়ি নাই। ছেলের। ছুধ খাইয়। চাকরদের কাছে বাহিরে গিয়াছে। ভাই নিশ্চিন্ত ননে সে তরকারী কুটিতে কুটিতে অনেক কথাই ভাবিতেছিল। অতীত বর্তমানের অনেক ম্থখ ছুঃখের স্বতিই তাহার মনে উঠিতেছিল। মানুষের আশাপুর্ণ নবীন জীবনে যদি অতার্কত দ্রঃখের আঘাত লাগে তাহার বেদন! বুঝি সারাজীবনেও আর দূর হয় না! ₹ুনীতির মনে পুর্বের স্বচ্ছন্দভাব আর ফিরিয়া আসে নাই। প্রক্কত দুঃখের হে কিছু বর্তমাই না থাকাতে-_কল্পিত ছুঃখের মধ্যে সে নিজ বর্তমানকে অনেক সময় ডুবাইয়া। রাখিতে ভালবাসিত। স্বামীর বর্তমান ব্যবহারে অভিযোগের যোগ্য কোন কিছু নাই থাক, তবু তাহার নিরালা মনটি কি সে আর ফিরিয়া পাইয়াছে? মন কি মানুষের ব্যবসায়ের জিনিষ? অনেক সময় শৈলের অভাবও তাহার অনুভব হইত। সময় তাহার অকৃত্রিম বন্ধুত্ব পাইলে হয় মনের উৎসাহহীন্‌ উদাসভাবটিকে সরাইয়। দিতে পারিত সেও দূরে চলিয়! গিয়াছে।

বড়খোকা! একখানি খামেমোড়া৷ চিঠি আনিয়৷ মার কোবের উপর ফেলিয়া! দিয় কহিল-_"তোমার চিঠি ম1। আমি বানান করে করে পড়ে

অস্টাত্রিংশ পরিচ্ছেদ ২৬৫

দেখেছি_গ্মতী সুনীতি দেবী--শ"য়ের তলায় একটা “র” ফল! দেওয়! আছে। কে লিখেছে মা বল না?”

বড়খোকা৷ এখন দ্বিতীয় ভাগ পড়িতে শিথিয়াছে। সুনীতি আনাজ ধোওয়৷ ভিজা হাতের উপ্টাপিঠ দিয়া চিঠিখানি সোজ! করিয়! দেখিয়। কহিল-_“তোমার বড়পিসীম। লিখেছেন যে ?*

শ্বড়পিসীমা কবে আসূর্বে ম।? তপ্সী, তনু চলে গিয়ে আমাদের আর

'পাঠশাল! পাঠশালা” খেলাই হয় ন!। তুমি বড়পিনীমাকে লিখে দাওনা মা

--শাগ্গির করে যেন চলে আসেন !”

ম| বলিলেন--”আচ্ছা আমি তাই লিখে দেবো! কি লিখবে! শোন্‌্-_ আমি লিখবো--বড়খোক। তোমায় শীপ্র আসিতে বলিতেছে। তুমি পত্রপাঠ এখানে চলিয়া আইস ন! হইলে তাহার্দের খেল! হইতেছে না'--কেমন এই ত?”

বড়খোকা হাসিয়া-_“হা মা কথ। লিখো” বলিয়। চলিয়া যাইতেছিল-_ এমন সময় অদূরে পিতাকে আসিতে দেখিয়। ফিরিয়া দাড়াইল। ন্থুনীতিও চাহিয়া দেখিল। একখানি খোল! চিঠি হাতে স্বামী বোধ হয় তাহারই উদ্দেশে আসিতেছেন। সে হাতের কাজ বন্ধ করিয়। কোলের উপরের চিঠিখানি সবেমাত্র খুলিবার উপক্রম করিতেছিল--এখন তাহা৷ আবার যথাবৎ রাখিয়। দিয়া প্রশ্নপূর্ণ নেত্রে স্বামীর মুখের পানে তাকাইল। কাছে আসিয়া হাস্তমুখে জলদ কহিল-_“বাবা লিখেছেন--নিরুর বিষ্বে ঠিক হয়ে গেছে। ফাল্গুনের প্রথমেই দিনস্থির করা হবে। আমার পনেরো! দিনের ছুটি নেবার জন্যে দরখাস্ত করতে বলেছেন!” *

স্থনীতি মুহূর্তে আনন্দোৎফুল্ল হুইয়৷ কহিল-_*ঠাকুরপোর ধস্থকভাঙগ! পণ ভাঙগ_লো। তা হলে বিয়েতে ব্লাজী হয়েছে? বেশ, বেশ আমার খুব আহ্লাদ হচ্চে কিন্তু!”

২৬৬ প্রত্যাবর্তন

নীরদ জলদের মেজ ভাই। সে এতদিন বিবাহ-বিরোধী দলে ছিল। সম্প্রতি ডাক্তারীর শেষ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া মত পরিবর্তন করিয়াছে

জল মৃছু হাসিয়া কহিল--“চিরদিন কারও সমান যাস্গ না। আচ্ছ! আমি যদি এর চেয়েও আর একট! ভাল থপর দি তকি দেবে বল দেখি?”

সে মৃছ মৃছ হািতেছিল বটে কিন্তু সে হাসিতে একটুখানি বজ্জান্র আভাষও যেন অনিচ্ছাসত্বেও প্রকাশ পাইতেছিল। ন্থুনীতি স্বামীর মুখের পানে চাহিরা কিছু বুঝিতে ন! পারিয়া কহিল__প্ডবল্‌ বকৃশিশ। খবরটা কি শুনি আগে?”

জলদ মনের ইতস্তত্ঃ ভাবটুকু সরাইয়। সহজ সুরে কহিল-_« 'আমার কিরণ” এবার থেকে তোমাদের সকলকারই হলেন। আমারও তিনি মেজম| হলেন এবার ! কেমন খুসী হলে ত?”

স্থনীতি একদিন স্বামীকে বিদ্রুপ করিয়। বলিয়াছিল-_"তোমার কিরণের চিঠি!” জলদ আজ সময় পাইয়া! তাঁর শোধ লইল। ছেলেটিকে আমর! বতট! আত্মভোল! নিরীহ মনে করি-_-দেখিতেছি আসলে মে ঠিক ততটা নয়?

স্বামীর বিদ্ধপের আধাতটুকু স্থনীতি কিন্তু পুষ্পাঞ্জলীর মতই মাথা পাতিয়। গ্রহণ করিল। তাহার ছুই চোখ জলে ভরিয়া গেল। অশ্রু-- আনন্দ অভিমান মুক্তির ত্রিধারা সংযোগের চেষ্টা করিয়াও সে মনের অভিনব ভাবাবেগকে সন্বরণ করিতে পারিল না। তাহার চোখের জল-_তাহার গণ্ড বহিয়া ঝরিয়া পড়িতে লাগিল। স্বামী যে কাছেই চাড়াইয়। আছেন--আর মনের দুর্বলত। তাহার নিকট প্রকাশ কর। যে লজ্জাজনক -তাহা যে ম্মরণ রাখিতে পারিল ন|। জলদ কাছে আসিয় তাহার ললাটে, ছুইটি অঙ্গুলীর মৃদ্ধ ন্নেহস্পর্শে কহিল-_*ছি-_ছেলেমানুষি করে না! চোখ মুছে ফেল। বড়খোক। চেয়ে আছে যে অবাক হয়ে ।%

সে স্ত্রীকে শান্ত হইবার অবসর দিবার জন্যই পুনরায় ব্যন্ত হয়া ষ-

অস্টাত্রিংশ পরিচ্ছেদ ২৬৭

খানায় ফিরিয়। গেল। তাহার মনে হইল-_এইবার বুঝি তাহার প্রায়শ্চিত্ত পূর্ণ হইল। যে প্রণয় প্রতিম। নিজের মন হইতে সে অনেক দিন পূর্বেই বিসর্জন দিয়াছিল তাহার কাটামে। খান। এতদিন ভারী পাথরের মুই তাহার স্ত্রীর বুক জুড়িয়! বসিয়া ছিল। আজ সে পাষাণভার নিজ হইতেই নামিয়া গিয়াছে! ভগবান্‌ সত্যই তাহার প্রতি দয়ালু!

স্বামী চলিয়। গেলে বিশ্মিত বিষগ্রমুখে ছেলেকে কাছে ডাকিয়া__হ্ঠাৎ চোখে ধূলা পড়ার জন্য বার কতক আচল দিয়। চোখ মুছিয়া_ছেলেকে আদরে ভূলাইয়! বাহিরে থেলিতে পাঠাইয়া! এইবার মে শৈলের চিঠিখানি খুলিয়া পড়িল। শৈল লিখিয়াছে--“ভাই বৌ! এবার তোমার ম্লান মুখখানি . মনে একে এনে বড় অশান্তিতে দিন কাটাচ্ছিলেম। হয় তাতে ঠাকুর পুজোর কোন ব্যাঘাত হয়েছিল। অন্তর্যামী তাই কৈফিদ্বৎ চাইলেন_-“বল কি হয়েছে? কিছু যে হয়েছে-এটা! ঠিক না বল্লে তো কিছুতেই শুন্বে৷ না কিন্তু এও কি একট! বল্বার কথ! নাকি? তোনার নন্দাই যখন এটনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন-_গুনে তুমি বলেছিলে মনে আছে যে--“ঠাকুর- জামায়ের পরিশ্রম সার্থক হ'লো-_-এটা খুব সুখের বিষয় ! কিন্তু ভাই কাজট! বড় মন্দ! ওর।--এটর্নীর! নাকি দিনকে বাত করে ! জ্যান্ত মানুষকে উড়িয়ে দেয়। বাপের নামেও ডিক্রীজারী করে! কথাট! নিছক না হোক-_ অনেক খানি সত্যি! এই দেখ না-_তার সাক্ষী! কখন যে ভাল মানুষটির মত আমার মত যুধিষ্টিরের শাঁপবিবর্জিত| শৈল অর্থাৎ পাষানের পেটের কথাটি বার করে নিয়েছেন জান্তেও পারি নি আমি! হঠাৎ সেদিন বাবার চিঠি পেয়ে অবাক হয়ে গেলাম। 'বাব! পিখেছেন,__ তার জামায়ের চিঠিতে শুন্লেন, মহেন্দ্রবাবু ডেপুটীর মেয়েকে তোমার নাকি ভয়ানক মনে ধরেছে। নিরুর সঙ্গে তার বিয়ে দিতেই হবে-_-এট! তোমার আর্জি, দাদার নাকি তেমন অপছন্দ নয়! তবে তোমারই একান্ত

২৬৮ প্রত্যাবন্তন

ভিদ্‌ আবদার! বাবাকে জানই! তোমার আব্দার ঠেল্বার তার সাধ্যই নেই। কাজেই উপযাচক হয়ে মহেন্দ্রবাবুকে লিখে তাঁর ডাক্তার ছেলেটির জন্যে মেয়েটিকে ভিক্ষে চেয়েছেন। তোমার এত সাধ-_ নৈরু বেচারাই বাকরে কি? বিশেষ_-এবার তার “মরা” কাটা ছেড়ে 'জাস্তর” পালা এলো। মা-ই একটু যা বিগড়ে ছিলেন--ডাঁগর মেয়ে, শিক্ষিত মেয়ে ইত্যাদি তা_সে তার এটর্নী জামাই একদিন নিমন্ত্র খেতে গিয়ে তাকে এমন বুঝিয়ে দিয়ে এসেচেন যে মাও চট্টুপটু মত দিয়েচেন। শুনলাম্‌__মেয়ে এখন ব্রিপুত্রায় ! পোড়ারমুখি !! আমি মর্ছি শুর ভাবনায়-_-আর রাণী আমার নিষ্ণণ্টকে ব্রাজ্যভোগ কচ্ছেন। কাল কলিকি না? বেইমান কোথ। কার? একটা খপর দেওয়াও দরকার ননে হয় নি বুঝি? এমনিই লো? তবু লোকে দোষ দিতে হলে-_-ননদদের দেয-_-বলে-_“ভাজ বড় গুণবতী! ননদিনী কুটিলা'_-মারো। কত কি? আচ্ছ। এসে। তুমি-এর শোধ তোল! রৈল! এইবার কোমরে কাপড় বেধে দেওরের বিয়ের উদ্যোগে লাগৃবে এসো দু মন নাড়ুর চাল কুটুতে হবে_মনে থাকে যেন? এটর্নী মশাই জিজ্ঞাদা! কর্ছিলেন--তার বিলট। কবে পাঠাবেন? জানে। ত--এ'রা স্ত্রীর নামেও বিল করেন! হা! রে বৌ-_ স্রব্যি এখন কোন দিকে উঠুছে ভাই? ডোবে বোধ হয় এখন দক্ষিণে? ইতি-_ তোমার আপদ বালাই চিরদিনের শৈলাঙ্গিনী।”

চিঠি মুড়ির আচলে বাধিয়া সুনীতি কাপড়ে আবার চোখ মুছিল। তবু অবাধ্য অশ্রধার! ক্রমাগতই ঝরিতে লাগিল। অশ্রু দুঃখের নয়-- বিষাদের নয়-_-এ অশ্রু আনন্দের! নিশ্চিন্ত বিশ্বাসের-পরম শাত্বনার-- অশ্রঃধৌত উচ্ছলিত নির্মীল অন্তঃকরণে সে বার বার মনে মনে আবৃত্তি

অফ্টাত্রিংশ পরিচ্ছেদ ২৬৯

করিল-_”“আমি তোমায় সর্বাস্তঃকরণে ক্ষমা কর্লেম কিরণ !! জ্ঞানে হোক্‌, অজ্ঞানে হোক্‌ তোমার দেওয়! যে ছঃখ আমি বহন করেছি_-তার এতটুকুব অভিশাপও যেন কখন তোমার স্পর্শ করতে না পারে ! তোমার ভবিষ্যং যেন চির-ন্ুন্দর, চির-মধুময় হয়--তোঁমার পথ ধেন বাধাহীন আনন্দোজ্জন হয়, এই আমার একান্ত আনীর্ধাদ ! তোমার উপর আমার ক্রটী-__চিরদিনের স্নেহ দিয়ে আমি শুধরে নেব !”

মন বখন কানায় কানায় পূর্ণ থাকে তখন মান্ুব দেউলিয়! হইয়! নিজেকে বিলাইয়। দিতে ব্যস্ত হয়। ন্ুনীতির আজ ফেন এই অবস্থ: আসির়াছিল। তাহার মনের উঞ্চ-নদীতে অকন্মাৎ জোয়ারের প্রাবন আসিয়াছিল। কিরণ ত” তুচ্ছ! সে আজ পশু পক্ষী কীট পতগ্গ সকলকেই ভাল্বাসিতে ব্যগ্র-সকলের জন্যই নিজেকে বিলাইপ়া দিতে প্রস্থত ! বিড়ালট। ছোট খোকার ছুধের বাঁটাতে চুমুক দিয়! পলাইক়! গেলে পশ্চান্ধাবিত। দাসীকে যে অনুনয়ের স্বরে কহিল,_-“আহা মারিস্‌ নে, অবল জীব! ওরে খাবার কেউ দ্রেয় না? কাজেই টুরী করে খান্তর”! বিশ্মিতা দামী অবাক্‌ হই! মা ঠাকুরাণীর পানে চাহিয়া! দেখিল। সপ্ত খানেক এখনে। অতীত হয় নাই, ঠিক এই অপরাধেই উনিই না সে দিন অবল! জীবের শাস্তি-বিধানে অক্ষম হইয়া! ঠাকুর, চাঁকর তাহার মাহিন কাটিতে চাহিয়া ছিলেন? এবং পোঁড়ারমুখো! বিড়াল কি জগ্ তাহার দাসদাসী রক্ষিত বাড়ীতে ঢুকিবার অধিকার পায়, তাহারই জবাব চাহি তাহাকে গলদ-ঘর্খ করিয়া ছাড়িয়। দিয়া ছিলেন? আজ তাহার আবার হইল কি? তামাস! নহে? তাই হইবে। কোন নূতন ধরণের বকুনী খাইবার সম্ভাবনার ভরে দাসী আমতা আম্তা করিয়! ছু”দিক বাচাইয়! অস্পষ্টভাবে কি বলিতে বলিতে কত্রীর চোখের বাহিরে পলাইয়' আত্মরক্ষা করিল! *

উনচত্বারিংশ পরিচ্ছেদ

বিয়ে বাড়ী

“হ্যাগ। ছোটঠাকুমা ! মালী বৌ যে সিথী, মৌর, টোপর, মাল! সব দিয়ে গেল,--ত। ণগোড়ে কই? গোড়ে নৈলে কি কখন বিয়ে হয়? আাল। ব্দল হবে কি দিয়ে ।”

হয় লো হয়! সাহেব বিবিদের সব হয়, দেখিস্নি? আসর সাঙ্গান দেকলে টাঙ্গাবার পাতার মালা গুলে। পর্য্যন্ত পরে বিয়ে হয়। জন্োই 'আধাডমাসে বিয়ের ঠিক করেছিলেম। তখন বনে-বাঁদাড়ে ফুলে ফুলবুষ্টি ! ত। মহারাণী আমার প্রতিজ্ঞা করে বস্লেন-_যে ওঁকে বুদ্ধে হারাবে--সেই শুর পতি হবে! বুড়ো জমদার--ঘি দুধ থেয়ে ভূ'ড়ি বানিয়েছে, থুপ্থুপে নাদ্রদ্-নুছুম চেহারাখানি,_-দে সপ্দারণী মেয়ের সঙ্গে পারবে কেন বল্‌? বেচারী মনের দুঃখে তাই, বৌ মার! যেতে কাশী-বাপা হোল! এখন অদ্্াণ মাসে ভাল ভাল কুল পাবি কোথ। ল৷ ছু'ড়ি? হয় গাঁদা, টগর, মোরগ-নয় ত-_নিগদ্ধি ধা ত। ফুলের কণ্টা এক্‌টে মালা! দিয়েই কাজ সেরে নিতে হবে। মেয়েটা গেল কোথা আবার ?--আল্তা পরেচে ত? বলি মেছুনি,_তোর কি আক্কেলথানা বল্তো।? ঢুলিরা জল খাবারের জন্তে সেই খন থেকে দীড়িক্পে রয়েচে,--তুই কি ন। স্বচ্ছন্দে বসে গল্প জুড়ে দিয়েচিদ্‌1--ওগে। বাছারা,_-মাছগুলে। উঠানের কোন ঘেসে ঢালো না? আশবটর ভাব্না কি, বে চালার পেছনে গাদ। জড় করু। রয়েছে! ওগে।--ও বাগ্দী-বৌ, তোর! বাপু মাছ কুট্তে বসে ঝ| না--রোদ চড়ে উঠুছে যে, ভাঙবে কখন? “কামান টামান, গুলে। সেরে নে-_ম। গে

উনচত্বারিংশ পরিচ্ছেদ ". ২৭১

মেয়ের! পলও কি এই বুড়ীকে নজর রাখতে হবে নাকি? রাণু কোথা গেলি গে! ?-_ও রাণু !__ এই নে মা, মেয়ের হার, রলী আর ভুল দিয়ে গেল-_স্তাকৃরাবৌ। উচ্ছু্ড করে পরিয়ে দিয়ে যা। তোর লক্ষীপ্রতিমা-মেয়ের যুগ্যি হস্গনি বাছা! অবশ্ত গরীব দিদিমার ঘুগি হরেচেশ ইত্যাকার মন্তব্য তদারক কার্ো মুক্ত। ঠাকুরাণী আজ একাই এক শত জনের কাজ করিয়৷ বেড়াইতেছিলেন। চিরদিন তিনি-ই সকলেব্রি করিয়াছেন। আজ ম্ুযোগ পাইয়া! অনেকেই তাহার শোধ নিতে চাহিতেছিল। তবু বন্তেশ্বর-হীন যজ্ঞের মত যেখানে তিনি নাই সেই খানেই বিশৃঙ্খলা মালতী হিমুকে শুনাইয়। মধ্যে মধ্যে মুখে নিজ নির্বাচিত বরের প্রশংসা অরুণের নিন্দাও চলিতেছিল। তবু তাহার মুখ দেখিয়া. বুঝ যাইতেছিল--সেট! নিতান্তই মৌখিক! অন্তরে তাহার আজ আনন্দের তুফান বহিতেছিল। বাড়ীতে এনন করিয়া মঙ্গল-শঙ্খ তাহার জ্ঞানে কখনে৷ আর বাজে নাই ! তা” ছাড়া_-অরুণ হিমু,--ত"” মেক্পেটা যেমনই হুমম হউক ন! কেন, উহার! যে তাহার মনের নিভৃততম প্রদেশে স্নেহের কঠিন শিকড় গাড়িয়৷ বসিয়াছে? ইহাদের একটিকে ছাড়। যে কত কঠিন ছিল-_তাহা তাহার ছর্ভেস্ত অন্তঃকরণই শুধু বলিতে পারিত। এই অকল্লিত অঘটন ঘটনার সমাবেশে ভক্তিমতী বিধধ! বিপুল আনন্দে ভাসিয়। আনন্দময়ের লীলাই কেবল প্রত্যক্ষ করিতেছিলেন। এমন্‌ করিয়া ছু'জনের 'াটছড়া' বাধ। কখনও কি মানুষের ছার সম্ভব ছিল ? অরুণের প্রক্কৃত পরিচয়লাভের আনন্দ সহিন্না গেলে, গৌরীপতি বে দিন হুক্কা ঠাকুরাণীর কাছে হিমানীকে পুত্রবধুরূপে প্রার্থন। করিলেন,--সে দিন হিমু অরুণ গভীর বিশ্বে চমকিয়! উঠিয়াছিল। এধযেন একটা অসম্ভব ঘটনা--তবু অরুণ ইহাতে খুসীও হইয়াছিল ! হিমু এখন হইতে চিরদিনই তাহার কাছেই থাকিবে-মে আর পরের ঘরে, পর হইয়। চলিয়া! যাইতে

হধং প্রত্যাবর্তন

পারিবে না। কিন্ত তখনি সে মনকে কঠোর কশাধাতে ফিরাইয়। লইল-_. স্বার্পর সে-_-একি অন্যান্স চিন্তাকে প্রশ্রয় দিতে বসিয়াছে ? অরুণ পিতাকে জানাইল, _প্রকুল্লের সংবাদ না লইয়া! সে সংসারের কোন কিছুতেই স্বীকৃতি দিতে পারেনা গৌরীপতি তাহাতেই সম্মতি দিলেন। *

এবার সে সহজেই প্রকুল্লের সংবাদ সংগ্রহ করিতে পারিল। আলোক- নাথের কন্মচারীদের কাছে সে জানিতে পাব্রিপ__মাত-বিয়োগের পর প্রফুল্ল তাহার রুগ্ন মাতুলকে লইয়া! মাতুলালয়েই সেই হইতে বাদ, কর্িতেছে। আলোকনাথও ত্ত্রী-বিয়োগের পর মাতৃসহ কাশীবাস করিতেছেন। হেমাঙ্গিনীর শেষ ইচ্ছা পুরণার্থ তাহাকে কাশী লইয়া যাওয়া হইয়াছিল। তাহার দেহান্তের পর কর্তা তাহার মাত ঠাকুরানী-_কাহারে। আর সংসারে ফিরিবার ইচ্ছা ন! হওয়ায় সেখানেই তীঙ্াব। রহিয়। গিয়াছেন। অরুণ আরও শুনিল_আলোকনাথ উইল করিয়। তাহর সমস্ত স্থাবর অস্থাবর বিষযুসম্পন্তি প্রফুলকেই দান করিয়াছেন প্রফু্ দি তাহ। গ্রহণ না৷ করে-_ভবিষ্যতে তাহার উত্তরাধি- কারীর! উহা! পাইবে আলোকনাথের নিজের জন্ত জীবিতকালে মাসক কয়েকশত টাকার বন্দোবস্ত আছে মাত্র। মানবমনের এই অকন্মাৎ বৈরাগোর বিচিত্র সংবাদে অরুণ বিশ্মিত হইল! স্ত্রী বর্তমানে যে মানুষ বিবাহের জন্য ব্যাকুল হুইয়াছিল,_স্ত্ী-বিয়োগে সে আজ কত অনায়াসে সর্বত্যাগী হইল! আশ্চা্য! অরুণ ভাবিয়া দেখিল আলোকনাথের চরিত্রের এইটুকুই বিশেষত্ব,__হিমুকে সে এমনি করিয়া প্রত্যাখ্যান. করিতে পারিয়াছিল!

প্রফুলের সহিত দেখা হইলে ছুইবন্থুতে সুখহুঃখের অনেক আলোচনাই হইল। অরুণের অপ্রত্যাশিত পিতৃমিলন সংবাদে প্রফুল্ল আন্তরিক আনন্দ জানত করিল। অরুণ প্রফুল্লের মাতৃ-বিয্বোগে খুড়ীমার মৃত্যুতে,

উনচত্বারিংশ পরিচ্ছেদ ২৭৩

তঃথপ্রকাশ করিলে__-সে কেবল শান্তভাবে চুপ করিয়া! রহিল। সে ক্ষত এত গভীর যে ইহার স্পর্শের বেদনাও বুঝি সহা যায় না! বন্ধুকে সে তা'ই আনন্দেরদিনে তাহার মন্দ্ান্তিক ছঃখের অংশ দিতে পারিল ন1। অবশেষে অরুণ যখন মৃদুকুষ্টিত বিনতস্বরে মালতী দেবীর পক্ষ হইতে তাহাকে হিমুকে বিবাহ করিবার অনুরোধ জানাইল, তখন প্র হাসিতে লাগিল। কহিল-_“তুমি তা হলে কিছু খবরই রাখন৷ দেখূচি। তাকে কাকীম! বল্‌তে আমার ঘোর আপতি ছিল, কিন্তু “বৌমা বলায় একটুও নেই। তুমি থেকে স্থুক্সম-অর্থ বার করে--ত্যাগের আদর্শ, বন্ুপ্রেম, নভেলী-লীলার সে সব ব্যাপার স্থির করোন! যেন! বিয়ে জন্মে আমি কর্বনা। সেট! হিমুর অভাবে নয়, আমার প্রয়ো'জনের অভাবে। স্পষ্টকরে সব কথা বোঝ! আমি মনে করিন! যে জীবমাত্রকেই একই নিয়মে.সংসারী হতে হবে। যে যাতে যোগ্য বা অধিকারী সে সেই পথেই চলুক ইন্দ্রনাথ জ্যাঠামশায় বিয়ে করেন্নি। তিনি পরম ভ্ঞাণী, আনন্দময় স্বভাব সুখী ব্যক্তি ছিলেন। সাহিত্যের সেবাই ছিল তার জীবনের স্থাদর্শ। আমিও সেই পথকেই কৈশোর থেকে নিজের জন্তে নির্বাচন করে, নিয়েচি। অবশ্ত হু জনের মতের কিছু পার্থক্য আছে বই কি ! কাল হিসেবে সেটা সম্ভবও | দেশের সেবা, গ্রন্থপাঠ প্রণয়ন-_এই হচ্চে আমার জীবনের ব্রত। অবস্থার, ফেরে সম্প্রতি একট। প্রোফেসারী চাকৃরি আমি নিয়েচি_- সত্যি। মামাকে নিয়ে শীস্রই সেখানে যাব। কিন্তু তাই বলে মতের বদল আমি কখনে। করিনি চাকরি করাই আমার আদর্শ নয়। আমারও মামার বইথানা শেষ ন! হওয়া পর্যন্ত এই কাজটাই ,আমার নিতে হোল। কারণ আমার বা মামার অর্থসচ্ছলত। নেই ওঃ--কাকার উইলের কথ! তুমি বন্চ? হ্যা-_সে বিষয়েও তোমাকে সব কথ বলা৷ দরকার রগ্মেছে যে এখনও! সে সম্পতি স্টায়তঃ আমার নয়। তবু স্তাষ্য অন্তায্যের তর্ক আমি ১৮

২৭৪ [যা বর্তন

এখানে তুল্ব না আমি শুধু বল্ব যষে__মাতৃদ্রোহ, দেশদ্রোহের শপথ নিয়ে বা আমি ত্যাগ করেচি, সে সম্পত্তির কণা মাত্রও স্পর্শ কর! আমার আর সাধা নয়। কাকা,--তী”কেও আমি ছঃখ দিয়েছি, বিস্তর অন্তায় করেচি। তবু তিনি তার অকৃতন্ত সন্তানকে ত্যাগ কর্তে পাল্লেন না। খুঁড়ীমার শেষ ইচ্ছ। পালনে--আর একট! কষ্টকর কাজে কাশী আমি গেছলেম। অবশ্ঠ দেখাও হয়েছিল তার সঙ্গে। সেখানেই আমি শুনে এসেছি--কাক। উইল করেচেন। সম্পত্তি যদি নেহাংই আমি না নিই__আমার ভবিষৎ উত্তরাধিকারীরা ত। ভোগ কর্বে। অরুণ,_এটা স্যায়ের ফীকী। কাকার উদ্দেশ্ত--আসলে আমি পয়সার ছুঃখ ন! পাই! তার ন! নিই--ছেলের নেব! এইবার আমর! আমল জায়গায় এসেচি। ধার বিষয়_ইন্ত্রনাথ জ্যাঠা- মহাশয়ের-_মনের ইচ্ছা! সকলেই জান্ত। তিনি হঠাৎ মার! না৷ গেলে,__ সম্পত্তি ঘে কাক! বা আমি কোনদিনই পেতেম না,--এটা নিঃসন্দেহ ; কারণ, তিনি বেঁচে থাকৃতে আমাদের কোন খবর কখনো নেন নি। এরর ভাষ্য অধিকারী তুমি ! মেসের বাসায় বৎসর আগে--যেদিন প্রথম তোমার পরিচয় জান্লেম সেইদিনই আমার মনে হয়েছিল--এ বিষয় স্তাঁয়তঃ ধর্ম. তোমারই পাওয়া উচিৎ। কোনো সময়--হিমুকেও এর অধিকার দিতে কাকার ইচ্ছে হয়েছিল। সুতরাং সম্পত্তির অতীত বর্তমান--জীবিত মৃত-- প্রকৃত অধিকারী ছু জনেরই নির্বাচিত পাত্র গাত্রীদেরই ইহ। উচিত প্রাপ্য ।_তর্ক কোরন! অরুণ! তাতে আমায় তুমি হারাতে পার্বেনা__. কক্ষণো ! বিশ্যেতঃ আমার ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারী কেউ যখন কখনও থাকবে না-_-তখন তর্ক ফুরিয়েই গেল! কাকাকে আমি কালই সব কথ! বুঝিয়ে পিখ্ব। সন্তবতঃ-এতে তিনি খুসীই হবেন। তিনি হঠাৎ একেবারে বদ্লে গেছেন__ চলো, এইবার মামার সঙ্গে দেখা কর্বে। কত বড় শক্তি যে কি অন্তায় পে নষ্ট হয়ে গেল,-তীকে একটু

উনচত্বারিংশ পরিচ্ছেদ ২৭৫ ভাল করে না৷ বোঝ্বার সময় পেলে বুক্তে পার্বেনা। জ্ঞানের স্তাধার ! প্রেমের সিদ্ধ! দেশকে কি ভালই যে তিনি বেসেছেন। ছ্‌ খান! রই লিখেছেন,-_দেখো! কি সুনার জিনিষ হয়েছে। অরুণ-_তুমি ছু খারনাঁ পাবলিস্‌ করিয়ে দিতে পার? তুমি আমার ধার শুধৃতে চেয়েছিলে,__ দেখ,--আমি তারও সুযোগ পাইয়ে দিলেম তোমায় !”

পরল্লের সে অপার্থিব হাসি স্বর্গীয় আলোবদীপ্ত মুখের পানে চাহিয! অরুণ তাহার সকল আদেশই মান্ত করিয়। লইল। প্রতিবাদের একটি শবও উচ্চারণ করিতে পারিল না। সে আশ্চধ্য হইল ! এই মান্থুষের বিরৃন্ধেও লোকে মিথ্যা অপবাদ রটনা করিতে পারে? এবং সেও তা* বিশ্বাস করিয়াছিল! ৃ্‌ অরুণ ফিরিয়া আমিয়া বিবাহে সম্মতি দিলে-হিমু একদফ1 গণ্ডগোল বাধাইল। ছিঃ--অরুণদাদাকে কখনো বুঝি আবার বিবাহ করিতে আছে? একি হিন্দুর বাড়ী নয়? ভাইবোনে বিয়ে-_মাগে। ! কেমন করিয়! বউ সাজিয়া ঘোম্টা টানিয়৷ সে অরুণের সম্মুখে বাহির হইবে? না, না, _এরষবকিছু তাহার দরকার নাই। শেষে মালতীর অনুনয়, উপদেশ, ভত্“সনা, তাড়নায় সে ষখন মৌনে সম্মতি বুঝাইল_-তখন লল্জার যেন তাহার আর সীম। রহিল না! সে যেন একদিনেই বড় হইয়া গেল। দিদিমার বাঙ্গ বিদ্রপকে দে এখন আর প্রতি-আক্রমণ করেই না বরং ভয় করে। আবার তাহাতে আনন্দও পায়। গোপনে অরুণের চিন্তায় অনেক সময় তাহার বুকের ভিতর গুরু গুরু করে। আবার লঙ্জাও অনুভূত হয়। অরুণকে সে এখন দেখিতে পায় না। গৌরীপতি অন্তত্র বানা লইয়াছেন। গুভকন্মন সম্পন্ন করিয়া একেবারে ছেলে বৌ লইয়া! বাড়ী ফিরিবেন। লঙ্জাৰশে অরুণও আর বাড়ীতে আসে ন|। হিমুর মনে হইল--মার কথা গুনিয়। সে ভালই করিয়াছে এই

২৭৬ 'প্রত্যাবত্তীন

অরুণ নিজের বাড়ী চলিয়া বাইত! সে আর কখন তাহাকে দেখিতে পাইত না? হয় তাহাকেও আর কাহারা কোথায় বন্দিনী করিয়া রাখিস দিত। তবু ভারী লঙ্জ! করে বে!

মাথার রাশকরা এলোচুলের খোঁপার ভিতর লোহার ছোট কাজলনতা- খানি লুকাইয় চন্দনচচ্চিত৷ লাল-পাড় সাড়ী-পরিহিতা। হিসু-_দিদিমাকে দূর হইতে দেখিয়াই পলাইতেছিল,---কিস্ত পারিল ন|। মুক্তা ঠাকুরাণী কাছে আসিয়া হাসিমুখে কহিলেন,--*কি গো, আমার হেমবরণি__হিমুরানীর রণসাজট। একবার দেখি! ভ্যাৰাকান্ত আমার ভ্যাড়াকান্ত হতে পারবেন কিনা? সুখ ফেরান! লো নাত্নি_-আমরাও একবার চোখ ভরে দেখি” বলির তিনি সুর করিয়1 গান ধরিলেন-_

“মেয়ে হয়ে রণসঙ্জা--লাঁজের মাথা খেয়েছ কি? এমা, ওমা,_একিগে। মা, এমন মেয়ে দেখেছ কি ?”

হিমু--্যাও !” বলিয় মৃছু হাসিয় দিদিমার পানে ফিরিয়! চাহিলে, মুক্তা ঠাকুরাণী সুগ্ধ-দৃষ্টিতে তাহাকে দেখিতে লাগিলেন। হাতে ছুইগ্গাছি ফিত। প্যাটার্ণ সোপার রুলী, গলায় একছড়া৷ সরু গোটহার আর কাণে ছুটি রান পাথর বসান হুল! অলঙ্কারের বহর এইটুকু--এও হিমুর অঙ্গে আজ নৃতন। তবু সে অরস্কান্তরর তুচ্ছ শোভাকে শ্লান করিয়! দিয়া তাহার তরুণ-অঙ্গে যে অগ্লান রূপের হিল্লোলে বহিতেছিল--আজ যেন তাহা সম্পূর্ণই নৃতন বলিরা মনে হইল। বালিকা! চঞ্চল! হিমুর চোখের দৃষ্টিটিও আজ যেন নূতন ভাবের স্গিপ্ধতার কোমল “ইইয়াছিল। লজ্জা-নত্ কিশোরীর সন্ত প্রপ্ফুটিত হৃদয়-শতদলের অরুণ রাঙ্গা বার্তাটি তাহার মনের বাহিরেও ছড়াইয়৷ পড়িতেছিল। নে মুখের পানে চাহিয়! মুক্তা ঠাকুরা' নী আজই যেন প্রথম অন্থতব করিলেন__-এ দেহের জন্য বৃথাই তিনি

উনচত্বারিংশ পরিচ্ছেদ ২৭৭

মণি-মুক্তার লোভ করিয়াছিলেন। ইহাকে সাজাইতে যাওয়। বুবি--ইছার পক্ষে অপমানই ! ূ্‌

তিনি হাঁসিখুখে কহিলেন,_-*সাধে কি আর ছোঁড়া, বুড়ে। সবাই পাগল হয় রে? এরূপ দেখে যে মেয়েমান্ুষেরই মু ঘুরে যার»-পুরুষ কোন ছার !

“কেমনে বল ভাল না বেসে থাকি? পাগল করেচে তোমার ছটি আঁখি !ঃ কি লে! হিমু, মিনি যুদ্ধেই বরকে হার মানালি ন| কি?”

হিমু সহস৷ ছুই হাতে তাহাকে জড়াইয়! ধরিয়া সজলকণ্ঠে কহিল, ”তোমাদের কাছেই আমার রাখলেন কেন দিদিমা? ওদের ঘরে কেমন করে আমি দিন কাটাব? তোমাদেরই ব! দিন কাটবে কেমন করে - ত্তা হলদে?”

"কেটে যাবে ভাই! এম্নি করে যুগ বুগ ধরে সবারই যে দিন কেটে আস্চে। শুধু খবর যেন পাই,-_দিন গুলো! তোর স্থখেই কাটুচে! ব্যার নষ্ট খেয়ে খেয়ে মুখ যখন মেরে যাবে,-তখন ঝাল খেতে এক আধ বার অসিস্‌দিদি! নৈলে-_হাপিয়েই যে মরে বাব!”

প্ছ্যাগ পিসি, এখনও নাত্নী নিয়ে ঘরের কোনে রঙ্গ কচ্চ? গোধুলিতে যেন বে? বর এলো ঝলে। বরের দাদ। প্রশুল্লবাবু' এই দলিল পত্র গুলে। ভাল করে তুলে রাখ্‌তে বল্পেন। তাঁর কাক আলোকনাথ বাবু তার সমস্ত জমিদারী, ঘর বাড়ী, বিষয়সম্পত্তি দানপত্র করে বর কনেকে এতে যৌতুক দিয়বেচেন।.কি অশ্চহ্যি বাবু! কলিকালে,এমন যৌতৃক দেওয়া কখন গুনিওনি-জ্ঞাত নয়-_গুষ্টি নয় !--নাও,_ এখন তুমি একবার বেরিয়ে হাক-ডাক ক্র। মলতীদিদি তাল মানুষ--ওর কথা৷ কি কেউ মানে-না শোনে? বেল! যে পড়ে এলে।--1”

২৭৮ প্রত্যাবন্তন প্রতিবাদিনী রোহিনীর কথায় সচকিত হুইয়। মুক্তা ঠাকুরাণী অশ্রতর! কে কহিলেন__ |

শবেলা যে আমারও পড়ে এলে! রে! এবার তোরাই সব হাল ধর্‌! পরামানিকের পো--ধুত রো! ফুলগুলো! রাখলে কোথা ? সাজিয়ে ফেলতে বলে দেন! মা? মেক্েদের সব ভাক্‌ দিকি, বরণের জিনিষ-পত্রগুলো। গুছিয়ে রাখুক। ওলো৷ হিমি্ষ কাগজগুলে। বাঝে তুলে রাখ্‌ দিদি! এরেই বলে-“যার ধন তার ধন নয় -নেপোয় মারে দই! বুড়োর ভালবাসারে,_যুবোর নয়! বান্ুক্‌ দিকি তোর সাতটা অরুণ, কেমন এমন বাস্‌তে পারে? হলে এতক্ষণ জামার আস্তিন গুড়িয়ে আমাদের সেই কাণীর পথের-_রেলের *সঙ্গী--বেঞি দখল কর! পাঞ্জাবী মেয়েটির মত বল্তো--“লোগী? ?*

ঙ্ চে সা মর,

“ওগো শীখ বাজগো-_শাখ,রাজ! ! বর এলো যে”

“অ- ন/দি--বর দেখ্বিন্সায়। বরকে কি সেজেচে দেখ্‌ 1

প“্বরের কি রূপ-_. ভাই রঃ

প্রাণু কোথা গেল? মেয়েকে.পথি কোলে দিয়ে গাটে বসাক না, নিজেও দইয়ের হাড়ীতে ছাত ডুবিয়ে বন্ক!*

“খাসা মানাবে পুড়ি,-_বেন।শিব-ছু্ মিলন হবে!”

“মেয়ের তপস্তার জোর আছেবৈ কি! নৈঁলে কি আর এমন মিলন মেলে?

*এযে ভগবানের, মেলানে। দিদি! তোমরাও সব মন খুলে' আশীর্বাদ কর, আমার 5ঃখিনী রাণু_-রাজারাণীর মা! হচ্চে-_এ দিন যেন তার বর্তমান থাকে !*

“এক্‌শোবার খুড়ি! এক্‌শোবার ! এাতঃ বাক্যে এক্‌শোবার আশীর্বাদ

লেখিকার অন্যান্য গ্রস্থ__ উপশ্যাস

স্পর্শমণি (২র সংস্করণ ) স্রোতের গতি : দৌধরহস্ত : পরাজিত ** ছোট গল নিম্মাল্য (২য় সংস্করণ ) কুলের তোড়া (২য় সংস্করণ ) মাতৃহীন কেতকী টি তং

শ্রীমতী অনুরূপা! দেবী প্রণীত মা (উপন্যাস) রঃ পোল্ুপুত্র পথহারা! চক্র মহানিশা মন্ত্শক্কি রামগড় জ্যোতিঃ হার। - : বাগ্দা | রাঙ্গাশীখ! ( ছোট গলপ)

সোনার খনি

হ/ হি ভি ডি

১০ ১৯

২৯

১৬ ॥৩

৯৯

২৯ ২॥৯

হা!গ

চা

চিত্রদীপ (ছোট গল্প) রর রঃ ১২ উচ্ধা ত্ তি, ০৪৯ ১২. মধুমন্্রী ) ৪? ॥০ বিগ্ভারণা (নাটক) 2 ১৯

৬রায় শ্রীযুক্ত ুকুন্দদেব মুখোপাধ্যায় বাহাছুর প্রদীত সর্বজন প্রশংসিত উচ্চ অঙ্গের নৃতন ধরণের .পুস্তক মহাত্মা এবং

মহাপুরুষগণের অতি হুদার চিত্র স্বলিত-- . সদালাপ ( ১ম ভাগ) ২০২ বা 8 সদালাপ ( খর ভাগ ) ছি ৬৩৪ 78০

- সদালাপ (৩য় ভাগ ) নত ৮৬ ধা হাল) ॥৬ অনাথ বন্ধু ( উপন্যাস ) ১০

( প্রাতঃম্মরণীক্ চরিত, বঙ্গমাতার প্রিরপুত্র মহাত্মা ভূদেব মুখোপাধ্যায় . মহাশয়ের পবিত্র জীবন-চরিত প্রকাশিত হইয়াছে।)

শপ টি দি হার ৬মহাত্ম। তুদেব মুখোপাধ্যায় মহাশয়ের পুস্তকাবলী__. পারিবারিক প্রবন্ধ (৯ম সংস্করণ) : ... . ১5 সামাজিক প্রবন্ধ ( িনিয্র | 3০ পর | জু, উরি

হা উপন্াস প্রভৃতি অন্ঠনতগরস্থাবলী গুরুদাস বাবুর দোকানে . অন্তা্ প্রধান প্রধান পুস্তকালরে গাওয়া যায়।